বিজয়ের বীরদের কাগজে-কলমে স্বীকৃতি দিলেও তাদের ‘মনে’ রাখিনি

  বিজয়ের ৫০ বছর



ড. এমদাদ হাসনায়েন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের বিজয়ের পঞ্চাশ বছর, সকলকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সকল মানুষ আত্ম বলিদান করেছেন তাদের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করি ও যে সকল মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দুঃখী দেশটি আমাদের ভালোবাসার দেশ, মমতার দেশ। যারা জীবন বাজি রেখে এই স্বাধীন দেশটি আমাদের এনে দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

মানুষের যতগুলো অনুভূতি আছে তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে ভালোবাসা। আর এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালোবাসা সম্ভব তার মাঝে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হতে পারে শুধুমাত্র মাতৃভূমির জন্যে। যারা কখনো নিজের মাতৃভূমির জন্যে ভালোবাসাটুকু অনুভব করেনি তাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউই নয়। আমাদের খুব সৌভাগ্য আমাদের মাতৃভূমির জন্যে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার ইতিহাস হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস। যখন কেউ এই আত্মত্যাগ, বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস জানবে, তখন সে যে শুধুমাত্র দেশের জন্যে একটি গভীর ভালোবাসা আর মমতা অনুভব করবে তা নয়, এই দেশ, এই মানুষের কথা ভেবে গর্বে তার বুক ফুলে উঠবে।

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঐতিহাসিক কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মাঠে এক জনাকীর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে কুষ্টিয়ায় স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলনের দৃশ্য। ছবিঋণ. ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম

স্বাধীনতার ৫০ বছরে শ্রদ্ধাভরে স্মরণীয় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অগণিত শহীদের রক্ত এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ, ত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা আর তার বীরত্বগাথা ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে সকল ব্যক্তি দেশের জন্য কাজ করেছেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর এসব বীরের চূড়ান্ত তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে ৬৭৬ জনকে খেতাব দেওয়া হয়। এই খেতাব ছিল চার স্তরের। তারমধ্যে কুষ্টিয়ার খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ১১ জন।

তারা হলেন- শহীদ শরফুদ্দীন আহমেদ বীরউত্তম, শহীদ আবু তালেব বীরউত্তম, শহীদ খালেদ সাইফুদ্দীন তারিক বীরবিক্রম, শহীদ দিদার আলী বীরপ্রতীক, শহীদ কে এম রফিকুল ইসলাম বীরপ্রতীক, শহীদ আবদুল আলিম বীরপ্রতীক, এজাজুল হক খান বীরপ্রতীক, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বীরপ্রতীক, শহীদ হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীক, শহীদ শামসুদ্দীন আহমেদ বীরপ্রতীক, আতাহার হোসেন বীরপ্রতীক, মোসলেম উদ্দিন বীরপ্রতীক।

স্বাধীনতার পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শন ও তাদের গৌরবময় স্মৃতি রক্ষায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের নিমিত্তে কুষ্টিয়ার মজমপুরের ‘ঘৃণিত রাজাকার চত্বর’ বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম নির্মিত ভাস্কর্য।

২০০০ সালের বিজয় দিবসে রাত ১২:০১ মিনিটে এই ভাস্কর্যটি প্রথম স্থাপিত হয় কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সামনে। উদ্বোধন করেছিলেন ড. আবুল আহসান চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাছিম উদ্দিন আহম্মেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজামান সেন্টু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি পিনু, কবি খৈয়াম বাসার, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সেক্রেটারি আমিরুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শাহীন সরকার, চিত্রশিল্পী মীর জাহিদ, আলোকচিত্রী মুক্তারুজ্জামান টিপু, কামরুজ্জামান, মোফাজ্জেল হোসেন প্রমুখ।

পরবর্তীতে জাতীয়ভাবে ঘৃণিত রাজাকার ভাস্কর্য নির্মাণ কমিটির উদ্যোগে ভাস্কর শিল্পী ইতি খানের ডিজাইন ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই ভাস্কর্যটি শহরের প্রবেশ মুখে ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল মজমপুর গেট চত্বরে পুনস্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত।

ভাস্কর্য নির্মাণের পর থেকে তরুণ প্রজন্মসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা ঘৃণিত ওই ভাস্কর্যটির গায়ে পাথর নিক্ষেপ করে রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি প্রতীকী ঘৃণা প্রদর্শন শুরু করেন।

স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি ভাস্কর্যটি কংক্রিট ঢালাইয়ের একটি খুঁটির সাথে স্থাপন করা হয়, যার রক্তাভ জিহ্বা দেওয়া হয় ১৭ হাত! জিহ্বার মাথায় গজাল মেরে ভাস্কর শিল্পী ইতি খান বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে নতুন প্রজন্মকে জাগিয়ে তোলা ও রাজাকারদের জঘন্য অপরাধের প্রতি আমৃত্যু ঘৃণা প্রদর্শনের জন্যই তিনি ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন।’ ভাস্কর্য ইতিহাসের কথা বলে। এরপর শুরু হয় কুষ্টিয়াতে বাঙালি চেতনাভিত্তিক কাজ করা। আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দাঁড়িয়ে সেই ভাস্কর্যটির বেহাল দশা, দেখার কেউ নেই!

যে সীমাহীন ত্যাগের মধ্য দিয়ে

স্বাধীনতা এসেছিলো, তা মানুষের মনে

কী স্বপ্ন জন্ম দিয়েছিলো!

বাস্তবে তারা কী পেলেন, এবং

কোন আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছিলো এবং

শেষ পর্যন্ত কোন পথে গেল আমাদের মা-মাটি-বদ্বীপ বাংলাদেশ কুষ্টিয়া।...

কুষ্টিয়ার যে সমস্ত বীরসন্তান শহীদ হয়েছেন, যুদ্ধাহত হয়েছেন, অংশগ্রহণ করেছেন, যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন, সবাই তারা মুক্তিযোদ্ধা, নেই ভিন্নমত, কেউ উঁচু সারির, কেউ সারণির নিম্নে, এটুকু প্রভেদে না আসে যায় কিছু। অসামান্যে সামান্য যোগেই হয়েছে সম্ভব, আজ তাই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছে সুন্দর কুষ্টিয়া।

যুদ্ধ মানুষের ক্ষয় করে কিন্তু কোন কোন যুদ্ধ সৃষ্টির আনন্দে ভাস্বর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এমনই এক দৃপ্ত ইতিহাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর তাদের সেই দেশপ্রেম, সাহস ও বীরত্বের কথা আমরা ৫০ বছরেও যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এই বীরদের মুখে বা কাগজে কলমে স্বীকৃতি দিলেও তাদের কথা আমরা আজ মনে রাখিনি।

স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারেনি যে তারা কতো বড় বীরের জাতি! দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই উজ্জ্বল আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরা ছিলো একটি জাতীয় কর্তব্য। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অগণিত সাধারণ মানুষের অসাধারণ যোদ্ধায় পরিণত হওয়ার রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। ছাত্র-যুবক, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই দেশ-মাতৃকার ডাকে শত্রুর বিরুদ্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র। ১৯৭১ সালে তারা প্রশিক্ষিত ও অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, তা অবিশ্বাস্য।

অনেক ঘটনা গল্প-কাহিনীর চেয়েও রোমাঞ্চকর। এরকম একটি যুদ্ধে আমাদের পূর্বপুরুষরা যদি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে না পড়তেন তবে আমরা এ রকম একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেতাম না। মুক্তিযুদ্ধ যেমন শোক ও বেদনার, তেমনি বীরত্ব ও গৌরবের। এই ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলার ইতিহাসে এক মহান অধ্যায় আমাদের স্বাধীনতা।

লেখক: ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন, ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক

  বিজয়ের ৫০ বছর

প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এগিয়ে যায় নিজের সক্ষমতাকে সঙ্গী করে



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিছুদিন যাবত প্রায় শুনে থাকছি এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া অনেক বেশী। আগে তো এই ভাড়া ছিলো এখন কেনো এতো বেশী? প্রি-কোভিডে অর্ধেক ভাড়ায় বিদেশ যাওয়া যেতো, এখন অনেক বেশী টাকা প্রয়োজন হয়। ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্ন শুনতে হয় এয়ারলাইন্স ও ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীদের।

কোভিড এর মাঝপথে বিশেষ করে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জেট ফুয়েলের প্রাইস ছিলো ৪৬ টাকা প্রতি লিটার। বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ১১৮ টাকা প্রতি লিটার। মাস চারেক আগেও ছিলো ১৩০ টাকা লিটার। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ১৬০ শতাংশের অধিক। পূর্বে এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ব্যয়ের ৪০-৪২ শতাংশ ব্যয় হতো জেট ফুয়েল ক্রয়ে। আর বর্তমানে পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৫০ শতাংশের অধিক ব্যয় হয় জেট ফুয়েল বাবদ।

এয়ারক্রাফট কিংবা এয়ারক্রাফট যন্ত্রাংশ আমদানি বাবদ কাস্টমস ডিউটি বেড়েছে প্রি-কোভিড থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ। যা সরাসরি ভাড়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে।

বাংলাদেশে কোভিড কালীন সময়ে বিমানবন্দর উন্নয়ন চার্জ ও সিকিউরিটি বাবদ দু’টি চার্জ নতুন করে সংযোজিত হয়েছে যা প্রি-কোভিডে ছিলো না। এই চার্জগুলোও ভাড়ার উপর প্রভাব ফেলেছে।

এমআরও সেন্টারগুলোতে এয়ারক্রাফট মেইনট্যানেন্স এর জন্য খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে কোভিড পরবর্তীতে মেইনট্যানেন্স সিডিউল না পাওয়ার কারনেও বিশ্বের অধিকাংশ এয়ারলাইন্স তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট সিডিউল মেইনটেইন করতে পারছে না। ফলে সিট ক্যাপাসিটির চেয়ে যাত্রী চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ভাড়া বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করেছে।

বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ডলারের দামের সাথে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারনে কোভিড-১৯ কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব মারাত্বকভাবে এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া বৃদ্ধিতে নিয়ামক হিসবে কাজ করেছে। বছরখানেক আগেও ১ ডলারের বিনিময়ে ৮৩/৮৪ টাকা পাওয়া যেত এখন সেখানে ১ ডলারের বিনিময়ে ব্যয় করতে হয় ১১৫-১২০ টাকা। ফলে ভাড়ায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সগুলো টিকেট বিক্রয় করছে টাকায় কিন্তু সকল ধরনের খরচগুলো বহন করছে ডলারে। বিশেষ করে ইন্স্যুরেন্স, লিজিংমানি, ব্যাংক ইন্টারেস্ট, ফুয়েল প্রাইস, বিভিন্ন দেশের এ্যারোনোটিক্যাল চার্জ, আইএটিএ পেমেন্টসহ নানাবিধ খরচ সবই ব্যয় করতে হয় ডলারে। ফলে এয়ারলাইন্সগুলো খরচের সাথে আয়ের সমন্নয় করতে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন দেশের সাথে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি পেলে, ডলারের বিনিময়ে টাকার মান বৃদ্ধি পেলে, জেট ফুয়েলের মূল্য হ্রাস পেলে আনুপাতিক হারে যাত্রী ভাড়া কমার সম্ভাবনাও আছে।

অপরদিকে অর্থনীতির সাধারণ সংজ্ঞা যোগানের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে থাকে। কোভিড পরবর্তী সব দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর কিংবা ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাবার পর বিমান যাত্রী বেড়েছে কয়েকগুন। সেই তুলনায় আসন সংখ্যা বাড়ানোর কোনো সুযোগ ছিলো না। ফলে বিভিন্ন রুটে যাত্রী চাহিদার কারনেও কিছুটা ভাড়া বেড়েছে।

প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে নিজেদের আয়ের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই ব্যয় নির্বাহ করে থাকে। বিশ্ব এভিয়েশনে কিংবা বাংলাদেশে ব্যয়ের সূচক যদি উর্ধ্বগামী থাকে তাহলে এয়ারলাইন্সগুলো নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য এবং পূর্ণাঙ্গ যাত্রী সেবাকে নিশ্চিত রাখার জন্য খরচগুলোকে ভাড়ার সাথে সমন্নয় করে থাকে।

এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে পারবে যদি নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন না হয়। বাংলাদেশ এভিয়েশন ব্যবসাটা পরিচালিত হচ্ছে ভর্তুকি বিহীন। বিগত দিনে নানাবিধ কারনে বাংলাদেশ এভিয়েশন থেকে হারিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া বিশ্বের আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো জিএমজি, ইউনাইটেড কিংবা রিজেন্ট এয়ারওয়েজসহ সাত আটটি এয়ারলাইন্স।

বর্তমানে পরিচালিত জাতীয় বিমান সংস্থাসহ চারটি এয়ারলাইন্স খরচের সাথে অনেকটা যুদ্ধ করে বাংলাদেশ এভিয়েশনে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, সাথে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে মার্কেট শেয়ার ধরে রেখে দেশের জিডিপিতে অবদান রাখার চেষ্টা করছে।    

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

জেনোসাইডের স্বীকৃতি



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বায়ান্ন বছরেও একাত্তরের পঁচিশে মার্চের কালরাত্রির জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলেনি। বৈরী ভাবাদর্শের রাজনীতি এবং জেনোসাইড নিয়ে অমনোযোগিতা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। কালরাত্রির অপারেশন সার্চলাইট নামের যে জেনোসাইড চলে, তার স্বীকৃতির সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটাও আমরা আদায় করতে পারিনি। বলা যায়, সময়মতো চেষ্টা করা হয়নি।

পঁচিশে মার্চের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আমরা না পেলেও এখনও সুযোগ আছে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের স্বীকৃতির।

একাত্তরের আট মাস বাইশ দিনে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা থেকে শুরু করে দুই লাখের অধিক নারী-শিশুর ওপর যৌনসহিংসতা চালিয়েছিল পাকিস্তান এবং তাদের এদেশীয় দোসরেরা। নির্যাতনের ধরনগুলো জাতিসংঘ ঘোষিত জেনোসাইডের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মেলে। জাতিসংঘের ‘কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন এন্ড পানিসমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইড’-এর আর্টিকেল ২ অংশে জেনোসাইডের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা আছে, যার কোনো একটি সংঘটিত হলে জেনোসাইডে বলা যাবে। ওই আর্টিকেল বলছে— কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটি বৈশিষ্ট্যই পাকিস্তান বাহিনীর দীর্ঘ নয় মাসের নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে রয়েছে।

একাত্তরের নয় মাস পাকিস্তানিদের নির্যাতনের সঙ্গে জেনোসাইডের জাতিসংঘ ঘোষিত সংজ্ঞার মধ্যে পড়লেও ২৫ মার্চের জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি নেই। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করার পর ওই বছর থেকেই দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হচ্ছে। এছাড়া দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়ার জন্য একটি বিলও পাস হয় সংসদে। বাংলাদেশ যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ পালন শুরু করে তার দুই বছর আগে থেকেই বিশ্বব্যাপী ‘গণহত্যা দিবস’ নামে একটি দিবস পালন হয়। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করে। এর ফলে ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির আর সুযোগ থাকছে না। তবে ২৫ মার্চকে জেনোসাইড দিবস হিসেবে পালনের বৈশ্বিক সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের এখনও সুযোগ রয়েছে একাত্তরের নয় মাসের পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির। কিন্তু এই স্বীকৃতি আদায়ে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম কত দূর, এ সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত নই। মার্চ এলেই কেবল জেনোসাইড নিয়ে কথা হয়, তবে এই কথাগুলো এতটা ক্ষীণ স্বরে যে, একদিনের আলোচনাতেই তা সীমাবদ্ধ।

পঁচিশে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি নতুন নয়। নব্বইয়ের দশক থেকে এই দাবি জানিয়ে আসছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ১৯৯৩ সালে ওঠা ওই দাবিকে পাত্তা দেয়নি তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার। ২০০১ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি তুলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসান। জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছিল, স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে জাতিসংঘে তা তুলে ধরতে হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিক্রমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস করতে হবে। ২০০৬ সালে নির্মূল কমিটি আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা শুরু করে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কো এবং জেনোসাইডের ভিকটিম বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে, আইন প্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলে জেনোসাইড দিবস পালন প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নির্মূল কমিটি। ২০১৫ সালের মার্চে আর্মেনিয়া থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি কীভাবে পালন করা হয় এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর জন্য বলা হলে, নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তখন জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়।বাংলাদেশে এখনো দিবসটি ঘোষণা হয়নি। তবে এই দিনে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ জেনোসাইডের শহিদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকেন। দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে যে দিবসের স্বীকৃতি নেই, বিশ্বব্যাপী হবে কীভাবে? হয়ওনি। ফলে ২৫ মার্চ নয়, ৯ ডিসেম্বরকেই বেছে নেয় জাতিসংঘ। এর ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা ২৫ মার্চের জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের সুযোগ হারাই। এটা নিশ্চিতভাবেই আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা।

আশার কথা, একাত্তরের নয় মাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের পথ এখনই বন্ধ হচ্ছে না আমাদের। আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা ও যুগোস্লাভিয়ার জেনোসাইডের জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আদালতের স্বীকৃতি আছে। আর্মেনিয়ানদের এজন্যে শত বছর চেষ্টা ও অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমাদের অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই, কিন্তু এজন্যে রাষ্ট্রীয় চেষ্টা-তদবির তো থাকতে হবে! এটা কতখানি রয়েছে, এ নিয়ে আশ্বস্ত হওয়া যাচ্ছে না এখনও।

একাত্তরের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় আমাদের গৌরবের স্মারক। এই গৌরবকে উঁচুতে তোলে ধরতে আমাদের ওপর চালিত পাকিস্তানিদের জেনোসাইডকে অস্বীকার কিংবা অবমূল্যায়ন করা যাবে না। গৌরবের যে অর্জন, তার সঙ্গে জড়িয়ে যতখানি রক্ত আর সম্ভ্রম তার স্বীকৃতি দরকার; রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে!

কবির য়াহমদ: সাংবাদিক, কলাম লেখক।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

স্মৃতিতে একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম শিকদার



সামিয়া মহসীন
একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শিল্পী শামীম শিকদার

একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শিল্পী শামীম শিকদার

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ২১ মার্চ রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিশিষ্ট ভাস্কর শামীম শিকদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান এই গুণী শিল্পী ২০০০ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ৭০ বছর বয়সী এই ভাস্কর কার্ডিওভাসকুলার, শ্বাসতন্ত্র এবং কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে শামীম শিকদার ২ সন্তান রেখে গেছেন। চারুকলা প্রাঙ্গণে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর ঢাকার মোহাম্মদপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে ।

অসম্পূর্ণ কিছু কাজ শেষ করার উদ্দেশ্যেই কয়েক মাস আগে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। ঢাবির চারুকলা অনুষদে জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যটি আবার নতুন করে গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুয়ের্নিকা ভাস্কর্যও নতুন করে করার পরিকল্পনা ছিল শামীম শিকদারের।


ঢাবির চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক শামীম শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে 'স্বোপার্জিত স্বাধীনতা' এবং ফুলার রোডে 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' নির্মাণ করেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই উনাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদীতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। এই ভাস্কর্য টি যখন তৈরি করা হয়েছিল, তখন খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। তিনি সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ স্টিল ও গ্লাস ফাইভার মাধ্যমে কাজ করেছেন। প্রখ্যাত কম্যুনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ শিকদার শামীম শিকদারের আপন বড় ভাই।


শামীম শিকদার যখন ভাস্কর্য নির্মাণ করতেন কখনো তাঁর পরণে থাকতো জিন্স আর সাদা টি শার্ট। আবার কখনো সাদা শার্ট প্যান্ট । সাদা রঙ; তাঁর প্রিয় রঙ ছিল বলেই মনে হত। কপালে কখনো কখনো  ব্যান্ডানা বাঁধতেন। সেই আশির দশকে এমন একজন ভাস্কর শিল্পীর পোশাক সেই সময়ের মানুষকে ভীষণভাবে অবাক করতো। দু’হাতে যতো  কাজই করুন না কেন, ঠোঁটের কোণে সিগারেট ধরাই থাকতো। তখন তো এখনকার মতো মোবাইল ফোন ছিল না। থাকলে উনার কাজ করার মুহূর্তগুলোর স্মৃতি ধরে রাখা যেত। তাঁর সেই কাজগুলো যেগুলো তিল তিল করে ভালোবাসা আর শ্রম দিয়ে তিনি করেছিলেন সেই ভাস্কর্যগুলো ঠাঁই পেয়েছে ফুলার রোডের সড়ক দ্বীপে। ফুলার রোড এলাকায় ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম’-এ  তাঁর করা ১১৬টি ভাস্কর্য ঠাঁই পেয়েছে। এই ভাস্কর্য পার্ক টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে অলঙ্করণ করেছে। এখানে তিনি আরও ১৩৪টি ভাস্কর্য তৈরির কাজের উদ্দেশ্য নিয়েই দেশে আসেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।


শামীম শিকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ১৯৯৪ সালে স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই উনার স্টাইল এবং কাজের সাথে পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। আমার তো মনে হয় আশির দশক থেকে আজ অবধি কেউ তাঁকে ছুঁতে পেরেছে বলে মনে হয় না। একজন নারী স্রোতের বিপরীতে চলেও তাঁর রুচি, শিক্ষা ও কর্ম দিয়ে কিভাবে স্বাক্ষর রেখে যেতে পারেন। শামীম শিকদার তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নারী বিদ্বেষীরা সেদিনও ছিলো, আজও আছে। তবে তাঁর মতো সাহসী নারী শত বছরে হয়তো একবারই জন্মে। বেশিরভাগ সময়েই মোটরবাইক চালিয়ে চলাচল করতেন। সেই সত্তর আশির দশকে এমনটা ঘটনা আসলেই বিরল ছিল। শখের বশে জুডো শিখেছিলেন।

এমন দেশপ্রেমী শামীম শিকদারদের কখনোই মৃত্যু হয়না। তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে, বাঙালির মননে, বাঙালির চেতনায়। এই কিংবদন্তীর প্রতি রইল শত সহস্র সালাম।

সামিয়া মহসীন‚ লেখক,নাট্যশিল্পী, তে কথামালা সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলন নেতা।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

যাত্রীরাই ইউএস-বাংলার এক একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর



মো. কামরুল ইসলাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এশিয়ার আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো বাংলার গর্ব ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে শুনতে হয় না ‘নয়টার প্লেন কয়টায় যাবে’। শুনতে হয় না যাত্রীদের কাছ থেকে ‘ফ্লাইট কি অন-টাইম’? শুনতে হয় না ‘আপনাদের প্লেন পৌছানোর পর লাগেজ পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়’? এই প্রশ্নগুলো না শুনতে পারাই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার স্বার্থকতা।

সুনামের সাথে দশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে ইউএস-বাংলা। ঢাকা থেকে যশোর রুটে ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই যাত্রা শুরু করার পর আজ অবধি শতকরা ৯০ ভাগের অধিক ফ্লাইটই অন-টাইম। আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালুর পর থেকেই ফ্লাইট গন্তব্যে পৌঁছানোর ১৫ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারী এক অনন্য উদাহরন। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রথমবারের মতো ইউএস-বাংলা ব্র্যান্ডনিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বৈশ্বিক এভিয়েশনের মানচিত্রে উপরোক্ত প্রশ্নগুলো শুনলে মনে হয় দেশের এভিয়েশনের কি করুন দশাই না ছিলো এয়ারলাইন্সগুলোর। প্রশ্নগুলোর সত্যতা কতটুকু বাস্তব হলেই স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও দিনের পর দিন যাত্রীদের মনে বাসা বেঁধে আছে। প্রশ্নগুলোর সত্যতা প্রমান করার প্রয়োজনীয়তাবোধ করেনি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। একটি যাত্রীবান্ধব এয়ারলাইন্স হিসেবে নানা পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে ইউএস-বাংলা।

বাংলাদেশের প্রাইভেট এয়ারলাইন্সকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নানাবিধ সমস্যাকে সঙ্গী করেই বাংলাদেশ এভিয়েশনে অগ্রসর হতে চেয়েছে। অবকাঠামোগত সমস্যা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, পরিবহননীতির অস্বামঞ্জস্যতা, জাতীয় বিমান সংস্থার সাথে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা, বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত অ্যারোনোটিক্যাল ও নন-অ্যারোনোটিক্যাল চার্জ।

এছাড়া বিশ্ব মার্কেটের সাথে জেট ফুয়েল প্রাইসের প্রার্থক্য, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে দ্বিমূখী নীতি, এয়ারক্রাফট কিংবা এয়ারক্রাফট পার্টসের অতিরিক্ত কাস্টমস্ ডিউটি নির্ধারন, যা বাংলাদেশ এভিয়েশনে প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় বলেই প্রতীয়মান।

নানাবিধ অস্বামঞ্জস্যতা থাকার পরও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স বাংলার আকাশে তথা বিশ্বের আকাশে উদীয়মান সূর্য হয়ে একবিংশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছে। মাত্র দশ বছর সময়ে বিশাল জনগোষ্টির বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনের যাত্রীরা পূর্ণ আস্থা রেখেছে ইউএস-বাংলার উপর। দু’টি ড্যাশ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফট নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলায় এখন ৮টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০, ৮টি এটিআর৭২-৬০০ এয়ারক্রাফটসহ মোট উনিশটি এয়ারক্রাফট রয়েছে বিমান বহরে।

ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের স্বপ্নযাত্রার স্বপ্ন যেন আকাশ সমান, স্বপ্নের বিস্তৃতি আর বাস্তবায়ন চলছে সমান্তরালে। দেশের এভিয়েশনকে নিয়ে যেতে চান সুউচ্চ মর্যাদায়। আজ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিযোগিতা করছে এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এর মতো বিশ্ববিখ্যাত এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে।

স্বল্পতম সময়ে ইউএস-বাংলা বাংলাদেশী যাত্রীদের সেবা দেয়ার মানসে দুবাই, শারজাহ, মাস্কাট, দোহা, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, গুয়াংজু, মালে, চেন্নাই ও কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আগামী মে –জুনে ইউএস-বাংলা দু’টি ৪৩৯ সিটের এয়ারবাস ৩৩০ এয়ারক্রাফট বিমান বহরে যোগ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যা দিয়ে এশিয়ার অন্যতম গন্তব্য আর বাংলাদেশী যাত্রীদের আকর্ষণ সৌদি আরবের জেদ্দা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করছে ইউএস-বাংলা।

ইউএস-বাংলা এয়ারলা্ইন্সে ২৫০০ এর অধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী রয়েছে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ব্যবস্থাপনা পরিষদের সুচিন্তিত দিক নির্দেশনা এবং যাত্রীদের আস্থা ইউএস-বাংলাকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে।

ইউএস-বাংলা পরিবারের সকল সদস্য আর যাত্রীরাই এক একজন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। যাত্রীদের আস্থাই ইউএস-বাংলার অগ্রযাত্রার মূল পাথেয়।

লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

  বিজয়ের ৫০ বছর

;