পরিযায়ী পাখিরা আসছে



আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওরে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওরে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

  • Font increase
  • Font Decrease

অক্টোবর মাস। সেপ্টেম্বরের ঘাম ঝড়ানো ও অস্বস্তিকর গরম শেষ হয়ে শীতের হালকা আমেজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি পাখিরা আসতে শুরু করেছে। যদিও আগে ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় আকাশে উড়ে যাওয়া অতিথি পাখির কলকাকলি শোনা যেত, এখন তা তেমন একটা শুনি না। তবে, শহর থেকে খানিকটা দূরে খাল-বিল-নদী-হাওরের কাছাকাছি গেলে ঠিকই ওদের কলকাকলি শোনা যায়। এমনকি সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি খাগড়াছড়ি ও সাজেক গিয়ে বেশ কিছু অতিথি পাখির সঙ্গে দেখা হয়েছে। এই যে অতিথি পাখির কথা বললাম ওরা কী আসলেই আমাদের অতিথি? না, মোটেও না। সঠিকভাবে বললে ওরা হলো পরিযায়ী পাখি বা Migratory Bird। পরিযায়ী পাখির কথা বলার আগে পাখি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯,৯৩০ প্রজাতি ও ২২,০০০ উপপ্রজাতির পাখির বাস। অনুমান করা হয়, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিগুলোর মোট সংখ্যা ২০-৪০ হাজার কোটি। পুরো ভারতে যেখানে ১,৩১১ প্রজাতির পাখির বাস, সেখানে বাংলাদেশে কমবেশি ৭১৮ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, গত কয়েক শতকে ২০০ প্রজাতির পাখি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ১,২০০ প্রজাতির পাখি নানা কারণে হুমকির সম্মুখীন। এদেশের মোট পাখির মধ্যে কমবেশি ৩৪০ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করে, অর্থাৎ এরা সারাবছর এদেশে থাকে, ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে। ওরাই হলো এদেশের আবাসিক পাখি। এছাড়াও প্রায় ৩৭০ প্রজাতির পাখি পরিযায়ী অর্থাৎ বছরের কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় এদেশে আসে, বসবাস করে ও সময়মতো মূল আবাসে ফিরে যায়। এসব পাখি এদেশের মানুষের কাছে আগে, এমনকি এখনও, ‘অতিথি পাখি’ নামেই পরিচিত। এদেরই এক বিশাল অংশ এদেশে আসে শীতকালে যারা শীতের পরিযায়ী পাখি নামেও পরিচিত।

বাইক্কা বিলে পরিযায়ী কালো-লেজ জৌরালির ঝাঁক। ছবি- লেখক।

শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা এসব পাখি মূল দেশে আবাসস্থল বসবাস অনুপযোগী হওয়া, খাদ্যের অভাব ও প্রচ- শীতের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশসহ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে পরিযায়ন বা Migration করে। এটা ওদের জীবন চক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে বেড়ানোর কোনো ব্যাপার নেই, আছে জীবন বাঁচানোর তাগিদ। তাই এসব দেশকে ওদের দ্বিতীয় আবাস বা শীতের আবাস বলা যায়। তবে ওরা কিন্তু এসব দেশে বংশবিস্তার করে না। অবশ্য কিছু ব্যতিক্রমও আছে, যেমন- কুড়া ঈগল শীতকালে এদেশে আসে বংশবৃদ্ধির জন্য।

যদিও পরিযায়ী পাখি বলতে মূলত শীতের পাখিগুলোকেই বোঝানো হয়, তবে কিছু পাখি গ্রীষ্মেও পরিযায়ন করে, যেমন- বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল ও হালতি বা সুমচা পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির কোকিল এদেশে মার্চ থেকে এপ্রিলে আসে, অন্য উপযুক্ত পাখির বাসায় ডিম পাড়ে, ছানা ফোটে এবং ছানাসহ সকলেই আবার আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে তাদের শীতকালীন আবাসে চলে যায়। অন্যদিকে, বিভিন্ন প্রজাতির হালতি পাখি ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে এদেশে আসে, জুন থেকে জুলাইয়ে ডিম পাড়ে ও ছানা তোলে, ছানারা বড় হয় ও ৭-৮ মাস এদেশে থেকে অক্টোবরের মধ্যে মূল আবাসে চলে যায়। ওরা গ্রীষ্মের প্রজনন পরিযায়ী পাখি নামে পরিচিত।

সুন্দরবনের ডিমের চরের পাশে পরিযায়ী বড় গুলিন্দার ঝাঁক। ছবি- লেখক।

এছাড়াও বেশকিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি এদেশে অনিয়মিত। হয়তো এক বছর এল, এরপর আবার ৫ বা ১০ বছর পর এল, অন্যদের মতো প্রতি বছর এল না। এদেরকে তাই যাযাবর বা ভবঘুরে বা অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি বলে। আর ওদের সংখ্যাও নেহাত কম না, এদেশে আসা সকল পরিযায়ী পাখির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ওরা। আবার কোনো কোনো প্রজাতির পাখি অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের এক পর্যায়ে এদেশে স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে আসে, যেমন- বাদামি চটক, বন খঞ্জন ইত্যাদি। এরা পন্থ-পরিযায়ী পাখি নামে পরিচিত। মূলত হেমন্তে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে অন্য কোনো দেশে পরিযায়নের পথে অল্প সময়ের জন্য এদেশে ওরা যাত্রা বিরতি করে ও বসন্তে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে মূল দেশে ফিরে যাওয়ার সময়ও আরেকবার এদেশে যাত্রা বিরতি করে।

পাখির পরিযায়ন হলো একটি নিয়মিত মৌসুমী স্থানান্তর যা সচরাচর তার প্রজনন এলাকা ও শীতের আবাসের মধ্যে হয়ে থাকে। মেরু গাংচিল তার প্রজনন ক্ষেত্র উত্তর মেরু থেকে শীতের আবাস দক্ষিণ মেরুতে সবচেয়ে লম্বা পথ পাড়ি দেয়। ডোরা-লেজ জৌরালি এক উড়নে প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার উড়ন পথ পাড়ি দিয়ে আলাস্কা থেকে নিউজিল্যান্ডে পরিযায়ন করে।

কর্ণফুলী নদীতে পরিযায়ী ছোট গুলিন্দার ঝাঁক। ছবি- লেখক।

এবার আসা যাক কোন ধরনের পাখিরা এদেশে পরিযায়ন করে?

প্রধানত দুই ধরনের পাখিরা পরিযায়ণ করে। প্রথম ধরন হলো সৈকত, নদী, মোহনা ও জলাভূমির পাখি। কমবেশি ৮২ প্রজাতির পাখি এই ধরনের অর্ন্তভুক্ত; মোট সংখ্যার হিসেবে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে ওদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এদেশে ওরা মূলত ছয়টি উড়নপথ আবাস্থল, যেমন- হাকালুকি, টাঙ্গুয়া ও হাইল হাওর (বাইক্কার বিলসহ), সোনাদিয়া দীপপুঞ্জ, নিঝুম দ্বীপ (দমার চরসহ) এবং গাঙ্গুইরার চর ছাড়াও রাজশাহীর পদ্মা নদী ও চরাঞ্চল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরইল বিল, যমুনার চর, মেঘনার মোহনা, কাপ্তাই লেক, সুন্দরবন, উপকুলীয় এলাকাব্যাপী বিস্তৃত। সৈকত ও জলচর পাখিগুলোর মধ্যে বেশকিছু মহাবিপন্ন পাখি রায়েছে। যেমন- চামচঠুঁটো চাপাখি, সোনাজঙ্ঘা, মানিকজোড়, খুন্তে বক, বড়ো ভূতিহাঁস, তিলা সবুজ চাপাখি ইত্যাদি।

দ্বিতীয় ধরন হলো বনজঙ্গল, বাগান, কুঞ্জবন ও ঝোপঝাড়ের পাখি। প্রায় ১৫৬ প্রজাতির পাখি এই ধরনের অর্ন্তভুক্ত; মোট প্রজাতির হিসেবে এই ধরনের পাখির প্রজাতি সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। আর ওদের আশ্রয়স্থল সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন মিশ্র চিরসবুজ বন, কেন্দ্রীয় ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভিন্ন পত্রঝরা বা শালবন, সুন্দরবন ও উপকূলীয় বাদা বন, গ্রামীণ বন, ঝোপঝাড়, ঘাসবন ও বাঁশবনজুড়ে বিস্তৃত।

সোনাদিয়া দ্বীপপুঞ্জের কালাদিয়া চরে পরিযায়ী সৈক পাখির খোঁজে লেখক।

এদেশের অনেককেই বলতে শুনেছি অতিথি পাখি তথা পরিযায়ী পাখিরা আমাদের খাদ্যে ভাগ বসায়, ওদের মলের মাধ্যমে আমাদের পরিবেশ নষ্ট করে, বিভিন্ন রোগ ছাড়ায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কাজেই এগুলো শিকার করে খেয়ে ফেলাই ভালো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ কথা সত্য নয়। আসলে পরিযায়ী পাখি তো আমাদের কোনো অপকার করেই না বরং প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ওরা আমাদের প্রভূত উপকার করে। যেমন- কৃষির ক্ষতিকারক পোকমাকড় দমনে সাহায্য করে, ময়লা-আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে, ওদের মল জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশ সূচক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও বর্তমানে এদেশের মানুষের মধ্যে পাখি পর্যবেক্ষণের হিড়িক পড়ে গেছে, যা অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনোদনমূলক বিষয়। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক পরিবেশ-পর্যটনের উন্নয়নে এটি সাহায্য করে যা বিলিয়ন ডলার শিল্প হয়ে উঠেছে। কাজেই ধীরে ধীরে এটি দেশের জন্য জৈব-অর্থনীতির সম্ভাব্য একটি উৎস হয়ে উঠছে। প্রতি বছর এদেশে যে সংখ্যক পরিযায়ী পাখি আসে সেগুলোর মধ্যে ৮টি মহাবিপন্ন, ৬টি বিপন্ন ও ৮টি সংকটাপন্ন প্রজাতি।

কাজেই এসব পাখিদের অতিথি না ভেবে আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত। এ কথা মনে রাখা উচিত যে, এসব পরিযায়ী পাখি শিকার করে ওদের সংখ্যা কমিয়ে দিলে কোনো কোনো মহাবিপন্ন পাখি, এমনকি এদেশ তথা গোটা বিশ্ব থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। আর তা নিশচয়ই আমাদের জন্য ভালো হবে না। কাজেই নিজেদের অস্তিত্বের জন্যই পরিযায়ী পাখি রক্ষায় সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

E-mail: [email protected], [email protected]

 

 

 

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

;