‘উন্নয়ন’ খোঁড়াখুঁড়িতে সাদেক হোসেন খোকা সড়ক এখন ভোগান্তির কারণ



খন্দকার আসিফুজ্জামান, বার্তা২৪, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খুঁড়ে চলছে বিভিন্ন পরিষেবা সংস্থার উন্নয়ন কার্যক্রম। তবে ধীরগতিতে চলা উন্নয়নের এই খোঁড়াখুঁড়িতে চরম ভোগান্তিতে সাধারণ জনগণ।

এইভাবে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর কমলাপুর ও গোপীবাগ এলাকার মাঝামাঝিতে অবস্থিত সাদেক হোসেন খোকা সড়কটিও।

এই সড়কটিতে রয়েছে, একাধিক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, বেশ কয়েকটি মোটর ওয়ার্কশপ এবং অসংখ্য বহুতল আবাসিক ভবন। এখানে রয়েছে এলাকার একমাত্র কমিউনিটি সেন্টার সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার।

এছাড়াও রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল এলাকায় যাতায়াতের সহজ পথ হিসেবে এই সড়কটিই ব্যবহার করেন কমলাপুর, মুগদা, মাণ্ডা ও মানিকনগরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। তবে কথিত উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়ে প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। সে কারণে যাতায়াত ভোগান্তিতে অসংখ্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারী এবং এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।

খোঁড়াখুঁড়িতে বোঝা যাবে না, এটা রাস্তা নাকি খাল খনন চলছে! ছবি- বার্তা২৪.কম

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সাদেক হোসেন খোকা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে রাস্তার কাটা অংশের কিছুটা বালি দিয়ে কোনোরকমে ভরাট করা হয়েছে।

বালির ওপর দিয়ে হেঁটে একটু সামনে আগাতেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হলো এই ভেবে যে, এখানে কি কোনোভাবে খাল খননের কাজ চলছে!

দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে আরেকটু আগাতেই দেখা গেল, বিশাল এক পানিভর্তি গর্ত। গর্তের পাশেই একটি সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা- 'সাবধান উন্নয়ন কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার কারণে দুঃখিত'!

বোর্ডে কর্তৃপক্ষের নাম দেখে বোঝা গেল, সড়কটিতে চলছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ।

সড়কটির দুই ধারে শুধু ফুটপাত রেখে পুরো সড়কটিই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ফুটপাতও ঢেকে গেছে কাটা রাস্তার মাটি, বালি আর বর্জ্য দিয়ে। সে কারণে ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতেও একধরনের যুদ্ধই করতে হচ্ছে পথচারীদের। এছাড়া খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় সেখানকার মোটর ওয়ার্কশপেও মেরামতের জন্য আসতে পারছে না কোনো গাড়ি। লোকজন না থাকায় অন্যান্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেই বেচাকেনা। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন মোটর ওয়ার্কশপের মালিক, শ্রমিক ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
এখানেই শেষ নয়! একই সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত মতিঝিলের ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলের সামনের সড়কটিও মেরামত কাজের ধীরগতির কারণে অনেকটা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর- এমন তথ্যই জানা যায় স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে।

সাদেক হোসেন খোকা সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে মানুষসহ কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না! ছবি- বার্তা২৪.কম

সাদেক হোসেন খোকা সড়কের ব্যবসায়ী মো. আলমগীর মনা বার্তা২৪.কমকে বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলাদেশের মতোন এইভাবে রাস্তা কেটে উন্নয়ন কাজ করতে দেখিনি বা শুনিওনি। উন্নয়ন কাজ চলছে এতে আমরাও খুশি। কিন্তু প্রায় একমাস ধরে রাস্তাটার এই বেহাল দশা থাকবে কেন! একটা মানুষও ঠিকমতো এদিক দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন না। আর গাড়ি-ঘোড়া তো বন্ধই! এদিকে যদি গাড়ি না আসে, আমাদের ব্যবসা কীভাবে হবে! এই এক মাস ধরে আমাদের কোনো ব্যবসা নেই। আমরা কীভাবে চলবো! স্টাফদের বেতনই-বা কীভাবে দেবো!

আরেক ব্যবসায়ী মো. শরিফ বলেন, এখানকার একটা মোটরওয়ার্কশপেও কাজ নেই। প্রায় এক মাস ধরে সব বন্ধ। আমাদের ব্যবসায়ীদের চলার মতো আর কোনো অবস্থা নেই। পুরো রাস্তাটা একসঙ্গে না কেটে সিটি কর্পোরেশনের উচিত ছিল, রাস্তার একপাশ করে কেটে কাজ করা। এক পাশের কাজ শেষ হলে আরেক পাশের কাজ ধরা। কিন্তু তারা করলো কী, সারা রাস্তাটা একবারে কাটলো আর রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেল! একবারে পুরো রাস্তা কেটেছে, তাতেও কোনো সমস্যা ছিল না, যদি তারা তাদের কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ করতো।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, একদিন কাজ করলে তো দুইদিন তাদের কোনো খোঁজ থাকে না। রাতের বেলা কাজ করেন। রাস্তাটা যেহেতু বন্ধই, তারা তো পারেন দিনে-রাতে কাজ করে অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তাটা খুলে দিতে! আজকে এতদিন ধরে রাস্তাটাকে পুরো নাজেহাল করে রেখেছে।

সড়কটির দুইপাশে অবস্থিত অন্যান্য মোটর ওয়ার্কশপের ব্যবসায়ীরাও একই কথা বলেন। খোঁড়াখুঁড়িতে প্রায় একমাস ধরে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকট- এমনটিই জানিয়েছেন এ এলাকার ব্যবসায়ীরা।

রাস্তার দুইপাশ খুঁড়ে এমন অবস্থা করে রাখা হয়েছে তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকাবাসী, ছবি- বার্তা২৪.কম

সাদেক হোসেন খোকা সড়ক দিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা। কাটাছেঁড়া রাস্তার বেহাল দশায় অতিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না! আমাদের কথা শোনার কেউ আছে! এমন অবস্থা করে রেখেছে যে, পায়ে হেঁটে চলাচলেরও কোনো উপায় রাখেনি। রাস্তার এই হালের জন্য আমরা যারা প্রতিনিয়ত এখান দিয়ে যাতায়াত করি, তাদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। রাস্তা বন্ধ রেখে তারা দিনের বেলায় কোনো কাজ করে না কেন! আবার একদিন কাজ করলে দুইদিন কোনো খবর থাকে না। তারা রাতেই যখন কাজ করবে তাহলে পুরো রাস্তাটা কেন খুঁড়লো! রাস্তার একপাশ খুঁড়তো অন্যপাশ মানুষ ও যানবাহনের জন্য খোলা রাখতো! উন্নয়ন কাজ করলে রাস্তা কাটতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত ধীরগতিতে কাজ করে তারা আমাদের কেন কষ্ট দিচ্ছে!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী পথচারী রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা এই কাজগুলো করেছে, তারা কয়জন মানুষের কথা ভাবেন! আমাদের কথা বলে কোনো লাভ আছে! আমাদের কষ্টে তাদের কিছু যায়-আসে না। সুতরাং কিছু বলেও কোনো লাভ নেই। এইটুকু রাস্তা পার করতে আমার খুব কষ্ট হয়ে যায়। তারা মানু্ষের চলাচলের জন্য ফুটপাত পর্যন্ত রাখেনি। বালি, মাটি আর আবর্জনা দিয়ে ভরে রেখেছে। কাউকে কিছু বলার নেই। ওপরে একজন আছেন, তিনিই দেখছেন!

জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, ধীরগতিতেই যদি কাজ করা হবে তাহলে পুরো সড়কটি কেন একসঙ্গে খোঁড়া হলো। এতদিন ধরে রাস্তাটি বন্ধ করে কেন সবাইকে ভোগান্তিতে ফেলা হলো!

এক মাস ধরে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখা হয়েছে কিন্তু কাজে নেই অগ্রগতি। ভোগান্তিতে আছেন এলাকাবাসী, ছবি- বার্তা২৪.কম

জনসাধারণ থেকে শুরু করে এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি, সিটি কর্পোরেশন যেন তাদের ভোগান্তির কথা আমলে নিয়ে দিনরাত টানা কাজ করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন সড়কটি মেরামত করে দেয়।

প্রায় একমাস হয়ে গেলেও কেন এখনও পর্যন্ত সড়কটির এই বেহাল দশা বার্তা২৪.কমের এমন প্রশ্নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মিয়া বলেন, নগরবাসীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতেই উন্নয়ন কাজ চলছে। একদিনও কাজ বন্ধ থাকছে না। খুব তাড়াতাড়িই কাজ শেষ হয়ে যাবে। সাময়িক একটু অসুবিধা হলেও খুব শিগগিরই এর সুফল ভোগ করবেন এলাকাবাসী।

‘মধুমিতা’র সামনের সড়কটির কাজও খুব দ্রুত চলছে এবং সাদেক হোসেন খোকা সড়কের সঙ্গেই এই সড়কটির কাজও শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

রাস্তা কাটার ফলে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে স্বীকার করে কাউন্সিলর বলেন, সাধারণের অসুবিধার কথা চিন্তা করেই দিনের বেলা কাজ করা হয় না। রাতের বেলা কাজ করা হয়।

সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই রাস্তার সব কাটাছেঁড়ার কাজ শেষ করতে হবে। হাতে বেশি সময় নেই। তাই একসঙ্গে পুরো রাস্তার কাজ ধরা হয়েছে। এখানে ধীরগতিতে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দেওয়া কথা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ করা হবে এবং পরদিন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কোনো রাস্তায় কোথাও কাটাছেঁড়া থাকবে না।

এর আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, এসব প্রকল্প আগে থেকেই নেওয়া হয়ে থাকে। জুনের আগেই এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাড়া থাকে। ধাপে ধাপে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো করতে দেরি হয়ে যায়। তবে যেসব এলাকায় জনদুর্ভোগ বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকার কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে। নগরের উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে সাময়িক একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

   

সাত দিনে পদ্মা সেতুতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা টোল আদায়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতু দিয়ে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ায় গত সাত দিনে মোট ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে। গত ১০ জুন থেকে ১৬ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত এই টোল আদায় হয়েছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১৬ জুন) মধ্য রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর অতিরিক্ত প্রকৌশলী আমিরুল হায়দার চৌধুরী।

ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি টোলা আদায় হয়েছে গত ১৪ জুন। ওই দিন মোট আদায় হয় ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। ১৫ জুন টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা। আজ (১৬ জুন) রাত ১০টা পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ ৫০ টাকা।

এর আগে গত ১০ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ৬০ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১১ জুন ২ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ জুন ৩ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকা। ১৩ জুন টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা।

গত ৭ দিনে পদ্মা সেতু মাওয়া প্রান্তে টোটাল টোল আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। একই সময়ে জাজিরা প্রান্ত দিয়ে টোল আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

সাত দিনে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫শ ৭২টি যানবাহন। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ৮২ হাজার ৮৫টি যানবাহন। দুই প্রান্ত দিয়ে মোট গত ৭ দিনে ২ লাখ ৪ হাজার ৬শ ৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

;

ত্যাগের শিক্ষার সঙ্গে থাকুক বিসর্জন



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা নিয়ে আরেক ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ এসেছে। সৌদি আরবে ঈদুল আজহার মূল আচার পালিত হয়েছে রোববার। দেশটির সঙ্গে মিল রেখে আরও কিছু দেশে উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশে ঈদুল আজহা সোমবার।

ঈদুল আজহার প্রধান আচার, পশু কোরবানি। গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু কোরবানি করে থাকেন সামর্থ্যবানরা। এই কোরবানি কেবল ভোগের জন্যে নয়, ত্যাগের জন্যে মূলত। এটা এসেছে ত্যাগ থেকে। ধর্মীয় মতে, হযরত ইব্রাহিম প্রিয় বস্তুকে কোরবানির নির্দেশনা পেয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা থেকে, সেখান থেকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে ত্যাগের সিদ্ধান্ত, এবং এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐশীশক্তিতে পরিবর্তন। এখানে প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের যে শিক্ষা সেটা থেকেই এই কোরবানি উৎসারিত, এবং হাজার বছর ধরে চলমান।

ধর্মীয় বিধানের সেই ত্যাগ এখনো শাশ্বত। এই ত্যাগ আবার কিছু ক্ষেত্রে আত্মম্ভরিতায়ও পরিণত, প্রদর্শনবাদিতায় রূপান্তরিত অনেক ক্ষেত্রে। কে কত দামের, কত বড় পশু কোরবানি করলেন—এসব প্রকাশে-দেখাতে অনেকের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এতে করে ত্যাগের শাশ্বত যে শিক্ষা সেটা এখানে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। পশু কোরবানি যখন ধর্মীয় বিধান থেকে উদ্ভূত তখন প্রদর্শনবাদিতায় আদতে আড়ালে পড়ে যায় ত্যাগ। ফলে সামাজিকতার বিষয়টি ক্রমে দূরে সরে যায়। এখানে মানুষে-মানুষের চিন্তার যে পার্থক্য, অপরকে অনুভব করার সহজাত যে মানবিকতা তারচেয়ে মুখ্য হয়ে পড়ে অহংবোধ। এটা যদিও সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য নয়, তবে অনেকেই এখানে অভিনিবিষ্ট।

কোরবানি ধর্মীয় বিধানের বাইরে এটা বিশাল এখন এক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞও। পশু ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, দেশে আর্থিক লেনদেন সম্পাদিত হয়। সারা বছর ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক খামারিরা কেবল ঈদকে কেন্দ্র করে পশু লালন পালন করে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন; হাটবাজারের ইজারাদাররা এই সময়ের জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। কেবল গবাদি পশুকেন্দ্রিক এই আর্থিক লেনদেনই এ সময় সম্পাদিত হয় না, ঈদে পোশাক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী-শ্রমিক, চামড়া ব্যবসায়ীসহ ছোটখাটো স্থানীয় ব্যবসা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, লাভবান হন। ঈদ তাই কেবলই ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর রয়েছে আর্থসামাজিক প্রভাবও।

এরবাইরে আছে এর সামাজিক গুরুত্ব। ক্ষয়িঞ্চু হতে যাওয়া সামাজিক বন্ধন এই সময় দৃঢ় হয় অনেকটাই। সারা বছর সামর্থ্যবানেরা অনেকের খোঁজ না নিলেও কোরবানির মাংসের ভাগ স্বজনপরিজনদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে ফের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিছুদিনের জন্যে নবায়ন করে। সামাজিকতার এই শিক্ষা কোরবানির ধর্মীয় বিধানের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে কোরবানির মাংসের তিন ভাগের অন্তত দুই ভাগ আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিবণ্টনের নিয়ম।

আমাদের যে কাঠামোবদ্ধ সমাজ তাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে সামাজিকতা, অন্যকে অনুভব করার তাগিদ। কোরবানির সময়ে পশুর মাংসের ভাগের মাধ্যমে এর নবায়ন হয় অনেকটাই। বাড়তি বাজারমূল্যের এই সময়ে দেশের অধিকাংশেরই নেই কিনে মাংস খাওয়ার সামর্থ্য। কোরবানির সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে অন্তত মাংসের ভাগ পৌঁছে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। অনেককে দেখেছি, বছরের এই একটা সময়েই কেবল নিজেদের ঘরে মাংস খেতে পারে। তাদের জন্যে অপেক্ষার তাই এই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

একটা সময়ে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট ছিল। কিন্তু গত ক'বছরে দেশে কোরবানির পশুর সংকট নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেছেন, ‘এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২২ লাখের বেশি পশু বাড়তি আছে।’ তবু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে-বাজারে কোরবানির পশুর দাম চড়া। এখানে-সেখানে জোরজবরদস্তির খবরও এসেছে। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেখানে-সেখানে পশুর হাট বসানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও এটা কার্যকর হয়নি। ঈদের আগে সারাদেশ পরিণত হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটে। এখানে হুঁশিয়ারিদাতারা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজারাদাররা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা হয়েছে উপেক্ষিত।

কোরবানি পরবর্তী আলোচনার বিষয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভার আওতাধীন এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। ঈদ পরবর্তীতে কে কত দ্রুততার সঙ্গে শহর পরিস্কার করতে পারল, কোথায় কীভাবে বর্জ্য ছড়াল—এ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে আলোচনা। অথচ দেশব্যাপী হয় পশু কোরবানি, বর্জ্য ছড়ায় সারাদেশে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা ছাড়া দেশের কোথায় আর বর্জ্য নিয়ে আলোচনা হয় না, উদ্যোগ থাকে না; জনপরিসরেও তাই রয়েছে সচেতনতার ব্যাপক অভাব। ফলে কোরবানির ঈদের পর পরই দুর্গন্ধ ছড়ায় সব জায়গায়। এখানে তাই সাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদে-মসজিদে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে হবে। কেবল পরিবেশ সুরক্ষাই নয়, নিজেদের সুস্থভাবে বাঁচতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝাতে হবে সবাইকে।

ঈদ অথবা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জননিরাপত্তা প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। প্রতিবারই ঈদের সময়, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেক জনসাধারণকে অভয় দিয়ে বলতে হয়—‘ঈদে নাশকতার তথ্য নাই’। এটা বিভিন্ন বাহিনীর রুটিন দায়িত্ব যদিও, তবু এখানে একজন সাধারণ হিসেবে আমাদের ভাবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কী জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি দেশকে আমরা, যেখানে উৎসব-অনুষ্ঠানের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। বাহিনীগুলো বলছে, কারণ আগে নানা নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পারিবারিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে নিজেদের সন্তানেরা কোন পথে যাচ্ছে। তাদের আমরা কি সঠিক শিক্ষার পথ দেখাচ্ছি, নাকি শেখাচ্ছি সংকীর্ণতা। বলছি না, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এনিয়ে কথা বলবে না; তারা তাদের কাজ করুক, পাশাপাশি আমরাও যেন তেমন সমাজ গড়ার একেক একক হই, যাতে উৎসবে দিনে মানুষ কেবল উৎসব নিয়েই ভাববে, সমাজ নিয়ে ভাববে, সবাইকে নিয়ে ভাবতে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি দেন। ধর্মীয় রীতির এই পশু কোরবানি প্রতীকী। ত্যাগ; প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের শিক্ষা। ত্যাগ, সামাজিকতা ও সাম্যের যে শিক্ষা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ, সে ত্যাগ সফল হোক, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হোক। এ দিনে তাই পশু কোরবানির প্রতীকী ত্যাগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে থাকা আত্মম্ভরিতা ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য পশুপ্রবৃত্তির বিসর্জন হোক।

সবাইকে ঈদ মুবারক!

;

কুষ্টিয়ায় ভাজিতার হাতে চাচাকে হত্যার অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ফ্রিজে খাবার রাখাকে কেন্দ্র করে ভাতিজা মাসুদের হাতে চাচা বাদশা প্রামানিক (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১৬ জুন) বিকেলে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের আমজাদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বাদশা প্রামানিক উপজেলার হরিপুর এলাকার ভাদু পরমানিকের ছেলে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে চাচার সঙ্গে ভাতিজার মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে রোববার বিকেলের দিকে চাচার সঙ্গে পুনরায় বাড়ির কিছু জমি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে একপর্যায়ে ফ্রিজে খাবার রাখতে গেলে ভাতিজা মাসুদ ঘর থেকে ধারালো বটি দিয়ে চাচা বাদশাকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে পথেই মারা যায়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিকে ধরতে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

;

সিলেটে পানি বন্দি মানুষের মাঝে পুলিশের ঈদ উপহার বিতরণ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট জেলা পুলিশের উদ্যোগে পানি বন্দি মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

রোববার (১৬জুন) দুপুর ২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে এই ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পুলিশ সহকারী পুলিশ সুপার ও মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা সম্রাট তালুকদার।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সিলেট জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন'র দিক- নির্দেশনায় গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ১নং রুস্তুমপুর ইউনিয়ন ও ১৩ নং বিছনাকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০০ শত পানিবন্দি অসহায় পরিবারের মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

উপহার হিসেবে চাল, ডাল, পেয়াজ, তেল, আলু এবং বিস্কুটসহ শুকনো খাবার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

;