একজন ডা. শিশির, তার গেরিলা যুদ্ধের গল্প

  বিজয়ের ৫০ বছর



জুয়েল সাদাত
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

 

ডা. সিরাজুল ইসলাম। একজন অসাধারণ মানবিক মানুষ। একজন মুক্তিযোদ্ধা ট্রেইনার। ১৪০০ মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনিং করেছিলেছেন। শিশির ভাদুড়ি ছন্মনামে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন। অসাধারণ দেশপ্রেমিক একজন চিকিৎসক মুক্তিযোদ্ধা। পরিবারের দুই ভাই যুদ্ধ করেছেন। ধার্মিক পরিবারে বেড়ে উঠা ডাক্তার ইসলাম তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে সারা আমেরিকার মসজিদে মসজিদে কাটিয়েছেন। দারুণ গান গাইতে পারতেন। ওস্তাদের কাছে গান শিখেছেন। দাওয়াতি কাজে জড়িয়ে গান ছাড়েন। ফ্লোরিডায় ৬/৭টি মসজিদ তৈরি করেছেন। দান করেন হিসাব ছাড়া। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা নিয়ে কোন আপোষ করেন না।  ছিলেন মরহুম শেখ কামালের বন্ধু।  একাধারে তিনি আবার প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকও।

মন খুলে যুদ্ধের গল্প, জীবনের গল্প, নিয়ে কথা বলেছেন কমিউনিটি এক্টিভিস্ট সাংবাদিক কলামিস্ট জুয়েল সাদাতের সাথে।   

জুয়েল সাদাত - আপনার পড়াশুনা বা ছাত্র জীবন কেমন ছিল?

ডা. শিশির: নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রাথমিক শিক্ষা। তারপর পাবনা জেলা স্কুলে পড়াশুনা করি। স্কুল জীবনে স্কাউট লিডার, আবৃত্তি, লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত ছিলাম। তারপর ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করি। তারপর ফাস্ট গ্রেট স্কলারশিপ নিয়ে আমরা মাত্র দুজন ইস্ট পাকিস্তান থেকে লাহোরে যাই। ঢাকা কলেজে পড়াশুনা কালীন সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে কলেজের ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি হই। তখন মরহুম শেখ কামাল আমার সহপাটি ছিলেন। তিনি বলতেন, তোমরা মেধাবী পড়াশুনা করো। প্রযোজন মতো আমাদের সাপোর্ট কর। তিনি আমার নির্বাচনে আমাকে ভোট দিতে বলতেন সবাইকে। ১৯৬৯ সালে লাহোরে পড়াশুনার জন্য যাই। তারপর যুদ্ধের কারণে সেখানে থাকা সম্ভব না হওয়ায় ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশে যুদ্ধচলাকালীন চলে আসি। যুদ্ধের পর ঢাকা মেডিকেল থেকে ডাক্তারি পাস করি।

জুয়েল সাদাত:  আপনার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল সম্পর্ক জানতে চাই?

ডা. শিশির: পাবনা জেলা স্কুলেই আমার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়ানো। লেখালেখি, স্কাউটিং এর নানা একটিভিটিস, গল্প কবিতা নাটক সব কিছু শুরু স্কুল জীবনেই। তারপর ঢাকা কলেজে বড়ো পরিসরে জড়ানো। ঢাকা কলেজের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ওতোপ্রোতো জড়িত ছিলাম। সবগুলো স্টেজ শোতে আমি থাকতাম। নাটক করতাম। ঢাকার অগ্নিবিনাতে জড়িত ছিলাম।  ওস্তাদের নিকট গান শিখি।  টেলিভিশনে অনুষ্ঠান প্রযোজনা করি। স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুষ্ঠান করতাম। ভাল গান গাইতে পারতাম। একবার আমার এক গানের উস্তাদ অসুস্থ হলেন, উনাকে বিশেষ যত্ন নিয়ে সুস্থ করে তুলি। তারপর উনি আমাকে ও অনেক যত্ন করে গান শেখান। উস্তাদ গুল মোহাম্মদসহ আরো অনেকের  সান্নিধ্যেই গানের সব মাধ্যমেই পারদর্শিতা অর্জন করি।

জুয়েল সাদাত: মুক্তিযুদ্ধে জড়ানো কিভাবে, আর কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেইনার হলেন?

ডা. শিশির: যখন লাহোরে ছিলাম, ২৫ মার্চের পরে একদিন হোস্টেলে আমাকে আটক করে  বলতে  থাকে  পাকিস্তান নট ফর বাংলাদেশি বাস্টার্ড। সেদিন নেপালি ছাত্ররা আমাকে মুক্ত করে। তখন তারা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল। তখন প্রিন্সিপাল আমাকে বলেন  ন্যাশনাল ক্রাইসিস চলছ, তোমাদের হোস্টেলে থাকা নিরাপদ নয়। তখন অনেকেই হোস্টেল থেকে চলে গিয়েছিল। আমি যেহেতু গভর্নর স্কালারশিপে ছিলাম,  তখন তারা আমাদের আর্মির সহায়তায় দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছিল। আমরা দুই তিন জন ছিলাম। এয়ারপোর্টে আমাদের হত্যা করতে পারে তাই অনেকেই আসেনি। আমি একা ঢাকা আসলাম ১৮  এপ্রিল ১৯৭১ সালে। পায়ে হেঁটে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চলে আসি, তিনদিন পর চলে যাই নাটোরের গুরিদাসপুর গ্রামের বাড়ি। মা বলেন, পাশের গ্রামের ১৮ জনকে  পাক আর্মি মেরে ফেলছে। তখন আমরা বাড়িতে থাকতাম না মাঠে ঘুমাতাম । কাউকে রাজি করাতে পারছিলাম না মুক্তিযুদ্ধে যেতে। মাত্র তিনজন আমরা চলে যাই বাঙালিপুর ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরবর্তিতে পরিচিত আব্দুল জলিল ভাই, তিনি আমার আব্বার পরিচিত সেই হিসাবে আমাকে সুযোগ দিলেন । আমার পূর্বের মিলিটারি ট্রেনিং ছিল, সেই সাথে স্কাউটিংসহ নানা রকম ট্রেনিং থাকায় তিনি আমাকে ট্রেইনার হিসাবে কাজে লাগান। তিন মাস ট্রেনিং করাই । আমরা বেশীর ভাগ সময় রাতে অপারেশন করতাম দিনে।

জুয়েল সাদাত: গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কিভাবে জড়ালেন

ডা. শিশির: আমাদের ক্যাস্পের কাছে১০ জন মুক্তিযোদ্ধা চাইল। তখন আমাদের দশ জনকে সিলেক্ট করে। আমাদের বলা হল তোমাদের বিশেষ ট্রেনিং এর জন্য নেয়া হচ্ছে। কই যাচ্ছ?  কেন যাচ্ছ?  প্রশ্ন করতে পারবে না। আমাদের ইন্ডিয়ান আর্মির ট্রাকে করে উচ্চতর ট্রেনিংয়ের জন্য জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি নিয়ে গেল। সেখানে আমরা তৃতীয় ব্যাচ হিসাবে ট্রেনিং এ যোগ দেই। সেখানে সিরাজুল ইসলাম খান, তোফায়েল আহমদ, আব্দুর রাজ্জাক ভাইদের সাথে দেখা হয়। তখন তারা বললেন তোমাদের গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্লেনে নেয়া হবে, অনেক কষ্ট, যারা কষ্ট সহ্য করতে পারবে না, তাদের যাওয়ার দরকার নাই। আমরা দশজনই যেতে রাজি হই। আমাদের আর্মির পোশাক দেয়া হয়। 

ইনু ভাইরা দ্বিতীয় ব্যাচে ট্রেনিং নেন, আমরা তৃতীয় ব্যাচে ট্রেনিং শেষ করি। তারা বললেন, এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্টনমেন্ট, তাই সবার মুসলিম নাম থাকা ঠিক হবে না।  তখন সেখানে আমাদের প্রত্যেককে একটি হিন্দু নাম ধারণ করতে হয়। আমার নাম দেয়া শিশির ভাদুড়ি ৷

পরবর্তিতে আমার জীবনে শিশির নামটা রেখে দেই স্মৃতি হিসাবে৷ গেরিলা ট্রেনিং এ নানা পরীক্ষা হত ৷ আমি ভাল ইংরেজি জানতাম, আমি কর্নেল মালহাতরার ইংরেজি স্পিচ ও নানা কৌশল ট্রেনিং শিট বাংলায় ট্রান্সলেট করতাম,  তাই সেখানে ও আমাকে স্কোয়াড লিডার বানানো হয়। কর্নেল মালাহাতরা আমাকে ট্রেইনার হিসাবে রেখে দেন। তখন আমার মুক্তিযোদ্ধারা  কর্নেল মালহাতরাকে অনুরোধ করেন, আমাকে নিয়ে দেশে যেতে। কারণ  সিরাজুল ইসলাম  (শিশির)  দেশে না গেলে উনার মা চিন্তা করবেন। আর তাকে ছাড়া আমরা কিভাবে  যুদ্ধ করব।  কি মনে করে কর্নেল মালহাতরা  আমাকে দেশে পাঠান৷  গেরিলা যুদ্ধারা অনেক কৌশলী, তাদের মাধ্যমেই বড় বড় অপারেশন হত। গেরিলা যুদ্ধের কৌশলেই অনেক বড় বড় সফল অপারেশন হয়েছিল।

জুয়েল সাদাত: আপনি রাজাকারদের কিভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন? বুলেট নিয়ে নাকি আপনারা শপথ নিয়েছিলেন?

ডা. শিশির:  আমি গেরিলাযোদ্ধা ছিলাম। রাজাকারদের কাছে অনেক অস্ত্র আছে, গুলি ছিল। আমি তাদের নানা ভাবে কৌশলে আত্মসমর্পণ করাই। তারা আমাদের কাছে যে কোন কারণে বা ভয়ে হউক বা জীবনের মায়ায় হউক একত্রিত হয়। তখন কোরআন শরিফের উপর আমার হাত, তারপর তাদের হাত তারপর বুলেট রেখে শপথ করালাম। শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ মেনে চলব, দেশের সাথে বেইমানি করব না। যদি করি তাহলে এই বুলেটেই যেন জীবন যায়।

জুয়েল সাদাত: আপনারা কোন জায়গায় যুদ্ধ করেছেন?

ডা. শিশির: আমরা মূলত আগস্ট থেকে ডিসেম্বর যুদ্ধ করি। আত্রাই - গুরুদাসপুর- সিংরাই পুরো এলাকাতে নানা স্কুলে স্কুলে গিয়ে আমরা দশজনই মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেই, শেষ পর্যন্ত যার সংখ্যা দাড়ায় ১৪০০ জন। তারপর আমাদের এই বাহিনী এমন আক্রমণ করে পাকিস্তানী বাহিনী পালানোর সুযোগ পায়নি। এই সময়টাই মুক্তিযুদ্ধের অনেক সফলতা আসে। আমাদের নানা কৌশলের কারণে পাক বাহিনী দুর্বল হয়ে যায়। 

জুয়েল সাদাত : আপনাদের মানে গেরিলা যুদ্বাদের লজিস্টিক সাপোর্ট কেমন ছিল।

ডা. শিশির: আসলে অস্ত্র যুদ্ধ করে না, অস্ত্রের পেছনের মানুষ যুদ্ধ করে, আবার পেছনের মানুষ যুদ্ধ করে না। একটা আদর্শকে সামনে রেখে যুদ্ধ হয়ে থাকে। একজন গেরিলা  যুদ্ধা ১০০ জন কনভেশনাল আর্মির সমান। গেরিলা যুদ্ধ হল কৌশল। আমরা রাতে ডানে বামে গুলাগুলি করতাম, তাদের ঘুমাতে দিতাম না। রাতের পর রাত  পাকিস্তানি বাহিনী ঘুমাতে না পেরে কাহিল হয়ে পড়ত। তখন তাদের আক্রমণ করলে সহজে জয়লাভ সম্ভব হত। তারপর নানা কৌশল কাজে লাগিয়ে থানার ওসিকে কাবু করে থানার গোলাবারুদ আয়ত্ব করতে হত।  গেরিলা যুদ্ধ মানে কৌশলের নানা প্রয়োগ।

জুয়েল সাদাত:  যুদ্বকালীন সময়ে কি মনে হয়েছিল যুদ্ধ জয়লাভ সম্ভব

ডা. শিশির: গেরিলা যুদ্ধ করতে প্রচুর পড়াশুনা করতে হত। আমি অনেক পড়াশুনা করেছি। যুদ্ধের ইতিহাস পড়তে হয়। আমাদের ভাষা, কৃস্টি, মানুষের দেশপ্রেম আমাদের যুদ্ধ জয়ের উৎসাহ জোগাত। আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে না  এই বিশ্বাস ছিল। বন্ধু প্রতীম দেশ ভারত আমাদের শেষের দিকে সহযোগিতা করেছে। তাই যুদ্ধটা দ্রুত শেষ হয়েছে। তবে তাদের সহযোগিতা ছাড়াও আমরা যুদ্ধ জয় করতে পারতাম, একটু সময় লাগত। আর পাকিস্তান বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল তাদের সৈন্যদের নিরাপত্তার জন্য। সেখানেও রাজনীতি থাকতে পারে। তবে আমি বা আমরা জয়ি হব এই আত্মবিশ্বাস কাজ করত।

জুয়েল সাদাত: মুক্তিযুদ্ধা, ভুয়া মুক্তিযোদ্বা রাজাকার সম্পর্কে কিছু বলেন।

ডা. শিশির: আমি আমার থানার ৩৯ নং মুক্তিযোদ্ধা। পূর্বের ৩৮ জন কোথায় যুদ্ধ করেছেন জানা নাই। সঠিক মুক্তিযুদ্বার তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা নানা রাজনৈতিক কারণে হয়নি। তবে তা করা সম্ভব। অনেকেই যুদ্ধ না করেই মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। যা দুঃখজনক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্বারা কিছু পাবার জন্য যুদ্ধ করেননি।

আমরা রাজাকার আল বদরদের বুঝিয়েছি, বলেছি এই নাও স্টেনগান পাকিস্তানীদের হাতে মারা যাব কেন?  তোমরা আমাদের মার। জনে জনে বুঝিয়ে তাদেরকে নিয়েই  আমাদের যুদ্ধের জন্য এগোতে হয়েছে। দেশের ভেতরের শত্রুরাই আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই তাদের জন্য বেশী সময় ব্যয় করতে হয়েছে। এবং পুরো মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ড্যামেজ তাদের মাধ্যমেই হয়েছে।

জুয়েল সাদাত: যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে আপনার কি ভূমিকা ছিল?

ডা. শিশির: দেশ স্বাধীন হবার পর আমাদের লিডার সম্বোধন করা হত। আমাদের সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হল দেশ পুনর্গঠনে। আমরা রাজাকারদের আলবদরদের কাজে লাগালাম। বললাম যদি কারও ঘরে লুটের মাল পাওয়া যাবে তার জন্য কঠিন শাস্তি। দু'সপ্তাহের মধ্য হিন্দুদের বাড়ি ঘর পুননির্মাণ করে দেয়া হল। অনেকেই ফিরে এসে টিনের ঘর পেয়ে গেল। যাদের টিনের ঘর ছিল না অতীতে। তখন বড়লোকদের নিকট থেকে ২০০ টাকা চাঁদা নিয়ে এই কাজটা আমরা করে দেই। গমের সিড দেই, অনেকেই কৃষিতে মনোনিবেশ করেন। আমাদের এলাকাটাকে পুনর্গঠন করি।  আমি বলেছিলাম আমার ছেলেদের  রাজাকারদের পিটাইতে পারবে, জানে মারা যাবে না।  তাদের দেশ পুনর্গঠনে কাজে লাগাই। তারপর আমি ঢাকা মেডিকেলে পড়তে চলে যাই। সেখানে তখন অবাধে নকল হত। আমি স্যারদের বলি, আমরা মেধাবী ছাত্র আমাদের সহপাটিরা কেন নকল করবে। তারপর নকল বন্ধ হয়ে। সেখানে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখি। তারপর আমি বিপুল ভোটে জেনারেল সেক্রটারি নির্বাচিত হই। অভিষেকের টাকা বাঁচিয়ে ২০০০ গাছ লাগাই। যা আজও কালের সাক্ষী।  দেশ গঠনে গ্রামে ও ঢাকায় জড়িত ছিলাম  নানাভাবে।

জুয়েল সাদাত: যুদ্ধ পরবর্তি বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের তিন বছর কেমন ছিল।

ডা. শিশির: আমাদের দেশের যুদ্ধ পরবর্তি সময়টাতে কিছু টানাপোড়ন ছিল। সর্বহারা পার্টি ও সিরাজ সিকদার অন্য মোটিভ ছিল। আবার জাতির জনকের ক্লিয়ার কনসেপ্ট ছিল কিভাবে বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটানো যায়। বঙ্গবন্ধু তার দৃঢ়তায় একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন। আমেরিকা আমাদের কোন সময় সহযোগিতা করেনি, উল্টো বটমলেস বাস্কেট বলেছিল। আজ সেই বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। জাতির জনক তার দৃঢ়তায় দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। যদিও তিনি তা শেষ করে যেতে পারেন নি। অনেকেই ভেবেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী যাবে না। অনেক মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছিল উনার শাসনামলে। তবে তিনি দেশকে অনেক কম সময়ে গড়ে তুলেছিলেন। কম  সময়ে সংবিধান রচনা, নিবার্চন দেয়া, রাস্তা ঘাট  ব্রিজ কালভার্ট সবাই কিছুই করতে পেরেছিলেন নিজের দৃঢ় চেতনা নিয়ে।

জুয়েল সাদাত: যুদ্ধ পরবর্তি কালে দেশ গঠনে সাধারণ মানুষদের কি ভূমিকা ছিল।

ডা. শিশির: বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করায় বাংলাদেশ এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তারপর যারা ছিলেন, তারা নিজেদের মেধা মনন কাজে লাগিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা দাড় করান। সাধারণ মানুষ দেশ গঠনে সক্রিয় ভুমিকা রাখে। মুক্তিযোদ্বার অস্ত্র আত্মসমর্পণ করে দেশের নানা কাজে মনোনিবেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বাধীন দেশটাকে সকলে গড়ে তুলেন। 

জুয়েল সাদাত: আপনার সাথে যুদ্বের প্রানবন্ত গল্প শুনে মনে হচ্ছে এ রকম কখনও শুনিনি আগে। আপনার উচিত বই লেখা। সাধারণ যুদ্ধের গল্প, গেরিলা যুদ্ধের গল্প, নানা ট্রেনিং এর গল্প। আপনার অনেক বেশি বেশি লেখা উচিত।

ডা. শিশির:  জি। আমার হাতে এখন অনেক সময়। আমি লিখব৷ সিরাজুল আলম খান ও হাসানুল হক ইনু বেঁচে আছেন। আমার লেখা গুলোর ঘটনার তারা জীবন্ত উদাহরণ। আমি ক্যাস্পে গান গাইতাম তারা শুনেছেন। একবার প্রধানমন্ত্রীর সামনে তাদের সাথে দেখা তখন সেই ক্যাস্পের গল্পের কথা উঠে আসে। তারা আমার লম্বা দাড়ি দেখে চিনতে পারেন নি। আমি শিঘ্রই লিখতে শুরু করব।

জুয়েল সাদাত: আপনি কবে আমেরিকা আসেন। ধর্মীয় ব্যাপারে আপনার সিরিয়াসনেস কবে থেকে।

ডা. শিশির:  আমি ৭৭ সালে আমেরিকা আসি। আমার মা নামাজ কালামের ব্যাপারে খুব আপোষহীন ছিলেন। নামাজ না পড়লে ভাত দিতেন না। আমি  আমেরিকায় এসে ব্যাপক পড়াশুনা করে তাবলিগে জড়িয়ে যাই৷ আমি চারমাস না পুরো সাত মাস তাবলিগে এক নাগাড়ে ছিলাম। আমি অনেক দিন হসপিটালে ও প্রাকটিসের বাহিরে ছিলাম। যখন আমার হসপিটালের চাকরি চলে যাবার নোটিশ আসে তখন আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসি।

জুয়েল সাদাত: আপনাকে দেখা গেছে ভাল গান গাইতে পারেন, আবার একজন গেরিলা যুদ্ধা। আবার আপনাকে দেখা গেল তাবলিগ জামাতে জড়িত। একটু বলবেনঅনেক গুলো মসজিদ তৈরি করেছেন।

ডা. শিশির: আমি স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করে  ডাক্তারি পেশায় মনোনিবেশ করি । তারপর ১৯৭৭ সালে আমেরিকায় আসি। তখন এখনকার মতো বিদেশে আসা সহজ ছিল না। সরকারি ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যেত না। তারপর ৮৭ সালে ওরলান্ডো ( ফ্লোরিডা)   আমেরিকা আসি। যেখানে আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটালাম। গ্যাস্ট্রোলজির উপর ডিগ্রি নিলাম। সাথে সাথে দাওয়াতে যোগ দেই। তাবলিগ জামাতে যোগ দেই  জীবনের পরিবর্তন আসে। তারপর গান টান আর গাওয়া হয় না। অনেক মসজিদ মাদ্রাসা তৈরি করি।  দাওয়াতের জন্য সারা আমেরিকা ঘুরে বেড়াই। আলহামদুলিল্লাহ আজ গ্রেটার ওরলান্ডোতে ছোট বড় ৩৮ টি মসজিদ। একটা মজার ঘটনা বলি,  ওরলান্ডো জামে মসজিদ যেটা ডিজনি এরিয়াতে, সেটা আমার যখন মাত্র ৫০ জন্য মুসল্লি ছিলাম এই শহরে তখন ১ লাখ ডলারে জায়গা কিনে সর্বমোট ৬ লাখ ডলারে তৈরি করি। ৬০০ জনে নামাজ পড়ার জন্য বানাই। অনেকে আমাকে বলে এত নামাজি হবে না। আপনি জানেন এখন সেই মসজিদটাই আমরা ৫ হাজার মুসল্লির জন্য বানাচ্ছি।

জুয়েল সাদাত: শুনেছি আপনার গ্রামের বাড়িতে অনেক বড় কারিগরি মাদ্রাসা করেছেন।

ডা. শিশির:  আসলে আমার বড় ভাই যিনি আজ আমাদের মাঝে নাই। উনি শুরু করেছিলেন। পরবর্তিতে আমরা সব ভাই বোন এটাকে বড়ো করেছি। আমি এটার সাথে বেশী সম্পৃক্ত। অনেক বৃহৎ এলাকা নিয়ে মাদ্রাসা। যা রাজশাহী বিভাগের একটি আইডল প্রতিষ্ঠান। সেখানে হাফিজদের কারিগরি ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৪০ জন শিক্ষকদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট বানিয়ে দিচ্ছি। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মাদ্রাসায় থাকবেন, ছাত্রদের পড়াশুনাটাও ভাল হবে। যা বাংলাদেশে প্রথম। শিক্ষকরা ফ্রি থাকার বাসস্থান পাচ্ছেন। পুরো প্রজেক্টটি বিশাল এলাকা জুড়ে। এখানে আমি একটি আন্তর্জাতিক মানের লাইব্রেরি করব, যা হবে রাজহাশী বিভাগের অন্যতম। অনেক বই কেনা হচ্ছে। ভবিষ্যতে হাজার হাজার কোরআনে হাফেজ বের হবেন, উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে। বর্তমানেও হাফেজ বের হচ্ছেন। পুরো কমপ্লেক্সটা বিরাট এলাকা জুড়ে।

জুয়েল সাদত: আপনি হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত আছেন, কি কি কাজে আপনারা জড়িত।

ডা. শিশির: আমার প্রিয় মানুষ, ডাক্তার ইফতেখার মাহমুদ হোপ ফাউন্ডেশন তৈরি করেন ১৯৯৮ সালে। আমি এটার বোর্ড অব ডাইরেক্টর। কক্সবাজার ও রামুতে আমাদের ৪০ বেডের হসপিটাল আছে। আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছি। ডাক্তার ইফতেখার আমাকে বড় আকারে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। হোপ ফাউন্ডেশেনর সাথে ১৬০০ ডাক্তার নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী জড়িত।

জুয়েল সাদাত: আপনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। একটু যদি বলেন।

ডা. শিশির: শেখ কামালের সহপাটি হিসাবে সম্পর্কটা অনেক কাছের। যখনই তিনি আমেরিকায় আসতেন আমার তত্বাবধানেই উনার চিকিৎসা হত। একবার উনার গল্ডব্লাডার  অপারেশন হল, উনার ইচ্ছানুযায়ী আমি অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। সারা রাত পাশেই ছিলাম। শেখ রেহানা তখন শেখ হাসিনাকে জানান আমি বাড়ি যাইনি সারা রাত পাশে ছিলাম ৷ ভাইয়ের মতো সম্বোধন করেন। আমি গ্যাস্ট্রোলজির ডাক্তার একবার আপাকে বললাম, বাংলাদেশে গ্যাস্ট্রোলজির একটি বিশেষ হসপিটাল করতে পারলে ভাল  হত। তখন তিনি বলেছিলেন যদি সরকারে যাই তখন করব৷ তারপর ২০০৮ সালে তিনি  সেটার কাজ শুরু করেন। আমি এর শুরু থেকে জড়িত ছিলাম ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে থাকতে হয়েছিল। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, সেই হসপিটালটা ভাল চলছে। বৃটিশ একটি টিম সম্প্রতি ভিজিট করে এটাকে লন্ডনের চাইতেও ভাল বলে রিপোর্ট করেছেন।

আমি যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে উনার শারীরিক সুস্থতা অসুস্থতা নিয়ে নিবেদিত। তাই তিনি আমার পরামর্শকে গুরুত্ব দেন। সেভাবেই আমার পরামর্শে  আলহামদুলিল্লাহ তিনি ভাল আছেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন উনার বড় কোন শারিরীক অসুবিধা না।

জুয়েল সাদাত: একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে দেশের বর্তমান উন্নতিকে কিভাবে দেখেন। মুক্তিযোদ্বাদের ভাতা বেড়েছে কেমন বোধ করেন?

ডা. শিশির: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের আশাতিত উন্নতিতে মনে হয়ে স্বাধীনতার সুফল আমরা পেয়ে গেছি। যা দেখে আমি নিজে গর্বিত। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নিকট রোল মডেল। মুক্তিযোদ্বাদের ভাতা বেড়েছে, আজ মুক্তিযোদ্ধারা  নিজেকে অসহায় বোধ করেন না। তারা গৃহঋণ পাচ্ছেন। নানা রকম পন্থায় মুক্তিযোদ্বাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে, সেটা দেখে আনন্দিত হচ্ছি। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

জুয়েল সাদাত:  আপনার নিকট বাংলাদেশের এই মুহূর্তে বড়ো সমস্যা কি?

ডা. শিশির: আমাদের দেশের ডেভেলপমেন্ট দেখে বিশ্বের অনেক দেখ স্তম্ভিত। জাতীসংঘ বাংলাদেশের উন্নতিকে রুল মডেল হিসাবে দেখাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক- জাতিসংঘ এর কাছে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার নাম। তবে এখন নতুন প্রজন্মকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে। যদি দুর্নীতিকে কমিয়ে আনা যায় তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। দুর্নীতি বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে, সেটাকে জিরো টলারেন্স নিয়ে আনতে হবে। তবে সম্ভাবনার বাংলাদেশ। আমাদের দেশটা আসলেই সোনায় মোড়ানো। সোনার বাংলায় সোনা ফলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের একটি পজেটিভ রোল মডেল।

জুয়েল সাদাত - আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

ডা. শিশির: আমি এই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশে যাব। স্থায়ী ভাবে বসবাস করার ইচ্ছা। সেখানে অনেক কাজ, অনেক বড় বড় প্রজেক্ট অসমাপ্ত সেগুলোতে মনোনিবেশ করব। দেশের মাটিতে শেষ জীবন কাটাতে চাই। একটি গান আছে " তোরা দে না, দেনা, সেই মাটি আমর অঙ্গে " আমি সেই মাটিতেই ফিরে যেতে চাই। আমি আমার পিতা মাতার কবরের পাশেই থাকব। আমর জন্য দোয়া করবেন। যদি নিজের অজান্তে কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। 

জুয়েল সাদাত: আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা.শিশির:  আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

লেখক: জুয়েল সাদাত, সাংবাদিক কলামিস্ট, আমেরিকা, ফ্লোরিডা

   

৭৪ বছর ছুটিহীন কর্মজীবন!



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
মেলবা মেবানের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

মেলবা মেবানের বিদায়ী অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ছুটি ছাড়া আপনি কতদিন চাকরি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে একেক রকম হলেও, কেউই দীর্ঘ সময় ছুটিহীন চাকরি করবেন এমন উত্তর আশা করা যায় না। কিন্তু, অসুস্থ হলে যে সবারই ছুটি প্রয়োজন হবে সেটা নিশ্চিত। তবে এই কথাটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মেলবা মেবানের (৯০) জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, এই নারী তাঁর ৭৪ বছরের কর্মজীবনে কখনও ছুটি কাটাননি আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে অসুস্থ হলেও সে হাসিমুখে তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মার্কিন গনমাধ্যম ফক্স নিউজের বরাত দিয়ে এমন খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মেলবা মেবানে ১৯৪৯ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মেয়ার এন্ড স্মিথ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ‘লিফট গার্ল’ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে এটি অধিগ্রহণ করে নেয় ডিলার্ড। মেয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে পুরুষদের পোশাক এবং কসমেটোলজিতে কাজ শুরু করেন ধরে তিনি এখানেই কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ ৭৪ বছর কর্মজীবনে তিনি কখনও ছুটি নেননি এমনকি অসুস্থ হলেও না। 

মেলবার সম্পর্কে টাইলারের ডিলার্ডের স্টোর ম্যানেজার জেমস সায়েঞ্জ ফক্স নিউজকে বলেন, তিনি শুধু একজন বিক্রয়কর্মী নন। তিনি একজন মা। তিনি গাইড করেন। তিনি জীবন সম্পর্কে উপদেশ দেন। তিনি বহু গুণের অধিকারী। 

তিনি আরও জানান, মেলবা তাঁর মুখে হাসি নিয়ে প্রতিদিন কাজ শুরু করতেন।

তিনি বিক্রয়ে পারদর্শী ছিলেন এবং এমন কোন গ্রাহক বা সহকর্মী ছিল না যে তাকে ভালোবাসে না। তার পরে যারা এখানে কাজ শুরু করেছে তাদের সবাইকে খুব সুন্দরভাবে প্রশিক্ষন দিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন। 

মেবানে জানান, কর্মস্থলে কখনো বিরক্ত হতেন না তিনি। সেখানকার সবাইকে ভালোবাসতেন এবং প্রতিদিন কাজে যেতে পছন্দ করতেন। অবসর নেওয়ার পর এখন বিশ্রাম, ভ্রমণ এবং ভালো খাবার খেয়ে দিনযাপন করতে চান তিনি। 

মেবানের কয়েক দশকের কাজ এবং নিষ্ঠার প্রতি সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে তাঁকে স্টোরের দীর্ঘতম কর্মক্ষম কর্মচারী হওয়ার জন্য ‘সার্টিফিকেট অব এক্সিলেন্স’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি', সম্পদ ৩ কোটি ডলার



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি'। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল 'ব্ল্যাকি'। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাধারণত যখন কেউ মারা যায় তখন তাঁর সম্পদের অংশ পরিবারের সদস্যদের কাছে রেখে যান। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায়ও দান করে থাকেন। তবে, যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ারের বাসিন্দা বেন রিয়া যা করেছেন তা বিরল! স্রেফ ভালোবাসা থেকেই তাঁর সম্পদের বড় একটি অংশ প্রিয় পোষা বিড়াল ‘ব্ল্যাকির’ জন্য দিয়ে যান। আর এতেই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হয়ে উঠে ‘ব্ল্যাকি’। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ১৯৮৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ব্ল্যাকির নাম উঠেছে। সেই নাম ৩৫ বছর ধরে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়াল হিসেবে গিনেসের পাতায় বিড়ালটির এই স্বীকৃতি অক্ষুণ্ন রয়েছে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সবচেয়ে ধনী বিড়ালটির সম্পদের পরিমাণ আসলে কত?

গিনেস ওয়ার্ল্ড বলছে, যখন ব্ল্যাকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিড়ালের স্বীকৃতি পেয়েছিল, তখন সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ডলার। বর্তমানে যা ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গিনেস ওয়ার্ল্ডের তথ্য মতে, ‘ব্ল্যাকির’ মালিক বেন রিয়া প্রাচীন জিনিসপত্র ক্রয় এবং বিক্রি করে কোটি ডলারের মালিক হন। ১৯৮৮ সালে এই ধনকুব মারা গেলে সম্পদের বিশাল একটি অংশ বিড়ালের নামে দিয়ে যান। তবে বেনের পরিবার ছিল কিন্তু সে একাই বসবাস করতো।  

তার বেশিরভাগ অর্থই তিনটি দাতব্য সংস্থার মধ্যে উইল করে যান। যেই সংস্থাগুলো পোষা প্রাণীদের দেখভাল ও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। উইলে তিনি উল্লেখ করেন, যতদিন ব্ল্যাকি বেঁচে থাকবে ততদিন প্রাণীটির দেখভাল করতে হবে। 

তবে বেনের প্রিয় ব্ল্যাকি কত দিন বেঁচে ছিল কিংবা বেনের মৃত্যুর পর ব্ল্যাকির ভাগ্যে কী জুটেছিল, সেই বিষয়ে গিনেসের ওয়েবসাইটে কিছু না জানালেও এই রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি সেটি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি ।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

১৬০০ মিটার উচ্চতায় কম সময়ে দড়ি পার হয়ে বিশ্ব রেকর্ড!



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
শি হ্যালিন। ছবি: সংগৃহীত

শি হ্যালিন। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার (১.৬ কিলোমিটার) উচ্চতায় চীনের শি হ্যালিন (৩১) নামে এক ব্যক্তি খুব দ্রুত সময়ে ১০০ মিটারের স্ল্যাকলাইন (দড়ির উপর দিয়ে হাঁটা) পার হয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

রেকর্ড সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চীনা নাগরিক শি হ্যালিন সবচেয়ে কম সময়ে মাত্র ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে ১০০ মিটার লম্বা দড়ি পার হয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচুতে ছিল। 

শি হ্যালিন জানান, আমি পিংজিয়াংয়ের মাউন্ট উগং-এর গুয়ানিইন্ডাং ক্যাম্পে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উপরে স্টান্ট করেছি। সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে এই রেকর্ডটি করতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এটি বিশাল এক চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে এতো উচ্চতায় বাতাসের চাপ বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। এর মধ্যে আবার দিনটি ছিল খুব কুয়াশাচ্ছন্ন। ফলে ভালো করে দেখতেও সমস্যা হচ্ছিল। 

এই রেকর্ডের পর সে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে এরকম প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। 

তবে, এর আগেও তিনি এশিয়াতে বেশ কয়েকটি স্ল্যাকলাইন রেকর্ড জিতেছেন। ২০১৬ সালে তিনি ২ মিনিটে এই রেকর্ডটি করেছিলেন কিন্তু, সেটি পরের বছরই ফ্রান্সের নাগরিক লুকাস মিলিয়ার্ডের কাছে হারাতে হয়। 

  বিজয়ের ৫০ বছর

;

মেডেলিনে তাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ‘গ্রিন করিডোর’



ফিচার ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: বিবিসি

ছবি: বিবিসি

  • Font increase
  • Font Decrease

কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মেডেলিনে ‘গ্রিন করিডোর’ প্রকল্প শহরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশগত সুবিধার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে পুরো শহর জুড়ে গাছের শীতল ছায়ার ব্যবস্থা করেছে দেশটি।

মেডেলিনকে ‘বসন্তের শহর’ বলা হয়। মেডিলিনের নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু সারা বছরই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। নতুন নির্মিত ভবন ও রাস্তাগুলো তাপ শোষণ করে ধরে রাখে। তবে স্থানীয় সরকারী তথ্য অনুসারে, নতুন গ্রিন করিডোরগুলো শহর জুড়ে ২ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস করেছে।

কলম্বিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মেডেলিনে বায়ু দূষণ ও ক্রমবর্ধমান তাপ নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২০১৬ সালে "গ্রিন করিডোর" প্রোগ্রাম শুরু হয়। ৩০ টিরও বেশি সবুজ করিডোর রয়েছে এ শহরে। করিডোরগুলো নতুন রাস্তার প্রান্ত, উদ্যান, পার্ক এবং নিকটবর্তী পাহাড়গুলোকে সংযুক্ত করেছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পে শহর জুড়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০হাজার গাছ লাগানো হয়। ১২ হাজার ৫০০ টি গাছ রাস্তা ও পার্কে রোপন করা হয়। এছাড়া আরো ২৫ লক্ষ ছোট গাছের চারা রোপন করা হয়। ২০২১ সালের মধ্যে শহর জুড়ে ৮ লক্ষাধিক বড় গাছ রোপন করা হয়।

স্থানীয় সরকারের মতে, প্রকল্পটি জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ১৬.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬ লক্ষ২৫ হাজার মার্কিন ডলার।

ওইসিস কাস্ত্রো যিনি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে শহরের ওরিয়েন্টাল অ্যাভিনিউয়ের একটি স্ট্যান্ডে ফল বিক্রি করেন। কয়েক দশক আগের কথা মনে করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার একটি ট্রাফিক প্রকল্পের কাজের সময় রাস্তার সারিবদ্ধ গাছগুলো উপড়ে ফেলেছিল।

কাস্ত্রো বলেন, বর্তমানেও ওরিয়েন্টাল অ্যাভিনিউ রাস্তাটি ট্রাফিক ও বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখন রাস্তার দুপাশে বড় বড় ফল গাছ, ফুল গাছ ও ঝোপঝাড়ে সবুজ এলাকায় পরিণত হয়েছে।

এখানকার তাপমাত্রা সারা বছরই উপভোগ্য মনে হয়। শহরের যেসব অঞ্চলে বেশি গাছপালা নেই সেসব জায়গার তুলনায় অনেক সতেজ থাকে এই এলাকা। সাইকেল লেনের দুপাশে সারিবদ্ধ গাছের পাশে বেঞ্চগুলোতে পথচারীরা বিশ্রাম নিতে পারেন।

শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে শীতল করার জন্য প্রকল্পটি এখন বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নে ভালো কাজ করছে। এটি শহরে বন্যপ্রাণী ফিরিয়ে এনেছে।

একটা সময় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ তাপপ্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শহরগুলোতে।

সবুজ করিডোরের প্রতি মেডেলিনের দৃষ্টিভঙ্গি একটি কম খরচে, জনপ্রিয় সমাধান দেয় যা অন্যান্য শহরগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিলিপি করতে চাইছে। এটি কি ভবিষ্যতের একটি জলবায়ু-স্থিতিশীল শহরের জন্য একটি মডেল হতে পারে?

মেডেলিন কম খরচে ‘গ্রিন করিডোর’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাপ প্রবাহ কমানোর একটা জনপ্রিয় সমাধান দেয়। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের তাপপ্রবাহ কমাতে মেডেলিনকে অনুসরণ করছে। মেডেলিনকে ভবিষ্যতের জলবায়ু-স্থিতিশীল শহরের জন্য একটি মডেল ভাবা হয়।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার মতে, মেডেলিনের বায়ুদূষণের মাত্রা পিএম ২.৫। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ডব্লিউএইচও জানায়, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট ও বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।

যাইহোক, শুষ্ক মৌসুমে যখন শহরটিতে বৃষ্টিপাত হ্রাসের কারণে বায়ুর অবস্থার সবচেয়ে খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয় তখন মেডেলিন বায়ুর গুণমান সূচক (একিউআই) পিএম২.৫ এর ৫৫ µg/m3-এ পৌঁছাতে পারে। যখন দূষণ ৩৮ µg/m3-এর বেশি হয়ে যায়, তখন উপত্যকার প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থা স্বরুপ গাড়ি ব্যবহারে বিধিনিষেধ দিতে পারে।

২০১৫-১৬ সালে আমরা বায়ু দূষণের শীর্ষে পৌঁছেছিলাম বলে জানিয়েছেন সে সময়কার মেডেলিনের স্থানীয় অবকাঠামো সচিব পাওলা প্যালাসিও। তিনি বলেন, পরিবেশগত সমস্যায় এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।

২০২০ সালে মেডেলিনের অ্যান্টিওকিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালে আবুরা উপত্যকা অঞ্চলে দূষণের কারণে ১হাজার ৯৭১ জনের অকালমৃত্যু ঘটেছে। যানবাহন থেকে ধোয়া নির্গমনের উপর নিয়ন্ত্রণের অভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে দূষণের কারণে মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

গবেষকরা বলছেন, গ্রিন করিডোরে ব্যবহৃত গাছগুলো এই বিপজ্জনক কণার বিরুদ্ধে বাধা হিসাবে কাজ করে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দূষণ শোষণ করে নেয়।
মেডেলিন প্রকল্পে ব্যবহৃত কিছু প্রজাতির গাছ দূষণ শোষণে বিশেষভাবে দক্ষ বলে পরিচিত।

গ্রিন করিডর প্রকল্প বায়ু দূষণ কতটা কমিয়েছে তা নিয়ে কোনো সামগ্রিক সমীক্ষা বা পর্যালোচনা এখনও দেখা যায়নি। তবে গবেষকরা বলছেন, এর প্রভাব অধ্যয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, গবেষণা ফলাফল ২০২৪ সালের প্রথম দিকে প্রকাশিত হবে।

৩০টি গ্রিন করিডোরের পাশাপাশি, প্রায় ১২৪ টি পার্কও প্রকল্পের অংশ হিসেবে করিডোর দ্বারা সংযুক্ত হয়েছে। শহর জুড়ে সবুজের এই বৃদ্ধি জলবায়ুর ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অ্যান্টিওকিয়ার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, এই পার্কগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি, নুটিবারা এবং ভোলাডোর পাহাড় বায়ুমণ্ডল থেকে প্রতি বছর ৪০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) অপসারণ করে থাকে।

  বিজয়ের ৫০ বছর

;