কর্ণফুলীতে নৌকাডুবি, নিখোঁজ ৪



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে যাত্রীবাহী ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। রোববার (৭ এপ্রিল) রাত ৮ টায় এই ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ চারজনের মধ্যে মো.হানিফ (৩৫) ও আকবরের (৪০) বাড়ি ডাঙ্গারচর এলাকায়। অন্য দুই জনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় নৌকাটি কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ডাঙ্গারচরের ১৩ নম্বর ঘাট থেকে নগরীর সল্টগোলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। মাঝনদীতে আসার পর ঢেউয়ের ধাক্কায় ডুবে যায়। নৌকায় মাঝিমাল্লাসহ ১২ জন ছিলেন। নদীতে ভাসমান অন্যান্য নৌকা এসে সেখান থেকে আটজনকে উদ্ধার করেছে। বাকি চারজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।’

রাতে অন্ধকার হওয়ায় রাত ১০টার দিকে ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে সোমবার (৮ এপ্রিল) সকালে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু করবেন বলেও জানান জসিম উদ্দিন।

   

গরমে অনলাইন ক্লাসের আর্জি অভিভাবকদের



কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
গরমে অনলাইন ক্লাসের আর্জি অভিভাবকদের

গরমে অনলাইন ক্লাসের আর্জি অভিভাবকদের

  • Font increase
  • Font Decrease

তাপদাহের মধ্যে আবার শুরু হয়েছে স্কুল। সাত দিন বন্ধের পর রোববার (২৮ এপ্রিল) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতেই টেনশনে অভিভাবকগণ। তাদের আর্জি, বিরূপ আবহাওয়ায় স্কুল বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হোক।

নগরীর অনেক স্কুল গেটে অপেক্ষমাণ অভিভাবকরা বাড়ি না গিয়ে বসে আসেন। 'ক্লাসের সময় কমিয়ে দেওয়ায় বাচ্চাকে নেওয়ার জন্য বসে আছি। বাসায় গিয়ে আসতে আসতে স্কুল ছুটি হয়ে যাবে।' বললেন, রহমানিয়া স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।

চট্টগ্রামের প্রায় সব স্কুলের গেটে উদ্বিগ্ন অভিভাবকের ভিড় দেখা গেছে। পাবলিক স্কুলের মোড়ে জটলা করে অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। তাদের মতে, এই গরমে স্কুলে আসার সময় যানবাহনের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ঘাম ছুটেছে। বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ও একই ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হবে।

বেসরকারি চাকরিজীবী নূর আলম খোন্দকার বলেন, অভিভাবক হিসাবে আমরা চিন্তিত বাচ্চাদের পড়াশোনা ও শারীরিক নিরাপত্তার জন্য। স্কুল বন্ধ থাকলে তাদের ক্ষতি। আবার তীব্র গরমেও তাদের বিপদ হতে পারে। এজন্য সামনের কয়েকদিন স্কুল বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হলে সবদিক থেকে ভালো হয়।

মিসেস সুমাইয়া রহমাতুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস হলে স্কুল-কলেজে হতে অসুবিধা কোথায়? কোভিড মহামারিতে অনলাইনে ক্লাস হয়েছে। এখনও গরমের কারণে বিরূপ পরিস্থিতি চলছে। সবার কাছেই অনলাইনে ক্লাস করার মতো সুবিধা আছে। একে কাজে লাগিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতে পারে।

এদিকে, অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে এসে গরমে অসুস্থ হচ্ছে বলেও গণমাধ্যমের খবর। তেমনই একজন মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিকা রহমান। সকাল ৭টায় তার ক্লাস শুরু হয়ে ৯টা ৪০ মিনিটে ছুটি হয়েছে। ছুটি শেষে এই কোমলমতি শিক্ষার্থী বমি করে এবং কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে তাকে স্কুলে নিয়ে আসা অভিভাবক মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। যার কারণে বাসায় গিয়ে মেয়ের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আগামীকাল স্কুলে দেবেন কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনলাইনে ক্লাসের আর্জি অভিভাবকদের অনেকেরই।

;

বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি ক্যাবের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি ক্যাবের

বৃহত্তর চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি ক্যাবের

  • Font increase
  • Font Decrease

বৃহত্তর চট্টগ্রামে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

রোববার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে এ কর্মসূচি শুরুর ডাক দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বা অন্য যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই সরকারি দলের নেতা বা কর্মী। আর তারাই বিভিন্ন সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের জন্য জনগনকে বারবার জিম্মি করেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। সরকার দলীয় নেতা/কর্মী হিসাবে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যে সমস্ত মূল্যবান জীবন হারিয়ে যাচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ কি কোনভাবেই সম্ভব? অথচ তারা অদক্ষ চালক, লাইনেসন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ী চালানো বন্ধ করলে এঘটনার অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হতো। আর এই চিহ্নিত স্বার্থান্বেষী মহল গণপরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য সৃষ্টি, নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদবাজি অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে জিম্মি করে বারবার এ ধরণের ষডযন্ত্রমুলক কাজে জড়িত হলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেবার কারনে এ ধরনের ঘটনার পূনঃরাবৃত্তি ঘটছে। এই মহলটি জনগণের বহুল প্রত্যাশিত নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়ে আইন বাস্তাবায়নে বাধা দিচ্ছে।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রণোদনা দেবার কারনে তারা বারবার জনগনকে জিম্মি করে এ ধরনের অবৈধ ধর্মঘট ও কর্মবিরতি আহ্বানসহ আইন প্রয়োগে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে বারবার বাধা দিলেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পুরস্কার হিসাবে তাদেরকে মন্ত্রী, এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা বানাচ্ছে আর এ খাতে অন্যতম অংশীজন ভোক্তারা কোন প্রণোদনাতো দূরের কথা আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির সদস্যও হতে পারছে না। ফলে সড়কে নৈরাজ্য থামছে না। সড়ক পরিবহন খাতে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের বেলায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাই মিলে তাদের মতো করে যাবতীয় নীতি প্রণয়ন ও সবগুলি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারন জনগণকে। বিএরআটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করে প্রতিকার পাওয়া কঠিন, কারন সবকিছুর ওপর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরাই সবকিছুর ওপর রাজত্ব করছে। সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্য থামাতে হলে ভোক্তা ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সম অংশগ্রহন নিশ্চিত জরুরি।

গণপরিবহন সেক্টরে যেকোন দাবি-দাওয়া আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে ক্যাব নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, একশ্রেণীর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা আইন প্রয়োগের আগেই আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও ভীতি সৃষ্ঠি করে পরিবহন সেক্টর উত্যপ্ত করছে। দাবি আদায়ের নামে জনগনকে জিম্মি করে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দেশকে অচল করার ষড়যন্ত্র থেকে বেড়িয়ে এসে জরুরী ভিত্তিতে কর্মবিরতির নামে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন জানান, গণপরিবহন, শ্রমিক ও মালিকরা দেশের আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বারংবার দেশের জনগনকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার কারনে তারা বেপরোয়া হয়ে গণপরিবহনের লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়ী চালিয়ে মানুষ হত্যা করবে আর তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার করতে চাইলেই মানুষকে জিম্মি করে ঘর্মঘট ডাকবে এটা নিছক বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। তারা যদি আইনের শাসনে প্রতি বিশ্বাসী হয় তাহলে আইনগতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে কোন অন্যায় হয়ে থাকলে তার প্রতিকার চাইতে পারতো। একই সাথে নিরাপদ গণপরিবহনের দাবিতে চুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

এর আগে, গতকাল শনিবার দুপুরে এক জরুরী সভার শেষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে পরিবহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় রোববার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর জের ধরে ওইদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাকে ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণ পরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

;

রুমায় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কেএনএফের ২ সদস্য নিহত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বান্দরবান
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ২ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো ২ জনকে আটক করা হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে কেএনএফের ৬ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে বলে জানা গেছে।

রোববার (২৮ এপ্রিল) ভোরে রুমা উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের বাকত্লাই এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নিহতদের পরনে কেএনএফের পোশাক থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, মরদেহ দুটি কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যের। তবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ ঘটনার পর বর্তমানে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জানা গেছে, ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী তল্লাশি চালাচ্ছে।

পুলিশ জানায়, শনিবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে থানচি লিক্রে সড়কের বাকত্লাই এলাকায় দুর্গম পাহাড়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। সেখানে ছয় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের পর দু’জনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তল্লাশি চালিয়ে আরো দুই জনকে আটক করা হয়। তাদের বান্দরবান জেলা সদরে নিয়ে আসা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বান্দরবানে ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, মসজিদে হামলা, টাকা-অস্ত্র লুটের ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে বান্দরবান জুড়ে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান চলমান রয়েছে।

;

চট্টগ্রামে ধর্মঘটে চলছে না বাসের চাকা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ধর্মঘটের কারণে বাস না চলায় নগরীর চাক্তাই এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি। ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

ধর্মঘটের কারণে বাস না চলায় নগরীর চাক্তাই এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি। ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে পরিবহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনায় আজ রোববার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এই ধর্মঘটের কারণে শহর ছেড়ে যায়নি কোনো বাস। নগরীতেও ঘুরছে না বাসের চাকা। এই কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

দূরপাল্লার বাস না চলায় চাহিদা বেড়েছে প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার। আর এই সুযোগে চালকেরা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। একইভাবে নগরীতেও বাস চলাচল না করায় টেম্পো ও রিকশা নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বাস না চলায় এসব গাড়ির চালকেরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনাল বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পড়ে রয়েছে শত শত গাড়ি। টিকিট কাউন্টারগুলোও তালা দেওয়া। চালক ও সহকারীরা বিভিন্ন দোকান ও গাড়িতে বসে খোশগল্প এবং মুঠোফোনে লুডু খেলায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।

জানতে চাইলে চালকদের অনেকেই ধর্মঘট নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান। তবে কেউই পরিবহন নেতাদের ভয়ে নাম প্রকাশ করতে চাননি।

চট্টগ্রাম-বাঁশখালী রুটে চলাচল করা সুপার সার্ভিসের দুজন চালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে। পরিবহন নেতারা সেই সড়কে ধর্মঘটের ডাক দিতে পারতেন। কিন্তু ঢালাওভাবে পাঁচ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়ে যাত্রীদের যেমন ভোগান্তিতে ফেলেছেন, তেমনি আমাদের পেটেও লাথি মেরেছেন। কেননা গাড়ি চললেই তো আমাদের পেটে খাবার পড়ে, না চললে কে দেবে খাবার? পরিবহন মালিকেরা তো তার খবর রাখেন না।'

চট্টগ্রামে ধর্মঘটে চলছে না বাসের চাকা, ভোগান্তিতে যাত্রীরা। ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

এই টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের দক্ষিণের প্রায় সব জেলার পাশাপাশি উত্তরের কয়েকটি উপজেলায়ও গাড়ি যায়। প্রতিদিন অন্তত দশ হাজার যাত্রী এই টার্মিনাল হয়ে গন্তব্যে যান। কিন্তু গাড়ি না চলায় তারা পড়েছেন মহা ঝামেলায়।

এই টার্মিনাল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চান্দগাঁও থানা মোড় এলাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার বেশ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে। সেখানে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। চলছে না কোনো বাসই, তালা ঝুলছে কাউন্টারে-কাউন্টারে।

জানতে চাইলে মারচা নামের একটি পরিবহনের একজন চালক বলেন, ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। যাত্রীরা এসে তাই ফিরে যাচ্ছেন।

কক্সবাজারে যেতে এই স্টেশনে এসেছিলেন একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মী শাহাদাত হোসেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, কর্মস্থলে যোগ দিতে কক্সবাজার যেতে বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু স্টেশনে এসে দেখি কোনো গাড়িই চলছে না। বাধ্য হয়ে প্রাইভেটকারে দ্বিগুণ ভাড়ায় কক্সবাজার যেতে হচ্ছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে ঢোকার প্রধান প্রবেশমুখ চাক্তাইয়ের নতুন ব্রিজ এলাকা। বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায় মানুষদের প্রচুর ভিড়। বাস না চলায় কোনো প্রাইভেটকার আসলেই সেটি ঘিরে ধরছেন যাত্রীরা। সেই সুযোগে যেখানে আগে ১০০ টাকায় পটিয়া-চন্দনাইশের গন্তব্যে যাওয়া যেত সেই ভাড়া এখন দাবি করা হচ্ছে ২০০ টাকা।

কেন বেশি ভাড়া দাবি করছেন সেটি জানতে চাইলে মোহাম্মদ রশিদ নামের একজন প্রাইভেটকার চালক বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'ধর্মঘটে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে বেরিয়েছি। ধর্মঘটে গাড়ি চালানোর জন্য যে কোনো সময় হামলার শিকার হতে পারি। সেজন্য যাত্রীদের কাছ থেকে চেয়ে কিছু ভাড়া বেশি নিচ্ছি।'

বাস না চলায় কেউ কেউ ট্রাকে-পিক আপে চড়েও ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে ফিরছিলেন।

পরিবার নিয়ে চন্দনাইশে ফিরতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন রানী দাশ। তিনি বলেন, জরুরি বাড়ি যেতে হচ্ছিল। কিন্তু বাস না চলায় বিপদে পড়েছি। এখন বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় প্রাইভেটকারে যেতে হচ্ছে। আমাদের অপরাধটা কোথায় বুঝতেছি না।

একইভাবে উত্তর চট্টগ্রাম থেকে নগরীতে প্রবেশের তিন মুখ একেখান, অক্সিজেন ও কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায়ও যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। এই তিন স্টেশনেও দূরপাল্লার বাসের সব কাউন্টার বন্ধ। প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, ট্রাক-মানুষ যে যেভাবেই পারছে গন্তব্যে ফিরছে।

গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের এই ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে অবশ্য তিনটি পরিবহন সংগঠন ধর্মঘট প্রত্যাখানের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এই সংগঠগুলো টেম্পোজাতীয় পরিবহন সংশ্লিষ্ট। ফলে তাদের প্রত্যাখানে তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না।

গত সোমবার (২২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর জের ধরে ওইদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপরও ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে ২৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা গণ পরিবহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়।

;