চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে স্ত্রীকে হত্যা করে প্লাস্টিকের ড্রামে মরদেহ গুম করে রাখা মামলায় আবুল হোসেন লিটনকে (৪৫) দীর্ঘ ৯ বছর পর গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার (১ অক্টোবর) ফেনীর সোনাগাজী থানাধীন রাঘবপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়৷
গ্রেফতার আবুল হোসেন লিটন ফেনীর সোনাগাজী থানার রাঘবপুর এলাকা মৃত হাফেজ আহম্মদের ছেলে।
র্যাব জানায়, নিহত ভুক্তভোগী নাসিমা বেগম (২৬) বাগেরহাট জেলার সদর থানার মৌজারডাঙ্গা গ্রামের মেয়ে। ২০০৮ সালে নিহত নাসিমার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এলাকায় মো. কামরুল ইসলামের বিয়ে হয়। এর ২ বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম হয় এবং এর ২/৩ মাস পর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে নাসিমা নিরুপায় হয়ে সন্তানকে তার নানীর কাছে রেখে চট্টগ্রামে বসবাসরত ভাই মো. সেলিম হোসেনের ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় গার্মেন্টসে চাকরি নেন। গার্মেন্টেসে চাকরি করার সময় আবুল হোসেন লিটনের সাথে পরিচয় হয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
পরবর্তীতে নাসিমা তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২০১৩ সালে লিটনকে বিয়ে করেন। বিয়ের ১৫/২০ দিন পর নিহত নাসিমা তার বড় ভাইকে জানায় যে, লিটনকে বিবাহ করে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানাধীন গ্রীনভিউ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। বোনের বিবাহের কথা শুনে নিহত নাসিমার ছোট ভাই হিরণ শেখ ওই বাসায় বেড়াতে আসলে তার বোনের স্বামী লিটনের পূবের্র বিয়ে এবং তার ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তানের কথা জানাজানি হয়। এ নিয়ে স্বামী লিটনের সঙ্গে নাসোমার ঝগড়াঝাটি হয়।
এরপর ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ভুক্তভোগী নাসিমার ছোট ভাই তার ব্যবহৃত মোবাইল বার বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করা এবং পরে নাসিমার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পায়। লিটনকে ফোন করলে জানায় যে, তোমার বোনের সাথে ঝগড়া হয়েছে সে বাহিরে আছে। তখন বোন বাসায় আসলে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে নাসিমার ছোট ভাই হিরণ শেখ রাতে ফোন দিলে বোন জামাই লিটনকে জানায় যে, তোমার বোন ঘুমাচ্ছে ফোন দেওয়া যাবে না।
বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হলে একই বছর ৪ এপ্রিল বাগেরহাট থেকে নাসিমার বড় ভাই শেখ মো. হুমায়ন কবির ও ছোট ভাই হিরণ এবং বড় বোন সেলিনা বেগম সকালে চট্টগ্রাম এসে সবাই একত্রে পাহাড়তলীর ৫ নম্বর রোডের মো. ইসমাইল মজুমদারের বাড়ির ৬ষ্ঠ তালার বাড়া বাসায় গিয়ে তালা বন্ধ দেখতে পায়। তখন ওই বাসায় ৬ষ্ঠ তলায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়েছে এবং দুইদিন আগে লিটন তার পূর্বের স্ত্রীর ঘরের মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেছে বলে বাসার মালিক মো. ইসমাইল মজুমদার জানায়।
তখন নিহত নাসিমার ভাই ও বোনেরা মিলে ঘরের দরজা বন্ধ দেখে পার্শ্বের খোলা জানালা দিয়ে ভেরের দিকে দেখতে গিয়ে ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। এ ব্যাপারে তাদের মনে সন্দেহ হলে স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করে। পুলিশ এসে মালিকের নিকট থেকে অতিরিক্ত চাবি নিয়ে বাসার তালা খোলে ভেতরে প্রবেশ করে রান্না ঘরে রংয়ের প্লাস্টিকের পানির ড্রামের ভিতর থেকে পঁচা অবস্থায় নাসিমার মরদেহ উদ্ধার করেন। নৃশংস ও জঘন্য এই হত্যার ঘটনাটি তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় নিহত নাসিমার ভাই মো. সেলিম হোসেন (৩৩) বাদী হয়ে নগরীর পাহাড়তলী থানায় বোনের জাসাই লিটনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু করে এবং আসামি লিটনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) তাপস কর্মকার বলেন, আলোচিত ও জঘন্য এ হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক আসামি আবুল হোসেন লিটনকে ফেনীতে আত্মগোপন থাকা অবস্থা গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে লিটন জানায়, সে তার ২য় স্ত্রীকে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে তাকে হত্যা করে পানি রাখার প্লাস্টিকের ড্রামের ভিতরে গুম করে রেখেছিলো যেন কেউ জানতে না পারে।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।