ফাঁকা চট্টগ্রামে কড়া পাহারায় থাকবে পুলিশ। নগরীতে মোবাইল টিম, টহল টিমসহ মোট পাঁচ হাজার পুলিশ পাহারা দেবে।
রোববার (২ জুন) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে এ তথ্য জানান।
সিএমপি কমিশনার বলেন, 'ঈদে বাসাবাড়ি ফেলে গ্রামে ছুটে যায় মানুষ। তাই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'
মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমি নগরবাসীর মন জয় করতে চাই। পুলিশকে নগরবাসী সহযোগিতা করবে। পুলিশও নগরবাসীকে সেবা দেবে। এতে পুলিশ স্বাচ্ছন্দ্যভাবে কাজ করতে পারবে। কিন্তু কোন অপরাধীর সাথে পুলিশের কোন সম্পর্ক থাকতে পারবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'মাদকের বিরুদ্ধে সরকারে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা কাজ করতে চাই। মাদকের সঙ্গে কোনো পুলিশ জড়িত থাকলেও ছাড় পাবে না।'
এদিকে কর্মজীবী মানুষেরা নগর ছাড়তে শুরু করেছে। নগরীর প্রত্যেকটি বাস কাউন্টার, রেল স্টেশনে বাড়ি ফেরা মানুষ ভিড়। নগর ফাঁকা হওয়ার সুযোগে কেউ যেন নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেই জন্য পুলিশ সর্তক রয়েছে। পুলিশের বিশেষ টিম, গোয়েন্দা পুলিশ, নারী পুলিশ ও সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে নগরজুড়ে।
শুক্রবার (২৪ মে) দেড়টার দিকে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল সাড়ে দশটার দিকে খবর পাওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট। এখনো পর্যন্ত ৮০ শতাংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। যেখানে দু' শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে উখিয়ার থাইংখালী ১৩ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেন উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন।
তিনি বলেন, উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা অলরেডি ফায়ার সার্ভিসকে সেখানে পাঠিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। ক্যাম্প ইনচার্জকে খবর দেওয়া হয়েছে। শরণার্থী কমিশনকেও জানানো হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে সবাই মিলে কাজ করছে।
কিশোরগঞ্জে ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির
ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
জাতীয়
দীর্ঘ ২০ বছর পর আমেরিকা থেকে কিশোরগঞ্জের নিজের এলাকায় এসেছেন একাধিক বিমান আবিষ্কারক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ হুমায়ুন কবির।
শুক্রবার (২৪ মে) পাকুন্দিয়ার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বড় আজলদী গ্রামে তার নানার বাড়িতে হেলিকপ্টারে আসেন। সঙ্গে তার সহধর্মিণী ফরিদা কবির এসেছেন।
দীর্ঘদিন পর দেশে আসায় গ্রামের মানুষ ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে তাকে বরণ করে নেন৷ এসময় স্বাগত জানান, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রেণু৷ চন্ডিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিনসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রথমেই তিনি দেখা করেন আগে থেকেই উপস্থিত হওয়া একই এলাকার বৃটিশ সরকারের ভাতা প্রাপ্ত সৈনিক শতবর্ষী আব্দুল মান্নান (১২৫) তাকে স্বাগত জানান। পরে এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিমান আবিষ্কারক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. হুমায়ুন কবিরকে দেখার জন্য সকাল থেকে তার বড় আজলদী গ্রামে মানুষের ভিড় জমে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঢাকা থেকে গ্রামে আসেন৷ এসময় এলাকার নারী পুরুষ ভিড় করেন৷ সর্বশেষ ২০০৪ সালে তিনি দেশে এসে নিজ এলাকায় এসেছিলেন৷
চন্ডিপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দিন বলেন, বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির দেশে এসেছেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের৷ তিনি বাংলাদেশের অহংকার৷ এমন একজন মেধাবী মানুষের জন্ম আমাদের দেশে এটা গর্বের বিষয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির বলেন, দেশের মাটিতে আবারও আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত৷ সবাইকে পেয়ে ভালো লাগছে। কিশোরগঞ্জে ৭ দিন অবস্থান করে সবার সঙ্গে মতবিনিময় করবো।
সম্প্রতি তিনি আরো একটি বিশেষ ও আধুনিক হেলিকপ্টার আবিষ্কার করেছেন। বাংলাদেশি এই বিশিষ্ট রকেটবিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি, অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে গত ২৬ বছর ধরে বোয়িং বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন। ডক্টর কবিরকে মার্কিন সরকারের জন্য এই বিশেষ হেলিকপ্টারটি তৈরি করতে কয়েক শ সেরা এবং উজ্জ্বলতম মহাকাশ প্রকৌশলী সাহায্য করেছেন।
এর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির ১৯৮৬ সালে রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্টার আবিষ্কার করেছেন। বর্তমানে হুমায়ুন কবির যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। এই দায়িত্ব থেকে তিনি আমেরিকার সরকারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক বিচিত্র সাময়িকি গ্রন্থে একক এবং যৌথ বিজ্ঞান বিচিত্রা নামে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের ৩৫টিরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আমেরিকার আকাশে হেলিকপ্টার সোসাইটির একজন বিজ্ঞানী এবং আবিষ্কারক। ২০০৪ সালের ৫ মার্চ তিনি তার জন্মস্থান কটিয়াদীর বনগ্রাম নাগেরগ্রামে এসেছিলেন। এখন ২০ বছর পর আবার দেশে আসলেন তিনি।
এমপি আনার হত্যায় গ্রেফতারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চায় ডিবি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
জাতীয়
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার তিনজনকে আজ আদালতে তোলা হবে। আদালতে তুলে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (২৪ মে) ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল আহাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতাররা হলেন আমানুল্লাহ ওরফের শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।
আব্দুল আহাদ বলেন, এমপি আনার হত্যায় জড়িত গ্রেফতার ৩ জনকে আজ আদালতে তোলা হবে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। যে পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তথ্য না পাওয়া যাবে, সে পর্যন্ত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়াও এ ঘটনায় আরও যে বা যারা জড়িত তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এরপর তিন দিন পার হলেও পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। ভারতে গিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার ১৭/৩ মণ্ডল পাড়া লেনের বাসিন্দা ও তার দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন।
মূলত ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যান তিনি। পরে ১৩ মে দুপুরে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হন। ওইদিন সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। পরবর্তীতে গত ১৮ মে বারানগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ করেন গোপাল বিশ্বাস।
এদিকে, আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্য অপহরণের মামলায় ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) মামলার এজাহার আদালতে আসে। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহবুবুল হকের আদালত তা গ্রহণ করে আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার (২২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।
মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই।’
মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদেবার্তা আসে। এতে লিখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেবো। সএছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদেবার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।’
‘উন্নয়ন’ খোঁড়াখুঁড়িতে সাদেক হোসেন খোকা সড়ক এখন ভোগান্তির কারণ
খন্দকার আসিফুজ্জামান, বার্তা২৪, ঢাকা
জাতীয়
নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে চলছে বিভিন্ন পরিষেবা সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে ধীরগতিতে চলা উন্নয়নের এই খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ।
এইভাবে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর কমলাপুর ও গোপীবাগ এলাকার মাঝামাঝিতে অবস্থিত সাদেক হোসেন খোকা সড়কটিও।
এই সড়কটিতে রয়েছে, একাধিক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, বেশ কয়েকটি মোটর ওয়ার্কশপ এবং অসংখ্য বহুতল আবাসিক ভবন। এখানে রয়েছে এলাকার একমাত্র কমিউনিটি সেন্টার সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার।
এছাড়াও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল এলাকায় যাতায়াতের সহজ পথ হিসেবে এই সড়কটিই ব্যবহার করেন কমলাপুর, মুগদা, মাণ্ডা ও মানিকনগরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। তবে কথিত উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়ে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। সে কারণে যাতায়াত ভোগান্তিতে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারী এবং এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সাদেক হোসেন খোকা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাস্তার কাটা অংশের কিছুটা বালি দিয়ে কোনোরকমে ভরাট করা হয়েছে।
বালির ওপর দিয়ে হেঁটে একটু সামনে আগাতেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হলো এই ভেবে যে, এখানে কি কোনোভাবে খাল খননের কাজ চলছে!
দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আরেকটু আগাতেই দেখা গেল, বিশাল এক পানিভর্তি গর্ত। গর্তের পাশেই একটি সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা- 'সাবধান উন্নয়ন কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার কারণে দুঃখিত'!
বোর্ডে কর্তৃপক্ষের নাম দেখে বোঝা গেল, সড়কটিতে চলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ।
সড়কটির দুই ধারে শুধু ফুটপাত রেখে পুরো সড়কটিই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ফুটপাতও ঢেকে গেছে কাটা রাস্তার মাটি, বালি আর বর্জ্য দিয়ে। সে কারণে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতেও একধরনের যুদ্ধই করতে হচ্ছে পথচারীদের। এছাড়া খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় সেখানকার মোটর ওয়ার্কশপেও মেরামতের জন্য আসতে পারছে না কোনো গাড়ি। লোকজন না থাকায় অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেই বেচাকেনা। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন মোটর ওয়ার্কশপের মালিক, শ্রমিক ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। এখানেই শেষ নয়! একই সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত মতিঝিলের ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলের সামনের সড়কটিও মেরামত কাজের ধীরগতির কারণে অনেকটা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর- এমন তথ্যই জানা যায় স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে।
সাদেক হোসেন খোকা সড়কের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর মনা বার্তা২৪.কমকে বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মতোন এইভাবে রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করতে দেখিনি বা শুনিওনি। উন্নয়ন কাজ চলছে এতে আমরাও খুশি। কিন্তু প্রায় একমাস ধরে রাস্তাটার এই বেহাল দশা থাকবে কেন! একটা মানুষও ঠিকমতো এদিক দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন না। আর গাড়ি-ঘোড়া তো বন্ধই! এদিকে যদি গাড়ি না আসে, আমাদের ব্যবসা কীভাবে হবে! এই এক মাস ধরে আমাদের কোনো ব্যবসা নেই। আমরা কীভাবে চলবো! স্টাফদের বেতনই-বা কীভাবে দেবো!
আরেক ব্যবসায়ী মো. শরিফ বলেন, এখানকার একটা মোটরওয়ার্কশপেও কাজ নেই। প্রায় এক মাস ধরে সব বন্ধ। আমাদের ব্যবসায়ীদের চলার মতো আর কোনো অবস্থা নেই। পুরো রাস্তাটা একসঙ্গে না কেটে সিটি কর্পোরেশনের উচিত ছিল, রাস্তার একপাশ করে কেটে কাজ করা। এক পাশের কাজ শেষ হলে আরেক পাশের কাজ ধরা। কিন্তু তারা করলো কী, সারা রাস্তাটা একবারে কাটলো আর রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেল! একবারে পুরো রাস্তা কেটেছে, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না, যদি তারা তাদের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করতো।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একদিন কাজ করলে তো দুইদিন তাদের কোনো খোঁজ থাকে না। রাতের বেলা কাজ করেন। রাস্তাটা যেহেতু বন্ধই, তারা তো পারেন দিনে-রাতে কাজ করে অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তাটা খুলে দিতে! আজকে এতদিন ধরে রাস্তাটাকে পুরো নাজেহাল করে রেখেছে।
সড়কটির দুইপাশে অবস্থিত অন্যান্য মোটর ওয়ার্কশপের ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলেন। খোঁড়াখুঁড়িতে প্রায় একমাস ধরে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট- এমনটিই জানিয়েছেন এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।
সাদেক হোসেন খোকা সড়ক দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা। কাটাছেঁড়া রাস্তার বেহাল দশায় অতিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না! আমাদের কথা শোনার কেউ আছে! এমন অবস্থা করে রেখেছে যে, পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোনো উপায় রাখেনি। রাস্তার এই হালের জন্য আমরা যারা প্রতিনিয়ত এখান দিয়ে যাতায়াত করি, তাদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। রাস্তা বন্ধ রেখে তারা দিনের বেলায় কোনো কাজ করে না কেন! আবার একদিন কাজ করলে দুইদিন কোনো খবর থাকে না। তারা রাতেই যখন কাজ করবে তাহলে পুরো রাস্তাটা কেন খুঁড়লো! রাস্তার একপাশ খুঁড়তো অন্যপাশ মানুষ ও যানবাহনের জন্য খোলা রাখতো! উন্নয়ন কাজ করলে রাস্তা কাটতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত ধীরগতিতে কাজ করে তারা আমাদের কেন কষ্ট দিচ্ছে!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী পথচারী রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা এই কাজগুলো করেছে, তারা কয়জন মানুষের কথা ভাবেন! আমাদের কথা বলে কোনো লাভ আছে! আমাদের কষ্টে তাদের কিছু যায়-আসে না। সুতরাং কিছু বলেও কোনো লাভ নেই। এইটুকু রাস্তা পার করতে আমার খুব কষ্ট হয়ে যায়। তারা মানু্ষের চলাচলের জন্য ফুটপাত পর্যন্ত রাখেনি। বালি, মাটি আর আবর্জনা দিয়ে ভরে রেখেছে। কাউকে কিছু বলার নেই। ওপরে একজন আছেন, তিনিই দেখছেন!
জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, ধীরগতিতেই যদি কাজ করা হবে তাহলে পুরো সড়কটি কেন একসঙ্গে খোঁড়া হলো। এতদিন ধরে রাস্তাটি বন্ধ করে কেন সবাইকে ভোগান্তিতে ফেলা হলো!
জনসাধারণ থেকে শুরু করে এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, সিটি কর্পোরেশন যেন তাদের ভোগান্তির কথা আমলে নিয়ে দিনরাত টানা কাজ করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন সড়কটি মেরামত করে দেয়।
প্রায় একমাস হয়ে গেলেও কেন এখনও পর্যন্ত সড়কটির এই বেহাল দশা বার্তা২৪.কমের এমন প্রশ্নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মিয়া বলেন, নগরবাসীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতেই উন্নয়ন কাজ চলছে। একদিনও কাজ বন্ধ থাকছে না। খুব তাড়াতাড়িই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সাময়িক একটু অসুবিধা হলেও খুব শিগগিরই এর সুফল ভোগ করবেন এলাকাবাসী।
‘মধুমিতা’র সামনের সড়কটির কাজও খুব দ্রুত চলছে এবং সাদেক হোসেন খোকা সড়কের সঙ্গেই এই সড়কটির কাজও শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
রাস্তা কাটার ফলে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে স্বীকার করে কাউন্সিলর বলেন, সাধারণের অসুবিধার কথা চিন্তা করেই দিনের বেলা কাজ করা হয় না। রাতের বেলা কাজ করা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই রাস্তার সব কাটাছেঁড়ার কাজ শেষ করতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই। তাই একসঙ্গে পুরো রাস্তার কাজ ধরা হয়েছে। এখানে ধীরগতিতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দেওয়া কথা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করা হবে এবং পরদিন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোনো রাস্তায় কোথাও কাটাছেঁড়া থাকবে না।
এর আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, এসব প্রকল্প আগে থেকেই নেওয়া হয়ে থাকে। জুনের আগেই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাড়া থাকে। ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো করতে দেরি হয়ে যায়। তবে যেসব এলাকায় জনদুর্ভোগ বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকার কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। নগরের উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে সাময়িক একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।