কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈশ্বর কাউকে বলেন ‘থাকো’, কাউকে ‘যাও’

[পূর্ব প্রকাশের পর] মালুমঘাটের প্রথম দিনগুলোতে আমাদের আলোচনা একটি প্রশ্নকে ঘিরেই ঘুরপাক খেত, “আমরা কি এদেশ ছেড়ে চলে যাব, নাকি এখানেই থাকব?”

সবার আগে আসা সিদ্ধান্তটি ছিল, যাদের মিশনারিকর্মের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে, তারা জরুরি বিমান ধরে দেশে ফিরে যাবে। সেই দলে ছিল দুটি দম্পতি, পাঁচটি বাচ্চা ও দুজন অবিবাহিত তরুণী। শনিবার তাদের বিদায়ের দিন নির্ধারণ করে আমরা সবাই তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসি: কাপড় ধোয়া, ইস্ত্রি করা, চারবছরের জমানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। পরিকল্পনা ছিল আমাদের এই দলটি চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশিদের কাছে চলে যাবে এবং প্রথম বহির্গামী বিমান ধরে দেশত্যাগ করবে। রিড তাদেরকে গাড়ি চালিয়ে শহরে রেখে আসবেন। (বস্তুত শহরে ফেলে আসা আমাদের নিজেদের লোকদের কথা ভেবে তিনি নিজেই খুব আগ্রহী ছিলেন যেতে। এছাড়া, তাঁর জরুরি নির্গমন থলেটি আমার ও লিনের চেয়েও শীর্ণকায় ছিল; তিনি স্রেফ তাঁর শেভের জিনিসপত্র, একটি শার্ট ও বাইবেল—সবকিছুকে একসঙ্গে একটা লুঙ্গিতে বেঁধে নিয়ে চলে এসেছিলেন।)

শুক্রবার রাতে, এর পরদিন যারা চলে যাবে তাদের সম্মানে আমরা একটি বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। লোকজন যখন এর জন্য জমায়েত হচ্ছিল তখন এসে উপস্থিত হন সন্তোষ ভট্টাচার্য মহাশয়, যিনি আমাদের নবীন মিশনারিদেরকে বাংলা শেখাতেন। সন্তোষবাবুর বাসা, শহরে আমরা যেখানে থাকি তার কাছেই এবং তিনি নাকি সেখানে ঢুঁ মেরেছিলেন পরিস্থিতি পরখ করার জন্য। তাঁর সেখানে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা হয়: তাঁর সব টাকা চুরি হয়ে যায়, গুন্ডারা তাঁর হাত থেকে ঘড়ি খুলে রেখে দেয়, এবং তাঁর এক সহপাঠীকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে মেরে ফেলতেও দেখেন তিনি। চট্টগ্রামের প্রতিবেশী আমাদের তিনজনকে এই হাসপাতালে দেখতে পেয়ে তাঁর মুখে স্বস্তির হাসি ফোটে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় তিনি একবার এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে, কিন্তু পরে আর খবর নিতে আসতে পারেননি।

এপ্রিলের ৩ তারিখ, শনিবারের বিকালে আমরা একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, এমন সময় র‌্যাচেল ও বসু পরিবারের মেয়েরা দৌড়ে এসে খবর দেয় যে, মিস্টার ও মিসেস দাশ এসেছেন। আমরাও তৎক্ষণাৎ ওল্সেনের বাংলোয় গিয়ে দেখি সেখানে চট্টগ্রাম থেকে আগত এক বিশাল শরণার্থী-বাহিনী অপেক্ষমাণ। অন্য আরো অনেকে তখনও হাসপাতাল ভবনে। ডা: ওল্সেন ও আমি ওপরে উঠে আমাদের বাবলা, তার বাবামা ও ছোটবোনকে নিয়ে আসি। তাদের গল্পেও সেই একই পরিচিত সুর শোনা যেতে থাকে: গুলি উড়ে যাচ্ছিল মাথার ওপর দিয়ে, রাস্তায় লাশের সারি আর পাহাড়ের ওপর থেকে ভারি কামানের গোলা ছোড়া হচ্ছিল সারাক্ষণ। তারা যতক্ষণ পেরেছেন সেটা হজম করেছেন, তারপর আর না পেরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন এবং ঘোড়ার গাড়ি, নৌকা, বাস ইত্যাদি করে অবশেষে এই হাসপাতালে এসে পৌঁছেছেন। আমাদের চট্টগ্রামের শরণার্থীদলের কলেবর বেড়েই চলে।

পাম সানডে, ১৯৭১

আমরা নার্সদের হোস্টেলের লাউঞ্জে মিলিত হই তাঁরই প্রশংসায়, যিনি প্রভুর নাম ধরে আমাদের কাছে এসেছিলেন। সেদিনের প্রার্থনাসংগীতটি ছিল অতীব সুন্দর, কেননা আমাদের সবার গলা প্রভুর প্রশংসায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আমরা সবাই জীবন্ত ও নিরাপদ ছিলাম।

প্রার্থনাসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জে ওয়াল্শ বলেন, তিনি রেডিওতে শুনেছেন আগামীকাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ছাড়বে।

আমরা আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নেমে পড়ি। রিড আধাবেলা পার করে পথে নামতে চান না, তাই তিনি সবাইকে নির্দেশ দেন, যেন তারা খুব ভোর ভোর তৈরি হয়ে থাকে।

সেদিন বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ রিড, লিন ও আমি, এই তিনজন যখন চট্টগ্রামে আমাদের কী কী করণীয় আছে এই নিয়ে পরিকল্পনা পাকা করছিলাম, ঠিক তখনই ল্যারি গলিন দুম করে এসে ঘরে ঢোকেন।

“আমি এইমাত্র বিবিসিতে শুনলাম সেই জাহাজটি আগামীকাল সকাল আটটার সময় ছাড়বে। ফলে, যারা যারা দেশ ছাড়তে আগ্রহী তাদেরকে আজ রাতের মধ্যেই জাহাজে চড়তে হবে।”

রিড, যিনি কিনা একটু আগেই বলেছিলেন তিনি দিনের মাঝবেলায় রওনা দিতে চান না, (এবং সেটা সঙ্গত কারণেই), তিনিও তখন নড়েচড়ে বসলেন। গাড়িগুলোতে মালপত্র তোলা হয়, তাদের ওপর লাগানো হয় আমাদের সবচেয়ে বড় আমেরিকার পতাকাসমূহ, এবং সোয়া চারটার মধ্যেই তাঁরা পথে নামেন।

“প্রভু, দয়া করে সূর্যটাকে ধরে রাখুন,” এটাই ছিল তখন গোটা দলের একমাত্র প্রার্থনা। কিন্তু ঈশ্বরের অন্য পরিকল্পনা ছিল। ছোট ফক্সওয়াগনটার কিছু সমস্যা ছিল, তাই সেটাকে পথে সারিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রাম শহর থেকে ষোল মাইল দক্ষিণে পটিয়ার তল্লাশি চৌকিতে পৌঁছাতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল।

সেখানকার বাঙালি অফিসার তাদেরকে আর এগুতে বারণ করেন এই বলে যে, “আমরা আপনাদের পতাকাকে সম্মান করি, সম্ভবত ওপারের পাঞ্জাবিরাও তা করবে, কিন্তু যদি কোনো কারণে তারা সেটা দেখতে না পায়, তখন কী হবে?”

এই অফিসার তাদেরকে দুই রুমের একটি সরকারি বাংলোতে নিয়ে যান রাতটা কাটানোর জন্য এবং ডিম, ভাতের ব্যবস্থাও করে দেন রাতের খাবার বাবদ।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা আবার যাত্রা শুরু করেন। শহরের যত নিকটবর্তী হচ্ছিলেন তাঁরা, ততই লাশ আর পচনের গন্ধ প্রকট হয়ে উঠছিল চারপাশে। রিড পরে জানান, সঙ্গের বাচ্চারা রোদে শুকোতে দেওয়া শুটকির বোঁটকা গন্ধের সঙ্গে পরিচিত ছিল বলে তিনি হালকা বোধ করছিলেন। “এই বাজে গন্ধটা কিসের?”—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি তাদেরকে সহজেই শুটকি মাছের কথা বলে দিতে পারছিলেন, যা ছিল গ্রামীণ বাঙালির ভীষণ প্রিয় এক খাদ্য।

গাড়িগুলো বাঙালি-পাঞ্জাবি এলাকার সীমারেখা অতিক্রম করে নিরাপদেই, এবং তারপর বন্দরের উদ্দেশে দ্রুত ছুটে চলে খালি রাস্তা পেয়ে। প্রত্যেকের মনেই তখন একই প্রশ্ন, “আমরা কি বেশি দেরি করে ফেললাম? জাহাজ কি এতক্ষণে ছেড়ে দিল?”

“ওটা আছে! জাহাজটা এখনো আছে!”

ঈশ্বর তাদের প্রার্থনার গুণগত উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন; তিনি সূর্যকে আটকে না রেখে খোদ জাহাজটিকেই ধরে রেখেছিলেন—যেন তাঁর শেষ এগারজন যাত্রী এসে জাহাজে উঠতে পারেন। মোট ১১৯ জন বিদেশির মধ্যে ৩৭জন আমেরিকান নিয়ে সেদিন সকালে বন্দর ছেড়ে যায় ব্রিটিশ বাণিজ্যজাহাজ ক্ল্যান ম্যাকনেইর।

এরমধ্যে আরো ক’জন মানুষের আগমন ঘটে মালুমঘাটে, আশ্রয়ের আশায় : চিটাগাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারজন চিকিৎসক। নির্ভুলভাবেই এদের অন্তত দুজনের আগমনের ওপর ঈশ্বরের হাত ছিল। আমরা এটা বুঝতে পারি অনেক পরে, ডা: পিটার ম্যাকফিল্ডের গল্প শুনে। “অন্ততপক্ষে ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই দেশটা একটা ভীষণ সংকটের দিকে এগুচ্ছে। বন্ধুরা আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন সম্ভব হলে তখনই যেন দেশ ছাড়ি আমি। সত্যি বলতে কী আমার একটা সুযোগও এসেছিল, কারণ লিবিয়ায় একটা ফেলোশিপ করার জন্য নির্বাচিত ১৫০ জনের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমার এই নতুন চাকরি নিয়ে আমি উত্তেজিত ছিলাম এবং কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, কেন আমার মা মনে করছিলেন যে, সেটা ঈশ্বরের ইচ্ছা ছিল না। তিনি নিশ্চয়ই ঠিক ছিলেন, কেননা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা সত্ত্বেও আমি কিছুতেই দেশ ছাড়ার জন্য দরকারি পাসপোর্ট ও অন্যান্য ছাড়পত্র যোগাড় করতে পারছিলাম না।

“আমি পারিবারিক ক্রিসমাস উদ্‌যাপন সেরে কেবল ঢাকায় এসেছি, এমন সময় আমার ভাই ফোন করে জানান যে, আমার মা মারা গেছেন। পরে আমরা তাঁর মৃত্যুতেও ঈশ্বরের হাত দেখতে পাব। তিনি যন্ত্রণাহীনভাবে, প্রশান্তবদনে মৃত্যুকে বরণ করেছেন। তিনি যদি যুদ্ধের সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন, তাহলে খুব কষ্ট পেতেন, সেটা কেবল আমাদের জন্য দুশ্চিন্তা করেই নয়, তাঁর কঠিন হৃদরোগের অষুধপত্র কেনার অবধারিত সমস্যার কারণেও।”

“জানুয়ারির ২৮ তারিখ, সরকার আমাকে চিটাগাং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করে দেয়। এটা আমাদের জন্য একটু অসুবিধারই হয়েছিল, কেননা আমার স্ত্রী রেবা, মেডিকেলের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীটিকে তখন ১৭৫ মাইল দূরে ঢাকায় থাকতে হচ্ছিল একা। ফেব্রুয়ারি, মার্চ মাসের দিকে উত্তেজনা বাড়তে আরম্ভ করলে আমি রেবাকে চিটাগাং নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই, যা-ই ঘটুক দুজন অন্তত একসঙ্গে থাকব। রাজধানীতে যাবার অগণিত ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে মার্চের ১০ তারিখ আমি তার সঙ্গে মিলিত হতে পারি। মার্চের ২৮ তারিখ তার চূড়ান্ত পরীক্ষার তারিখ ঠিক ছিল। আমরা যখন ঢাকা ছাড়ি তখন তার মনের অবস্থা কেমন ছিল আমি আন্দাজ করতে পারি, কেননা তাকে তখন ডাক্তারি পড়ার শেষপর্বটুকু স্থগিত করতে হচ্ছিল, কে জানে কতদিনের জন্য।” [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৬)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৫)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৪)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;