কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১০)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈশ্বর কাউকে বলেন ‘থাকো’, কাউকে ‘যাও’

[পূর্ব প্রকাশের পর] “আমি হাসপাতালের কাজ চালিয়ে যেতে থাকি। আমার বিভাগ ছিল ক্যান্সার গবেষণা ও রেডিওথেরাপি, কিন্তু শহরে এরকম দাঙ্গাহাঙ্গামা ও হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে বন্দর এলাকায় সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসকে কেন্দ্র করে, চলতে থাকায় আমাকে অধিকাংশ সময়ই কাটাতে হচ্ছিল জরুরি বিভাগে।”

“২৬শে মার্চ রাতে ঘুমাতে যাবার সময় আমি রেবার কাছে স্বীকার করি যে, আমার খুব অস্থির ও বিষণ্ন লাগছে। আমি তাকে ব্যাখ্যা করে বলি, কাছেপিঠে কোথাও গুলির শব্দ পেলেই সে যেন বিছানা ছেড়ে মেঝেতে নেমে যায়। রাত দশটায় ঠিকই গোলাগুলি শুরু হলো।”

আমরা দুজন, এবং আমাদের পারিবারিক বন্ধু ও সাহায্যকারী, হামাগুড়ি দিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলের নিচে আশ্রয় নিই এবং বাকি রাত সেখানেই কাটাই। সকালে আমরা আমাদের বিপজ্জনক অবস্থানের কথা উপলব্ধি করি। একটা রাস্তার একেবারে শেষ মাথায়, সেনাছাউনি থেকে মাত্র দু’শ গজ দূরে আমাদের বাড়ির অবস্থান। দুই দিক থেকেই আসা বুলেটগুলো আমাদের মাথার ওপর, চারপাশ এমনকি বাড়ির ভেতর দিয়েও ছুটে যাচ্ছিল। আমরা যে-এলাকায় ছিলাম সেটি ছিল শহরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরের মোড়েই কমপক্ষে সাত হাজার লোককে নির্বিচারে মেরে ফেলা হয়েছিল। রাস্তার ধারের খোলা ড্রেনে গলেপচে যাবার জন্য ফেলে দেওয়া লাশের স্তূপ থেকে একজন আহত ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় তাকে পাওয়া গিয়েছিল ঘটনার কয়েকদিন পর।

“আমরা যেটুকু খাবার ও কাপড়চোপড় সঙ্গে নেওয়া সম্ভব নিয়ে মেডিকেল কলেজের উদ্দেশে রওনা দিই। আমরা তিনজন রেডিওথেরাপি বিভাগে আশ্রয় নিয়ে চারপাশটা একটু গুছিয়ে নিই। আমরা সেখানে তখনও পর্যন্ত রয়ে যাওয়া রোগীদের জন্য পরিবেশটাকে যতটা সম্ভব হাসপাতালতুল্য করে তুলি। নার্সদের প্রায় সবাই-ই চলে গিয়েছিল; কেবল পাঁচজন ডাক্তার তখনও ছিলেন। আমাদের কোনো খাবার, পানি কিংবা বিদ্যুৎ ছিল না। অষুধপত্রের কোনো অভাব ছিল না, অভাব ছিল কেবল সেগুলো প্রয়োগের জন্য দক্ষ মানুষগুলোর।”

আমি যতদিন বাঁচব, আমার চোখের দিকে কাতর চোখে চেয়ে থাকা এক বাবার মুখের অভিব্যক্তির কথা আমার মনে থাকবে। “আমি আপনাকে যত টাকা চান দেব”, তিনি দম না ফেলে বলেন। “শুধু আমার বাচ্চাগুলোকে বাঁচান।” তার পাশেই স্ট্রেচারে শোয়ানো ছিল তিনটি শিশু, এরই মধ্যে মৃত।

“একজন বৃদ্ধও মারা যাচ্ছিলেন। তিনি একটু পানি পান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পাঁচশ সিটের এই সাততলা হাসপাতালের কোথাও এক ফোঁটা পানি ছিল না তাঁকে দেওয়ার মতো। আমি রোগীর শিরায় ঢোকানোর জীবাণুমুক্ত তরলের বোতল খুলে তাঁর শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করি।”

“বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা সাহসের সঙ্গে চেষ্টা করে যাচ্ছিল পাহাড়চূড়ায় তাদের কৌশলগত অবস্থানগুলো ধরে রাখার জন্য। ২৮শে মার্চের রাতের বেলায় সব আলো নিভে যায়। সেই অন্ধকারের মধ্যে পাকিস্তানি সেনারা শহরে ঢুকে পড়ে জোরপূর্বক। কেউ কেউ এসেছিল সাঁজোয়া যানে চড়ে, বাকিরা ড্রেনের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে। ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদে সজ্জিত পাকিস্তানি সৈন্যদের বিপুল সংখ্যাধিক্যের কাছে হার মেনে বাঙালি সেনারা এক পর্যায়ে পশ্চাদাপসরণ করে।”

“আমার দেওয়া সদুপদেশ উপেক্ষা করে রেবা স্নান করার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। সিকি মাইল দূরে নার্সদের হোস্টেলে তখনও পানি ছিল। সে যখন স্নান করছিল ঠিক তখনই সেই দালানটিতে বেশ কিছু কামানের গোলা এসে আঘাত করে। পানির তোড়ের শব্দে এবং অনেকদিন বাদে পরিচ্ছন্ন হতে পারার আনন্দে রেবা সেই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়নি। অল্প যে-কটা মেয়ে ছিল সেখানে তারা পালানোর আগে রেবার বাথরুমের দরজায় আঘাত করে তাকে সচেতন করে। সে তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে দৌড়ে আসতে থাকে আমাদের কাছে। আমি তাকে হোঁচট খেয়ে জুতোজোড়া খুইয়ে পড়ে যেতে দেখলে, কোনোমতে খালি পায়েই তাকে টেনে নিয়ে আসি নিরাপদ আশ্রয়ে।”

বাঙালিদের প্রতিরোধ ভেঙে গেলে, পাকিস্তানি সেনারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একজন ক্যাপ্টেন একদিন হাসপাতালে এসে, কর্মচারীদেরকে বেদম মারপিট করে বলে, “আমি যদি এখানে কোনো গোলাবারুদ পাই তাহলে পুরো হাসপাতালটা উড়িয়ে দিয়ে প্রত্যেককে গুলি করে মারব।”

“আরেক ক্যাপ্টেন ওপরের তলায় গিয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে তার নিশানা পরীক্ষা করতে শুরু করে। তার দৃষ্টিসীমায় যে কোনো পথচারীকে দেখলেই তাকে মাটিতে শুয়ে পড়ার হুকুম দিত এবং তার পরপরই গর্জে উঠত তার অস্ত্র। আমিও যে কোনো দিন সেই প্রাণঘাতী হুকুম শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকি।”

৩১শে মার্চ হাসপাতালের এক প্রান্তে অবস্থিত ডাক্তারদের হোস্টেলে বসে আমরা খাচ্ছিলাম। হসপাতালের মূল লবিতে আসার পর আমরা ওপরতলায় বুটের লাথির শব্দ পাচ্ছিলাম।

হঠাৎ করে দেখি এক সেন্ট্রি আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। “আমরা এই বিল্ডিং থেকে গুলির শব্দ পেয়েছি। আমরা এ জায়গাটা ভালো করে তল্লাশি করে দেখব,” সে ব্যাখ্যা করে বলে।

“আমাদেরকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে নিয়ে একটা ব্যক্তিগত ঘরে আটকে রাখা হয়। আমরা কোনো অপরাধ করিনি, মাতৃভাষা ছাড়া আমাদের আর কোনো দোষ নেই। আমরা যে বাঙালি ছিলাম!”

“একজন ক্যাপ্টেন ও তার কিছু চেলা দুদ্দাড় করে এসে ঘরে ঢোকে। হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় তারা একজন বিহারি রোগীর দেখা পায়, যে-তাদের কাছে অভিযোগ করে, গত পাঁচদিন ধরে নাকি তার ব্যান্ডেজ বদল করা হয়নি। একজন উর্দুভাষী রোগীর সঙ্গে এরকম অশ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করার জন্য ক্যাপ্টেন সাহেব রাগে ফুঁসছিলেন। তিনি আমাদের দিকে তাঁর বন্দুক উঁচিয়ে ধরেন। তাঁর এক স্বদেশী, পশ্চিম পাকিস্তানের এক মেডিকেল শিক্ষার্থী, তাঁকে মিনতি করে বলে: ‘আমাদের হাসপাতালে মাত্র পাঁচজন ডাক্তার আছেন। তাঁরা হয়তো এমন সামান্য একটি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পাননি।’ ক্যাপ্টেন তার যুক্তিতে কান দেন না। বন্দুক উঁচু করে তিনি বলেন, ‘তোমাদের সবাইকেই মরতে হবে’।”

“ঠিক ঐ মুহূর্তে বারান্দায় পাহারারত এক সৈনিক দৌড়ে এসে চিৎকার করে বলে, ‘তাড়াতাড়ি আসুন, আমরা একজন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেনাকে দেখতে পেয়েছি।’ ক্যাপ্টেন তখন ঠিক একটা গুলির মতো ছিটকে গেলেন। তাঁর লোকেরাও তাঁকে অনুসরণ করল। (কেউ কেউ তক্ষুণি অভিযানে নেমে পড়তে চাইছিল, তবে অনেকেই বিকাল চারটার জলখাবারের জন্য সটকে পড়ার তালে ছিল।) হঠাৎ আমি লক্ষ করি যে, সবাই চলে গেছে। একজন সৈন্যও সেখানে ছিল না আমাদের পাহারা দেবার জন্য।”

“বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে আমরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে, বিল্ডিংয়ের বাইরে বেরিয়ে একটা অল্পব্যবহৃত ফটক গলে পড়ন্ত বিকেলের অন্ধকারে মিশে যাই। তারপর, তখনও মুক্তিবাহিনীর দখলে থাকা এলাকায় অবস্থিত আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা আর একবারের জন্যও থামিনি। তবে সেটা ছিল স্রেফ একরাতের বন্দোবস্ত। পরদিন ভোরে সিলভেস্টার, রেবা, আমি আর দুই মুসলিম ডাক্তার শহর ছেড়ে পালাই। আমার মাথায় ছিল, পটিয়া পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে সোজা ভারত চলে যাওয়ার চিন্তা। তখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিল। আমি এর আগে চিকিৎসা-ত্রাণের কাজ করেছি, নিশ্চয়ই সেখানকার কোনো শিবিরে আমি কাজ পেয়ে যাব। কিন্তু রেবা, যে-তখন তিন মাসের গর্ভবতী ছিল, যথেষ্ট ধকল পুইয়েছে এর মধ্যে। সে আর দৌড়ঝাঁপ করতে চাইল না।”

‘আমি আমাদের বাড়ির গির্জার একটি মেয়েকে চিনি, মালুমঘাট হাসপাতালে কাজ করে,’ রেবা বলে, ‘চলো আমরা সেখানেই যাই। তারা নিশ্চয়ই আমাদের ঢুকতে দেবে।’

“আমি একটু সংশয়ে ছিলাম, সেটা স্রেফ আমরা একেবারে আগন্তুক বলে নয়, আমার ‘খ্রিস্টান’ পরিচয়টা নিয়েও। অবশ্যই আমি খ্রিস্টান ছিলাম। খ্রিস্টান পরিবারেই আমার জন্ম। কিন্তু উচ্চশিক্ষা আমার দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দিয়েছে। আমি তখন ভাবতাম যে, আপনি বাইবেল পড়লে বাইবেলে বিশ্বাস করবেন, আর বিজ্ঞান পড়লে বিশ্বাস করবেন বিজ্ঞানেই। যারা মনে করেন বাইবেলই সত্য, তাঁদের ওখানে গিয়ে আশ্রয় নেবার ব্যাপারটা আমাকে তেমন টানেনি, কিন্তু আমি এও বুঝেছিলাম যে, রেবার ওপর আর চাপ দেওয়া যাবে না।”

“আমরা এপ্রিলের ৪ তারিখ, রবিবার শেষ বিকালে মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছাই। আমাদেরকে তাদের গ্রহণ করার ব্যাপারে দুশ্চিন্তার তেমন কিছু ছিল না। রেবা তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে, এবং বেকি ডেইভি, হাসপাতালের ম্যাট্রন, বাকিটা করেন। তিনি আমাদের থাকার জায়গারও ব্যবস্থা করেন। আমাদের গেরস্থালির প্রয়োজনগুলোও তিনিই মেটান। তিনি আমার স্ত্রীর জন্য শাড়ি, পেটিকোট ও জুতার বন্দোবস্ত করেন। তিনি একজন দারুণ মানুষ ছিলেন।”

“ধর্মীয় ব্যাপারগুলোতে আমরা দাশ পরিবারের সঙ্গে জোট বাঁধি। তাঁরা ঈশ্বর ও বাইবেল বিষয়ে তাঁদের সোজাসাপ্টা চিন্তাভাবনাসমূহ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেননি; তাঁরা খ্রিস্টের জীবন যাপন করতেন। আমাকে তাঁরা তাঁদের সঙ্গে প্রার্থনা করতে উৎসাহিত করতেন। আমি আন্তরিকভাবেই এই প্রার্থনা ব্যাপারটাকে একটু পরখ করে দেখতে চেয়েছিলাম। তিনি আসলে কে এবং তিনি ঠিক কতটা করতে পারেন, আমাদের জন্য সেটা প্রমাণের একটা সুযোগ আমি দিতে চেয়েছিলাম ঈশ্বরকে।”

ডা: পিটারের সঙ্গে আপনাদের আবারও দেখা হবে। [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৬)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৫)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;