চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের এই কক্ষ থেকে ওই কক্ষের দরজায় দরজায় ঘুরছিলেন তাঁরা। সবার হাতেই ফাইলবন্দি এক গাদা কাগজ। দৌড়াদৌড়িতে সবাই ক্লান্ত, ঘেমেনেয়ে একাকার। তাঁরা সবাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর কার্যালয়ে আসায় তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ছিল দ্বাদশ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই দিন চট্টগ্রাম শহর অঞ্চলে পড়া ছয় আসনের প্রার্থীরা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় এবং উপজেলা পর্যায়ের আসনের প্রার্থীরা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কার্যালয়ে নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরে কার্যালয়ের জমা দিতে আসা প্রার্থীদের অনেকেই বড় বড় শোডাউন নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। এই দুটি কার্যালয় পড়েছে আদালতপাড়া এলাকায়। এমনিতেই জায়গাটি সবসময় লোকে লোকারণ্য থাকে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে আরও কয়েক হাজার মানুষ দিনভর হাঁটাচলা করায় সরু সড়কের এলাকাটিতে তিল ধারণের জায়গাও ছিল না।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিলেন বাসুদেব কুমার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক নারী। এক ঘণ্টা ধরে এই কক্ষ থেকে ওই কক্ষে ঘোরাঘুরি করতে করতে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
জানতে চাইলে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসুদেব কুমার বার্তা২৪.কমকে বলেন, এত এত পরিশ্রম করে এক সপ্তাহ ধরে আমরা কাগজপত্র সব গোছালাম। এত পরিমাণ জ্যাম আর শোডাউন, তাঁদের কারণে আমরা ভেতরেই ঢুকতে পারিনি। তিনটা ৫০ মিনিটে আমরা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের নিচে এলেও শোডাউনের কারণে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারিনি। কোনো সুযোগই ছিল না। অনেক কষ্টে ভেতরে ঢুকলেও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারিনি। কারণ বলে দেওয়া হয়, সময় শেষ। তারপরও এক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের অপরাধটা কী?
চট্টগ্রাম-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চান ওসমান গণি। তিনিও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। ক্ষুব্ধ হয়ে ওসমান গণি বলতে থাকেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় থেকে আদালত চত্বর পর্যন্ত পুরো পথে মানুষের সমাগমের কারণে বিভাগীয় কার্যালয়ে পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে যায়। সেজন্য চারটা পার হয়ে যায়। তখন কর্মকর্তারা বলেন, সময় পার হয়ে গেছে, আর নেওয়া যাবে না। কিছু সংসদ সদস্য এখানে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে এসেছে, তাঁদের কারণে আমরা ভুক্তভোগী হলাম।
মনোনয়ন দিতে না পারা অন্য তিন প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের রাশেদুল আমিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মিঠুন দাশ ও আকবর হোসেন কবি। তাঁদের মধ্যে রাশেদুল আমিন মনোনয়ন দিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর এক প্রতিনিধি।
ওই তরুণ বলেন, চট্টগ্রাম ১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাঁকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। একদিকে হরতাল অন্যদিকে শোডাউন-এই কারণে আমরা ঠিক সময়ে কার্যালয়ে পৌঁছাতে পারিনি।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনে বেশিরভাগ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীদের বেশিরভাগই আচরণবিধি ভেঙে শোডাউন দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। যার খেসারত দিতে হয় ছোট দলের প্রার্থীদের।
আচরণবিধি ভাঙার বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জমান বলেন, আমরা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদন ও ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করা হবে। কেউ যদি নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙেন তাহলে আইন অনুযায়ী তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।