পরিযায়ী পাখি: এদেশের প্রজনন পরিযায়ী কোকিলেরা



আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
ঢাকার মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে অস্থির লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল। ছবি- লেখক।

ঢাকার মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে অস্থির লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল। ছবি- লেখক।

  • Font increase
  • Font Decrease

 

সাতাশ কি আটাশ বছর আগে সর্বপ্রথম লাল-ডানার ঝুঁটিয়াল পাখিটির ছবি দেখেছিলাম। পরবর্তী বছর দু’য়েক বিভিন্ন স্থানে বেশ ক’বার পাখিটির সন্ধান করেছিলাম। কিন্তু, দেখা পাইনি। এরপর বহু বছর গড়িয়ে গেছে; বহু জায়গায় ওকে খুঁজেছি, কিন্তু ফলাফল একই।

বর্ষায় সুন্দরবনের রূপ দেখতে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ‘অভিযাত্রিক সুন্দরবন’-এর ব্যানারে দশজনের টিমে সুন্দরবন গেলাম। পরদিন সকালে লঞ্চের সঙ্গে থাকা কোসা নৌকায় জামতলী খালে ঢুকলাম। আধঘন্টার মতো খালে ঘুরে কিছু পাখির ছবি তুলে যখন খয়েরি-মাথা সুইচোরার ছানার ছবি তুলছি ঠিক তখন লাল-ডানায় পাখিটিকে চোখের সামনে দিয়ে উড়ে যেতে দেখলাম। পাখিটি উড়ে গিয়ে খালপাড়ের কেওড়া গাছে বসল। দ্রুত ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে ক্লিক করলাম। কিন্তু, সে দ্রুত উড়ে যাওয়ায় দলের একজন ছাড়া বাকিরা ছবি তুলতে ব্যর্থ হলো। দুপুরে দ্বিতীয়বারের মতো জামতলী গেলাম। সমুদ্র সৈকত থেকে ফেরার পথে আরও দু’বার ওকে কয়েক সেকে-ের জন্য দেখলাম। কিন্তু, দু’বারই ও গাছের ঘন পাতার আড়ালে হারিয়ে গেল। বাঘের ভয়ে ওখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। কাজেই ছবিও তোলা হলো না। এরপর টানা তিনবছর ওর খোঁজ নেই। 

 শূককীট মুখে লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল। ছবি- লেখক

বিরল একটি কোকিলের ছবি তোলার জন্য এ বছরের ২০ মে মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গেলাম। ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম লাল-ডানার ঝুঁটিয়াল পাখিটিকে গত দু’দিন ধরে অনেকেই দেখেছে। আমরা যখন বেলা এগারটায় পল্লবীর গেটের কাছে লেকের পাশে পাখির ছবি তুলছি সে সময় এক সুহৃদ ফোনে জানাল তারা পাখিটিকে দেখেছে। প্রায় এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছলাম। কিন্তু ততক্ষণে পাখিটি ঝোপের আড়ালে চলে গেছে। এমনিতেই দূরন্ত পাখিটি গাছের আড়ালে-আবডালে থেকে প্রজাপতি ও মথের শুঁয়াপোকা ধরে খায়। বেলা ১১:৩৫ মিনিটে একযোগে ৭-৮ জনের ক্যামেরার শাটার গর্জে ওঠতেই একটি গাছের পাতার আড়ালে ওকে লাফালাফি করতে দেখলাম। তবে অনেক চেষ্টার পরও অস্থির পাখিটির পরিষ্কার ছবি তুলতে পারলাম না। মিনিট বিশেক চেষ্টার পর অবশেষে অধরা পাখিটির ছবি তুলতে সক্ষম হলাম। এত বছর খোঁজাখুঁজি ও চেষ্টার পর যার ছবি তুললাম সে হলো এদেশের দুর্লভ প্রজনন পরিযায়ী পাখি লাল-ডানা বা লাল-পাখা কোকিল। আজকে এই পাখিসহ কোকিল গোত্রের সকল পরিযায়ী তথা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী সদস্যদের নিয়ে গল্প সাজিয়েছি।

কোকিল পরভৃত অর্থাৎ কুকুলিফরমেস (Cuculiformes) বর্গের পাখি। এই বর্গের কমবেশি ৪০ ভাগ পাখি, যাদের বেশির ভাগই পুরনো বিশ্ব অর্থাৎ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাস করে, তারা বাসা তৈরি করে না; তাই বংশবৃদ্ধির জন্য ওরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে ও নিজেদের বংশবৃদ্ধির কাজটি অন্য পাখিকে দিয়ে করিয়ে নেয়। এজন্য ওদেরকে শাবক পরজীবীও (Brood Parasite) বলে। এই বর্গে মোট ১৪৭ থেকে ১৫১ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এই বর্গের একমাত্র গোত্রের নাম পরভৃত বা কুকুলিডি (Cuculidae)। এদেশে এই গোত্রের মাত্র বিশ প্রজাতির পাখির বাস, যার বেশিরভাগই কোকিল (Cuckoo)। এই বিশ প্রজাতির বেশিরভাগ পাখিই বাসা বানায় না। তবে এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হলো বনকোকিল বা মালকোহা (Malkoha) এবং কানাকুক্কা বা কুকাল (Coucal), কারণ তারা অন্যান্য পাখির মতো বাসা বানায়, ডিম পাড়ে ও ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। এই গোত্রের অনেক প্রজাতির পাখির ক্ষেত্রেই স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বেশকিছু প্রজাতি বংশবৃদ্ধি করার জন্য গ্রীষ্মকালে এদেশে আসে যাদেরকে গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী (Summer Breeder) বলে। এদেশে প্রাপ্ত এই গোত্রের ২০টি প্রজাতির মধ্যে দুটি বনকোকিল ও দুটি কানাকুক্কা এবং বাকি ১৬টি প্রজাতি কোকিল। এই কোকিলগুলোর মধ্যে যারা গ্রীষ্মকালে এদেশে প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করতে আসে তাদের সম্পর্কেই এখানে আলোচনা করব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাছের ডালে চাতক পাখি। ছবি- লেখক।  

তবে প্রজনন পরিযায়ী কোকিলদের নিয়ে আলোচনার আগে আবাসিক, পরিযায়ী ও প্রজনন পরিযায়ী পাখি বলতে কি বোঝানো হয় তা একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। এদেশের পক্ষীতালিকায় এখন পর্যন্ত ৭২২ প্রজাতির পাখি নথিভুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কমবেশি ৩৪০টি প্রজাতি আবাসিক; অর্থাৎ ওরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। এছাড়াও ৩৭০ প্রজাতিরও বেশি পাখি পরিযায়ী অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিরাট অংশ আসে শীতে, যারা শীতের পরিযায়ী নামেও পরিচিত। এসব পাখি মূল দেশে আবাসস্থল বসবাস অনুপযোগী হওয়া, খাদ্যের অভাব ও শীতের কবল থেকে বাঁচার জন্যই বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিযায়ন করে। এটা ওদের জীবনচক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে ওরা সচরাচর শীতের আবাসে বংশবিস্তার করে না; অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে, যেমন- কুড়া বা পালাসেস ফিশ ঈগল এদেশে আসে শীতকালে, ডিম-ছানা তোলে ও ছানাদের বড় করে সঙ্গে নিয়ে চলে যায়।

রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বিজয়নগরে শুককীট খাচ্ছে চাতক পাখি। ছবি- লেখক

এছাড়াও বেশকিছু পরিযায়ী পাখি এদেশে অনিয়মিত। ওরা অন্যদের মতো প্রতিবছর আসে না, বরং ৫ বা ১০ বছর পর পর আসে। তাই ওরা যাযাবর, ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী হিসেবে পরিচিত। ওদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশের মোট পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়াও কোনো কোনো পাখি অন্য দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক, বন খঞ্জন, লাল-পা তুরমতি ইত্যাদি। ওরা পন্থ-পরিযায়ী (Passage-migrant) নামে পরিচিত। এই পাখিগুলো মূলত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের পথে এদেশে কিছুদিনের জন্য যাত্রা বিরতি করে ও ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে মূল দেশে ফিরে যাওয়ার সময়ও আরেকবার এদেশে যাত্রা বিরতি করে।

যদিও পরিযায়ী পাখি বলতে মূলত শীতের পাখিগুলোকেই বোঝায়, তথাপি কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল, সুমচা, সুইচোরা, মাছরাঙা ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল এদেশে মার্চ থেকে এপ্রিলে আসে, অন্য উপযুক্ত পাখির বাসায় ডিম পাড়ে, ছানা তোলে এবং ছানাসহ সকলেই আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরে শীতকালীন আবাসে চলে যায়।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পান্না কোকিল। ছবি- লেখক

আগেই বলেছি কোকিলরা বাসা বানায় না। ওরা ডিমে তাও দেয় না এবং ছানাদেরও লালন-পালন করে না। ববং ওরা অন্য উপযুক্ত পাখির বাসায় ডিম পাড়ে এবং তাদের মাধ্যমে নিজেদের বংশবৃদ্ধির কাজটি করিয়ে নেয়। কোকিলের বিভিন্ন প্রজাতি, যেমন- কোকিল, পাপিয়া, চোখ গেল, বউ কথা কও, পান্না কোকিল, বেগুনি কোকিল, বাদামি কোকিল, সরগম, ফিঙ্গে কুলি প্রভৃতির স্ত্রী পাখিরা নিজেদের জন্য উপযুক্ত পোষক বা ধাত্রী পাখির বাসায় ধাত্রীর পাড়া ডিম ফেলে দিয়ে ঠিক একই রঙের প্রায় সমান আকারের ডিম পাড়ে। বংশ রক্ষা নিশ্চিত করতে একটি পোষকের বাসায় ডিম না পেড়ে একাধিক বাসায় ১-৩টি করে ডিম পাড়ে। এসব শাবক পরজীবী পাখির ডিম সচরাচর পোষক পাখির ডিমের আগে ফোটে ও পরজীবী পাখিদের সদ্যফোটা চোখ অফোটা ছানারা পোষক পাখির অফোটা ডিম বা সদ্যফোটা ছানা পিঠ দিয়ে ঠেলে ঠেলে বাসা থেকে নিচে ফেলে দেয় যেন ওরা এদের খাবার বা যতেœ ভাগ বসাতে না পারে। আর এভাবেই ছানাগুলো পোষক বাবা-মায়ের যত্নে একদিন বড়ো হয়ে ওঠে। অথচ পোষক পাখি তা টেরই পায় না।

বাসা না বানানো এই কোকিলদের মধ্যে যারা আবাসিক এবং পন্থ-পরিযায়ী নয়, কিন্তু প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করার জন্য অন্য দেশ থেকে গ্রীষ্মকালে এদেশে আসে ওদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল, চাতক ও পান্না কোকিল। এছাড়াও আরও যেসব প্রজাতির কোকিল এদেশে প্রজনন পরিযায়ী হয়ে আসে সেগুলোর মধ্যে বউ কথা কও, ধূসর-পেট কোাকিল ও বেগুনি কোকিল অন্যতম। তবে, প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন-এর মতে ওরা এদেশের আবাসিক পাখি। এছাড়াও এ তালিকায় ছোট কোকিলকেও অর্ন্তভুক্ত করা যায়। তবে, এদেশে গ্রীষ্মের অনিয়মিত এই পরিযায়ী পাখিটির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির কোন চাক্ষুস প্রমাণ না পাওয়ায় লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল, চাতক ও পান্না কোকিলের মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে। 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়রণ্যে পান্না কোকিল। ছবি- লেখক

এক. লাল-ডানা ঝুঁটিয়াল কোকিল: ফিচারের শুরুতে লাল ডানার খোপাধারী যে কোকিলটির গল্প বলা হয়েছে সে হলো লাল-ডানা বা লাল-পাখা ঝুঁটিয়াল কোকিল। এটি এদেশের দুর্লভ প্রজনন পরিযায়ী কোকিল। পশ্চিমবঙ্গে বলে গোলা কোকিল। ইংরেজি নাম Chestnut-winged Cuckoo বা Red-winged Crested Cuckoo । বৈজ্ঞানিক নাম Clamator coromandus। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত।

লাল-ডানা কোকিল চাতক পাখির মতোই লম্বালেজী ঝুঁটিদার কোকিল। হাঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন একটি লালচে চাতক। দেহের দৈর্ঘ্য ৩৮-৪৬ সেন্টিমিটার ও ওজন ৬৬-৮৬ গ্রাম। কালো মাথায় কালো ঝুঁটি, চোখ ও চঞ্চু কালো। পিঠের উপরটা ও লম্বা লেজ চকচকে নীলচে-কালো। ডানার উপরটা ও প্রান্ত লাল। গাল ও গলা হালকা লালচে। ঘাড়ের উপর অর্ধ সাদা বন্ধনী। বুক-পেট সাদা। চোখের মনি গাঢ় বাদামি। পা ও পায়ের পাতা ধূসর। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে, দেহের উপরটা লালচে ফুটকিযুক্ত ও ঝুঁটি ছোট। 

গ্রীষ্মকালে দেশের সব ধরনের বনাঞ্চল ও বনের আশেপাশের গাছপালাসম্পন্ন এলাকায় দেখা যায়। সচরাচর একাকী বা জোড়ায় থাকে। ঘন ঝোপ বা পাতাঘেরা গাছে লুকিয়ে থাকে বলে সহজে নজরে আসে না। প্রধানত শুঁয়াপোকা ও নরম দেহের কীটপতঙ্গ খায়। দ্রুত ডানা ঝাপটে গাছ থেকে গাছে ঘুরে বেরায়। স্ত্রী সচরাচর নীরব। পুরুষ অন্য সময় নীরব থাকলেও প্রজনন ঋতুতে উঁচ্চ কন্ঠে ‘ব্রিপ-ব্রিপ-ব্রিপ---’ শব্দে ডাকে।

মার্চ থেকে আগস্ট প্রজননকাল। বাসা না বানানো অন্যান্য কোকিলের মতো ওরাও না বানায় বাসা, না দেয় ডিমে তা, না করে ছানাদের যত্নে। সচরাচর ছাতারে বা পেঙ্গা পাখির বাসায় ওদের ডিমের সঙ্গে মিলিয়ে ২-৩টি নীল ডিম পাড়ে। ছাতারে বা পেঙ্গার ডিম ফোটার আগেই ওদের ডিম ফোটে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।

দুই. চাতক: এটি এদেশের সচরাচর দৃশ্যমান প্রজনন পরিযায়ী খোঁপাধারী কোকিল। পিঁউকাহা, পাপিয়া বা পাকড়া কোকিল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Pied Cuckoo, Pied Crested Cuckoo বা Jacobin Cuckoo বৈজ্ঞানিক নাম Clamator jocobinus । পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার পাখিটি প্রতি গ্রীষ্মে এদেশে প্রজনন করার জন্য পরিযায়ী হয়ে আসে। পাখিটি বছরের পর বছর একই সময়ে একই জায়গায় পরিযায়ন করে। 

চাতক লম্বালেজি ঝুঁটিয়াল কোকিল। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের গড় দৈর্ঘ্য ৩৩ সেন্টিমিটার যার মধ্যে লেজই ১৬ সেন্টিমিটার । ওজন ৬৫-৭০ গ্রাম। মাথায় কালো ঝুঁটি, দেহের উপরটা কালো ও নিচটা সাদা। লেজের ডগা সাদা। ডানার প্রান্তে সাদা ছোপ থাকে। চোখ বাদামি ও চঞ্চু কালো। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল ধূসর-কালো। নখ কালো। স্ত্রী ও পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ ধূসর-বাদামি, গলা-বুকে ধূসর ও দেহতলে পীতাভ আভা থাকে। গ্রীষ্মকালে এদেশের বন, বাগান, আবাদি জমি, খামার, ঝোপঝাড় সর্বত্রই ওদের দেখা যায়। সচরাচর একাকী, জোড়ায় বা ৫-৬টির ছোটো দলে থাকে। ঘন ঝোপ বা পাতাঘেরা গাছে লুকিয়ে খাবার খায়। প্রজাপতি ও মথের শূককীট, ছারপোকা, উঁইপোকা, পিঁপড়া ইত্যাদি প্রিয় খাবার। স্ত্রী সচরাচর নীরব। তবে, পুরুষ চাতক ‘পিউ---পি-পি-পিউ---’ শব্দে ডাকে।

মার্চ থেকে জুলাই প্রজননকাল। পুরুষ চাতক পূর্বরাগের সময় সুরেলা কন্ঠে গান গায়। পরভৃত গোত্রের বেশিরভাগ প্রজাতির মতো ওরাও বাসা বানায় না। আর ডিমে তা দেয়া বা ছানার যতœ নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ছাতারে (Babbler), বুলবুল (Bulbul), ফিঙে (Drongo) পোষক পাখি অর্থাৎ এসব পাখির বাসায় স্ত্রী চাতক চুপিসারে বাসাপ্রতি ২-৩টি করে ডিম পাড়ে, পোষক পাখির ডিমের রঙের সাথে মিল রেখে। ডিম ফোটে পোষক পাখির ডিম ফোটার আগে। ছানারা পোষক পাখির যত্নে বড়ো হয়ে উঠে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।

আরও পড়ুন:

আমাদের প্রজাপতি

বাঘের থেকেও বিরল পাখি সুন্দরী হাঁস

পরিযায়ী পাখিরা আসছে


তিন. পান্না কোকিল: এটি বিরল ও সুদর্শন গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী কোকিল। সবুজাভ কোকিল নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Asian Emerald Cuckoo বা Emerald Cuckoo । বৈজ্ঞানিক নাম Chrysococcyx maculatus । প্রতি গ্রীষ্মে পাখিটি এদেশে আসে ডিম-ছানা তোলার জন্য; যদিও না বানায় বাসা, না দেয় ডিমে তা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীন, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় দেখা যায়।

কোকিল গোত্রের অন্যতম ছোট এই সদস্যটির দেহের দৈর্ঘ্য ১৭-১৮ সেন্টিমিটার ও ওজন ২৩-৩০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে ভিন্নতা থাকে। পুরুষের পিঠের উপরটা চকচকে পান্না-সবুজ, তাতে থাকে সোনালি-ব্রোঞ্জ আভা। থুতনি, গলা ও বুকেও তাই। বুক-পেটের নিচটা সাদা, তাতে ধাতব ব্রোঞ্জ-সবুজ ডোরা। লেজের নিচটা ধাতব সবুজ, তাতে সাদা ডোরা। স্ত্রীর মাথা ও ঘাড়ের পিছনটা সোনালি লাল। পিঠের পালক ব্রোঞ্জ-সবুজ। গলা-বুক-পেটে সাদার উপর বাদামি-ব্রোঞ্জ ডোরা। লেজে খয়েরি-কালো ডোরা, ডগা সাদা। চোখের রং গাঢ় লাল। চঞ্চু কমলা-হলুদ, আগা কালো। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল গাঢ় বাদামি-সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের উপরটায় থাকে লাল-বাদামি ডোরা। থুতনি, গলা ও ঘাড়ে থাকে লালচে কালো দাগ। দেহের নিচটায় রয়েছে অনুজ্জ¦ল সাদা ও বাদামি ডোরা। 

 পান্না কোকিল প্রধানত চিরসবুজ বনের বাসিন্দা। তবে নিচু ভূমি ও পাহাড়ের ১,৫০০ মিটার উঁচুতেও দেখা যায়। ওরা একাকী বা ৪-৬টির দলে বিচরণ করে। গাছের মগডালে পাতার আচ্ছাদনে লুকিয়ে থাকে, তাই সহজে চোখে পড়ে না। পিঁপড়া, শুঁয়াপোকা ও নরম পোকামাকড় খেতে পছন্দ করে। পূর্ণিমা রাতে পুরুষটি ‘চিরর্র-চিরর্র---’ শব্দে ডাকে।

এদেশে ওরা এপ্রিলের মাঝামাঝি আসে ও জুলাইয়ের শেষে চলে যায়। প্রজনন মৌসুমে পুরুষটি দিনভর ‘চিরর্র-চিরর্র-চিরর্র-চিরর্র---’ শব্দে ডাকতে থাকে। মৌটুসি (Sunbird)  বা মাকড়সাভূকের (Spiderhunter) বাসায় একটি করে সাদার উপর বাদামি বা লালচে ছিটযুক্ত ডিম পাড়ে। যদিও ওদের ডিম আকারে কিছুটা বড়ো হয়, কিন্তু ডিমের রং পোষক বা ধাত্রী পাখির মতোই। পোষকের ডিমের আগেই এই ডিম ফোটে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পান্না কোকিলের ছবি তোলারত অবস্থায় লেখক

E-mail:[email protected], [email protected]

   

বিয়ের কার্ডে ভাইরাল বাংলাদেশি দম্পতি



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজকাল বিয়ে নিয়ে মানুষের নানা ধরনের প্রথা/ট্রেন্ড দেখতে পাওয়া যায়। কেউ বাইক নিয়ে বরযাত্রী যাচ্ছে, কেউ কনে সেজে নিজেই বর আনতে যাচ্ছে আবার কেউবা নেচে-গেয়ে ভিডিও আপলোড করছে সামাজিক মাধ্যমে। মূলত এসব কিছুর পেছনে থাকে একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো অন্যের চেয়ে নতুনত্ব কিছু করা। আর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া, আলোচনায় থাকা।

সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় এমনই এক বিয়ে নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশি এক দম্পতির বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। প্রতিবেদন- এনডি টিভি।

সাধারণত বিয়ের কার্ড বা নিমন্ত্রণ পত্রে দামি চকলেট, বাদাম, খেজুর এবং কুকিজসহ বর-কনের ছবি সংযুক্ত থাকে। আর এই কার্ড বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনে তৈরি করা হয়ে থাকে।

কিন্তু সানজানা তাবাসসুম স্নেহা ও মাহজিব হোসেন ইমন নামে ওই বাংলাদেশি দম্পতি এক অনন্য ডিজাইনের কার্ড তৈরি করেছেন তাদের বিয়ে উপলক্ষ্যে। যা দেখে অবাক হয়েছেন নেটিজেনরা। গবেষণাপত্রের মতো করে তৈরি করা হয়েছে এই বিয়ের কার্ড। যাতে শিরোনামে বিবাহের স্থানসহ দম্পতির নাম লেখা রয়েছে।

কার্ডটিতে কুরআনের আয়াতের সাথে একটি ভূমিকা রয়েছে যেখানে বিয়ের তাৎপর্য, দম্পতির প্রথম দেখা হয়েছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর পর্যায়ক্রমে তাদের বিবাহের প্রক্রিয়ার বিবরণ এবং উপসংহারের রূপরেখা দেয়া হয়েছে। উপসংহারে নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন জীবনে পা রাখার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে।

বিয়ের কার্ডটি ওই দম্পতি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করায় রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এক্স- এ শেয়ার করা ওই পোস্টে ৩.৩ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ এবং ৬৯,০০০ লাইক পড়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু মন্তব্যও জমা হয়েছে ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে। নেটিজেনরা বিষয়টাকে খুব পছন্দ করেছেন, তারা এটাকে একটি হাস্যকর মাস্টারপিস বলে অভিহিত করেছেন।

একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে এটি একটি বিয়ের কার্ড।"

অন্য একজন মজা করে লিখেছেন, "তাহলে আপনি আমাকে বলছেন এটা গবেষণাপত্র নয়? আমি তো বিয়েতে উপস্থিত হওয়ার জন্য পিয়ার রিভিউ লিখতে বসেছিলাম।"

তৃতীয় একজন মন্তব্য করেছেন, "২ গবেষক বিয়ে করছেন। বুঝতে পেরেছেন। তারা একটি QR কোড ব্যবহার করতে পারত যা গুগোল ম্যাপস দিয়ে খোলা হতো।"

আরেকজন লিখেছেন, "এটি একটি থিসিসের মতো দেখাচ্ছে।"

;

বাংলাদেশের আবাসিক পাখি



অধ্যাপক ড. আ ন ম আমিনুর রহমান. পাখি ও বন্যপ্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ছবি: লেখক।

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল। ছবি: লেখক।

  • Font increase
  • Font Decrease

মহান সৃষ্টিকর্তার তিন সুন্দর সৃষ্টি হলো ফুল, প্রজাপতি ও পাখি। ফুল দেখে আমরা যেমন মুগ্ধ হই তেমনি মুগ্ধ হই উড়ন্ত প্রজাপতি ও পাখি দেখে। তবে পাখির সৌন্দর্য্য ও ওড়াউড়িই যে শুধু আমাদের মুগ্ধ করে, তা কিন্তু নয়। বরং পাখির গানও দেয় অনাবিল আনন্দ। তবে, এর পাশাপাশি ওরা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ব্যাপক অবদান রাখে। সত্যিই বর্নিল পাখিগুলোর মতো এমন সুন্দর প্রাণী পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নানা আকার, রং ও ঢঙের পাখিগুলো যখন ওদের ডানায় ভর করে নীল আকাশে উড়ে বেড়ায় তখন দেখতে কতই না ভালো লাগে? পুরো পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১০,০০০ প্রজাতির (Species) পাখির বাস। আর অনুমান করা হয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলোর মোট সংখ্যা ২০ থেকে ৪০ হাজার কোটি। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ১২শ প্রজাতির কিছু বেশি পাখি বাস করে। জানামতে, বাংলাদেশের পাখির তালিকায় এ পর্যন্ত কম-বেশি ৭২২টি প্রজাতি রেকর্ড করা হয়েছে। 

চাঁপাইনবাগঞ্জের রহনপুরে দেশের বৃহত্তম পাখি মদনটাক। ছবি: লেখক

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বিগত কয়েক শতকে দু’শতাধিক প্রজাতির পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় ১২শ প্রজাতির পাখি নানা কারণে হুমকির মুখোমুখি অবস্থান করছে। অদূর বা দূর ভবিষ্যতের যে কোনো সময় এরা হয়তো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 

এবার আসা যাক পাখি কি সে কথায়। পাখি হলো বিভিন্ন আকার, ওজন ও আকৃতির উষ্ণ-রক্তবিশিষ্ট মেরুদণ্ডি প্রাণী যাদের দেহ পালকে আচ্ছাদিত, চোয়ালের উপর রয়েছে দাঁতবিহীন শক্ত ঠোঁট বা চঞ্চু (Beak), হৃৎপি- চার প্রকোষ্ঠে বিভক্ত, যাদের স্ত্রীরা শক্ত খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে, দেহের বিপাকীয় হার উচ্চ, হাড় ফাঁপা ও কঙ্কাল হালকা এবং যারা সাধারণত উড়তে পারে।

জীবাস্ম বা ফসিল (Fossil) রেকর্ড থেকে জানা যায় পাখিরা থেরোপড (Theropod) দলের পালকযুক্ত পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তিলাভ করেছে যারা প্রথাগতভাবে সরিসিয়ান ডায়নোসরদের (Saurischian dinosaurs) অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন যে, এরা অরনিথোসেলিডা-এর (Saurischian dinosaurs) অর্ন্তভুক্ত। যদিও একসময় জার্মানিতে প্রাপ্ত মধ্য জুরাসিক যুগের (Mid Jurassic Era - প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন বছর আগের) আর্কিওপটেরিক্স লিথোগ্রাফিকা (Archeopteryx lithographica)-কে পাখির সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম মনে করা হতো- যাদের চঞ্চুর পরিবর্তে ছিল চোখা দাঁতযুক্ত শক্ত চোয়াল, শক্ত হাড়যুক্ত লম্বা লেজ ও যারা ভালোভাবে উড়তে পারত না। এদের মধ্যে সরীসৃপ ও পাখির এক চমৎকার যোগসূত্র ছিল। কিন্তু বর্তমানে নানা গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, চীনে প্রাপ্ত ক্রিটাসিয়াস যুগের(Cretaceous Era- প্রায় ১২৫ মিলিয়ন বছর আগের) কনফুসিয়াসওরনিস স্যাঙ্ককটাস (Confuciusornis sanctus) হলো সত্যিকারের চঞ্চুযুক্ত পাখির সবচেয়ে পুরনো জীবাশ্ম। আধুনিক কালের পাখিগুলো এসব ডায়নোসর যুগের পাখি (থেরোপড) থেকে যুগ যুগ ধরে বিবর্তিত হয়েছে।

রাজশাহী শহরের একটি বটগাছে দেশের ক্ষুদ্রতম পাখি ফুলঝুরি। ছবি: লেখক

পাখি, প্রজাপতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিস্তৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- ১. উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল - রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ। ২. উত্তরাঞ্চল- ময়মনসিংহ বিভাগ। ৩. উত্তর-পূর্বাঞ্চল - সিলেট বিভাগ। ৪. কেন্দ্রীয় অঞ্চল- বৃহত্তর ঢাকা, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইল জেলা। ৫. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল- বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা। ৬. দক্ষিণাঞ্চল- বৃহত্তর নোয়াখালি জেলা ও বরিশাল বিভাগ। ৭. দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- খুলনা বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা।

বাংলাদেশের পাখির তালিকায় কমবেশি যে ৭২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৩৪০ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করে, অর্থাৎ এরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। এরাই হলো এদেশের আবাসিক পাখি (Resident Bird)। বাদবাকি প্রজাতিগুলো পরিযায়ী (Migratory - অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়), পন্থ-পরিযায়ী ও ভবঘুরে বা যাযাবর। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিশাল অংশ এদেশে আসে শীতকালে যারা শীতের পরিযায়ী পাখি (Winter Migrant) নামেও পরিচিত। এরা এদেশে বংশবিস্তার করে না। এছাড়াও কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল (Cuckoo) ও হালতি বা সুমচা (Pitta)) পাখি। এরা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী (Summer Breeder) পাখি নামে পরিচিত। এছাড়াও বেশকিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এদেশে অনিয়মিত। হয়তো এক বছর এল, এরপর আবার ৫ বা ১০ বছর পর এল, অন্যদের মতো প্রতি বছর এল না। এদেরকে তাই যাযাবর বা ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি বলে। আর এদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশে আসা সকল পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এরা। আবার কোনো কোনো প্রজাতির পাখি অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক (Asian Brown Flycatcher), বন খঞ্জন (Forest Wagtail)ইত্যাদি। এরা পন্থ-পরিযায়ী (Passage-migrant) পাখি নামে পরিচিত।

শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলের উপর দিয়ে উড়ছে একঝাঁক বালিহাঁস। ছবি: লেখক

আবাসিক, পরিযায়ী, ভবঘুরে ও পন্থ-পরিযায়ী পাখি মিলে এদেশে কমবেশি যে ৭২২ প্রজাতির পাখি রয়েছে সেগুলো ২৩টি বর্গ ও ৯৩টি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। আশ্চর্যের বিষয় হলো এদেশের মোট পাখির অর্ধেকই একটি বর্গ প্যাসারিফরমেস বা শাখাচারী-এর ১৯টি পরিবারের সদস্য। আমাদের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে আকার, ওজন ও রঙে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি ভিন্নতা রয়েছে এদের জীবণযাপন, আবাস, খাদ্যাভাস ও আচার-আচরণে। আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে যেমন আছে জলা বা সৈকতের পাখি, তেমনি আছে লোকালয় ও বনজঙ্গলের পাখি। এই পাখিগুলোর সবগুলোকেই যেমন একই জায়গায় বা একই মৌসুমে দেখা যায় না, তেমনি সমান সংখ্যায়ও দেখা মেলে না। তাছাড়া ৯৩টি গোত্রের মধ্যে ১৮টি গোত্রের কোনো পাখিই এদেশের আবাসিক পাখি নয় যার মধ্যে সারস (ক্রেন), বিভিন্ন প্রজাতির চা-পাখি, খোঁয়াজ, রামঠেঙ্গি, বিভিন্ন প্রজাতির ওয়ার্বলার, রোজফিঞ্চ ও বান্টিং উল্লেখযোগ্য।

ঢাকার দিয়াবাড়িতে অতি সুন্দর পুরুষ লাল মুনিয়া। ছবি: লেখক

এদেশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে অনেকগুলো প্রজাতিই দেখতে বেশ সুন্দর, যেমন- লালশির ট্রোগন (Red-headed Trogon), দুধরাজ (Paradise Flycatcher), পাতা বুলবুলি (Leafbird), আলতাপরী ((Scarlet Minivet), মৌটুসি (Purple-rumped Sunbird), নীলটুনি (Purple-rumped Sunbird), শ্বেতাক্ষী (Oriental White-eye), লাল মুনিয়া (Red Avadavat) ইত্যাদি। তবে এদের মধ্যে কোনটি বেশি সুন্দর তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। আসলে পাখির রাজ্যে কোনটি সবচেয়ে সুন্দর তা বলা কঠিন। কারণ, একেকটি পাখি একেক দিকে সুন্দর। একেকজনের দৃষ্টিতে একেক পাখিকে সুন্দর মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সুন্দর পাখিটিকে কারো কাছেই অসুন্দর লাগবে না। সৌন্দর্য বিবেচনায় এদেশের পাখিগুলোর মধ্যে পুরুষ নীলটুনি বা দুর্গাটুনটুনিই শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। যদিও লম্বালেজের পুরুষ ময়ূর (বর্তমানে বিলুপ্ত) এবং দুধরাজও অত্যন্ত সুন্দর। তাছাড়া টকটকে লাল পুরুঘ লাল মুনিয়াও কম সুন্দর নয়।

 

সাভারের জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের বট গাছে বটকল। ছবি: লেখক

এবার এদেশের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম আবাসিক পাখি প্রসঙ্গে আসছি। উচ্চতা-দৈর্ঘ্য-ওজনের ভিত্তিতে বর্তমানে এদেশের বৃহত্তম আবাসিক পাখির নাম মদনটাক (Lesser Adjutant Stork) যার উচ্চতা ১১৫-১২০ সেমি, দৈর্ঘ্য ৮৭-৯৩ সেমি ও ওজন ৪.৫ কেজি। আর ক্ষুদ্রতম পাখির নাম ছোট ফুলঝুরি (Pale-billed Flower-pecker) যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৮ সেমি ও ওজন মাত্র ৬.৩ গ্রাম। অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম পাখির নাম উটপাখি (Ostrich- দৈর্ঘ্য ২৭৫ সেমি ও ওজন ১০০-১১৫ কেজি) ও ক্ষুদ্রতম পাখির নাম মৌগুঞ্জন পাখি (Bee Hummingbird- দৈর্ঘ্য মাত্র ৫-৬ সেমি ও ওজন মাত্র ১.৯৫-২.৬০ গ্রাম)। 

এদেশের আবাসিক পাখিগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে নদী, জলা ও সৈকতের পাখি, তেমনি রয়েছে লোকালয়, বনজঙ্গল, মাঠ, ঘাসবন, নলবন ও ঝোপঝাড়ের পাখি। কোনো কোনো পাখিদের কেবল বনেই দেখা যায়, যেমন- বনমোরগ (Red Jungle Fowl), মথুরা (Kalij Pheasant), কাঠময়ূর (Grey Peacock Pheasant), ধনেশ (Hornbill), কালো বাজ (Black Baza), পাহাড়ি নীলকন্ঠ (Oriental Dollarbird), মদনা টিয়া (Red-breasted Parakeet) ইত্যাদি আরও কত কী? কিছু কিছু পাখি শুধু মানুষের আবাস এলাকা বা আশেপাশে থাকে, যেমন- চড়ুই (Houuse Sparrow), টুনটুনি (Tailor Bird), ভাত শালিক (Common Myna), কাক (House Crow) ইত্যাদি।

সুন্দরবনের কটকায় ওড়ার মুহূর্তে একটি বড় সাদা বক। ছবি: লেখক

আবার কোনো কোনো পাখিদের শুধু খাল-বিল, নদী-নালা ও বিভিন্ন ধরনের জলাশয়েই দেখা যায়, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস (Ducks), বক (Heron), সারস (Stork), কাস্তেচরা (Black-headed Ibis), ডুবালু বা ডুবুরি (Grebe)ইত্যাদি। কিছু পাখি আছে যারা শুধু সুন্দরবনেই বাস করে, অন্য কোথাও না, যেমন- সুন্দরী হাঁস (Masked Finfoot), সুন্দরী সুমচা (Mangrove Pitta), লাল মাছরাঙা ((Ruddy Kingfisher), সিন্ধু ঈগল (White-bellied Sea Eagle)  ইত্যাদি।

কিছু কিছু পাখিকে বনজঙ্গল, লোকালয় বা বাদা বন (Mangrove Forest) প্রভৃতি সব পরিবেশেই দেখা যায়, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির হরিয়াল (Green Pigeon), তিলা ঘুঘু (Spotted Dove), দোয়েল (Magpie Robin), বুলবুলি (Bulbul), নীলটুনি, ফুলঝুরি (Flowerpeckers)  ইত্যাদি। মাঠের বা ক্ষেতখামারের পাখিদের মধ্যে রয়েছে হট্টিটি (Lapwings), খরমা (Indian Thick-knee), নীলকন্ঠ ((Roller), কসাই (Shrike), ফিঙে (Drongo), ভরত (Lark), ইত্যাদি।

ঘাসবনের পাখিদের মধ্যে রয়েছে নাগরবাটই (Barred Buttonquail), টেকটেকি (Striated Grassbird), মুনিয়া, ধানটুনি (Zitting Cisticola), কালোবুক বাবুই (Black-breasted Weaver) ইত্যাদি। ঝোপঝাড়ের পাখির মধ্যে রয়েছে কানাকুক্কা (Coucal), টুনটুনি ইত্যাদি। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, সব প্রজাতির পাখি যেমন একই জায়গায় বা একই মৌসুমে দেখা যায় না, তেমনি সমান সংখ্যায়ও দেখা মেলে না।

বাইক্কা বিলে বালিহাঁসের ছবি তোলায় ব্যস্ত লেখক। ছবি: ড. জীবন চন্দ্র দাস

E-mail:[email protected], [email protected]

;

পিকনিক মৌসুমে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো



বর্ণালী জামান ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শীত সমাগমে দর্শনার্থীদের মাঝে বিনোদন স্পটগুলোতে ভ্রমণের আগ্রহ বাড়ে। সাধারণত শীত এলেই ভ্রমণপিপাসু মানুষের বিনোদন আকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায় অনেকাংশেই। 

বিশেষ করে শীত মানেই পিকনিক উৎসব। শীতের ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে স্থানীয় বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন সৌখিন মানুষেরা।

শীত মৌসুমে পিকনিকে অংশ নিয়ে দেহমনে প্রফুল্ল আনতে আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা নিহায়েত কম নয়। এই সময় তাই পিকনিক স্পট গুলোতেও থাকে ভেজায় ভিড়। এ মৌসুমকে ঘিরে রংপুরের পিকনিক স্পটগুলো এখন প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, স্থাপনার সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের জন্য রঙ করা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ দর্শনার্থীদের আনন্দদানের নানাবিধ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণের চেষ্টাও চলছে।

রংপুর এলাকায় যে সকল পিকনিক স্পট বা বিনোদন পার্ক রয়েছে তার মধ্যে রংপুর পাগলাপীর এলাকার ভিন্নজগৎ, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, মাহিগঞ্জ এলাকার তাজহাট জমিদার বাড়ি, রংপুর চিড়িয়াখানা অন্যতম। এছাড়াও শহরের চিকলি ওয়াটার পার্ক, মিঠাপুকুরের ইকোপার্কসহ আরও কিছু স্থান রয়েছে, যে জায়গাগুলোতেও বিনোদন প্রত্যাশী মানুষের উপস্থিতিতে ব্যাপক সমাগম ঘটে।

এ নিয়ে ভিন্ন জগতের দায়িত্বরত সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম জানান, বিনোদন পার্কগুলোতে সারা বছরের ব্যবসায়িক সফলতা সাধারণত মৌসুমের ব্যবসার উপর অনেকটা নির্ভর করে। সেই লক্ষ্যে ভিন্নজগৎ কর্তৃপক্ষ নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও এগিয়ে চলছে। প্রতিবছরের মতো এ বছর শীত মৌসুমেও ব্যবসায় লাভের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। 

পীরগঞ্জের আনন্দনগরেও বিনোদনপ্রেমীদের অধিক হারে আকর্ষণ করার নানাবিধ প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যুক্ত করা হচ্ছে বেশকিছু নতুন নতুন রাইডসহ নির্দশন। 

সব মিলিয়ে নির্মল আনন্দদানে বিনোদন পার্কগুলো আরও বেশি আন্তরিক হবে- এই প্রত্যাশা বিনোদন প্রেমীদের। 

 

;

চা বরং আভিজাত্য, কি বলেন!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ-ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দুবাই, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, বেইজিং, সিউল, টোকিও বা ব্যাংককের মতো বড় শহরগুলোর সবচেয়ে অভিজাত বা সিগনেচার শপিং মলে ঢুকে আশপাশে খোঁজ করলেই চোখে পড়বে একটা চায়ের দোকান। সেটা হচ্ছে টিডব্লিউজি ১৮৩৭ (TWG 1837)।

প্রথম টিডব্লিউজি’র চা পান করা হয় বছর সাতেক আগে মালয়েশিয়ার অভিজাত মল প্যাভিলিয়ানে। সম্প্রতি ব্যাংককের এম্পোরিয়াম শপিং মলে আবারও টিডব্লিউজি’র চায়ের স্বাদ নেয়া হলো। না, এই চায়ের স্বাদ বিশেষ কিছু নয়। বরং বাঙালি জিভে এই চা সবসময় পর্যাপ্ত গরম মনে হবে না। বলা যায় কুসুম কুসুম গরম। তাহলে টিডব্লিউজি চায়ের বিশেষত্ব কি?

এক কথায় বলা যায় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা। পরিবেশনে, আভিজাত্যে নিজের ব্র্যান্ডের একটা আলাদা স্বকীয়তা তৈরি করেছে সিঙ্গাপুরের এই চায়ের ব্র্যান্ড। তাই ব্যাংককের মতো শহরে যেখানে কফি মানুষের প্রধান পানীয়, সেখানে নিজ পরিচয়ে নিজেকে বিক্রি করে যাচ্ছে টিডব্লিউজি’র চা।


এখানে চায়ের যে কত শত প্রকার রয়েছে সেটা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সিঙ্গাপুর নিজেরা চা উৎপাদন না করেও এমন একটি চায়ের ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠা তাদের ব্যবসায়িক সফলতার আর ইমেজের বহিঃপ্রকাশ।

টিডব্লিউজি নিজেদের চা’কে প্রিমিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং চা খাওয়ার এক ভিন্ন সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এখানে এক কাপ চা নয় বরং এক কেটলি চা পরিবেশন করা হয়। সবমিলিয়ে ৫০০ মিলিলিটার ইংলিশ চায়ের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ হাজার টাকা। এক কেটলি চা ২০ হাজার টাকা, এমন মূল্যও রয়েছে এখানে।

টিডব্লিউজি ১৮৩৭ খচিত সিরামিকের কেটলিতে পরিবেশন করা হয় চা। চায়ের চামচ, কাপ, পিরিচ সবকিছুতে ব্র্যান্ডে নাম খচিত রয়েছে। চিনি আলাদাভাবে দেওয়া হয়। এই চা ফু দিয়ে গরম কমানোর প্রয়োজন হয় না। চাইলে এক চুমুকেই ১০০ গ্রামের পেয়ালা খালি করে ফেলা যায়। তবে এখানকার গ্রাহকরা সেটা করেন না। বরং ধীরে ধীরে ঘণ্টার ওপর সময় নিয়ে এক কেটলি চা পান করা হয়। ব্যবসায়িক আলাপ, কাজের চুক্তি সম্পাদনা, এসব বৈঠকে এক আভিজাত্যের ছোঁয়া আনে এই টিডব্লিউজি’র চা।


‘দ্যা ওয়েলবিয়িং গ্রুপ’কেই সংক্ষেপে বলা হয় টিডব্লিউজি। পৃথিবীজুড়ে চায়ের প্রথম চমৎকার স্বাদ ও অভিজাত ব্র্যান্ড বলা হয় একে। ১৮৩৭ সালের দিকে যখন সিঙ্গাপুর এশিয়ার প্রধান বন্দর হয়ে উঠছিল, মশলা, চা ছাড়াও নানান পণ্যের বাজার হয়ে উঠে, তখন প্রতিষ্ঠিত হয় এই চায়ের ব্র্যান্ড। তবে ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের ফ্রাঞ্চাইজ এবং চা বার চালু করে প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাংককের এম্পোরিয়াম বা কুয়ালালামপুরের প্যাভিলিয়ান, সবখানেই টিডব্লিউজি’র আউটলেটের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট হলো বুটিক নকশা। সেখানে অভিজাত ঝাড়বাতির সজ্জা থাকে এবং হাইওয়ে আলো ব্যবহৃত হয়। বদ্ধ রেস্টুরেন্ট নয়, বরং খোলামেলা জায়গায় থাকে টি বার। ঢুকলে চোখে পড়বে শত শত চায়ের ফ্লেবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

দুনিয়ার প্রায় এক হাজার চা বাগান থেকে সেরা চা পাতার কুড়ি থেকে চা উৎপাদন করে টিডব্লিউজি। আর রয়েছে প্রায় ৮০০ ফ্লেভার। উৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত এডিশনের চা উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। চা বাগানগুলোর সঙ্গে সরাসরি বিশেষ এই চা উৎপাদনে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি।


চায়ের আনুষঙ্গিক পাত্রও বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। একটি কেটলির মূল্য সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেখলাম এম্পোরিয়ামে। এছাড়াও নিজেদের ব্র্যান্ডের চা চামচ, পেয়ালা, চিনির পাত্র, দুধের পাত্র, পিরিচও রয়েছে। এছাড়াও সুভিনিয়রতো রয়েছেই৷

;