কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১২)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

[পূর্ব প্রকাশের পর] “যেদিন আমি কয়েকজন মিশনারিকে জাহাজে নিয়ে গিয়েছিলাম,” রিড বলেন, “সেদিন ইউ এস এইডের একজনকে বন্দরের ডকের ওপর পাই। তিনি আমাকে জানান যে, কাপ্তাইয়ে বিদেশিরা আটকা পড়ে আছে। (সেখানে আমেরিকানরা একটা ড্যাম বানাচ্ছিল ১৯৬০-এর গোড়া থেকে।) তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি যেহেতু বাংলা বলেন না, কোনো বাঙালি তাঁকে সেখান পর্যন্ত সঙ্গ দিতে পারবে কিনা।

“এটা যদি হয় শুধু বাংলা বলার জন্য, তাহলে আমিই যেতে পারি আপনার সঙ্গে,” আমি স্বেচ্ছায় বলি।

“এইড এর ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। এই যাত্রায় বিপদের সম্ভাবনা দেখে আমি তাঁকে বলি দুজনে মিলে প্রার্থনা করতে।”

তাঁর জবাবটা আমার মনে আছে: “আবারও প্রার্থনা করাটা ভালো নিশ্চয়ই।”

প্রথম সমস্যা হচ্ছে গাড়ির জন্য পেট্রোল যোগাড় করা। পেট্রোল খুব কড়াকড়িভাবে রেশন করা হচ্ছিল। একমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যরাই কোনো স্টেশনে গিয়ে বলতে পারত, “এটাতে গ্যাস ভর্তি করে দাও।” একটা পেট্রল স্টেশনের খোঁজে আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই এবং দেখতে পাই যে, সব জায়গাতেই আগুন জ্বলছে।

কাপ্তাই যাওয়ার পথে রাস্তায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া বেতারকেন্দ্রটা দেখি। আর একশ গজের মধ্যেই আমরা একটা পাকিস্তানি ট্যাংকের দেখা পাই, যা কয়েক মিনিট আগেই আমাদের যাওয়ার পথের দিকে নিশানা করে গুলি ছুড়ছিল। রাস্তা জুড়ে কেবল সদ্য ছোড়া মর্টারের শেল। কুড়ি পঁচিশজন ব্যক্তিকে মাথার ওপর হাত তুলিয়ে রাস্তার নিচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্যাংকটা অতিক্রম করার পর, আমাদের দিকে তাক করা অস্ত্রের নলের আধিক্য দেখে আমরা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকি এবং সিদ্ধান্ত নিই, আমরা আর এগুব কিনা মিলিটারির কাছে তার অনুমতি চাইব। অফিসার আমাদের বলেন, “আমরা এখনো এই রাস্তা পরিষ্কারের অভিযানে আছি,” এই বলে তিনি আমাদেরকে বেতারকেন্দ্রের দিকে ফেরত পাঠিয়ে সেখানে আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে বললেন।

“শেষ পর্যন্ত অনুমতি যখন এলো, তখন আমাদেরকে বলা হলো তাড়াতাড়ি এই জায়গাটা পেরিয়ে যেতে,” “কেননা কখন আবার গুলি শুরু হবে আমরা জানি না। আরেকটা কথা, সন্ধ্যা হয়ে গেলে আর ফিরবেন না। সন্ধ্যার আগে আসতে না পারলে কাল সকালে ফিরবেন।”

“কাপ্তাইয়ে নানা দেশের নাগরিকরা উদ্ধার পাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা যখন তাঁদেরকে গাড়িতে তুলছিলাম তখন বুঝতে পারি, একটা আমেরিকান পরিবার সেখানেই থেকে যেতে চাইছে। আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে জানায় যে, তারা একটা পশ্চিম পাকিস্তানি পরিবারকে লুকিয়ে রেখেছে বাসায়, এবং জানতে চায়, আমরা তাদেরকে আমাদের বিছানাপত্রের বাক্সপ্যাটরার সঙ্গে লুকিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারব কিনা।”

“বাঙালিরা কাপ্তাইয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এবং এটা নিশ্চিত যে, বিদেশিরা চলে গেলেই এই পশ্চিম পাকিস্তানি নির্ঘাৎ মারা পড়বে। পশ্চিম পাকিস্তানি সম্প্রদায়েও আমাদের কিছু বন্ধু ছিল। আমি এই আমেরিকানের সঙ্গে সহমর্মিমতা বোধ করি। শত্রু লাইনের দুই দিকেই সবসময় কিছু ভালো লোক থাকে। আমি জানতাম একমাত্র একটি উপায়েই আমি বেঁচে থাকতে পারব; এতকিছুর মধ্যেও যদি আমি আমার সব আচরণ খোলামেলা ও স্বচ্ছ রাখি। কোনো অন্যায়ের অংশীদার হয়ে আমি নিজেদের মিশনারি ও দেশি বন্ধুদের সাহায্য করার সুযোগকে নষ্ট করতে পারি না।”

“আর কোনো উপায় না দেখে এই পরিবারটি তাদের বন্ধুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল।”

“বাঙালি সেনারা, যেহেতু জানতেন যে, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ছিল, তাঁরা কিছু কূটকৌশলের আন্দাজ করছিলেন। তাঁরা ঐ গাড়ি দুটোকে খুব কড়া তল্লাশি করেন। আমরা একটা ইঁদুরকেও সেখানে লুকিয়ে রাখতে পারতাম না।”

“পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কাপ্তাইয়ের দখল নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এইডের বন্ধুটি সেখানে ফেরত যান, রয়ে-যাওয়া আমেরিকান পরিারটির সাহায্যার্থে। তাঁরা সেই পাকিস্তানি অতিথি পরিবারটিকে সেনাবাহিনীর হাতে নিরাপদে তুলে দিয়ে পরিষ্কার বিবেকে কাপ্তাই ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু ততদিনে টেবিল উল্টে গেছে এবং তখন বাঙালিদেরই সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের একজন উঁচুপদের প্রকৌশলীকে যখন সেনারা জোর করে তুলে নিতে চায় তখন তাঁরা তাঁকে রক্ষা করার এক অসফল প্রচেষ্টায় প্রায় জীবনেরই ঝুঁকি নিয়ে বসেন। বন্দুকের নলের মুখে যখন তাঁদের দুজনকে আদেশ দেওয়া হয়, তখন তাঁরা ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হন। কয়েক সেকেন্ড পরে, তাঁদের বাড়ির মাত্র একশ গজ দূরে, একজন উন্মাদপ্রায় পাকিস্তানি মেজর হুকুম দিলে, সেই প্রকৌশলীকে গুলি করে রক্তধারার মধ্যে ফেলে রাখা হয়। তিনি তৎক্ষণাৎই মারা যান। এই বাঙালি প্রকৌশলী নিজে বেশ কয়েকটি পশ্চিম পাকিস্তানি পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করেন যখন তারা বিপদে পড়েছিল, কিন্তু ঘৃণায় উন্মত্ত এক মেজরের হাত থেকে কেউই তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি।”

রিডের দুশ্চিন্তাজাগানো প্রতিবেদন শোনার পর আমরা একটু সিরিয়াস হই এবং ঘরে গিয়ে আবারও ভাবতে বসি: আমরা কি থাকব, না কি দেশ ছাড়ব?

এপ্রিল ১৭, শনিবার

আমরা সকালবেলায় পুরো দলটার সঙ্গে মিলিত হই। গোল হয়ে বসে আমরা কে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা বাকিদের জানাই। এত কঠিন ও আত্মানুসন্ধানী সব সিদ্ধান্ত!

থাকা ও যাওয়ার ভালো মন্দ নিয়ে এক ঘণ্টা ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়।

লিন এবং আমি, এককভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ঈশ্বর চান আমরা থাকি এবং সময়টাকে সাধন করি: একেকটা বাড়তি দিন মানে ইতোমধ্যে প্রস্তুত বাংলা বাইবেলের পাণ্ডুলিপি ও নির্দেশিকা ব্যবহারের আরো কাছাকাছি চলে আসা। আমি বাড়িতে যেমনটি লিখেছিলাম: “আপনারা নিশ্চিত থাকেন যে, আমরা নায়ক কিংবা শহিদ হতে চাইছি না। আমাদের দেশত্যাগের একটা পরিকল্পনা রয়েছে, ঈশ্বর যে-ই বলবেন যাও, আমরা তক্ষুণি বেরিয়ে যাব। আমরা শুধু এখন পর্যন্ত সেই সবুজ সংকেতটি পাইনি।”

আমাদের দলের কেউ কেউ ভাবছিলেন যে, এই সমস্যাসঙ্কুল দিনগুলোতে ধর্মপ্রচারের কাজ তো ভালোই বিঘ্নিত হবে, তাহলে খামোখা এখানে থেকে গিয়ে, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি রসদের ক্রমে কমে আসা সরবরাহের অপচয় করা কেন?

আমাদের যাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরার বৈধ ভিসা ছিল না, তারা ভাবছিল একবার বেরিয়ে গেলে যদি আর ফিরতে না পারে।

আমরা শুনতে পাই যে, আমেরিকানদের সঙ্গে আওয়ামী নেতাদের এক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয় এর আগের রাতে। স্বদেশী সৈন্যরা খুব ভালোভাবেই কাজ করছিল। তারা জানত, তারা কিসের জন্য লড়াই করছে এবং তার পরিণাম কী হতে পারে। আমেরিকানরা পরিষ্কার করে দেয় যে, আমেরিকা কখনোই তাদের স্বীকৃতি দেবে না কিংবা সাহায্য করবে না। আওয়ামী নেতারাও খুব করুণ অবস্থায় ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িঘর ও বিষয়সম্পত্তি হারিয়েছেন: অনেকেই তাঁদের পরিবারের কোনো খোঁজও জানতেন না।

এপ্রিল ১৮, রবিবার

ইংরেজি প্রর্থনাসভার পর, কে কে যাবে আর কারা থাকবে সেটা নিয়ে আবারও পর্যালোচনা করা হয়। বিল্সরা সিদ্ধান্ত নেন যে, কেবল মার্জরি ও বাচ্চাদের দেশত্যাগের চাইতে তাঁরা গোটা পরিবারই বার্মার ভেতর দিয়ে গিয়ে পেনাংয়ে তাঁদের ছুটি কাটাবেন।

বিকেলে মটরসাইকেলে করে রিড আসেন। তিনি বলেন শহরের অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে: আইনহীনতার চূড়ান্ত, লুটতরাজ, মাঝেমধ্যেই গোলাগুলি—রীতিমতো খুবই উত্তেজনাকর পরিবেশ। তিনি এও বলেন যে, মালুমঘাটের এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কয়েকদিন থাকার পর তিনি ভাবছিলেন, আদৌ কি কোথাও যাবার দরকার আছে; কিন্তু চিটাগাংয়ে গিয়ে তিনি যা দেখলেন তাতে তাঁর মনে হয়েছে এখনই উপযুক্ত সময় দেশত্যাগ করার।

যারা চলে যাবার ছিল, তাদেরকে সবাই গোছগাছে সাহায্য করে।

লিন ও বেকি বাইবেলের একটা শ্লোককে মন্ত্রগুপ্তি হিসাবে নির্ধারণ করে, যা সবাই মনে রাখবে এবং সবার সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করবে।

অঙ্ক ১৬:৭ আমরা ফিরতে চাইছি কিন্তু পারছি না।

২ কিংস ৭:৭ তিনজন ছাড়া সব মিশনারিই দেশ ছেড়েছেন।

২ কিংস ৭:১০বি সবাই, এমনকি তিনজনও দেশ ছেড়েছেন।

২ কিংস ৪:২ খাবার ও অন্যান্য জিনিসের অভাব, দেশে ফেরাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না।

ইসাইয়াহ ৩০:১৫ সব ঠিক। ফিরে আসুন।

জেরেমিয়াহ ৪:১এ ফিরে আসুন। আপনাদেরকে প্রয়োজন।

জেনেসিস ২৮:২১ পশ্চিম পাকিস্তানি দল দেশে ফিরে যাচ্ছে।

অঙ্ক ২১:৪ এক্ষুণি ফিরে আসার দরকার নেই।

অঙ্ক ১৬:৩৬ মিলিটারি আমাদেরকে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এপ্রিল ১৯, সোমবার

বিমানে করে দেশত্যাগীদের দল, অ্যাডল্‌ফ পরিবার ও তাদের চার বাচ্চা, পাঁচ নারী মিশনারি সকাল আটটায় দুটো ল্যান্ডরোভারে করে রওনা দেয়; গাড়িগুলো চালাচ্ছিলেন ল্যারি গলিন ও মি. জো ডিকক। রিড তাঁর সাইকেলে করে আগে আগে যাচ্ছিলেন।

যাবার পথে তাঁরা একজন ব্রিটিশ নাগরিকের দেখা পান, যার চিকিৎসা নেবার জন্য মালুমঘাট হাসপাতালে আসার কথা ছিল। তিনি আর আসেননি, তাই আমরা ধরে নিয়েছিলাম তিনি হয়তো সেই উদ্ধারকারী জাহাজে করে দেশত্যাগ করেছেন। আসলে তিনি হাসপাতালে আসার পথে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি সাদা মুখগুলো দেখে কী যে খুশি হয়েছিলেন, এবং তিনি উদগ্রীবভাবে একটা গাড়িতে উঠে বসেন দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ইউনিয়ন জ্যাক লাগিয়ে একটি ব্রিটিশ গাড়ি তাঁরই সন্ধানে এদিকে আসছে। তিনি গাড়ি বদল করেন এবং তাঁর নিজদেশের পতাকার সুরক্ষায় সামনে যাত্রা করেন।

ভাঙা সেতুটি আমাদের লোকেরা হেঁটেই পার হন এবং ওপারে গিয়ে অপেক্ষমাণ গাড়িতে ওঠেন। তাঁরা দেখেন, যাদেরকে ইতোমধ্যে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের লাশগুলো সেখানেই পড়ে আছে। বিল্ডিংগুলোর গায়ে প্রচুর ছিদ্র জানান দিচ্ছিল যে, সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছে।

নিরাপদে চট্টগ্রাম পৌঁছে এই দলের সদস্যরা বিমানে করে ঢাকায় গেলেন; সেখান থেকে একদল পশ্চিম পাকিস্তানে এবং আরেক দল আমেরিকায় পাড়ি দিলেন। বিদায়-নেওয়া মিশনারিরা তাঁদের জিনিসপত্র গুছিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। তাই আমরা দিনটা কাটাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালিয়ে। কোনো কোনো পরিবার বাচ্চাদের পোশাকগুলো বাক্সে ভরে আমাকে ও লিনকে পাঠিয়ে দেন, আমরা যেন সেগুলো শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করে দিই। হাসপাতালের গুদামঘরে ড্রামের মধ্যে ভরে রাখা পুরনো কাপড়গুলোকে ঝাড়াই বাছাই করার কাজও ছিল। আমরা সেগুলোকে নার্সদের কোর্য়াটারে পাঠিয়ে দিই এবং দ্রুতই দেখতে পাই, আমাদের বারান্দায় সুন্দর করে সাজানো শার্ট, জুতা, পোশাক ও বাচ্চাদের কাপড়ের বান্ডিলগুলো ফেরত আসে।

এপ্রিল ২০, মঙ্গলবার

জে ওয়াল্শ ও জো ডিকুক বিল্স পরিবারকে টেকনাফ পর্যন্ত গাড়ি করে পৌঁছে দেন, যেখান থেকে তাঁরা বার্মা চলে যাবেন। ফেরার পথে এই দুই লোক নতুন ব্যারিকেডের দেখা পান, সেখানে হাসিবিহীন প্রহরীদের মুখ ও যাবতীয় আলামতই বলে দেয় যে, এই এলাকায় সামনে বিরাট যুদ্ধ হবে।

নতুন ‘আতঙ্ক পরিষদ’ মিলিত হয় সভায়। (পুরনো সদস্যরা সবাই চলে গেছে।) আমরা—ভিক ও জোয়ান ওল্সেন, ইলিয়ানোর ওয়াল্শ, এবং আমি—একটা কর্মসূচি প্রণয়ন করি, যেটাকে আমরা বলি, ‘গ্রামের আশ্রয়।’

সেনারা এলে, হাসপাতাল থেকে গুলির শব্দ শোনা যাওয়ামাত্র (মিশনারিদের বাড়ি থেকে আধা মাইল দূরে) সব নারী ও বাচ্চা একজন নির্দিষ্ট পুরুষ সদস্যের সঙ্গে কাছের গ্রামে, আমাদের বন্ধুদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে। আমরা খাবার, পানি, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং সময় কাটানোর মতো হালকা খেলার জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারব সঙ্গে। আমরা সেখানে বেশিদিন থাকার প্রত্যাশা করিনি।

তবে সেটা ছিল বেকি ডেভি তার ‘প্রথম ডাক্তারি ভুল’টি ঘটানোর আগে! [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১১)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১০)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;