নারী মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প

  বিজয়ের ৫০ বছর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশ স্বাধীনের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পৌঁছে দেয়া, চিকিৎসক ও সেবিকা হিসেবে কাজ করা ছাড়াও অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন নারীরা। কুষ্টিয়ার এমন নারী দুই বোনকে নিয়ে বার্তা২৪.কমের বিশেষ আয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ। সেবিকা হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া আপন দুই বোন লুলু ই ফেরদৌস ও লুলু ই জান্নাত। তাদের সাথে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরী করেছেন বার্তা২৪.কমের ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট, এসএম জামাল।

লুলু ই জান্নাত বলেন, আমার বয়স যখন ১৫ বছর ছিল। আমি তখন কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়তাম। ভর্তি হওয়ার পর কিছুদিন পরে উত্তাল মার্চ ৭ মার্চের ভাষন শুনে আমরা শিহরিত হলাম।

লুলু ই ফেরদৌস

কিন্তু বাবা সরকারি চাকরি করতেন বলে আমাদের হাতে পতাকা বা ব্যানার হাতে করে রাস্তায় রাস্তায় স্বাধীন দেশ চাই, আইয়ুব খান হোটে যাও এমন স্লোগান দিয়ে রাস্তায় যাওয়াটা তেমন পচ্ছন্দ করতেন না। আমার বাবা এসব দৃষ্টিকটু মনে করতেন ।

আমার বাবা বলেন আমি সরকারি চাকরি করি কিন্তু এসবের কারণে যদি চাকরিটা চলে যায় তাহলে তো বিপদে পড়ে যাবো। যদি বা আমি এবং আমার বড় আপা উদ্বুদ্ধ হয়ে কিন্তু এগুলো করতাম। আপা  (লুলু ই ফেরদৌস) আমাকে বারবার বলছিলো এগুলো আমাদের অবশ্যই করতে হবে। আন্দোলন করতে হবে। স্বাধীন দেশ চাই। এজন্য যা যা করণীয় আমরা করবো ইনশাআল্লাহ।

৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সারা দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। কৃষক শ্রমিক মজুর শিক্ষক-ছাত্র আপামর জনতা সবাই যেন এক কাতারে এসেছিল। আমাদের তারুণ্যদীপ্ত যে বয়সটা ছিল ১৫-১৬ বছরের তরুণী উদ্দীপ্ত সে সময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আমরা সত্যিই উদ্দীপ্ত হয়ে যায়।

লুলু ই জান্নাত

কিন্তু তবে আমাদের এই বয়সে আব্বা আমাদের কমফর্টেবল করতেছিল না ।এরপরে ২৬ শে মার্চ কালরাত্রি আঁধার নেমে আসলো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীদের তাণ্ডবের যখন আমরা শহরের মধ্যে আর থাকতে পারছিলাম না। সে সময় আমাদের লাহিনীপাড়া গ্রামে দাদার বাড়ীতে আমাদের সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন আমার আব্বা। তখন আমরা শহরের কোর্টপাড়ায় ছিলাম।

কিন্তু লাহিনীপাড়া গ্রামে দাদাবাড়ীর দিকেও পাকসেনারা সেই  চলে গেল। তখন কিন্তু আব্বা বললো এখানেও তো থাকা নিরাপদ মনে করছি না। তখন আমার আব্বার এক আত্মীয় থাকতেন দৌলতপুরের বিলবোয়ালিয়া এলাকায়। তখন আমাদের নিয়ে আব্বা সেখানে গেলে আমাদের দেখভাল করার কয়দিন পর আমাদের শিকারপুর বর্ডার দিয়ে পার করেছিলেন তারা।

আব্বা ইনভাইটেড বেঙ্গল সরকারি চাকরি করতেন। আর চাকরি করার কারণে কলকাতার অনেক এলাকার চেনাজানা ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময়ই আমরা নার্সিং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে কৃষ্ণনগরেরএকটি হাসপাতালে শরণার্থী ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেওয়া শুরু করি আমরা দুই বোন মিলে।

যুদ্ধকালীন সময়ে আহত মুক্তিযোদ্ধা এমনকি ডায়রিয়া কলেরা রোগের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ডাক্তার নার্স চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সেসময় চিকিৎসক ছিল তারা স্বাস্থ্যখাতে সঠিকভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে না পারায় অন্যদেরও এগিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন।

তখন আব্বা আমাদের বললেন যে আমাদের তো কোন ছেলে নাই। তোমরা দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা কাজে এগিয়ে আসো। দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করো ।

তখন আর কি করার আমাদের যেই সেবা স্বাস্থ্যসেবার প্রাথমিক কাজগুলো আমরা করতাম। কুষ্টিয়ার ডাক্তার কোরাইশী, ডাক্তার আলী আহসান, সহ নাম না জানা অনেক ডাক্তাররা । এছাড়াও সেখানে চিকিৎসাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ডাক্তার সাদ মোহাম্মদ ছিলেন, চট্টগ্রামের প্রদীপ কুমার সাহা সহ অনেকেই ছিলেন।

ডাক্তাররা যখন রোগী সামলাতে পারছিল না তখন আলাদা আমাদের জন্য ট্রেন্ড করে দেওয়া হলো। সেখানে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযোদ্ধা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কলেরায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতাম।

সে সময়ে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। আমাদের নিজের চোখে দেখা লাশ ধরে ধরে একটার পর একটা করে ট্রাকের উপর ফেলছিল।কারণ লাশ সৎকারের ব্যবস্থা সেসময় উন্নত ছিল না।


লুলু ই ফেরদৌস বলেন, ‘খোলা মাঠে তাবুতে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেন। একদিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক মুক্তিযোদ্ধা আসেন। তার অবস্থা বেশ গুরুতর ছিল। মাথা দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। সেসময় তাড়াহুড়া করে সুচ আমার হাতের মধ্যে ঢুকে রক্তক্ষরণ শুরু হলে আমি আমার হাতের দিকে না তাকিতেতাকে বাচানোর চেষ্টা করেও বাচাতে পারিনি। আমার হাতের ওপরই মারা যান সেই যোদ্ধা। এভাবেই অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে সেবা দিয়েছি। খাবার দিয়েছি। তাঁদের কষ্ট দেখলে মুখে ভাত তুলতে পারতাম না। সুস্থ হয়ে অনেকেই যুদ্ধে চলে যেতেন।’

ডিসেম্বরে দুই বোন খবর পান, দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেদিন আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন তারা। ভারতীয়দের মিষ্টিমুখ করিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে পরিবারসহ কুষ্টিয়ায় ফিরে আসেন তারা। আসার সময় ভারত সরকার তাঁদের কাজের স্বীকৃতিপত্র দেয়।

আমরা আজ আছি আগামীতে থাকবো না । আমাদের যে প্রজন্ম থাকবে তারা আমাদের দেশাটাকে কিভাবে রাখবে। সেজন্য এ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের যেভাবে আমাদের ভালো রেখেছে আমাদের সন্তানদেরও যেন সেভাবে স্বযত্নে রাখে।

   

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বগুড়ার মৃৎশিল্প



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়া গ্রামে প্রবেশ করতেই মাটির মিষ্টি পোড়া ঘ্রাণে মন ভরে যায়। আর গ্রামের রাস্তার দুই পাশে দেখা মেলে মাটির ঢিপি, আর চারিধারে সাজিয়ে রাখা বাহারি মাটির তৈজসপত্র।

গ্রামের নারী, শিশু, বৃদ্ধ বয়সী নারী পুরুষও মৃৎশিল্পের কাজ করেন। সাংসারিক কাজের ফাঁকে তারা বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কেউ মাটি কাটছেন, কেউ মাটির গোলা তৈরি করছেন। কেউবা তৈরি করা তৈজসপত্রগুলো চুল্লিতে পোড়াচ্ছেন, আবার কেউ রং করছেন। তবে দই এর সরা গ্লাস, বাটি, খুটিই তাদের বাপ দাদার আমলের পেশাকে টিকিয়ে রেখেছে।


আড়িয়া পালপাড়া গ্রামের মৃৎকারিগর বিশু পাল বলেন, আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগেও তার এখানে তৈরি হতো বড়-ছোট পাতিল, কলসি, সানকি প্রভৃতি। কিন্তু এগুলো আর ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী নন বলে তৈরি করা হয় না। তবে দই ব্যবসায়ীদের জন্য তারা এখনও টিকে আছেন। তিনি জানান, এ গ্রামের ১২০টি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। এখানকার দইয়ের জন্য তৈরি সানকি, সারা ও ছোট কাপ বগুড়াসহ গাইবান্ধা এবং কুমিল্লায় বিক্রি করা হয়। একটি পরিবারের প্রায় পাঁচজন মিলে প্রতিদিন এক হাজার দইয়ের গ্লাস তৈরি করা যায়। বিক্রি করা যায় প্রায় এক হাজার ৩০০ টাকায়।

প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্যের ভিড়ে কমে গেছে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের কদর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এখনও অনেকেই কাজ করছেন মৃৎশিল্পী হিসেবে। আল্পনা পাল নামের এক নারীকে দেখা যায় মাটির তৈরি তৈজসপত্র রোদে শুকিয়ে দিতে। আল্পনা বলেন, ' আমার স্বামীর বাপ, দাদা এই মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। আমার স্বামীও মৃৎশিল্পী।'

কল্পনার তিন মেয়ে আর দুই ছেলে। কল্পনার স্বামী মাটির তৈজসপত্র তৈরি করেন আর কল্পনা ও তার ছেলেমেয়েরাও একইভাবে এই কাজ করেন। এই শিল্প ছাড়া তারা অন্য কাজ করতে পারেন না।

সংসারের কাজের পাশাপাশি এই এলাকার অনেক নারীকেই দেখা যায় দই এর হাঁড়ি তৈরি করতে। সুমন নামের এক মৃৎশিল্পী বলেন, ‘মাটির হাঁড়ি পাতিল এখন আর চলে না। ছোটকাল থেকে বাপ দাদার সঙ্গে কাজ করছি। এক সময় মাটির জিনিস খুব ব্যবহার হতো। দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিস বের হওয়ায় এখন মাটির জিনিস চলে না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা আমরা রয়েছি তাদের চলা খুবই কষ্ট।' 

মাটির যেকোনো পাত্র তৈরিতে কাদা প্রস্তুত করতে হয় প্রথমে। এরপর নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য প্রস্তুতকৃত কাদা গোল্লা বা চাকা তৈরি করতে হয়। পরে তা চাকার মাঝখানে রাখা হয়। চাকা ঘুরতে ঘুরতে মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় তৈজসপত্র। এরপর তা শুকিয়ে স্তুপ আকারে সাজিয়ে চুল্লিতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পোড়ানোর পর পণ্যের গায়ে রঙ করতে হয়। বিলুপ্ত প্রায় এই পেশাটি বেশ যত্নের সাথে আগলে রেখেছেন মৃৎশিল্পীরা।

মৃৎশিল্পীদের ভাষ্যমতে, মাটির তৈরি অন্যান্য পণ্যের কদর এখন তেমন না থাকলেও দইয়ের সরা ও হাঁড়ি-পাতিলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। দইয়ের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় বগুড়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বলা যায়, এই দইয়ের পাত্রের চাহিদার উপর নির্ভর করেই জেলার মৃৎশিল্প টিকে আছে।


তারা বলেন, দই-এর পাত্র তৈরি করেই টিকে আছে আমাদের পাল পাড়ার দুই হাজার পরিবার। সনাতন পাল নামের একজন মৃৎশিল্পী বলেন, 'এখন সব জিনিসের দাম বেশি। মাটির দাম বেশি, লাকরি, খরির দাম বেশি তাই আমাদের খুব বেশি লাভ হয়না। তবুও এই বাপ, দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।' 

জানা যায়, প্রতিদিন শত শত মণ দই তৈরি হয় এ জেলায়। দই সাধারণত মাটির তৈরি পাত্রেই রাখা হয়। বগুড়া জেলার চাহিদা মিটিয়ে এই দই এবং এর পাত্রও বিভিন্ন জেলায় যায়। আর সে কারণেই জিবীকা নির্বাহের জন্য এখনও এই পেশাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন জেলার অনেক মৃৎশিল্পী।
মৃৎশিল্পীরা বলেন, একটি দইয়ের পাতিল বানাতে ৩০ টাকা, সড়া বানাতে ৬ টাকা ও কাপ বানাতে ৪ টাকার মতো খরচ হয়। স্থানীয় বাজারে এসব দইয়ের পাতিল ৫০ টাকা, সড়া ৮-১০ টাকা ও কাপ ৯ টাকায় বিক্রি করা হয়।


বগুড়া সদরের নন্দীগ্রাম, শেখেরকোলা ও গাবতলী উপজেলায় গিয়েও দেখা মেলে এই পাল পাড়া। এইসব গ্রামে ঘুরে জানা গেল, মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জীবন ধারণের কথা। তারা জানালেন, মাটির কলস, হাঁড়ি, দইয়ের সড়া, বাসন, পেয়ালা, সুরাই, মটকা, পিঠা তৈরির নানা ছাঁচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আগে বাসাবাড়িতে গ্রহণযোগ্য ছিল। বর্তমানে এসব তৈজসপত্রের ব্যবহার গ্রামে চললেও শহরে ব্যবহার বিলুপ্ত প্রায়। তাই তাদের আয়-রোজগারও এখন কমে গেছে। তবে দইয়ের সড়া ও হাঁড়ির ব্যবহার এখনও আছে। ফলে এ শিল্পটিকে আঁকড়ে টিকে থাকার আশার আলো এখনো দেখেন তারা।

এই মৃৎশিল্পকে ধরে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া বিসিক উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাওয়ার পথে এই শিল্পটি। এই শিল্প হারিয়ে গেলে মৃৎশিল্পীরা বিপদগ্রস্ত হবেন। তাই মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।' 

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

বিয়ের কার্ডে ভাইরাল বাংলাদেশি দম্পতি



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজকাল বিয়ে নিয়ে মানুষের নানা ধরনের প্রথা/ট্রেন্ড দেখতে পাওয়া যায়। কেউ বাইক নিয়ে বরযাত্রী যাচ্ছে, কেউ কনে সেজে নিজেই বর আনতে যাচ্ছে আবার কেউবা নেচে-গেয়ে ভিডিও আপলোড করছে সামাজিক মাধ্যমে। মূলত এসব কিছুর পেছনে থাকে একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো অন্যের চেয়ে নতুনত্ব কিছু করা। আর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া, আলোচনায় থাকা।

সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় এমনই এক বিয়ে নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশি এক দম্পতির বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। প্রতিবেদন- এনডি টিভি।

সাধারণত বিয়ের কার্ড বা নিমন্ত্রণ পত্রে দামি চকলেট, বাদাম, খেজুর এবং কুকিজসহ বর-কনের ছবি সংযুক্ত থাকে। আর এই কার্ড বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনে তৈরি করা হয়ে থাকে।

কিন্তু সানজানা তাবাসসুম স্নেহা ও মাহজিব হোসেন ইমন নামে ওই বাংলাদেশি দম্পতি এক অনন্য ডিজাইনের কার্ড তৈরি করেছেন তাদের বিয়ে উপলক্ষ্যে। যা দেখে অবাক হয়েছেন নেটিজেনরা। গবেষণাপত্রের মতো করে তৈরি করা হয়েছে এই বিয়ের কার্ড। যাতে শিরোনামে বিবাহের স্থানসহ দম্পতির নাম লেখা রয়েছে।

কার্ডটিতে কুরআনের আয়াতের সাথে একটি ভূমিকা রয়েছে যেখানে বিয়ের তাৎপর্য, দম্পতির প্রথম দেখা হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর পর্যায়ক্রমে তাদের বিবাহের প্রক্রিয়ার বিবরণ এবং উপসংহারের রূপরেখা দেয়া হয়েছে। উপসংহারে নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন জীবনে পা রাখার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে।

বিয়ের কার্ডটি ওই দম্পতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করায় রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এক্স- এ শেয়ার করা ওই পোস্টে ৩.৩ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ এবং ৬৯,০০০ লাইক পড়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু মন্তব্যও জমা হয়েছে ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে। নেটিজেনরা বিষয়টাকে খুব পছন্দ করেছেন, তারা এটাকে একটি হাস্যকর মাস্টারপিস বলে অভিহিত করেছেন।

একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটি একটি বিয়ের কার্ড।"

অন্য একজন মজা করে লিখেছেন, "তাহলে আপনি আমাকে বলছেন এটা গবেষণাপত্র নয়? আমি তো বিয়েতে উপস্থিত হওয়ার জন্য পিয়ার রিভিউ লিখতে বসেছিলাম।"

তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, "২ গবেষক বিয়ে করছেন। বুঝতে পেরেছেন। তারা একটি QR কোড ব্যবহার করতে পারত যা গুগোল ম্যাপস দিয়ে খোলা হতো।"

আরেকজন লিখেছেন, "এটি একটি থিসিসের মতো দেখাচ্ছে।"

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

বাংলাদেশের আবাসিক পাখি



অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান. পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ছবি: লেখক।

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ছবি: লেখক।

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান সৃষ্টিকর্তার তিন সুন্দর সৃষ্টি হলো ফুল, প্রজাপতি ও পাখি। ফুল দেখে আমরা যেমন মুগ্ধ হই তেমনি মুগ্ধ হই উড়ন্ত প্রজাপতি ও পাখি দেখে। তবে পাখির সৌন্দর্য্য ও ওড়াউড়িই যে শুধু আমাদের মুগ্ধ করে, তা কিন্তু নয়। বরং পাখির গানও দেয় অনাবিল আনন্দ। তবে, এর পাশাপাশি ওরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ব্যাপক অবদান রাখে। সত্যিই বর্নিল পাখিগুলোর মতো এমন সুন্দর প্রাণী পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নানা আকার, রং ও ঢঙের পাখিগুলো যখন ওদের ডানায় ভর করে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায় তখন দেখতে কতই না ভালো লাগে? পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১০,০০০ প্রজাতির (Species) পাখির বাস। আর অনুমান করা হয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলোর মোট সংখ্যা ২০ থেকে ৪০ হাজার কোটি। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ১২শ প্রজাতির কিছু বেশি পাখি বাস করে। জানামতে, বাংলাদেশের পাখির তালিকায় এ পর্যন্ত কম-বেশি ৭২২টি প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে। 

চাঁপাইনবাগঞ্জের রহনপুরে দেশের বৃহত্তম পাখি মদনটাক। ছবি: লেখক

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বিগত কয়েক শতকে দু’শতাধিক প্রজাতির পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১২শ প্রজাতির পাখি নানা কারণে হুমকির মুখোমুখি অবস্থান করছে। অদূর বা দূর ভবিষ্যতের যে কোনো সময় এরা হয়তো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 

এবার আসা যাক পাখি কি সে কথায়। পাখি হলো বিভিন্ন আকার, ওজন ও আকৃতির উষ্ণ-রক্তবিশিষ্ট মেরুদণ্ডি প্রাণী যাদের দেহ পালকে আচ্ছাদিত, চোয়ালের উপর রয়েছে দাঁতবিহীন শক্ত ঠোঁট বা চঞ্চু (Beak), হৃৎপি- চার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, যাদের স্ত্রীরা শক্ত খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে, দেহের বিপাকীয় হার উচ্চ, হাড় ফাঁপা ও কঙ্কাল হালকা এবং যারা সাধারণত উড়তে পারে।

জীবাস্ম বা ফসিল (Fossil) রেকর্ড থেকে জানা যায় পাখিরা থেরোপড (Theropod) দলের পালকযুক্ত পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তিলাভ করেছে যারা প্রথাগতভাবে সরিসিয়ান ডায়নোসরদের (Saurischian dinosaurs) অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন যে, এরা অরনিথোসেলিডা-এর (Saurischian dinosaurs) অর্ন্তভুক্ত। যদিও একসময় জার্মানিতে প্রাপ্ত মধ্য জুরাসিক যুগের (Mid Jurassic Era - প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন বছর আগের) আর্কিওপটেরিক্স লিথোগ্রাফিকা (Archeopteryx lithographica)-কে পাখির সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম মনে করা হতো- যাদের চঞ্চুর পরিবর্তে ছিল চোখা দাঁতযুক্ত শক্ত চোয়াল, শক্ত হাড়যুক্ত লম্বা লেজ ও যারা ভালোভাবে উড়তে পারত না। এদের মধ্যে সরীসৃপ ও পাখির এক চমৎকার যোগসূত্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নানা গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, চীনে প্রাপ্ত ক্রিটাসিয়াস যুগের(Cretaceous Era- প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগের) কনফুসিয়াসওরনিস স্যাঙ্ককটাস (Confuciusornis sanctus) হলো সত্যিকারের চঞ্চুযুক্ত পাখির সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম। আধুনিক কালের পাখিগুলো এসব ডায়নোসর যুগের পাখি (থেরোপড) থেকে যুগ যুগ ধরে বিবর্তিত হয়েছে।

রাজশাহী শহরের একটি বটগাছে দেশের ক্ষুদ্রতম পাখি ফুলঝুরি। ছবি: লেখক

পাখি, প্রজাপতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিস্তৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- ১. উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল - রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। ২. উত্তরাঞ্চল- ময়মনসিংহ বিভাগ। ৩. উত্তর-পূর্বাঞ্চল - সিলেট বিভাগ। ৪. কেন্দ্রীয় অঞ্চল- বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইল জেলা। ৫. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল- বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা। ৬. দক্ষিণাঞ্চল- বৃহত্তর নোয়াখালি জেলা ও বরিশাল বিভাগ। ৭. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- খুলনা বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা।

বাংলাদেশের পাখির তালিকায় কমবেশি যে ৭২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৩৪০ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করে, অর্থাৎ এরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। এরাই হলো এদেশের আবাসিক পাখি (Resident Bird)। বাদবাকি প্রজাতিগুলো পরিযায়ী (Migratory - অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়), পন্থ-পরিযায়ী ও ভবঘুরে বা যাযাবর। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিশাল অংশ এদেশে আসে শীতকালে যারা শীতের পরিযায়ী পাখি (Winter Migrant) নামেও পরিচিত। এরা এদেশে বংশবিস্তার করে না। এছাড়াও কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল (Cuckoo) ও হালতি বা সুমচা (Pitta)) পাখি। এরা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী (Summer Breeder) পাখি নামে পরিচিত। এছাড়াও বেশকিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এদেশে অনিয়মিত। হয়তো এক বছর এল, এরপর আবার ৫ বা ১০ বছর পর এল, অন্যদের মতো প্রতি বছর এল না। এদেরকে তাই যাযাবর বা ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি বলে। আর এদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশে আসা সকল পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এরা। আবার কোনো কোনো প্রজাতির পাখি অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক (Asian Brown Flycatcher), বন খঞ্জন (Forest Wagtail)ইত্যাদি। এরা পন্থ-পরিযায়ী (Passage-migrant) পাখি নামে পরিচিত।

শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলের উপর দিয়ে উড়ছে একঝাঁক বালিহাঁস। ছবি: লেখক

আবাসিক, পরিযায়ী, ভবঘুরে ও পন্থ-পরিযায়ী পাখি মিলে এদেশে কমবেশি যে ৭২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে সেগুলো ২৩টি বর্গ ও ৯৩টি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হলো এদেশের মোট পাখির অর্ধেকই একটি বর্গ প্যাসারিফরমেস বা শাখাচারী-এর ১৯টি পরিবারের সদস্য। আমাদের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে আকার, ওজন ও রঙে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে এদের জীবণযাপন, আবাস, খাদ্যাভাস ও আচার-আচরণে। আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে যেমন আছে জলা বা সৈকতের পাখি, তেমনি আছে লোকালয় ও বনজঙ্গলের পাখি। এই পাখিগুলোর সবগুলোকেই যেমন একই জায়গায় বা একই মৌসুমে দেখা যায় না, তেমনি সমান সংখ্যায়ও দেখা মেলে না। তাছাড়া ৯৩টি গোত্রের মধ্যে ১৮টি গোত্রের কোনো পাখিই এদেশের আবাসিক পাখি নয় যার মধ্যে সারস (ক্রেন), বিভিন্ন প্রজাতির চা-পাখি, খোঁয়াজ, রামঠেঙ্গি, বিভিন্ন প্রজাতির ওয়ার্বলার, রোজফিঞ্চ ও বান্টিং উল্লেখযোগ্য।

ঢাকার দিয়াবাড়িতে অতি সুন্দর পুরুষ লাল মুনিয়া। ছবি: লেখক

এদেশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো প্রজাতিই দেখতে বেশ সুন্দর, যেমন- লালশির ট্রোগন (Red-headed Trogon), দুধরাজ (Paradise Flycatcher), পাতা বুলবুলি (Leafbird), আলতাপরী ((Scarlet Minivet), মৌটুসি (Purple-rumped Sunbird), নীলটুনি (Purple-rumped Sunbird), শ্বেতাক্ষী (Oriental White-eye), লাল মুনিয়া (Red Avadavat) ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে কোনটি বেশি সুন্দর তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। আসলে পাখির রাজ্যে কোনটি সবচেয়ে সুন্দর তা বলা কঠিন। কারণ, একেকটি পাখি একেক দিকে সুন্দর। একেকজনের দৃষ্টিতে একেক পাখিকে সুন্দর মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সুন্দর পাখিটিকে কারো কাছেই অসুন্দর লাগবে না। সৌন্দর্য বিবেচনায় এদেশের পাখিগুলোর মধ্যে পুরুষ নীলটুনি বা দুর্গাটুনটুনিই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। যদিও লম্বালেজের পুরুষ ময়ূর (বর্তমানে বিলুপ্ত) এবং দুধরাজও অত্যন্ত সুন্দর। তাছাড়া টকটকে লাল পুরুঘ লাল মুনিয়াও কম সুন্দর নয়।

 

সাভারের জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের বট গাছে বটকল। ছবি: লেখক

এবার এদেশের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম আবাসিক পাখি প্রসঙ্গে আসছি। উচ্চতা-দৈর্ঘ্য-ওজনের ভিত্তিতে বর্তমানে এদেশের বৃহত্তম আবাসিক পাখির নাম মদনটাক (Lesser Adjutant Stork) যার উচ্চতা ১১৫-১২০ সেমি, দৈর্ঘ্য ৮৭-৯৩ সেমি ও ওজন ৪.৫ কেজি। আর ক্ষুদ্রতম পাখির নাম ছোট ফুলঝুরি (Pale-billed Flower-pecker) যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৮ সেমি ও ওজন মাত্র ৬.৩ গ্রাম। অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম পাখির নাম উটপাখি (Ostrich- দৈর্ঘ্য ২৭৫ সেমি ও ওজন ১০০-১১৫ কেজি) ও ক্ষুদ্রতম পাখির নাম মৌগুঞ্জন পাখি (Bee Hummingbird- দৈর্ঘ্য মাত্র ৫-৬ সেমি ও ওজন মাত্র ১.৯৫-২.৬০ গ্রাম)। 

এদেশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে নদী, জলা ও সৈকতের পাখি, তেমনি রয়েছে লোকালয়, বনজঙ্গল, মাঠ, ঘাসবন, নলবন ও ঝোপঝাড়ের পাখি। কোনো কোনো পাখিদের কেবল বনেই দেখা যায়, যেমন- বনমোরগ (Red Jungle Fowl), মথুরা (Kalij Pheasant), কাঠময়ূর (Grey Peacock Pheasant), ধনেশ (Hornbill), কালো বাজ (Black Baza), পাহাড়ি নীলকন্ঠ (Oriental Dollarbird), মদনা টিয়া (Red-breasted Parakeet) ইত্যাদি আরও কত কী? কিছু কিছু পাখি শুধু মানুষের আবাস এলাকা বা আশেপাশে থাকে, যেমন- চড়ুই (Houuse Sparrow), টুনটুনি (Tailor Bird), ভাত শালিক (Common Myna), কাক (House Crow) ইত্যাদি।

সুন্দরবনের কটকায় ওড়ার মুহূর্তে একটি বড় সাদা বক। ছবি: লেখক

আবার কোনো কোনো পাখিদের শুধু খাল-বিল, নদী-নালা ও বিভিন্ন ধরনের জলাশয়েই দেখা যায়, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস (Ducks), বক (Heron), সারস (Stork), কাস্তেচরা (Black-headed Ibis), ডুবালু বা ডুবুরি (Grebe)ইত্যাদি। কিছু পাখি আছে যারা শুধু সুন্দরবনেই বাস করে, অন্য কোথাও না, যেমন- সুন্দরী হাঁস (Masked Finfoot), সুন্দরী সুমচা (Mangrove Pitta), লাল মাছরাঙা ((Ruddy Kingfisher), সিন্ধু ঈগল (White-bellied Sea Eagle)  ইত্যাদি।

কিছু কিছু পাখিকে বনজঙ্গল, লোকালয় বা বাদা বন (Mangrove Forest) প্রভৃতি সব পরিবেশেই দেখা যায়, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির হরিয়াল (Green Pigeon), তিলা ঘুঘু (Spotted Dove), দোয়েল (Magpie Robin), বুলবুলি (Bulbul), নীলটুনি, ফুলঝুরি (Flowerpeckers)  ইত্যাদি। মাঠের বা ক্ষেতখামারের পাখিদের মধ্যে রয়েছে হট্টিটি (Lapwings), খরমা (Indian Thick-knee), নীলকন্ঠ ((Roller), কসাই (Shrike), ফিঙে (Drongo), ভরত (Lark), ইত্যাদি।

ঘাসবনের পাখিদের মধ্যে রয়েছে নাগরবাটই (Barred Buttonquail), টেকটেকি (Striated Grassbird), মুনিয়া, ধানটুনি (Zitting Cisticola), কালোবুক বাবুই (Black-breasted Weaver) ইত্যাদি। ঝোপঝাড়ের পাখির মধ্যে রয়েছে কানাকুক্কা (Coucal), টুনটুনি ইত্যাদি। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, সব প্রজাতির পাখি যেমন একই জায়গায় বা একই মৌসুমে দেখা যায় না, তেমনি সমান সংখ্যায়ও দেখা মেলে না।

বাইক্কা বিলে বালিহাঁসের ছবি তোলায় ব্যস্ত লেখক। ছবি: ড. জীবন চন্দ্র দাস

E-mail:[email protected], [email protected]

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

পিকনিক মৌসুমে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো



বর্ণালী জামান ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শীত সমাগমে দর্শনার্থীদের মাঝে বিনোদন স্পটগুলোতে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ে। সাধারণত শীত এলেই ভ্রমণপিপাসু মানুষের বিনোদন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায় অনেকাংশেই। 

বিশেষ করে শীত মানেই পিকনিক উৎসব। শীতের ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে স্থানীয় বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন সৌখিন মানুষেরা।

শীত মৌসুমে পিকনিকে অংশ নিয়ে দেহমনে প্রফুল্ল আনতে আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা নিহায়েত কম নয়। এই সময় তাই পিকনিক স্পট গুলোতেও থাকে ভেজায় ভিড়। এ মৌসুমকে ঘিরে রংপুরের পিকনিক স্পটগুলো এখন প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, স্থাপনার সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের জন্য রঙ করা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ দর্শনার্থীদের আনন্দদানের নানাবিধ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণের চেষ্টাও চলছে।

রংপুর এলাকায় যে সকল পিকনিক স্পট বা বিনোদন পার্ক রয়েছে তার মধ্যে রংপুর পাগলাপীর এলাকার ভিন্নজগৎ, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, মাহিগঞ্জ এলাকার তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর চিড়িয়াখানা অন্যতম। এছাড়াও শহরের চিকলি ওয়াটার পার্ক, মিঠাপুকুরের ইকোপার্কসহ আরও কিছু স্থান রয়েছে, যে জায়গাগুলোতেও বিনোদন প্রত্যাশী মানুষের উপস্থিতিতে ব্যাপক সমাগম ঘটে।

এ নিয়ে ভিন্ন জগতের দায়িত্বরত সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম জানান, বিনোদন পার্কগুলোতে সারা বছরের ব্যবসায়িক সফলতা সাধারণত মৌসুমের ব্যবসার উপর অনেকটা নির্ভর করে। সেই লক্ষ্যে ভিন্নজগৎ কর্তৃপক্ষ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও এগিয়ে চলছে। প্রতিবছরের মতো এ বছর শীত মৌসুমেও ব্যবসায় লাভের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। 

পীরগঞ্জের আনন্দনগরেও বিনোদনপ্রেমীদের অধিক হারে আকর্ষণ করার নানাবিধ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যুক্ত করা হচ্ছে বেশকিছু নতুন নতুন রাইডসহ নির্দশন। 

সব মিলিয়ে নির্মল আনন্দদানে বিনোদন পার্কগুলো আরও বেশি আন্তরিক হবে- এই প্রত্যাশা বিনোদন প্রেমীদের। 

 

  বিজয়ের ৫০ বছর

;