কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১৩)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

মালুমঘাট থেকে পলায়ন

[পূর্বপ্রকাশের পর] বাংলাদেশের মালুমঘাটের মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতাল যতদিন থাকবে ততদিন বেকি ডেভি’র প্রথম ‘মেডিকেল ভুলের’ গল্পটি বলে যাওয়া হবে।

নার্সিং বিভাগের তূখোড় পরিচালকের সেই ঐতিহাসিক ভুলটি কী ছিল? যে-কোনোভাবেই হোক তিনি ডা. ডন কেচামকে একজন রোগীর কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, যার স্পষ্টতই একটা অপারেশনের দরকার ছিল। দেশি নার্সরা যখন এটা বুঝতে পারলেন এবং তার অপারেশন শুরু হলো, তখন রাত বাজে সোয়া নয়টা। সার্জারি থেকে ফিরে, দরজা খুলে ঘরে ঢুকে, ঘুমুতে ইচ্ছা হচ্ছিল না বলে, সে রেডিও খোলে—যা সে কালেভদ্রে করে থাকে। সে ভয়েস অভ আমেরিকাকে ধরতে পারে না সহজে, কেবল সোয়া এগারোটার খবর শেষ করার আগে-বলা সংবাদ শিরোনামের অংশটুকু শুনতে পারে। বেকি সেই সংবাদ সারাংশে শুনতে পায়: “এবারে মালুমঘাটে অবস্থানরত আমেরিকানদের জন্য একটি বিশেষ ঘোষণা। মার্কিন সরকার জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া আর সবাইকে অতি সত্বর সড়কপথে বার্মা সীমান্তের দিকে রওনা হতে জোরালোভাবে পরামর্শ দিচ্ছে। চট্টগ্রাম দিয়ে দেশত্যাগের পথ বন্ধ। আবারও বলছি: মার্কিন সরকার জোরালোভাবে ...”

বেশ কয়েকমাস বাদে রিড আমাদেরকে এই ঘোষণার প্রেক্ষাপটটি জানান।

“বিমানে করে দেশত্যাগ-করা দলটি চট্টগ্রামের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েছিল যে, তারা জোর দিয়ে বলে, ‘আমাদের সমস্ত লোক যেন দেশ ছেড়ে চলে যায়’।”

“আমাদের আতঙ্ক আরো বেড়ে গেল যখন জানলাম, শহর থেকে পঁচিশ মাইল দূরে চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত ব্রিটিশ ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালটিকে কোনোপ্রকার সতর্কবাণী ছাড়াই মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। তাদের কুষ্ঠরোগীর বিভাগটায় একটা কামানের গোলা এসে আঘাত করে এবং তাতে এক রোগী নিহত হয়। চন্দ্রঘোনার আবাসিকেরা নিশ্চিত ছিল যে, যথেষ্ট আগে থেকে সতর্কবার্তা না দিয়ে মিলিটারিরা সেখানে আক্রমণ করবে না। তারা অপাত্রে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল।”

“সেনারা হাসপাতালে এসেই প্রত্যেকটা শয্যা পরীক্ষা করে দেখছিল সেখানে কোনো আহত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে কিনা। হাসপাতালের কর্মীদেরকে ভয় দেখানোর জন্য তারা বেশ কজন বাঙালিকে হাসপাতাল ভবনের সামনে দাঁড় করিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে।”

“চট্টগ্রামে অবস্থানরত তাদের ব্রিগেডিয়ার সাহেব মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালের কর্মীদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে রাজি হলেন না। যদি মুক্তিবাহিনীর কোনো সদস্য হাসপাতালের আসে তাহলে তারা তক্ষুনি সেখানে অভিযান চালাবে।”

“এটা ছিল একেবারে ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দেওয়া একটা সংবাদ। এই খবরটা নিশ্চয়ই দ্রুততার সঙ্গেই মালুমঘাটে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের লোকেরা হয়তো হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছে এতক্ষণে। তাহলে এই খবরটা তাদেরকে কিভাবে পৌঁছানো যায়? চন্দ্রঘোনা আক্রমণের আগে কোনো সতর্কবার্তা পায়নি, মালুমঘাটও একই বিপদের মুখোমুখি। তাছাড়া সেখানে তখন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হারুন রয়েছেন!”

একটিই মাত্র উপায় রয়েছে—ভয়েস অভ আমেরিকা। তাদের সঙ্গে এমন ব্যবস্থা হয় যে, পরিস্থিতি দাবি করলে তারা আমাদের মিশনারিদের প্রতি যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাসমূহ সকাল সাতটা ও সন্ধ্যা সাতটায় তাদের কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করবে আমাদের উদ্দেশে। এখনই সেই সময়। অবশ্য ভয়েস অভ আমেরিকা মালুমঘাটের লোকদের এই মুহূর্তের বিপদ সম্পর্কে কিছু জানে না। ইউএস এইডের সেই কর্মকর্তা আর আমি দুজনে মাথা খাটিয়ে একটা বার্তা তৈরি করি। তখন বিকাল চারটা বাজে। বিস্ময়করভাবে, তিনি ঢাকায় যাওয়ার বিমান পেয়ে যান। তিনি এই বার্তাটি ভয়েস অভ আমেরিকাকে পাঠিয়ে দেন এবং তারা সেটি সেদিন রাতেই প্রচার করে দেয়।

বেকি দৌড়ে এসে সবাইকে এই খবরটা দেয়। আমরা ওয়াল্শের বাড়িতে জমায়েত হই এবং মধ্যরাতের খবর শুনি, কিন্তু তখন সেটাকে আর পুনরাবৃত্তি করা হয় না। আমাদের সমস্ত আলোচনার মধ্যে এই প্রথম আমরা সবাই সহমত হই যে, এই নির্দেশনা মেনে আমাদের বার্মার পথে রওনা দেওয়া উচিত। আমাদের অরণ্যকেন্দ্র হেব্রনে যাওয়ার পরিকল্পনাটিকে প্রত্যাখ্যান ও বাতিল করা হয়।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়, ডা. ওল্‌সেন এবং ডা. ডন কেচাম থাকবেন এবং বাকিরা (সব মিলিয়ে ২৯ জন) চলে যাবে। এটাকে দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত হিসেবে লিখে রাখা হয়। অন্যদের অনুপস্থিতিতে ভিক ওল্‌সেনকে ফিল্ড কাউন্সিল চেয়ারম্যান ও ডনকে সেক্রেটারি নির্বাচন করা হয়। ডিকুকেরা, যারা সদ্য তাঁদের প্রয়োজনীয় দুটো ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ে যোগ দেওয়া সম্পন্ন করেছেন, প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারেন।

সবাই বাড়ি ফিরে গোছগাছ করতে বসে। আশ্চর্যজনকভাবে, অন্যসময় রাত দশটা থেকে বারোটার মধ্যেই বিদ্যুৎ চলে গেলেও, সেদিন প্রায় ভোর চারটা পর্যন্ত থাকে এবং ততক্ষণে আমাদের গোছানো হয়ে যায় (এমনকি বারান্দার সেইসব পুরনো কাপড় পর্যন্ত)।

একুশে এপ্রিল , বুধবার
তৈরি হবার জন্য খুব ভোরেই উঠে পড়ি। কেউ কি ঘুমিয়েছিল? ‘ভোয়া’র সকাল সাতটার সংবাদেও একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করা হয়। আমরা ঢাকার ঐ ভদ্রলোকের সঙ্গে এমন একটা ব্যবস্থা করি যেন আমাদের জন্য সকল ঘোষণাই সকাল ৭টা কিংবা সন্ধ্যা ৭টায় প্রচার করা হয়। প্রথমবার যে-ঘোষণাটা রাত এগারোটায় দেওয়া হয়েছিল সেটা এর গুরুত্ব অনুধাবন করে। আমরা শেষ পর্যন্ত সকাল ৯টায় মালুমঘাট ছেড়ে যাই।

দেশি ভাইবোনেরা এতটাই মন খারাপ করেছিল যে, আমাদের বিদায় নিতে কষ্ট হয়েছিল খুব। কেউ কেউ অবশ্য বুঝেছিল, আমাদের যাওয়া উচিত, তবে তাদের মনে হচ্ছিল পৃথিবীর তলাটা বুঝি খসে পড়ে গেছে। তাদের এতজন প্রভুর চাইতেও মনে হয় আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিল বেশি। হয়তো ঈশ্বর আমাদের সরিয়ে নিয়েছিলেন তাদেরকে এটাই বোঝাতে যে, তাদেরও কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া উচিত। আমরা যতদিন এখানে থাকতাম তারাও থাকত। কেউ কেউ ধারণা দিয়েছিল, তারা হেব্রনের উদ্দেশে রওনা করবে। অন্যেরা বার্মা কিংবা ভারতে আশ্রয় নেবার কথা ভাবছিল।

একটা মন-ছুঁয়ে-যাওয়া মুহূর্ত ছিল যখন বাঙালিদের ক্রোধ থেকে আমাদের লুকিয়ে রাখা সেই পশ্চিম পাকিস্তানি দারোয়ান, বদ্ধ ঘরের পর্দা তুলে আমাদের চলে যাওয়া গাড়িগুলোকে বিদায়ী সালাম জানিয়েছিল।

আমাদের চট্টগ্রামের শরণার্থীদের এক কিশোর, বাবলার কথা আমি কোনোদিন ভুলব না। সে ঠিক জানত না কী করবে। সে কি একটা ছোট ছেলে যে, এগিয়ে এসে গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে বিদায়-বলা আমাকে ছুঁতে পারবে, নাকি সে এতটাই বড় হয়ে গেছে যে, তাকে দূরত্ব বজায় রেখে ভদ্র আচরণ করতে হবে? সামনের মাসগুলোতে আমরা জানতে পারব, বাবলা মোটেও কোনো ছোট ছেলে নয়, বরং একজন শক্তিশালী, সাহসী মানুষ।

আমরা তিনটা ল্যান্ডরোভারে যাত্রা করি। আমরা যখন পথে নামি তখন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল, কিন্তু টেকনাফ পৌঁছানো মাত্র মুষলধারে ঝরতে শুরু করে। ক্রন্দসী আকাশ যেন সেই সকালে আমাদের মনের অবস্থা ও আবেগেরই প্রতিচ্ছবি ছিল।

তবে মেঘ ও বৃষ্টি আবহাওয়াটাকে ঠান্ডা করে দিয়েছিল, তা নাহলে গাড়িতে ঠাসাঠাসি করা এতগুলো লোকের পক্ষে এই গরম সহ্য করা কঠিন হত।

এলিয়ানোর ওয়াল্‌শ বলেন, “প্রভু আমাদেরকে রাতের বিদ্যুৎ আর এই দিনের বেলার রোদের হাত থেকে আশ্রয় দিয়েছিলেন; আমাদের নিজস্ব অগ্নি ও মেঘের স্তম্ভ।”

কক্সবাজারের উপকণ্ঠে বার্মা যাবার রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যারিকেডটা আবার তালা দিয়ে আটকানো ছিল, আর তার চাবি যার কাছে ছিল তিনি তখন কক্সবাজার শহরে। জে সেটা আনতে গেলেন, আর ততক্ষণে আমরা একটা কফিবিরতি নিলাম। আমরা চিনির সন্ধান করছিলাম কিন্তু কোথাও চিনি পাওয়া গেল না। একজন দোকানি আমাদেরকে মাগনা কিছু দেশি গুড় এনে দেয়।

আমরা টেকনাফ যাওয়ার পথে বাইরে চমৎকার দৃশ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করি। টেকনাফে আমরা জোয়ার আসার জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করি যাতে করে সাম্পান ভাসতে পারে; সেই অবসরে বন্ধ দোকানের বারান্দায় বসে আমাদের ঝোলা খুলি। সেখান থেকে আমরা পর্ক ও শিমের বিচি, ভিয়েনার সসেজ, রুটি ও মধু-মাখন এবং সেই কে-রেশনের কিছু চকলেট ক্যান্ডি বার করে খাই।

পুরুষেরা সাম্পানে মাল তোলে, আর আমরা ঊনত্রিশজন সেই সাম্পানের খোলা তলদেশে পেতে রাখা বাঁশের বেঞ্চিতে বসে পড়ি। টেকনাফ থেকে ছয় মাইল দূরের মংদাউ যেতে নৌকাযাত্রায় দেড়ঘণ্টা লাগার কথা। আমরা খাঁড়ি ছেড়ে মূল নদীতে পড়ার সময় একটা সাইনবোর্ড দেখি যাতে লেখা, ‘টেকনাফ সীমান্তফাঁড়ি’।

ভালো বাতাস ছিল, তাই মাঝিরা পাল তোলার চেষ্টা করে। প্রথম চেষ্টায় একটা দড়ি ছিঁড়ে যায়, তবে গার্ল স্কাউট জোয়ান ওল্‌সেন সেগুলোকে গিঁট বেঁধে দেয় এবং দ্বিতীয় চেষ্টায় তারা সফল হয়। পাল তোলার পর দ্রুত এগুনো যায়, কিন্তু তারপরও সেটা অনেক লম্বা পথ ছিল। কয়েকবারই আমাদের বলা হয় মাথা নিচু করে বসে থাকতে, যাতে করে তীরবর্তী সীমান্তপ্রহরীরা আমাদের না দেখতে পায়। সন্ধ্যা নামলে তারা আমাদের একটু চুপ করতে বলে (অসম্ভব) যেন আমরা কোনো সন্দেহের উদ্রেক না করি। তাহলে মাঝিদেরকে আরো বড় অঙ্কের ঘুষ দিতে হবে।

মংদাউ তল্লাশি ফাঁড়ির ঘাটে আমরা ভিড়ি সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার দিকে এবং ছোট্ট আরেকটি সাম্পানের ছাদের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে লাফ দিয়ে পিচ্ছিল কাদাভরা তীরে অবতরণ করি। সবাই নিরাপদে নামতে সক্ষম হয়। তারপর আমরা আবিষ্কার করি যে, ওল্‌সেনের স্লাইডগুলো নৌভ্রমণের পুরো তিনঘণ্টাই ছিল সাম্পানের তলায় জমে থাকা পানির ভেতর। আমরা পানির ওপর একটি খোলা বাঁশের ঘরে গিয়ে জড়ো হই। বাচ্চাদের আমরা পিনাট বাটার, রুটি, কিসমিস ও পানি খাইয়ে দিই। একটা বড় কুকুরও এসে সেই ভোজে যোগ দিতে চাইছিল। শেষ পর্যন্ত তারা আমাদেরকে একটা ডাকবাংলোয় নিয়ে গেল।

সেখানে আমরা পুরো বিল্‌স পরিবারকে আবিষ্কার করি; তাদেরকে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল, রেঙ্গুন থেকে তাদের দেশ ছাড়ার ছাড়পত্র আসার অপেক্ষায়। তারা আমাদেরকে দেখে তেমন বিশেষভাবে বিস্মিত হয়নি। তারা যেন জানতোই যে, আমরাও এসে হাজির হব অচিরেই।

এখন তাহলে মোট চৌত্রিশজন হলাম আমরা। এই অতিথিনিবাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন, যারা রেঙ্গুনের ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করার কথা ভাবছিলেন। সেখানে মোট ছয়টা চারপেয়েসহ তিনখানা ঘর ছিল আমাদের সবার জন্য। পুরুষ ও ছেলেরা একটা ঘরে শুলো। মার্ক ওল্‌সেন তাঁর টেনিস শু’কে বালিশ বানিয়েছিলেন, আর জো ডিকুক এক তাড়া টয়লেট পেপারকে। রাতের মাঝখানে, মেল বিল্‌সের ঠান্ডা অনুভূত হলে তিনি একজোড়া দরজার পর্দা নামিয়ে নেন, তারপর গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ছোট্ট বাচ্চা ও তাদের মায়েরা এক ঘরে এবং বড় মেয়েরা আরেক ঘরে ছিল।

তেরো বছরের বেকি কেচাম ভেবেছিল মিলিটারিরা এসে তাকে অত্যাচার করছে। সে সারা রাত খালি বলতে থাকে, উফ, উফ! সকাল বেলা আবিষ্কার করে, সে আসলে গায়ে একটা অসমাপ্ত সেলাইয়ের কাপড় জড়িয়ে ছিল, যেটার গায়ে তখনও পিনগুলো লেগে ছিল। ভাগ্য ভালো সেখানে কোনো ইঁদুর কিংবা মশা ছিল না—এবং বাঁদুড়গুলো দরজার বাইরেই অবস্থান করছিল। প্রধান অসুবিধা, রাতটা খুব ঠান্ডা ছিল। [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১২)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১১)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১০)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;