একজন ডা. শিশির, তার গেরিলা যুদ্ধের গল্প

  বিজয়ের ৫০ বছর


জুয়েল সাদাত
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ডা. সিরাজুল ইসলাম। একজন অসাধারণ মানবিক মানুষ। একজন মুক্তিযোদ্ধা ট্রেইনার। ১৪০০ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনিং করেছিলেছেন। শিশির ভাদুড়ি ছন্মনামে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন। অসাধারণ দেশপ্রেমিক একজন চিকিৎসক মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের দুই ভাই যুদ্ধ করেছেন। ধার্মিক পরিবারে বেড়ে উঠা ডাক্তার ইসলাম তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে সারা আমেরিকার মসজিদে মসজিদে কাটিয়েছেন। দারুণ গান গাইতে পারতেন। ওস্তাদের কাছে গান শিখেছেন। দাওয়াতি কাজে জড়িয়ে গান ছাড়েন। ফ্লোরিডায় ৬/৭টি মসজিদ তৈরি করেছেন। দান করেন হিসাব ছাড়া। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা নিয়ে কোন আপোষ করেন না।  ছিলেন মরহুম শেখ কামালের বন্ধু।  একাধারে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও।

মন খুলে যুদ্ধের গল্প, জীবনের গল্প, নিয়ে কথা বলেছেন কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সাংবাদিক কলামিস্ট জুয়েল সাদাতের সাথে।   

জুয়েল সাদাত - আপনার পড়াশুনা বা ছাত্র জীবন কেমন ছিল?

ডা. শিশির: নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রাথমিক শিক্ষা। তারপর পাবনা জেলা স্কুলে পড়াশুনা করি। স্কুল জীবনে স্কাউট লিডার, আবৃত্তি, লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত ছিলাম। তারপর ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করি। তারপর ফাস্ট গ্রেট স্কলারশিপ নিয়ে আমরা মাত্র দুজন ইস্ট পাকিস্তান থেকে লাহোরে যাই। ঢাকা কলেজে পড়াশুনা কালীন সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে কলেজের ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি হই। তখন মরহুম শেখ কামাল আমার সহপাটি ছিলেন। তিনি বলতেন, তোমরা মেধাবী পড়াশুনা করো। প্রযোজন মতো আমাদের সাপোর্ট কর। তিনি আমার নির্বাচনে আমাকে ভোট দিতে বলতেন সবাইকে। ১৯৬৯ সালে লাহোরে পড়াশুনার জন্য যাই। তারপর যুদ্ধের কারণে সেখানে থাকা সম্ভব না হওয়ায় ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশে যুদ্ধচলাকালীন চলে আসি। যুদ্ধের পর ঢাকা মেডিকেল থেকে ডাক্তারি পাস করি।

জুয়েল সাদাত:  আপনার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল সম্পর্ক জানতে চাই?

ডা. শিশির: পাবনা জেলা স্কুলেই আমার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়ানো। লেখালেখি, স্কাউটিং এর নানা একটিভিটিস, গল্প কবিতা নাটক সব কিছু শুরু স্কুল জীবনেই। তারপর ঢাকা কলেজে বড়ো পরিসরে জড়ানো। ঢাকা কলেজের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ওতোপ্রোতো জড়িত ছিলাম। সবগুলো স্টেজ শোতে আমি থাকতাম। নাটক করতাম। ঢাকার অগ্নিবিনাতে জড়িত ছিলাম।  ওস্তাদের নিকট গান শিখি।  টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রযোজনা করি। স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান করতাম। ভাল গান গাইতে পারতাম। একবার আমার এক গানের উস্তাদ অসুস্থ হলেন, উনাকে বিশেষ যত্ন নিয়ে সুস্থ করে তুলি। তারপর উনি আমাকে ও অনেক যত্ন করে গান শেখান। উস্তাদ গুল মোহাম্মদসহ আরো অনেকের  সান্নিধ্যেই গানের সব মাধ্যমেই পারদর্শিতা অর্জন করি।

জুয়েল সাদাত: মুক্তিযুদ্ধে জড়ানো কিভাবে, আর কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনার হলেন?

ডা. শিশির: যখন লাহোরে ছিলাম, ২৫ মার্চের পরে একদিন হোস্টেলে আমাকে আটক করে  বলতে  থাকে  পাকিস্তান নট ফর বাংলাদেশি বাস্টার্ড। সেদিন নেপালি ছাত্ররা আমাকে মুক্ত করে। তখন তারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল। তখন প্রিন্সিপাল আমাকে বলেন  ন্যাশনাল ক্রাইসিস চলছ, তোমাদের হোস্টেলে থাকা নিরাপদ নয়। তখন অনেকেই হোস্টেল থেকে চলে গিয়েছিল। আমি যেহেতু গভর্নর স্কালারশিপে ছিলাম,  তখন তারা আমাদের আর্মির সহায়তায় দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছিল। আমরা দুই তিন জন ছিলাম। এয়ারপোর্টে আমাদের হত্যা করতে পারে তাই অনেকেই আসেনি। আমি একা ঢাকা আসলাম ১৮  এপ্রিল ১৯৭১ সালে। পায়ে হেঁটে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চলে আসি, তিনদিন পর চলে যাই নাটোরের গুরিদাসপুর গ্রামের বাড়ি। মা বলেন, পাশের গ্রামের ১৮ জনকে  পাক আর্মি মেরে ফেলছে। তখন আমরা বাড়িতে থাকতাম না মাঠে ঘুমাতাম । কাউকে রাজি করাতে পারছিলাম না মুক্তিযুদ্ধে যেতে। মাত্র তিনজন আমরা চলে যাই বাঙালিপুর ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরবর্তিতে পরিচিত আব্দুল জলিল ভাই, তিনি আমার আব্বার পরিচিত সেই হিসাবে আমাকে সুযোগ দিলেন । আমার পূর্বের মিলিটারি ট্রেনিং ছিল, সেই সাথে স্কাউটিংসহ নানা রকম ট্রেনিং থাকায় তিনি আমাকে ট্রেইনার হিসাবে কাজে লাগান। তিন মাস ট্রেনিং করাই । আমরা বেশীর ভাগ সময় রাতে অপারেশন করতাম দিনে।

জুয়েল সাদাত: গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কিভাবে জড়ালেন

ডা. শিশির: আমাদের ক্যাস্পের কাছে১০ জন মুক্তিযোদ্ধা চাইল। তখন আমাদের দশ জনকে সিলেক্ট করে। আমাদের বলা হল তোমাদের বিশেষ ট্রেনিং এর জন্য নেয়া হচ্ছে। কই যাচ্ছ?  কেন যাচ্ছ?  প্রশ্ন করতে পারবে না। আমাদের ইন্ডিয়ান আর্মির ট্রাকে করে উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি নিয়ে গেল। সেখানে আমরা তৃতীয় ব্যাচ হিসাবে ট্রেনিং এ যোগ দেই। সেখানে সিরাজুল ইসলাম খান, তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক ভাইদের সাথে দেখা হয়। তখন তারা বললেন তোমাদের গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্লেনে নেয়া হবে, অনেক কষ্ট, যারা কষ্ট সহ্য করতে পারবে না, তাদের যাওয়ার দরকার নাই। আমরা দশজনই যেতে রাজি হই। আমাদের আর্মির পোশাক দেয়া হয়। 

ইনু ভাইরা দ্বিতীয় ব্যাচে ট্রেনিং নেন, আমরা তৃতীয় ব্যাচে ট্রেনিং শেষ করি। তারা বললেন, এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্টনমেন্ট, তাই সবার মুসলিম নাম থাকা ঠিক হবে না।  তখন সেখানে আমাদের প্রত্যেককে একটি হিন্দু নাম ধারণ করতে হয়। আমার নাম দেয়া শিশির ভাদুড়ি ৷

পরবর্তিতে আমার জীবনে শিশির নামটা রেখে দেই স্মৃতি হিসাবে৷ গেরিলা ট্রেনিং এ নানা পরীক্ষা হত ৷ আমি ভাল ইংরেজি জানতাম, আমি কর্নেল মালহাতরার ইংরেজি স্পিচ ও নানা কৌশল ট্রেনিং শিট বাংলায় ট্রান্সলেট করতাম,  তাই সেখানে ও আমাকে স্কোয়াড লিডার বানানো হয়। কর্নেল মালাহাতরা আমাকে ট্রেইনার হিসাবে রেখে দেন। তখন আমার মুক্তিযোদ্ধারা  কর্নেল মালহাতরাকে অনুরোধ করেন, আমাকে নিয়ে দেশে যেতে। কারণ  সিরাজুল ইসলাম  (শিশির)  দেশে না গেলে উনার মা চিন্তা করবেন। আর তাকে ছাড়া আমরা কিভাবে  যুদ্ধ করব।  কি মনে করে কর্নেল মালহাতরা  আমাকে দেশে পাঠান৷  গেরিলা যুদ্ধারা অনেক কৌশলী, তাদের মাধ্যমেই বড় বড় অপারেশন হত। গেরিলা যুদ্ধের কৌশলেই অনেক বড় বড় সফল অপারেশন হয়েছিল।

জুয়েল সাদাত: আপনি রাজাকারদের কিভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন? বুলেট নিয়ে নাকি আপনারা শপথ নিয়েছিলেন?

ডা. শিশির:  আমি গেরিলাযোদ্ধা ছিলাম। রাজাকারদের কাছে অনেক অস্ত্র আছে, গুলি ছিল। আমি তাদের নানা ভাবে কৌশলে আত্মসমর্পণ করাই। তারা আমাদের কাছে যে কোন কারণে বা ভয়ে হউক বা জীবনের মায়ায় হউক একত্রিত হয়। তখন কোরআন শরিফের উপর আমার হাত, তারপর তাদের হাত তারপর বুলেট রেখে শপথ করালাম। শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ মেনে চলব, দেশের সাথে বেইমানি করব না। যদি করি তাহলে এই বুলেটেই যেন জীবন যায়।

জুয়েল সাদাত: আপনারা কোন জায়গায় যুদ্ধ করেছেন?

ডা. শিশির: আমরা মূলত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর যুদ্ধ করি। আত্রাই - গুরুদাসপুর- সিংরাই পুরো এলাকাতে নানা স্কুলে স্কুলে গিয়ে আমরা দশজনই মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেই, শেষ পর্যন্ত যার সংখ্যা দাড়ায় ১৪০০ জন। তারপর আমাদের এই বাহিনী এমন আক্রমণ করে পাকিস্তানী বাহিনী পালানোর সুযোগ পায়নি। এই সময়টাই মুক্তিযুদ্ধের অনেক সফলতা আসে। আমাদের নানা কৌশলের কারণে পাক বাহিনী দুর্বল হয়ে যায়। 

জুয়েল সাদাত : আপনাদের মানে গেরিলা যুদ্বাদের লজিস্টিক সাপোর্ট কেমন ছিল।

ডা. শিশির: আসলে অস্ত্র যুদ্ধ করে না, অস্ত্রের পেছনের মানুষ যুদ্ধ করে, আবার পেছনের মানুষ যুদ্ধ করে না। একটা আদর্শকে সামনে রেখে যুদ্ধ হয়ে থাকে। একজন গেরিলা  যুদ্ধা ১০০ জন কনভেশনাল আর্মির সমান। গেরিলা যুদ্ধ হল কৌশল। আমরা রাতে ডানে বামে গুলাগুলি করতাম, তাদের ঘুমাতে দিতাম না। রাতের পর রাত  পাকিস্তানি বাহিনী ঘুমাতে না পেরে কাহিল হয়ে পড়ত। তখন তাদের আক্রমণ করলে সহজে জয়লাভ সম্ভব হত। তারপর নানা কৌশল কাজে লাগিয়ে থানার ওসিকে কাবু করে থানার গোলাবারুদ আয়ত্ব করতে হত।  গেরিলা যুদ্ধ মানে কৌশলের নানা প্রয়োগ।

জুয়েল সাদাত:  যুদ্বকালীন সময়ে কি মনে হয়েছিল যুদ্ধ জয়লাভ সম্ভব

ডা. শিশির: গেরিলা যুদ্ধ করতে প্রচুর পড়াশুনা করতে হত। আমি অনেক পড়াশুনা করেছি। যুদ্ধের ইতিহাস পড়তে হয়। আমাদের ভাষা, কৃস্টি, মানুষের দেশপ্রেম আমাদের যুদ্ধ জয়ের উৎসাহ জোগাত। আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না  এই বিশ্বাস ছিল। বন্ধু প্রতীম দেশ ভারত আমাদের শেষের দিকে সহযোগিতা করেছে। তাই যুদ্ধটা দ্রুত শেষ হয়েছে। তবে তাদের সহযোগিতা ছাড়াও আমরা যুদ্ধ জয় করতে পারতাম, একটু সময় লাগত। আর পাকিস্তান বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল তাদের সৈন্যদের নিরাপত্তার জন্য। সেখানেও রাজনীতি থাকতে পারে। তবে আমি বা আমরা জয়ি হব এই আত্মবিশ্বাস কাজ করত।

জুয়েল সাদাত: মুক্তিযুদ্ধা, ভুয়া মুক্তিযোদ্বা রাজাকার সম্পর্কে কিছু বলেন।

ডা. শিশির: আমি আমার থানার ৩৯ নং মুক্তিযোদ্ধা। পূর্বের ৩৮ জন কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানা নাই। সঠিক মুক্তিযুদ্বার তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা নানা রাজনৈতিক কারণে হয়নি। তবে তা করা সম্ভব। অনেকেই যুদ্ধ না করেই মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। যা দুঃখজনক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্বারা কিছু পাবার জন্য যুদ্ধ করেননি।

আমরা রাজাকার আল বদরদের বুঝিয়েছি, বলেছি এই নাও স্টেনগান পাকিস্তানীদের হাতে মারা যাব কেন?  তোমরা আমাদের মার। জনে জনে বুঝিয়ে তাদেরকে নিয়েই  আমাদের যুদ্ধের জন্য এগোতে হয়েছে। দেশের ভেতরের শত্রুরাই আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই তাদের জন্য বেশী সময় ব্যয় করতে হয়েছে। এবং পুরো মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ড্যামেজ তাদের মাধ্যমেই হয়েছে।

জুয়েল সাদাত: যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে আপনার কি ভূমিকা ছিল?

ডা. শিশির: দেশ স্বাধীন হবার পর আমাদের লিডার সম্বোধন করা হত। আমাদের সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হল দেশ পুনর্গঠনে। আমরা রাজাকারদের আলবদরদের কাজে লাগালাম। বললাম যদি কারও ঘরে লুটের মাল পাওয়া যাবে তার জন্য কঠিন শাস্তি। দু'সপ্তাহের মধ্য হিন্দুদের বাড়ি ঘর পুননির্মাণ করে দেয়া হল। অনেকেই ফিরে এসে টিনের ঘর পেয়ে গেল। যাদের টিনের ঘর ছিল না অতীতে। তখন বড়লোকদের নিকট থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নিয়ে এই কাজটা আমরা করে দেই। গমের সিড দেই, অনেকেই কৃষিতে মনোনিবেশ করেন। আমাদের এলাকাটাকে পুনর্গঠন করি।  আমি বলেছিলাম আমার ছেলেদের  রাজাকারদের পিটাইতে পারবে, জানে মারা যাবে না।  তাদের দেশ পুনর্গঠনে কাজে লাগাই। তারপর আমি ঢাকা মেডিকেলে পড়তে চলে যাই। সেখানে তখন অবাধে নকল হত। আমি স্যারদের বলি, আমরা মেধাবী ছাত্র আমাদের সহপাটিরা কেন নকল করবে। তারপর নকল বন্ধ হয়ে। সেখানে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখি। তারপর আমি বিপুল ভোটে জেনারেল সেক্রটারি নির্বাচিত হই। অভিষেকের টাকা বাঁচিয়ে ২০০০ গাছ লাগাই। যা আজও কালের সাক্ষী।  দেশ গঠনে গ্রামে ও ঢাকায় জড়িত ছিলাম  নানাভাবে।

জুয়েল সাদাত: যুদ্ধ পরবর্তি বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের তিন বছর কেমন ছিল।

ডা. শিশির: আমাদের দেশের যুদ্ধ পরবর্তি সময়টাতে কিছু টানাপোড়ন ছিল। সর্বহারা পার্টি ও সিরাজ সিকদার অন্য মোটিভ ছিল। আবার জাতির জনকের ক্লিয়ার কনসেপ্ট ছিল কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যায়। বঙ্গবন্ধু তার দৃঢ়তায় একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন। আমেরিকা আমাদের কোন সময় সহযোগিতা করেনি, উল্টো বটমলেস বাস্কেট বলেছিল। আজ সেই বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। জাতির জনক তার দৃঢ়তায় দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। যদিও তিনি তা শেষ করে যেতে পারেন নি। অনেকেই ভেবেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী যাবে না। অনেক মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছিল উনার শাসনামলে। তবে তিনি দেশকে অনেক কম সময়ে গড়ে তুলেছিলেন। কম  সময়ে সংবিধান রচনা, নিবার্চন দেয়া, রাস্তা ঘাট  ব্রিজ কালভার্ট সবাই কিছুই করতে পেরেছিলেন নিজের দৃঢ় চেতনা নিয়ে।

জুয়েল সাদাত: যুদ্ধ পরবর্তি কালে দেশ গঠনে সাধারণ মানুষদের কি ভূমিকা ছিল।

ডা. শিশির: বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করায় বাংলাদেশ এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তারপর যারা ছিলেন, তারা নিজেদের মেধা মনন কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা দাড় করান। সাধারণ মানুষ দেশ গঠনে সক্রিয় ভুমিকা রাখে। মুক্তিযোদ্বার অস্ত্র আত্মসমর্পণ করে দেশের নানা কাজে মনোনিবেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বাধীন দেশটাকে সকলে গড়ে তুলেন। 

জুয়েল সাদাত: আপনার সাথে যুদ্বের প্রানবন্ত গল্প শুনে মনে হচ্ছে এ রকম কখনও শুনিনি আগে। আপনার উচিত বই লেখা। সাধারণ যুদ্ধের গল্প, গেরিলা যুদ্ধের গল্প, নানা ট্রেনিং এর গল্প। আপনার অনেক বেশি বেশি লেখা উচিত।

ডা. শিশির:  জি। আমার হাতে এখন অনেক সময়। আমি লিখব৷ সিরাজুল আলম খান ও হাসানুল হক ইনু বেঁচে আছেন। আমার লেখা গুলোর ঘটনার তারা জীবন্ত উদাহরণ। আমি ক্যাস্পে গান গাইতাম তারা শুনেছেন। একবার প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের সাথে দেখা তখন সেই ক্যাস্পের গল্পের কথা উঠে আসে। তারা আমার লম্বা দাড়ি দেখে চিনতে পারেন নি। আমি শিঘ্রই লিখতে শুরু করব।

জুয়েল সাদাত: আপনি কবে আমেরিকা আসেন। ধর্মীয় ব্যাপারে আপনার সিরিয়াসনেস কবে থেকে।

ডা. শিশির:  আমি ৭৭ সালে আমেরিকা আসি। আমার মা নামাজ কালামের ব্যাপারে খুব আপোষহীন ছিলেন। নামাজ না পড়লে ভাত দিতেন না। আমি  আমেরিকায় এসে ব্যাপক পড়াশুনা করে তাবলিগে জড়িয়ে যাই৷ আমি চারমাস না পুরো সাত মাস তাবলিগে এক নাগাড়ে ছিলাম। আমি অনেক দিন হসপিটালে ও প্রাকটিসের বাহিরে ছিলাম। যখন আমার হসপিটালের চাকরি চলে যাবার নোটিশ আসে তখন আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।

জুয়েল সাদাত: আপনাকে দেখা গেছে ভাল গান গাইতে পারেন, আবার একজন গেরিলা যুদ্ধা। আবার আপনাকে দেখা গেল তাবলিগ জামাতে জড়িত। একটু বলবেনঅনেক গুলো মসজিদ তৈরি করেছেন।

ডা. শিশির: আমি স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করে  ডাক্তারি পেশায় মনোনিবেশ করি । তারপর ১৯৭৭ সালে আমেরিকায় আসি। তখন এখনকার মতো বিদেশে আসা সহজ ছিল না। সরকারি ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যেত না। তারপর ৮৭ সালে ওরলান্ডো ( ফ্লোরিডা)   আমেরিকা আসি। যেখানে আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটালাম। গ্যাস্ট্রোলজির উপর ডিগ্রি নিলাম। সাথে সাথে দাওয়াতে যোগ দেই। তাবলিগ জামাতে যোগ দেই  জীবনের পরিবর্তন আসে। তারপর গান টান আর গাওয়া হয় না। অনেক মসজিদ মাদ্রাসা তৈরি করি।  দাওয়াতের জন্য সারা আমেরিকা ঘুরে বেড়াই। আলহামদুলিল্লাহ আজ গ্রেটার ওরলান্ডোতে ছোট বড় ৩৮ টি মসজিদ। একটা মজার ঘটনা বলি,  ওরলান্ডো জামে মসজিদ যেটা ডিজনি এরিয়াতে, সেটা আমার যখন মাত্র ৫০ জন্য মুসল্লি ছিলাম এই শহরে তখন ১ লাখ ডলারে জায়গা কিনে সর্বমোট ৬ লাখ ডলারে তৈরি করি। ৬০০ জনে নামাজ পড়ার জন্য বানাই। অনেকে আমাকে বলে এত নামাজি হবে না। আপনি জানেন এখন সেই মসজিদটাই আমরা ৫ হাজার মুসল্লির জন্য বানাচ্ছি।

জুয়েল সাদাত: শুনেছি আপনার গ্রামের বাড়িতে অনেক বড় কারিগরি মাদ্রাসা করেছেন।

ডা. শিশির:  আসলে আমার বড় ভাই যিনি আজ আমাদের মাঝে নাই। উনি শুরু করেছিলেন। পরবর্তিতে আমরা সব ভাই বোন এটাকে বড়ো করেছি। আমি এটার সাথে বেশী সম্পৃক্ত। অনেক বৃহৎ এলাকা নিয়ে মাদ্রাসা। যা রাজশাহী বিভাগের একটি আইডল প্রতিষ্ঠান। সেখানে হাফিজদের কারিগরি ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৪০ জন শিক্ষকদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট বানিয়ে দিচ্ছি। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মাদ্রাসায় থাকবেন, ছাত্রদের পড়াশুনাটাও ভাল হবে। যা বাংলাদেশে প্রথম। শিক্ষকরা ফ্রি থাকার বাসস্থান পাচ্ছেন। পুরো প্রজেক্টটি বিশাল এলাকা জুড়ে। এখানে আমি একটি আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি করব, যা হবে রাজহাশী বিভাগের অন্যতম। অনেক বই কেনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে হাজার হাজার কোরআনে হাফেজ বের হবেন, উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে। বর্তমানেও হাফেজ বের হচ্ছেন। পুরো কমপ্লেক্সটা বিরাট এলাকা জুড়ে।

জুয়েল সাদত: আপনি হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত আছেন, কি কি কাজে আপনারা জড়িত।

ডা. শিশির: আমার প্রিয় মানুষ, ডাক্তার ইফতেখার মাহমুদ হোপ ফাউন্ডেশন তৈরি করেন ১৯৯৮ সালে। আমি এটার বোর্ড অব ডাইরেক্টর। কক্সবাজার ও রামুতে আমাদের ৪০ বেডের হসপিটাল আছে। আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছি। ডাক্তার ইফতেখার আমাকে বড় আকারে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। হোপ ফাউন্ডেশেনর সাথে ১৬০০ ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী জড়িত।

জুয়েল সাদাত: আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। একটু যদি বলেন।

ডা. শিশির: শেখ কামালের সহপাটি হিসাবে সম্পর্কটা অনেক কাছের। যখনই তিনি আমেরিকায় আসতেন আমার তত্বাবধানেই উনার চিকিৎসা হত। একবার উনার গল্ডব্লাডার  অপারেশন হল, উনার ইচ্ছানুযায়ী আমি অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। সারা রাত পাশেই ছিলাম। শেখ রেহানা তখন শেখ হাসিনাকে জানান আমি বাড়ি যাইনি সারা রাত পাশে ছিলাম ৷ ভাইয়ের মতো সম্বোধন করেন। আমি গ্যাস্ট্রোলজির ডাক্তার একবার আপাকে বললাম, বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রোলজির একটি বিশেষ হসপিটাল করতে পারলে ভাল  হত। তখন তিনি বলেছিলেন যদি সরকারে যাই তখন করব৷ তারপর ২০০৮ সালে তিনি  সেটার কাজ শুরু করেন। আমি এর শুরু থেকে জড়িত ছিলাম ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে থাকতে হয়েছিল। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, সেই হসপিটালটা ভাল চলছে। বৃটিশ একটি টিম সম্প্রতি ভিজিট করে এটাকে লন্ডনের চাইতেও ভাল বলে রিপোর্ট করেছেন।

আমি যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে উনার শারীরিক সুস্থতা অসুস্থতা নিয়ে নিবেদিত। তাই তিনি আমার পরামর্শকে গুরুত্ব দেন। সেভাবেই আমার পরামর্শে  আলহামদুলিল্লাহ তিনি ভাল আছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন উনার বড় কোন শারিরীক অসুবিধা না।

জুয়েল সাদাত: একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দেশের বর্তমান উন্নতিকে কিভাবে দেখেন। মুক্তিযোদ্বাদের ভাতা বেড়েছে কেমন বোধ করেন?

ডা. শিশির: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের আশাতিত উন্নতিতে মনে হয়ে স্বাধীনতার সুফল আমরা পেয়ে গেছি। যা দেখে আমি নিজে গর্বিত। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নিকট রোল মডেল। মুক্তিযোদ্বাদের ভাতা বেড়েছে, আজ মুক্তিযোদ্ধারা  নিজেকে অসহায় বোধ করেন না। তারা গৃহঋণ পাচ্ছেন। নানা রকম পন্থায় মুক্তিযোদ্বাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটা দেখে আনন্দিত হচ্ছি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

জুয়েল সাদাত:  আপনার নিকট বাংলাদেশের এই মুহূর্তে বড়ো সমস্যা কি?

ডা. শিশির: আমাদের দেশের ডেভেলপমেন্ট দেখে বিশ্বের অনেক দেখ স্তম্ভিত। জাতীসংঘ বাংলাদেশের উন্নতিকে রুল মডেল হিসাবে দেখাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক- জাতিসংঘ এর কাছে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার নাম। তবে এখন নতুন প্রজন্মকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে। যদি দুর্নীতিকে কমিয়ে আনা যায় তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। দুর্নীতি বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে, সেটাকে জিরো টলারেন্স নিয়ে আনতে হবে। তবে সম্ভাবনার বাংলাদেশ। আমাদের দেশটা আসলেই সোনায় মোড়ানো। সোনার বাংলায় সোনা ফলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের একটি পজেটিভ রোল মডেল।

জুয়েল সাদাত - আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

ডা. শিশির: আমি এই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে যাব। স্থায়ী ভাবে বসবাস করার ইচ্ছা। সেখানে অনেক কাজ, অনেক বড় বড় প্রজেক্ট অসমাপ্ত সেগুলোতে মনোনিবেশ করব। দেশের মাটিতে শেষ জীবন কাটাতে চাই। একটি গান আছে " তোরা দে না, দেনা, সেই মাটি আমর অঙ্গে " আমি সেই মাটিতেই ফিরে যেতে চাই। আমি আমার পিতা মাতার কবরের পাশেই থাকব। আমর জন্য দোয়া করবেন। যদি নিজের অজান্তে কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। 

জুয়েল সাদাত: আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা.শিশির:  আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

লেখক: জুয়েল সাদাত, সাংবাদিক কলামিস্ট, আমেরিকা, ফ্লোরিডা

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;