মহা নবমীর বিশেষত্ব ধুনুচি নাচ
শারদীয় দুর্গা উৎসবে মেতেছে দেশ। তিথি অনুযায়ী আশ্বিন মাসের দেবীপক্ষ অর্থাৎ, শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী সনাতন ধর্মীরা দুর্গাপূজা উদযাপন করে। বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এটিই সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। নানা আয়োজনে সারাদেশে পূজা উদযাপন করা হয়।
আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) পুজোর ৩য় দিন। দেখতে দেখতে মহাষ্টমী তিথি শেষ হয়ে সন্ধিক্ষণে সন্ধিপূজার মাধ্যমে নবমী তিথির সূচনা হয়েছে। নবমী বলতেই মনে আসে ধুনুচি নাচের কথা। সাধারণত মহানবমী তিথিতে পূজার পরে এই ধুনুচি নাচ নাচা হয়। দেবী দুর্গাকে ধুনুচি নাচ উৎসর্গ করা হয়। অনেক স্থানে দশমীতে প্রতিমা ভাসানের আগেও ধুনুচি নাচ করা হয়।
ঢাকের তালে দেবীর সামনে ধুনুচি হাতে নিয়ে সুশৃঙ্খলে করা হয় এই ধুনুচি নাচ। ধুনুচিতে নারকেলের খোসা জ্বালিয়ে তাতে ধুপ ছিটিয়ে তৈরি করা হয় ধোঁয়া। এক বা একাধিক ধুনুচি হাতে নিয়ে ঢাকের আওয়াজের আন্দোলনে নাচে মেতে ওঠে লাল-সাদা সাজে বাঙালি নারী-পুরুষ।
দুর্গাপূজা মানেই শিউলি ও কাশফুল, শরতের আকাশ, ঢাকের বাদ্য। তার সাথে উলুধ্বনি, ঘণ্টা ও শাঁখের আওয়াজ, আনন্দ উদযাপন এবং তার সাথে ধুনুচি নাচ। বাঙালির দুর্গাপূজার অতি প্রাচীন ঐতিহ্যসম্পন্ন ধুনুচি নাচ ছাড়া যেন পূজাই অসম্পন্ন। চণ্ডীপাঠ, দেবীর ব্র্রতকথা, অঞ্জলি প্রদান, আরতি, পূজা-অর্চনার মাধ্যমে দুর্গাপূজা করা হয়। তবে এসব তো পুজোর নিয়মের অংশ। পুজো মানেই আনন্দ উৎসব। তাই আনন্দ প্রকাশ করে দেবীর উদ্দেশ্যে সঙ্গীত আরাধনা, সিঁদুর খেলার পাশাপাশি ধুনুচি নাচ করারও প্রচলন রয়েছে।
এই ধুনুচি নাচের উল্লেখ পুরাণেও রয়েছে। ধারণা করা দেবী দুর্গা নিজেই ধুনুচি নাচ নেচেছিলেন। মহিষাসুরকে বধ করার আগে নিজের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি সঞ্চার করার জন্য দেবী ধুনুচি নাচ করেন। দেবীর প্রতি সমগ্র একাগ্রতা নিবেদন করতে আজও ভক্তরা ধুনুচি নাচ করেন। বিভিন্ন জায়গায় একক বা দলীয়ভাবে ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়।
সময়ের সাথে ধুনুচি নাচের প্রচলন কমে আসছে। তবে এখনো দুর্গাপুজো এলেই ছোট-বড় সকলে মিলে ধুনুচি নাচ নাচা হয়। কালের গর্ভে এই ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়, সেজন্য অবশ্যই ধুনুচি নাচের চর্চা বাড়ানো উচিত। এতে পুজোর আনন্দ দ্বিগুণ হয়। ধুনুচি নাচ ছাড়া দুর্গাপূজা যেন অসম্পূর্ণ।