'চাটগাঁইয়া পোয়া, বরফত ফইল্যেও লোয়া'
![ছবি: সংগৃহীত](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/May/24/1716532900093.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
'চাটগাঁইয়া পোয়া, মেডিত ফইল্যে লোয়া'- চট্টগ্রামের বহুল চর্চিত প্রবাদের একটি বলা হয় এটিকে। চট্টগ্রামের তরুণেরা বাইরের মানুষদের কাছে নিজেদের শৌর্য বোঝাতে প্রায়শ এই প্রবচনটা ব্যবহার করেন। এবার চট্টগ্রামের প্রথম তরুণ হিসেবে এভারেস্টের চূ্ড়া ছুঁয়ে আসা বাবর আলীর মুখেও ফুটল এই কথা। তবে বাবর এর সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছেন নতুন বাক্য- 'চাটগাঁইয়া পোয়া, বরফত ফইল্যেও লোয়া।'
গত রোববার ১৯ মে নেপালের সময় সকাল সাড়ে ৮টায় বাবর আলী পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান। এখানেই থামেননি অদম্য এই পর্বাতারোহী। দুদিনের মাথায় পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম পর্বত মাউন্ট লোৎসের চূড়াতেও লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে আসেন বাবর আলী। এটিই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি পর্বতারোহীর মাউন্ট লোৎসে শিখর স্পর্শ করার ঘটনা।
কেননা বাংলাদেশের পর্বতারোহীরা এর আগে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেও একই অভিযানে দুটি ৮ হাজারি পর্বত সামিট করেননি। সে হিসেবে এটি বাবর আলীর এক অনন্য অর্জনই বলা যায়।
বেস ক্যাম্পে ফেরার পর দেশের মানুষদের উদ্দেশে একের পর এক বার্তা দিচ্ছেন বাবর আলী। পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহী বাবর এবার বার্তা দিলেন নিজের মায়ের ভাষা-চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়।
হিমালয়ের ওপর দাঁড়িয়ে বাবর শুরুতেই বলেন, 'এতদিন বেয়াগুনে হইত চাঁটগাইয়া পোয়া মেডিত ফইল্যে লোয়া। চাঁটগাইয়া পোয়া বরফত ফইল্যেও লোয়া। (এতদিন সবাই বলতেন চট্টগ্রামের ছেলেরা মাটিতে পড়লে লোহা। চট্টগ্রামের ছেলে বরফে পড়লেও লোহা)।'
চট্টগ্রামের হালদা পাড়ের সন্তান বাবর। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের প্রধান এই নদীর পাড় থেকেই বাবর ছুঁয়ে এসেছেন প্রকৃতির অন্যতম বড় নিদর্শন এভারেস্টের চূড়া। তাই বাবর বললেন, 'আঁই চিটাগংয়ের পোলা। হালদা পাড়ত্তুন একদম পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট এবং চতুর্থ শৃঙ্গ লোৎসের মাথাত উইট্টি। চাঁটগাইয়াবাসীর দোয়া আছিল আঁর প্রতি, এতল্লাই সম্ভব অইয়্যে।' (আমি চট্টগ্রামের ছেলে। হালদা পাড় থেকে একদম পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট ও চতুর্থ শৃঙ্গ লোৎসের মাথায় উঠেছি)।'
বাবরকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে চট্টগ্রামকে সবার সামনে তুলে ধরার ব্যাপারটা। সেটিই বারবার বলছেন বাবর, 'পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে চট্টগ্রামরে তুলে ধরা বিশাল এক্কান ব্যাপার। আশা গরি অনরা আঁরে আরও বেশি বেশি গরি দোয়া গরিবান। (পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে চট্টগ্রামকে তুলে ধরা বিশাল ব্যাপার। আশা করি আপনারা আরও আরও বেশি দোয়া করবেন।'
দুই সর্বোচ্চ শৃঙ্গে চুমু খাওয়ার পরও বাবর এখনি পর্বতে ওঠা থামাচ্ছেন না। তার এখন লক্ষ্য-সামনের দিনগুলোতে পৃথিবীর সব সব চূড়া ছোঁয়া।
সেটিই আরেকবার স্মরণ করিয়ে বাবর দোয়া চাইলেন সবার কাছে, 'সামনেও যাতে পৃথিবীর আরও আরও উঁচু পর্বতচূড়া আছে সেগুলোতে উঠতে পারি, চট্টগ্রামকে সর্বোপরি বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পারি।'
বাবর নিশ্চয় পারবেন সেটিও, কেননা তিনি যে বলেই দিয়েছেন-'চাটগাঁইয়া ফোয়া, বরফত ফইল্যেও লোয়া''
এভারেস্ট ছোঁয়া প্রায় সব পর্বাতারোহীদের একজীবনের স্বপ্ন। পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ার পর আর কিইবা চাওয়ার থাকে আর। সেখানে কিনা বাবর একই অভিযানে দুটি আট হাজারি চূড়া ছোঁয়ার দম দেখিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে তাই বাবরের বলা-'চাটগাঁইয়া ফোয়া, বরফত ফইল্যেও লোয়া' কথাটি নতুন প্রবাদ হিসেবে জায়গা করে নিলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না...