করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চললেই জনগণের মঙ্গল হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, করোনা নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ নেই। এ দুর্যোগ বিশ্বজুড়ে। তাই সবাইকে নিজের ভালোর জন্য সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। এতেই নিজের, পরিবারের ও সমাজের মঙ্গল রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) রাতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ মাঠে কর্মহীন ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাণের মায়া সবারই আছে। করোনায় কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা ঠিকই ঝুঁকি নিয়ে জনসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। জাতীয় পার্টিও এ দুর্যোগে সরকারের পাশে থেকে কাজ করছে। এখন জনগণের দায়িত্ব নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব এবং সঙ্গরোধ মেনে ঘরে থাকা। এভাবেই নিয়ম মেনে করোনাকে মোকাবিলা করতে হবে।
গঙ্গাচড়ার নয়টি ইউনিয়নের ভ্যানচালক, অটোরিকশাচালক, দিনমজুর ও দুস্থ শ্রমিকদের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গা।
এ সময় গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, ভাইস চেয়ারম্যান সাজু আহমেদ লাল, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খতিবর রহমান, মহানগর জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি শাহিন হোসেন জাকির, রাঙ্গার মেয়ে তাসনিম মালিহা জুঁই, গঙ্গাচড়া উপজেলা জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি নুরুল হুদা নাহিদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালে বাসচালক ও হেলপারকে মারধরের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকেরা।
শনিবার (৪ মে) দুুপুরে নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে মাদারীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার জন্য একটি যাত্রীবাহী বাস অপেক্ষা করছিল। এসময় আটকে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল সাইড নিতে হর্ন দেয়। পরে বাস মালিক সমিতির কয়েকজন স্টাফ এসে বাসটি সরাতে বলে। তারপরেও বাসটি না সরানোয় মালিক সমিতির স্টাফরা ওই বাসের চালককে মারধর করে। এ ঘটনায় দুই শ্রমিক সৌরভ ও সাকিল মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে গেলে তাদের বেদম মারধর করা হয়। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে নেওয়ার পথে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের উদ্ধারের দাবিতে শ্রমিকরা একজোট হয়ে টার্মিনালে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং সড়ক অবরোধ করেন।
জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী কবির হোসেন বলেন, নতুন কমিটিকে নাজেহাল করতে তুচ্ছ ঘটনায় একটি মহল শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মো. ফারুক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের নরসিংহা এলাকার মোখলেস খানের জমিতে বোরো ধান কাটছিলেন জামাল ফরাজীসহ অন্যান্য শ্রমিকরা। এসময় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন জামাল। পরে তাকে উজিরপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
বোরো ধান কাটার সময় গরমে অসুস্থ হয়ে জামাল ফরাজীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাফর আহমেদ জানান, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
কালবৈশাখী ঝড়ের সময় পানির লাইনে কচুরিপনাসহ ময়লা ঢোকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) এর দুটি ইউনিটের স্ট্রীম টারবাইন অংশ বন্ধ রয়েছে। এতে অন্তত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।
শুক্রবার (৩ মে) রাতে কালবৈশাখী ঝড়েরর সময় এ ময়লা ঢোকার ঘটনা ঘটে। বন্ধ ইউনিট দুটি হল ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (নর্থ) এবং ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সাউথ)।
কারখানা কর্তৃপক্ষ পাইপ লাইনের ময়লা অপসারন শেষে ইউনিট দুটি চালুর চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত এগুলো চালু হয়নি। এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের চাপ সর্বনিন্ম পর্যায়ে থাকায় চলমান সব কটি ইউনিট রয়েছে উৎপাদন ঝুঁকিতে।
আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানি লিমিটেড এর কারিগরি বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে এপিএসসিএল এ প্রায় সাড়ে ১৬শ মেগাওয়াট (১৬৪৬) ক্ষমতা সম্পন্ন ৬টি ইউনিট থেকে ১৫‘শ ৭০ মেগাওয়াট (১৫৭০) বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ইউনিটগুলি হল-৫৩ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস ইঞ্জিন, ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ২০০ মেগাওয়াটের মডিউলার প্লান্ট, ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (নর্থ ), ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (সাউথ) এবং ৪০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট (ইষ্ট)। প্রতিটি কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে দুই প্রক্রিয়ায় (গ্যাস টারবাইন এবং স্ট্রীম টারবাইন ) বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এদিকে চলমান ইউনিটগুলির যন্ত্রপাতি ঠান্ডা রাখতে এবং কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের স্টিম টারবাইন চালু রাখতে মেঘনা নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে পানি নেয়া হয়।
শুক্রবার রাতে ঝড়ের সময় পাইপে কচুরিপনাসহ প্রচুর ময়লা ঢোকে। এতে পাম্প বন্ধ ও পাইপ লাইপ লাইনে পানি প্রবাহ ব্যাঘাত ঘটে। ফলে ৪৫০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের (নর্থ এবং সাউথ) স্ট্রীম টারবাইন অংশ বন্ধ হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ ময়লা পরিস্কার করে চালু করার চেষ্টা করলেও বিকেল পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে সন্ধা ও রাতের মধ্যেই ইউনিট দুটির স্ট্রীম টারবাইন অংশ চালু করা সম্ভব হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। এদিকে বর্তমানে কেন্দ্রে গ্যাসের চাপ সর্বনিন্ম পর্যায়ে (মাত্র ২৪ বার) থাকায় চলমান ইউনিটগুলিও উৎপাদন ঝুকিতে রয়েছে। কারণ এ নিচে আসলে ইউনিট চালু রাখা সম্ভব নয়।
আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানি লিমিটেড এর নির্বাহী পরিচালক (পরিচালন ও সংরক্ষণ) প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, পানির পাইপ লাইনে ময়লা ঢুকে দুটি প্লান্টের স্ট্রীম টারবাইন বন্ধ রয়েছে। রাতের মধ্যে দুটি টারবাইনই উৎপাদনে আসবে বলেও জানান তিনি।
সারাদেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, মানুষ যখন একটু স্বস্তি পেতে বৃষ্টির জন্য হাহুতাশ করছে, দেশজুড়ে চলছে ইসতিসকার নামাজ আদায়। তবুও এই মুহূর্তে বৃষ্টি চান না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড় এলাকার কৃষকরা।
মাঠে সোনালি ধান, হাওর ও বিল থেকে কেটে ঘরে তোলার পর বৃষ্টি এলেই ভালো হবে বলে মনে করছেন কৃষকরা। তাদের মতে আরো ৭ থেকে ১০দিন বৃষ্টি না আসলে তারা জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন। তবে দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কৃষকদের জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ১১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৯১ হেক্টর বেশী। আর এই জমি থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৩ মেট্টিক টন ।চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। এতে খুশি কৃষকরা। তবে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। জেলার বিভিন্ন হাওড়াঞ্চলসহ উজানে থাকা জমিতে গিয়ে দেখা যায়- তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আর কিষাণীরা ব্যস্ত কেটে আনা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। ঘাম ঝড়িয়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে না হয় আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবুও এই সময়ে বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি কিংবা বন্যার মত কোন দূর্যোগ চান না তারা।
নাসিরনগরের মেন্দি হাওড়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। এমন অবস্থায় বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি কিংবা বন্যা হলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়াও বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল এলে হাওড়াঞ্চলের নিচু এলাকার জমি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে ফসল তুলতে না পারা কৃষকরা বিপাকে পড়বেন। তাই সব মিলিয়ে রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই খুশি তারা।
নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিভিন্ন এলাকার হাওরের ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। উজানের কিছু ধানি জমি আছে এগুলো কাটতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময়টাতে বৃষ্টি না হলে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তিনি। যদি এর মধ্যে বৃষ্টি হয় তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
উপজেলার দাতমন্ডল গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়ারিশ বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি মওসুমে পাঁচ কানি জমিতে নতুন জাতের বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভাল। প্রতি কানি জমিতে ২১ মণ ধান হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কষ্টের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টি সবাই চাচ্ছে কিন্তু আরো কয়েকদিন পরে হলে আমাদের জন্য ভাল হয়। এমন রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ কয়েকটা দিন থাকলে নিরাপদে ফষলগুলো ঘরে তুলতে পারতাম। তাহলে আমাদের ফসল ঘরে তুলতে পারব। তীব্র গরমে ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায়না। যাদের পাচ্ছি তাদেরকে প্রতিদিন ৭শ টাকা করে দিয়ে ধান কাটাচ্ছি। কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে সামনে ঝড় বৃষ্টি আসতে পারে। তাই পাকা ধান দ্রুত কাটতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলতি মওসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকের কষ্টের ফসল যাতে কোন ঝামেলা ছাড়াই যাতে ঘরে তুলতে পারেন এই জন্য জেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সাথে উপজেলা কৃষি অফিসার, মাঠকর্মীসহ বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও প্রচারণার মাধ্যমে ৮০ ভাগ ধান পেকেছে এমন ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে হাওড়াঞ্চলের ৯১ ভাগ ধান কাটা শেষ আশা করছি ৯ তারিখের মধ্যে অবশিষ্ট ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। এছাড়াও উজানে যেসব জমি রয়েছে এরমধ্যে ৫১ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সেগুলো চলতি মে মাসের মধ্যেই কাটা শেষ হবে।