মশারি নিয়ে মিছিল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
মশারি নিয়ে মিছিল/ছবি: বার্তা২৪.কম

মশারি নিয়ে মিছিল/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেট নগরে মশা নিধনে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে মশারি নিয়ে মিছিল করেছে সিলেট কল্যাণ সংস্থা।

মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুপুরে নগরের চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মশারি নিয়ে এই মিছিল শুরু হয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনে গিয়ে তা শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

পথসভায় বক্তারা বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন মশা নিধনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মশা নিধনের নামে দায়সারা কাজ হচ্ছে। গত একমাসে নগরে মশার উপদ্রব বেড়েছে। অথচ এখনো পুরো নগরে মশক নিধনে অভিযান শুরু হয়নি। আগামীতে ডেঙ্গু সিলেটে মহামারি ধারণ করতে পারে।

মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. এহছানুল হক তাহের, সহ-সভাপতি মাওলানা এস এম এ গণি আজাদ, সহ-সভাপতি ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মো. মুখলিছুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সাজু, অর্থ সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন চৌধুরী মিলাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবাদ উল্লাহ, সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. রমজান আহমদ সাকিল, সিনিয়র সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পিযুষ মোদক।

এদিকে মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১০টি ওয়ার্ডে মশক নিধনে অভিযান শুরু হয়েছে।

প্রায় দেড় কোটি টাকার ঔষধ এবার সিলেট নগরে ছিটানো হবে। নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে ১০ দিন করে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হবে বলেও জানান তিনি।

   

নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নেই মাসুদদের, নেই পর্যাপ্ত মজুরিও, শ্রম আইন স্রেফ ‘কাজির গরু’



জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় লন্ড্রি দোকানে কাজ করেন সিরাজগঞ্জের মাসুদ রহমান। এই দোকানে তার কর্মজীবন দীর্ঘ ১৬ বছরের। মালিকের বেশ আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। কাজ শুরু হয় সকাল ৮ টায়। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। মাঝখানে গোসলের আর দুপুরের খাবারের জন্য বিরতি পান ঘণ্টা খানেক। মাঝে মধ্যে লোডশেডিং হলে বন্ধ থাকে হাতের কাজ। এটুকুই যা ফুসরৎ।

তিন হাজার টাকার বেতনে চাকরি শুরু হলেও এখন বেতন পাচ্ছেন সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা। থাকা খাওয়া এই দোকানেই। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী ও এক সন্তান। থাকেন গ্রামের বাড়িতে।

মাসুদ রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, অভাবের সংসারে পড়ালেখা করা হয়নি। ছোট বেলায় বাবা মা মারা যান। ছোট ভাই বোনের দায়িত্ব নিতে ছোট বেলা ছুটে আসনের রাজধানীতে। এক আত্নীয়ের মাধ্যমে লন্ড্রির দোকানে চাকরি নেন। প্রথম অবস্থায় কাপড় পরিষ্কারের কাজ করলেও পরবর্তীতে আয়রন করাটাও রপ্ত করে নেন। আর কোনো কাজ শেখা হয়নি। ফলে ১৬ বছর ধরে দিনে ১৬ ঘণ্টা করে ভারী আয়রনে কাপড় ঘষার মাঝেই বন্দি জীবন।

অথচ শ্রম ও সময়ের তুলনায় মজুরি যৎসামান্য। মেলেনা প্রাপ্য পারিশ্রমিক। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলছে টানাটানির সংসার। এই করেই এক বোনকে সামান্য পড়াশোনা শেখাতে পেরেছেন। ছোট ভাইকে দাদনের মাধ্যমে লোন নিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছেন। বোনের বিয়ে দিয়েছেন, নিজেও পেতেছেন সংসার। হয়েছেন কন্যা সন্তানের জনক। তবে সন্তানের পিতৃত্ব উপভোগ করাক সুযোগটাই মেলে না।

মাসুদ বলেন, “পরিবারকে ঠিক মত সময় দেওয়া হয়না। কারণ সপ্তাহে সাতদিনই কাজ। দিনের বেশির ভাগ সময় কাজ থাকায় ফোনে কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে পারিনা। তিন চার মাস পর চার-পাঁচ দিনের ছুটিতে যাই গ্রামের বাড়িতে, এই যা!”


দেশে কলকারখানাগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শ্রম আইন মানা হলে পাড়া মহল্লার দোকান পাটে গড়ে তোলা ছোট খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানা হয়না মোটেই। ফলে অবহেলিত এই খাতের শ্রমিক শ্রেণি। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই নেই নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা। এসব দোকানে ঢোকার নির্দিষ্ট সময় থাকলেও বের হওয়ার নির্দিষ্ট কোন কোন সময় নেই।

লন্ড্রি দোকানের মাসুদের মত একই অবস্থা রাজধানীতে বিভিন্ন মুদি দোকান, ফার্মেসি, পাড়ার হোটেল , বাসার দারোয়ানদের। এই তালিকায় রয়েছে আরেক শ্রেণির শ্রমজীবি। তারা গৃহস্থলীর কাজে নিয়োজিত। বাসার বুয়া নামেই তাদের পরিচয়। তাদেরও নেই কোন সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার বালাই।

বনশ্রী আবাসিক এলাকায় একটি বড়িতে দারোয়ানের চাকরি করেন ৭০ ঊর্ধ্ব হারুনুর রশীদ। বললেন, “ফয়জরের আয়যানের সময় শুরু হইয়া রাইত ১২টা পর্যন্ত কাজ।”

সে হিসাবে দৈনিক ১৯ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ তার। নেই কোন সাপ্তাহিক ছুটি বা অতিরিক্ত শ্রমের জন্য কোনো ভাতা।

হারুনুর রশীদ বার্তা২৪.কমকে জানান, তিন বছর আগে এই বাসায় ১০ হাজার বেতনে চাকরি শুরু করেন। এ পর্যন্ত আর বেতন বাড়েনি।

মালিক বলছে বেতন বাড়বে না। এই বেতনেই কাজ করতে হবে। শুধু দুই ঈদে বোনাস ছাড়া আর কোন সুযোগ সুবিধা নেই।


মাসুদ ও হারুনের মতো একই অবস্থা রামপুরা এলাকার মুদি দোকানের সেলসম্যান সোহরাব হোসেনের। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে সাতটায় দোকানে আসা লাগে। দুপুরে এক ঘন্টার বিরতি দিয়ে রাতে দোকান বন্ধ হওয়া পর্যন্ত থাকা লাগে।”

মুদি দোকান হওয়ায় সপ্তাহে সাতদিন খোলা, সাতদিনই কাজ। ফলে চাইলেও পরিবারকে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না সোহরাবের পক্ষে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১০০ ধারায় বলা আছে, কোনও শ্রমিক প্রতিদিন আট ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। সপ্তাহে অন্তত একদিন ছুটি থাকতে হবে। আট ঘণ্টা কাজ করার জন্য নূন্যতম আধ ঘণ্টার বিরতি দিতে হবে। ১০৩ ধারা অনুযায়ী বিশেষ প্রয়োজনে কর্মচারীর মত নিয়ে বাড়তি সময়ের জন্য কাজ করানো যেতে পারে, তবে তার জন্য বাড়তি মজুরি দিতে হবে। বাড়তি কাজ রাতে করলে পরবর্তী দিন ছুটি দিতে হবে। বাড়তি মজুরির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ১০৮ ধারায়, সেখানে লেখা আছে-যে ক্ষেত্রে কোনও শ্রমিক কোনও প্রতিষ্ঠানে কোনও দিন বা সপ্তাহে এই আইনের অধীনে নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি অধিককাল কাজের জন্য তাহার মূল মজুরি অন্তর্বর্তী মজুরি থাকে, এর সাধারণ হারের দ্বিগুণ হারে ভাতা পাবেন।

এসবই মাসুদ, হারুন, সোহরাবদের কাছে স্রেফ ‘কাজির গরু’! কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই! 

;

উল্টে গেছে দিন-রাত, পাল্টায়নি জীবন



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমি এক যাযাবর।
পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর।
আমি এক যাযাবর।
আমি এক যাযাবর।
আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভল্গার রূপ দেখেছি।
অটোয়ার থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে প্যারিসের ধুলো মেখেছি।’

ভূপেন হাজারিকার গানের কথাগুলোর মতোই যেন কায়িক শ্রমিকদের জীবন। যারা ঘরের মায়া ছেড়ে পরিবার থেকে দূরে এসে দুমুঠো খাবারের সন্ধানে রাতকে করেছেন দিন। আর দিন করেছেন রাত। তবে শ্রমের গ্যাড়াকলে দিন-রাতের হিসেবটা পাল্টে গেলেও পাল্টায়নি এসব শ্রমজীবীর মানুষের জীবন। দিন-রাত খেটে মরলেও হয়নি সামান্য উন্নয়নের ভাগিদার।

বলা হচ্ছে- বালু ও কয়লা শ্রমিকদের কথা। ভূপেন হাজারিকার গানে প্যারিসের ধুলো মাখার কথা বলা হলেও এসব মানুষের কপালে জুটেছে গাবতলী ও আমিন বাজারের সংলগ্ন তুরাগ নদীতে গড়ে ওঠা কয়লা ও বালি ব্যবসার ধুলো। পরিশ্রমী এসব মানুষের শরীরের ঘামে কয়লা-বালির ব্যবসায় এসেছে প্রসরতা। যার সুবিধা ভোগ করছে বিত্তশালীরা। অন্যদিকে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’র মতো শ্রমিকদের অবস্থা।

তুরাগে সরজমিনে দেখা যায়, বাঁশ-পলিথিনের তৈরি অসংখ্য খুপড়ি ঘর। বেলা বেড়ে দুপুর গড়ালেও সেখানে প্রতিটি ঘরে শুয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শ্রমিকরা। কারণ এরাই রাতকে দিন বানিয়ে ভাগ্য বদলানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর।


তাদের মধ্যে মো. রানা হোসেন। আমিন বাজার ল্যান্ডিং স্টেশনে কাজ করেন। স্ত্রী ও ছেলে মিলিয়ে তিনজনের সংসার। বাবা-মা থাকেন গ্রামে। পরিবারের একটু সচ্ছলতার জন্য রাতে কাজ করেন তিনি। পাশাপাশি দিনের অর্ধবেলা ঘুমিয়ে বাকি অর্ধ বেলা করেন পানের দোকানদারি। আর নারী শ্রমিকরা করেন বিভিন্ন দোকানে পানি বয়ে দেওয়ার কাজ।

রানা হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, দিন দিন খরচ বাড়ছে। সবকিছুর দাম বাড়ছে কিন্তু আমাদের ইনকাম বাড়ছে না। এখন সবকিছুর যে দাম সারাদিন ইনকাম করেও একদিনের খরচ জোগানো অসম্ভব। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়। আবার নিজেদেরও বিভিন্ন খরচ থাকে। এই খরচ জোগার করতেই সারা রাত ঘাটে মাল আনলোডের কাজ করি। দিনের বেলা অধিকাংশ সময় ঘুমাই। আবার ঘুম থেকে উঠে একটা পানের দোকান আছে সেখানে বসি। বউও কাজ করে। বিভিন্ন দোকানে পানি টেনে দিয়ে সামান্য কিছু ইনকাম হয়। দুইজনের এই ইনকামের টাকায় সংসার চলে।

ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন আবির আহমেদ। প্রায় ৫ বছর ধরে কয়লা-বালি লোড আনলোডের কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে মা-বাবাসহ ৫ জনের পরিবার। আব্বা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেন। খুব বেশি টাকা ইনকাম করতে পারে না। আমি কাজ করে যে টাকা পাঠায় সেই টাকায় সংসার চলে। আমরা রাতের বেলা কাজ করি। রাতে এখান থেকে গাড়ি লোড হয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বালি পাঠানো হয়। তাছাড়া জাহাজ আসলে সেগুলো আনলোডও করতে হয়। সারা রাত জেগে কাজ করি আর দিনের বেলা অধিকাংশ সময় ঘুমা্ই।


আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ভোর থেকে কাজ শুরু করি। যতক্ষণ ক্লান্তি না আসে ততক্ষণ কাজ করতে থাকি। কাজ করলে টাকা পায়। না করলে না খেয়ে থাকতে হয়। আমাদের টালি গুণে টাকা দেয়।

শ্রমিকরা জানান, ৮ ঝুড়ি বালি টানলে ২০ টাকা পাওয়া যায়। আবার কোন সময় ৬ ঝুড়ি বালি টানলেও ২০ টাকা পান তারা। সারাদিন বালি টেনে যতগুলো ‘টালি’ হয় দিনশেষে সেই টালি গুণে টাকার হিসাব হয়। এই শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোন বেতন নেই, তেমনি কাজের সময়ও নির্ধারিত না।

‘কর্মক্ষেত্রে দিন ও রাতের কাজের আলাদা মজুরি হওয়া উচিত’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি (সম্পাদক নির্বাহী পরিষদ, বিলস) আবুল কালাম আজাদ। ‘দিনে এবং রাতে কাজের মজুরি পার্থক্য হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা দেয়া হয় না। এটা শোষণের আরেকটি নমুনা’- বলেন আজাদ।

‘দেশের প্রচলিত শ্রম আইন হচ্ছে, রাতে যাদের কাজ করানো হবে তাকে কোন ভাবে তার অনুমতি ছাড়া কাজ করাতে পারবে না। আর যদি রাতে কাজ করাতে হয় তাহলে তাকে ওভারটাইম হিসেবে মজুরি দিতে হয়। তার মানে আপনি দিনে ৮ ঘণ্টার কাজে যে মজুরি পান রাতে কাজ করলে সেই মজুরির দ্বিগুণ দিতে হবে। কিন্তু বর্তমানের কোন শ্রমিকদের দ্বিগুন মজুরি দেয়া হয় না।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটা মানুষের দিনের ঘুম আর রাতের ঘুমের পার্থক্য আছে। একজন শ্রমিকের ভালো থাকতে সুস্থ্য থাকতে রাতের ঘুম দরকার। কিন্তু সেটা তো আর হয় না। তাই রাতে কাজ করা শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি অবশ্যই দেয়া উচিত। আমার ধারণা মালিকপক্ষ সেটা করেন না। ফলে নিরুপায় হয়ে শ্রমিকরা এই মজুরিতে কাজ করেন।

;

মে দিবসে সকল মেহনতি মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

‘মহান মে দিবস’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, “বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন ‘মহান মে দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মেহনতি মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে রক্তাক্ত আন্দোলনে শ্রমিকের ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আত্মাহুতি দেওয়া বীর শ্রমিকদের প্রতিও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় শ্রম নীতি প্রণয়ন করেন এবং প্রথম মহান মে দিবসকে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন এবং নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি শ্রমিকদের মজুরির হার বৃদ্ধি এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের এডহক সাহায্য প্রদানের ঘোষণা দেন। তিনি পরিত্যক্ত কল-কারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেন। জাতির পিতার উদ্যোগে বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ২২ জুন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদস্যপদ লাভ করে।

আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে যে কোন শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। এ শিল্পের কর্মহীন এবং দুস্থ শ্রমিকদের সর্বোচ্চ তিন মাসের নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সকল সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা-২০১৩, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং কার্যক্রম আরো সুদৃঢ় হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণে আমরা শ্রম পরিদপ্তরকে সম্প্রতি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত করেছি। শ্রমিক ভাই-বোনদের যেকোন সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্প লাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক-মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হবেন। মে দিবসের চেতনায় দেশের শ্রমিক-মালিক ঐক্য জোরদার করে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো; এটাই হোক আমাদের মে দিবসের অঙ্গীকার।”
তিনি ‘মহান মে দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

 

 

;

নাটোরে আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নাটোরের লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার আজিমনগর রেলস্টেশন সংলগ্ন রবিউল ইসলাম কনফেকশনারী দোকানের সামনে প্রকাশ্যে পৌর আলীগের সহ-সভাপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জুকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু বাহাদিপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের সন্তান।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোপালপুর পৌরসভার আজিমনগর রেলস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে আজিমনগর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রবিউল ইসলাম কনফেকশনারির সামনে বসেছিলেন মঞ্জু। এসময় দুই মোটরসাইকেলে চার-পাঁচজন এসে মঞ্জুর মাথায় এবং পেটে গুলি করে দ্রুত সটকে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই মঞ্জু মারা যান।

উল্লেখ্য বিগত ২৮ নভেম্বর ২০১৮ সকালে নাটোরের নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস গেটে লালপুর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিরুল ইসলাম হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তিরা জানান। জাহিরুল মরার পরে দীর্ঘ ৪ বছর যাবত একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল।

এ ব্যাপারে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহমেদ জানান মরদেহ এখন পর্যন্ত তাদের পরিবারের কাছেই রয়েছে।ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কয়েকটি দল মাঠে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মঞ্জুর প্রতিপক্ষরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

;