ধর্মীয় অপপ্রচার মোকাবিলায় ওলামা লীগকে পাশে চায় আ.লীগ



রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দলের বিরুদ্ধে ওঠা যেকোনো ধর্মীয় অপবাদ ও অপপ্রচার মোকাবিলায় ওলামা লীগকে পাশে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে কাছে টানলেও বিতর্কিত মন্তব্যের ব্যাপারে সজাগ দলটি। আগের মতো যেন কোন বিতর্কিত কাণ্ডে না জড়ায় বা কোন বেফাঁস মন্তব্য না করে, সে জন্য বার বার সতর্ক করা হয়েছে সংগঠনটির নতুন কমিটিকে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত ওলামা লীগকে সক্রিয় করে আওয়ামী লীগ। আগের বিতর্কিত নেতৃত্ব বাদ দিয়ে নতুন নেতাদের মাধ্যমে সম্মেলন করে কমিটি দেয় ক্ষমতাসীন দলটি। গত বছর ২০ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সংগঠনটির প্রথম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত হয়ে তাদের এ স্বীকৃতি প্রদান করেন। তখন ওলামা লীগকে সংগঠিত করতে কাজ করেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

সম্মেলনের প্রায় এক মাস পর ১৫ জুন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষরে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। যেখানে সভাপতি করা হয় মাওলানা কে এম আব্দুল মমিন সিরাজীকে, আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. আমিনুল হককে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত সে কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, ওলামা লীগকে সমর্থন দেওয়ার পিছনে একটাই কারণ, ধর্মীয় কোন বিদ্বেষ যেন কেউ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে ছড়াতে না পারে। ক্ষমতাসীন দলটি চায়, তাদের পাশেও আলেম-ওলামাদের একটি অংশ থাকুক। যারা কেউ বিদ্বেষ ছড়াতে চাইলে তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলবে।

সূত্রটি জানায়, আওয়ামী লীগকে বিরোধী দলগুলো সবসময় মুসলিম বিদ্বেষী বলে তুলে ধরতে চায়। যার অতীত উদাহরণ অনেক আছে। বলা হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদগুলো সব মন্দির হয়ে যাবে, মসজিদে আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনি হবে। আরও নানান ধর্মীয় অপপ্রচার চালানো হয়েছে। যদি ওলামা লীগের ছায়াতলে আলেম-ওলামারা থাকেন, তাহলে তার উত্তর দেওয়া সহজ হবে।

নতুন প্রত্যাশায়, আওয়ামী লীগের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কমিটি গঠন হলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি দলটির। নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পরপরই আবারও বিভক্তির মুখে পড়ে সংগঠনটি। চলে অভিযোগ পালটা অভিযোগ।

সেসময় নতুন কমিটির ১৬ জনসহ মোট ৭১ জন নেতা বিবৃতি দিয়ে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ তুলেন। বিবৃতিতে নেতারা দাবি করেন, কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়ন করা হয়েছে, পুরাতন নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। ঘোষিত কমিটির প্রতিই সমর্থন বজায় রাখে দলটি। ফলে বিদ্রোহীরা চেষ্টা করলেও এগোতে পারেনি বেশিদূর।

এরইমধ্যে ওলামা লীগ প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয় গত ২০ মে। গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও ধর্ম সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সতর্ক করেন নেতাকর্মীদের। তিনি বলেন, 'ওলামা লীগে চাঁদাবাজের স্থান নেই। ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। আওয়ামী লীগের সাথে কাজ করতে হলে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলতে হবে। শেখ হাসিনার সৎ রাজনীতিকে অনুসরণ করতে হবে।'

এসময় তিনি দলটির নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'ওলামা লীগের ইতিহাস আমাদের জন্য খুব সুখকর। অতীতে যা দেখেছি কারও সঙ্গে কারো মিল নাই। নেতায়-নেতায় বিভেদ। দলের আদর্শ পরিপন্থী সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিতে দেখছি অনেককে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেউ এমন উচ্চারণ করবে এটা আমি আশা করি না। নেতায়-নেতায় বিভেদ আর চাই না। সত্যিকারের আলেম-ওলামা দিয়ে সংগঠন করতে হবে। কোন টাউট বাটপার যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।'

ওলামা লীগ নিয়ে যত বিতর্ক

ওলামা লীগ নিজেদের ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বলে দাবি করলেও আওয়ামী লীগ কখনো সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম বা সমমনা দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। বরং নানা সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানোর ফলে বরাবরই তাদের অস্বীকার করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি বিপিএল নিষিদ্ধ করা, সংখ্যালঘু আইন না করা ও দেশের সব এনজিও বন্ধসহ ১৩ দফা দাবি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। পরে একইদিন তখনকার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানায়, ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই।

এর আগে ২০১৭ সালের ২২ মে ওলামা লীগের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতির ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তৎকালীন ধর্মবিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানিয়েছিলেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ওলামা লীগের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। ইসলামি ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি নতুন সংগঠন গঠনের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে আলোচনা হলেও নতুন সংগঠনের উদ্যোগ সে সময় আর বেশি দূর এগোয়নি।

এছাড়াও দলটি বিভিন্ন সময় মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ, ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়নসহ শিক্ষা আইন বাতিলের মতো দাবি তুলে। যা নানা সমালোচনার জন্ম দেয়। বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় আওয়ামী লীগকেও। ফলে বরাবরই ওলামা লীগকে নিজেদের সহযোগী বা সমমনা দল হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায় আওয়ামী লীগ।

শুধু এটুকুতেই থেমে থাকেনি ওলামা লীগ বরং আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল সংগঠনটির পক্ষে থেকে পহেলা বৈশাখ পালন বন্ধ করার দাবি করা হয়। সেই সাথে পহেলা বৈশাখকে অপসংস্কৃতি আখ্যা দিয়ে দিবসটিতে রাষ্ট্রীয় সব রকম পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছিল।

ওলামা লীগের আওয়ামী লীগে প্রবেশ

আওয়ামী লীগ ২০১৯ সালে ওলামা লীগকে নিজেদের সহযোগী সংগঠন বলে অস্বীকৃতি জানালেও এরপর থেকেই দলটির নতুন নেতৃত্ব ও কিছু উচ্চাবিলাসী নেতা যোগাযোগ বাড়ায় তখনকার দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের সাথে। সেই অস্বীকৃতিই যেন পাথেয় হয় প্রায় ৫০ বছরের অস্বীকৃতির বঞ্চনা গোছানোর। পায় হাই কমান্ডের সবুজ ইঙ্গিত। তবে শর্ত একটাই, কোন বিভক্তি রাখা যাবে না দলে, অনুসরণ করতে হবে আওয়ামী লীগের মূল নীতিকে।

সেই শর্ত মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ওলামা লীগ। সেই সব বৈঠকে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বিভক্তি থেকে বের হয়ে সংগঠিত হওয়া ও আওয়ামী লীগের মূল নীতি মেনে চলা সাপেক্ষে ওলামা লীগের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও। ফলে বিতর্কিত নেতৃত্বের বিপরীতে নতুন নেতৃত্বের খোঁজে নামে আওয়ামী লীগ।

মূলত আজকের ওলামা লীগের স্বীকৃতি পাওয়ার পিছনে নির্ণায়কের ভূমিকা পালন করেন দলটির তখনকার দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। সংগঠনকে বিভক্তি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেন। বের করে আনেন নতুন নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন তিনি। ফলে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ২০ মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজে উপস্থিত থেকে দলটির সম্মেলন করেন। বেছে নেন নতুন নেতৃত্ব। মৌখিকভাবে স্বীকৃতি দেন সমমনা দল হিসেবে।

মৌখিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও সহযোগী না ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই বর্তমানে মৌখিক স্বীকৃতিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ওলামা লীগকে। এনিয়ে সংগঠনের সভাপতি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের এখনো কোন লেভেল দেওয়া হয়নি, আমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কাজ করে যাওয়ার জন্য। আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে মাত্র, আমাদের সহযোগী না ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন করবেন এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো জানেন।

নতুন করে কমিটি গঠন করতে না করতেই বিভক্তি দেখা দিয়েছে, নতুন করে আরেকটি পক্ষ কমিটি গঠন করেছে, এ-নিয়ে জানতে চাইলে ওলামা লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের অন্য কোন কমিটি নেই। আমাদের কমিটিকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়ে দিছেন।

নতুন কমিটির একবছর পূর্তি পালন করলেও এখনো কোন নির্দিষ্ট অফিস নেই ক্ষমতাসীনদের সহযোগী এই সংগঠনটির। এক বছরেও কেন কোন অফিস নেই জানতে চাইলে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, অফিস নিলে তো অনেক অফিসই নেওয়া যায়, কিন্তু আমরা চাচ্ছি ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর (২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়) সামনে অফিস নিতে।

ইতিহাসে ওলামা লীগ

ওলামা লীগকে আওয়ামী লীগ নানান সময়ে অস্বীকার করলেও ১৯৬৯ সাল থেকেই দলটি আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। মূলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গঠন হয় সংগঠনটি। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি আলেমরা এর বিরোধিতা করেন। সে সময় মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিন সায়ীদ জালালাবাদী (জালালাবাদী হুজুর) পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) অংশে এই ছয় দফাকে সমর্থন জানান। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠনের কথা বললে তিনি মাওলানা ওলিউর রহমান, মাওলানা বেলায়েত হোসেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ‘শরিয়তের দৃষ্টিতে ছয় দফা’ নামে প্রচারণায় নামেন। এরপর ১৯৬৯ সালে তারা আওয়ামী ওলামা পার্টি গঠন করেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর থমকে যায় সংগঠনটির কার্যক্রম। সে সময় নানা বিভক্তিও আসে। ধীরে ধীরে সংগঠনটির সব রকম কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুক্ত হতে শুরু করে আওয়ামী ওলামা লীগ। ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে নিজেদের কার্যক্রম। এমনকি ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত নানা আন্দোলন কর্মসূচিতে তারা সক্রিয় ছিল। তবে এরপর আবার শুরু হয় বিভক্তি। দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায় তারা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে ওলামা লীগের সঙ্গে দূরত্ব শুরু হয়। পরে বিভক্তি, নেতায়-নেতায় বিভেদ ও নানা বিতর্কিত কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করে। তবে সে অবস্থা থেকে বের করে এনে এখন আওয়ামী লীগের মতাদর্শে ঐক্যমত পোষণ করার ভিত্তিতে আবারও নিজেদের করে নিয়েছে।

ওলামা লীগ একটি সাম্প্রদায়িক দল ও আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক। অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের কেন সাম্প্রদায়িক ওলামা লীগের প্রয়োজন, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা বার্তা২৪.কমকে বলেন, এটা আমার ব্যাপার নয়, এটার ব্যাখ্যা দিতে পারবেন একমাত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব। ইনারাই করছেন, ইনারাই জানেন।

তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। আমি সকল ধর্মের জন্যই সহায়ক হিসেবে কাজ করি। সবাই যেন সঠিকভাবে ধর্ম পালন করতে পারে, সেখানে যদি দলের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা দিতে হয় সেই কাজটা আমি করি। এর বাইরে কিছু নয়।

   

রাজধানীতে বর্জ্য অপসারণে ব্যস্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহায় রাজধানীর দুই সিটিতে কয়েক লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। পশু জবাই ও কাটা-কাটিতে সৃষ্ট বর্জ্য পরিষ্কারে কাজ করছেন কয়েক হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী। সকাল থেকে মাঠে রয়েছেন তারা।

সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন সকাল সাতটা থেকে রাজধানীতে পশু কোরবানি শুরু হয়। এরপর থেকে মাঠে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। সঙ্গে থাকে আধুনিক ভেকু ও ট্রাক। ফলে দ্রুতই সরে যাচ্ছে বর্জ্য।

আবহাওয়ার তথ্য বলছে, ঈদের দিন রাজধানীর তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে অনুভূত হচ্ছে ৪৪ ডিগ্রী পর্যন্ত। তীব্র গরম উপেক্ষা করে সিটি করপোরেশনের হাজারো পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের একাংশ ঝাড়ু দিয়ে সড়কের ময়লা একত্রিত করে নিচ্ছেন। আরেক দল একত্রিত করা ময়লা সংগ্রহ করে নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আরেকটি দল শুধু কুরবানির পশুর বর্জ্য সংগ্রহ করছেন। সব কিছু এক জায়গায় নিয়ে আসার পর বড় গাড়ির মাধ্যমে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডাম্পিং স্টেশনে।

ভেকু দিয়ে সরানো হচ্ছে কুরবানির বর্জ্য

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করেন মোহাম্মদ সবুজ। তিনি বলেন, 'আমরা সকাল থেকেই কাজ করতাছি। দুপুরের আগে সব ময়লা ক্লিয়ার করমু। গরম অনেক, একটু কষ্ট তো হইতাছে।'

একই তথ্য জানিয়েছেন আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোহাম্মদ রায়হান। তিনি বলেন, 'গরমে কাজ করার অভ্যাস আমগো আছে। আজকে তো তাড়াতাড়ি কাজ শ্যাষ করা লাগবো। স্যাররা আগেই কইয়া দিছে। সব ঈদেই এমন হয়।'

পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ঈদের দিনের মতো ঈদের পর আরও দুইদিন একইভাবে ঘাম ঝড়াতে হবে তাদের। কারণ রাজধানীতে টানা তিনদিন পশু কুরবানি হয়। তবে মূল চাপটা আজই।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টায় নয় মাত্র ৬ ঘণ্টায় তার সিটির অলিগলিসহ সকল সড়ক পরিষ্কার করা হবে। নতুন সময় বেঁধে না দিলেও পূর্ব নির্ধারিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ সিটির কোরবানি বর্জ্য পরিষ্কারের কথা জানিয়েছেন মেয়র ফজলে নুর তাপস।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানির ঈদে দুই সিটি করপোরেশন ৪০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য সরানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। এ জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর হাজারের উপর যানবাহন ও যন্ত্রপাতি। এ জন্য কেনা হয়েছে নতুন নতুন যন্ত্রও।

;

বৃষ্টিতে ভিজে ঈদের নামাজ আদায় করলেন সিসিক মেয়র



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারী বৃষ্টিতে ভিজে মুসল্লিদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ পড়লেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

সোমবার (১৭ জুন) সকাল ৮টায় সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন তিনি। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি ছিল কম।

দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাসহ দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য এই জামাতে মুসল্লিরা দোয়া করেন। এরপর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

জামাতে ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন বন্দরবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি আবু হোরায়রা নোমান।

এদিকে, ঈদের জামাত শেষ করে নগর ভবনে সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখায় কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে সকালের নাস্তা করেন এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কাজের সূচনা করেন তিনি।

অপরদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের ট্রাকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও দ্রুত কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারের জন্যে ১৬০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাঠে রয়েছেন। যেকোনো প্রয়োজনে নগর ভবনে সরাসরি কিংবা হটলাইন নাম্বারে ( ০১৯৫৮২৮৪৮০৭) যোগাযোগ করার জন্য বলা হয়েছে।

;

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না: জিএম কাদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় দেশের অধিকাংশ মানুষ পশু কোরবানি দিতে পারছেন না। ঈদ উৎসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। বৃত্তশালীদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

সোমবার (১৭ জুন) সকালে রংপুর জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মিলে যদি উৎসব পালন করতে পারি, সেটাই হবে সত্যিকারের উৎসব। আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে, সামাজিকভাবে এবং দেশের সব মানুষ যেন সমানভাবে উৎসব উদযাপন করতে পারে সেজন্য সবারই দায়িত্ব আছে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলাউদ্দিন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

দেশ যেন সুন্দরভাবে চলে এই প্রত্যাশায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশটি যেন সুন্দর ও ভালোভাবে চলে। সামনের দিকে যেসব অসহায় গরিব মানুষ আছে তারা যেন সচ্ছলতা ফিরে পায়। আবার যেন আমরা সম্মিলিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে পারি,আল্লাহর কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা।

সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গে শঙ্কা প্রকাশ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সেন্টমার্টিনের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন।মিয়ানমার বাহিনী কতটুকু অগ্রসর হলে আমরা মনে করবো তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করছে, এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমাদের লোকজন সেখানে (সেন্টমার্টিন) যেতে পারছে না, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেও পারছে না। আমাদের উচিত আমাদের শক্তি নিয়ে দাঁড়ানো। তাদেরকে (মিয়ানমার) সেটি বুঝিয়ে দেওয়া অন্যকিছু করে তারা পার পাবে না।

পরে তিনি রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে গিয়ে তার মা-বাবা এবং দর্শনা পল্লীনিবাসে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন।

;

বগুড়ায় কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে ধ্বস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বগুড়ায় কোরবানীর পশুর চামড়ার বাজারে এবারও ধ্বস নেমেছে। গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে। আর ছাগল এবং ভেড়ার চামড়া কেউ কিনছেই না। অপরদিকে চামড়া ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা বলছেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের পাওনা ৩২ কোটি টাকা বকেয়া থাকায় এবার তারা চামড়া কেনায় টাকা বিনিয়োগ করেননি।

সোমবার (১৭ জুন) বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বগুড়া সদরের ঘোলাগাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, তার ৯০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া সকাল ১০টার দিকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বেশি দামে চামড়া বিক্রির আশায় গ্রামের অন্যান্যরা চামড়া বিক্রিতে দেরি করছিলেন। কিন্তু বেলা বাড়লেও চামড়া কিনতে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের (ফড়িয়া) কেউ না আসায় ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় তারা চামড়া বিক্রি করেন।

বগুড়া শহরতলীর বড়িয়া গ্রামের রমজান আলী বলেন, কোরবানি দেয়ার পর তার তিনটি গরুর চামড়া কেউ কিনতে না আসায় দুপুরে শহরে এসে ২০০ টাকা দরে তিনটি চামড়া ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর গ্রামের হুমায়ুন কবির মামুন বলেন, ১ লাখ ১৭ হাজার টাকার গরু কোরবানির পর চামড়া দাম ৮০০ টাকা বললেও দুপুরের পর কেউ চামড়া কিনতেই আসছে না।

বগুড়া শহরের থানা রোডে চামড়া কিনতে বসেছেন অনেকেই। তাদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে আসছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন মহল্লার লোকজন।

তারাও গরুর চামড়া ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় কিনছেন। ছাগল এবং ভেড়ার চামড়া তারা কিনছেন না। যারা ছাগল কিংবা ভেড়ার চামড়া নিয়ে আসছেন তারা বাধ্য হয়ে রেখে চলে যাচ্ছেন। কেউ ছাগলের চামড়া ১০/২০ টাকা পেলেও বেশির ভাগ লোকজন বিনামূল্যে চামড়া দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী আয়েত আলী, আব্দুস সাত্তার, জমসেদ আলী বলেন, স্থানীয় আড়তে চামড়ার কোনো দাম নির্ধারণ করা হয়নি, এছাড়াও আড়ৎ থেকে চামড়া কেনার কোনো টার্গেট দেয়া হয়নি। যার কারণে তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন না। তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে চামড়া কিনে লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।

তারা বলেন, নিখুঁত এবং বড় চামড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত কেনা হচ্ছে। ছোট এবং বিভিন্ন সমস্যা আছে এমন চামড়া ২০০ টাকা থেকে দরদাম করে কেনা হচ্ছে।

বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভপতি আসাদুজ্জামান খান বলেন, ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে- ঢাকায় ট্যানারিতে ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা বকেয়া পরিশোধ না করা হলে চামড়া কেনা সম্ভব নয়। বগুড়ার ব্যবসায়ীদের আগে থেকেই ২২ কোটি এবং গত এক বছরে ১০ কোটি মিলিয়ে ৩২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সেই টাকা না পাওয়ায় পাড়া-মহল্লায় যেসব ফরিয়া ও মৌসুমী ব্যবসায়ী থাকেন তাদের কাছে আগাম কোনো টাকা দেওয়া যায়নি। নগদ টাকা না থাকায় অনেকেই চামড়া কেনা থেকে বিরত আছেন।

তিনি বলেন, এটার একটা সুরাহা হওয়া দরকার। বছরের পর বছর টাকা বকেয়া থাকার কারণে এই শিল্পটা হুমকির মুখে পড়ছে। গরুর চামড়া তা-ও প্রক্রিয়া করে একমাস রাখা সম্ভব, কিন্তু ছাগলের চামড়া বেশি দিন রাখা যায় না। এ কারণে অনেক এলাকায় ছাগলের চামড়া কেউ কিনছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

;