ফেনী সরকারি কলেজে গণ ইফতার কর্মসূচিতে হামলা, আহত ৮



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ফেনী সরকারি কলেজে গণ ইফতার কর্মসূচিতে হামলা, আহত ৮

ফেনী সরকারি কলেজে গণ ইফতার কর্মসূচিতে হামলা, আহত ৮

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনী সরকারি কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আয়োজনে গণ-ইফতার কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে ফেনী সরকারি কলেজের বিবিএ'র শিক্ষার্থী আলী আহম্মদ ফোরকান, বিএসসির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম, এমরান হোসেন এবং গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল মোহাইমিন আজিমসহ ৭ থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকালে সরকারি পাইলট হাই স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের বিষয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গণ ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করে ফেনী সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী। এ নিয়ে বিগত কিছুদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ইফতার কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান আয়োজকরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী এদিন ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মসজিদে আসর নামাজ শেষে শিক্ষার্থীরা মাঠে জড়ো হতে থাকে। খবর পেয়ে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি নোমান হাবিবের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের জড়ো হওয়ার কারণ জানতে চায়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহমেদ তপু। তখন ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্রিকেট ব্যাট ও স্ট্যাম্প দিয়ে তাদের পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে আজিমকে কলেজের একটি কক্ষে আটকে রেখে অন্যদের বের করে দেওয়া হয়। ইফতারের আগে শিক্ষার্থীরা আবারও কলেজ গেইটে এলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

আবদুল মোহাইমিন আজিম নামে আহত শিক্ষার্থী বলেন, ইফতারে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা অপরাধে তারা ক্রিকেট ব্যাট ও স্ট্যাম্প দিয়ে হামলা করেছে। আমাকে আটকে রাখার আধঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে। একটি মুসলিম দেশে এসব ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

ফোরকান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের বাধায় ইফতার মাহফিল পণ্ড হয়ে যায়। তাদের হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তারা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান হাবিব বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শিবিরের নেতাকর্মীরা কলেজে ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গণ-ইফতার নামে একটি আয়োজন দেখতে পাই। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় তাদের কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর ইফতার আয়োজনের কোন কিছুই দেখিনি। একজন মুসলিম হিসেবে ইফতারে বাধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। কলেজ মাঠে শিবির ও অন্যান্য সংগঠনের কিছু পরিচিত মুখ ছিলো। তাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এমনটা হতে পারে। এখানে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার বিষয়টি একদম ভিত্তিহীন।

ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু গিয়ে কাউকে পায়নি। এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। এ ঘটনায় পুলিশি তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

 

   

কক্সবাজারে র‍্যাব-ডাকাতের গোলাগুলিতে কৃষক নিহত



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজারের ভারুয়াখালীতে র‍্যাব-ডাকাতের গোলাগুলিতে বায়াত উল্লাহ নামের এক কৃষক নিহত হয়েছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মুরা পাড়ায় এঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বেসরকারি সংস্থা প্রত্যাশীর এনজিও কর্মী মাসুদ চৌধুরী আজ বিকেলে অপহরণের স্বীকার হয়। বিষয়টি র‍্যাব জানতে পেরে ভারুয়াখালীর ৯ নং ওয়ার্ড মুরা পাড়ায় এলাকার পাহাড়ে র‍্যাব অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে ডাকাতরা। এসময় এক পর্যায়ে একজন নিরীহ কৃষক গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

নিহত বায়াত উল্লাহর ভাই করিম উল্লাহ জানান, শেরে বাহিনীর প্রধান ডাকাত ফরহাদ-মোস্তক এঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আমাদের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা বাজারে আসলে সবার মোবাইল ফোনের ভিডিও ক্যামেরা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতো।

এঘটনায় এনজিও কর্মী মাসুদ চৌধুরীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছে র‍্যাব। এসময় ডাকাত ফরহাদকে আটক করেছে বলে র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে।

;

আমার ধারণাই ছিল না যে নড়াইল এত সমৃদ্ধ: সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নড়াইল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেছেন, নড়াইল হলো মাশরাফি ও আপনাদের এবং আজকে আমার মনে হচ্ছে নড়াইল আমারও। আজকে থেকে নড়াইলের প্রতিটা কাজ আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে দেখব। আমার আসলেই ধারণা ছিল না যে নড়াইল এত সমৃদ্ধ।

তিনি বলেন, নড়াইল মাশরাফির এলাকা। নড়াইলের বাতিঘর আমার ছোট ভাই মাশরাফি। মাশরাফি যা চাইবে, আমি সেটা করে দিব।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানে ৯৯ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে আয়োজিত ১৫ দিনব্যাপী সুলতান মেলার সমাপনী ও সুলতান পদক প্রদান অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানের কাছে নিজ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের আবদার করেন। তারই প্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, মাশরাফি যেমন একজন স্বচ্ছ, পরিষ্কার মনের মানুষ। আমরা দেখতে চাই, নড়াইলের প্রতিটা মানুষ যেন ঠিক মাশরাফির মত। নড়াইলবাসীর মধ্যে যেন বিভেদ না থাকে। তারা যেন প্রত্যেকে মাশরাফির সাথে হাতে হাতে রেখে নড়াইলের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত হয়।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, নড়াইল হলো মাশরাফি, আপনাদের এবং আজকে আমার মনে হচ্ছে নড়াইল আমারও। আজকে থেকে নড়াইলের প্রতিটা কাজ আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে দেখব। আমার আসলেই ধারণা ছিল না যে নড়াইল এত সমৃদ্ধ।

বক্তব্য শেষে প্রতিমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সুলতান মেলায় আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনী উপভোগ করেন। এরপর এস এম সুলতান কমপ্লেক্স, বাঁধাঘাটসহ নড়াইলের বিভিন্ন ঐতিহ্য ঘুরে ঘুরে দেখেন। এর আগে চিত্রশিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভীর হাতে সুলতান পদক ২০২৩ তুলে দেন।

এসময় জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসার খান শাহাবুদ্দিনসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

;

চোখের অপারেশন শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেল ৬ জনের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকায় সকাল সাড়ে ১১ টায় বাস-মাইক্রোর মুখামুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ৫ জনসহ এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে ২ জন মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আরো ৪ জন। এনিয়ে সড়ক দুর্ঘটনাটিতে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ জনে। এসময় বাঁশখালীর ৬ জনসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে বলেও জানা যায়।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁওয়ের খোদাইবাড়ি এজি লুৎফুর কবির আদর্শ দাখিল মাদ্রাসা এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

ডুলাহাজারা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. মোজাম্মেল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

নিহতরা হলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউপির ইলশা গ্রামের মনির আহমেদের স্ত্রী হাফসা বেগম, খানখানাবাদ ইউপির কুফিয়া ডোংরা গ্রামের গোলাম সোবহানের ছেলে মো. দুলা মিয়া, বাহারছড়া ৭ নং ওয়ার্ডের ইলশা পুরাতন গ্রামের মৃত মফিজুর রহমানের ছেলে আবু আহমদ, পশ্চিম ইলশার মৃত মাহবুবুল আলমের স্ত্রী মাহমুদা বেগম, ডোংরা চৌকিদার বাড়ির আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী সায়রা খাতুন।অপরজনের নাম, পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতদের মধ্যে সায়রা খাতুন এবং মাহমদা খাতুন পরস্পর মা-মেয়ে বলে জানান স্বজনরা।

এই ঘটনায় আহতরা হলেন- বাহারছড়া ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত আকমল মিয়ার ছেলে আব্দুল মান্নান, একই ইউপির দক্ষিণ ইলশা ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত আবু ছালেকের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, খানখানাবাদ ইউপির ৪ নং ওয়ার্ডের মৃত দুদু মিয়ার ছেলে আব্দুর রশিদ, কাথরিয়া ২ নং ওয়ার্ডের মাতব্বর বাড়ির তৈয়ব আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম, ৩ নং ওয়ার্ড বাগমারা গ্রামের আবুল খাইয়েরের ছেলে রফিক আহমদ, একই এলাকার আব্দুল কায়ুম প্র. কাইয়ুম মিয়ার ছেলে নুরুল হোসেনসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

নিহতরা চোখের চিকিৎসা করাতে শুক্রবার কক্সবাজার বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে এসে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।

বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহিম সিকদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বাঁশখালীর সাবের আহমদ মাস্টার স্মৃতি সংস্থা এবং বাঁচাও এর উদ্যোগে বিনামূল্যে গরীব দুস্থ মানুষের চোখের চিকিৎসা করে থাকেন। এবারও ২১৫ জনের বিনামূল্যে ছানি অপারেশন করা হচ্ছে। কক্সবাজারের বাইতুশ শরফ হাসপাতালে অপারেশন করানো হয়। একদম শেষ পর্যায়ের অপারেশন করে ফেরার পথে আমার এলাকার পাঁচ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এটা খুবই মর্মান্তিক।

নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ডুলাহাজারা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. মোজাম্মেল হক।

;

পায়ে হেঁটে দুই বিল পাড়ি দিয়ে পানি আনেন তারা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘দুই বিল পাড়ি দিয়ে এক কলস পুকুরের পানি আনতি যাই। হাইটে যাতি প্রায় ১ ঘন্টা লাগে। এক বিল পাড়ি দিয়ে পথের মধ্যে একটু খানি জিরাই। তারপর আবার কলসি কাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। প্রত্যেকদিন এক কলস পানি আনতে গিলি প্রায় দু’ঘন্টা সময় লাগে। এতো কষ্ট করে পানি আনার পরও ওই পানিতে শেওলার গন্ধ থাকে। শীতের সময় থেকে বর্ষাকাল আসা পর্যন্ত এভাবে আমাগের পানি আনতি হয়।’ কথাগুলো বলছিলেন খুলনা কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের কলাপাতা গ্রামের ছবি রানী সরদার।

শুধু ছবি রানী নয়, এ গ্রামের ১২০টি পরিবারেরই একই চিত্র এটি। তারা প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে বিছানা ছাড়ে। সকাল ৭টার মধ্যে সকালের এবং দুপুরের রান্না, খাওয়া সেরে কাজে বের হতে হয়। এ গ্রামের প্রতিটি ঘরের নারী এবং পুরুষেরা সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে অন্যের ঘেরে কাজ করেন। দুপুর ১টায় কাজ শেষে করে বাড়ি ফিরে সংসারের কিছু কাজ গুছিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করে আবার বের হতে হয় খাবার পানি আনার জন্য। বিকাল ৪টার দিকে ওই রোদের মধ্যে কলসি নিয়ে দুই বিল পাড়ি দিয়ে যেতে হয় কলাপাতা গ্রাম থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে বামিয়া গ্রামে। পানি নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে চারিদিকে অন্ধকারে ঢেকে যায়। তখন বসতে হয় রাতের রান্নার জন্য। এভাবেই চলে এই গ্রামের নারীদের দিন রাত।

জেলার কয়রায় ৭ ইউনিয়নে ৪০ হাজার ৫০০ পরিবার রয়েছে। যেখানে ৩ লাখেরও বেশি লোকসংখ্যা। এর মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। কয়রা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩২ ও পিএসএফের (পুকুরের পানি পরিশোধন করে খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার উপযোগী করা) সংখ্যা ১৬৫।

স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের মানুষকে পান করার পানি এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য পুকুর ও বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে, এসব এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনিয়ন্ত্রিত চিংড়ি চাষ, চিংড়ি ঘেরে উঁচু বাঁধ না দেয়া, নদীর প্রবাহ আটকে দেয়া, পুকুর ভরাট ও সরকারি খালগুলো বেদখলের হয়ে গেছে। ফলে মানুষকে মাইলের পর মাইল পেরিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সুন্দরবনসংলগ্ন গ্রামগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ।

উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মিজানুর রহমান জানান, তীব্র গরমে খাবার পানির পুকুরগুলোও শুকিয়ে গেছে। বাড়ির নারী, শিশুসহ অন্য সদস্যরা কলস নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে পানি সংগ্রহ করে। চারপাশে পানি থাকলেও খাবার উপযোগী পানি নেই কোথাও, সবই লবণাক্ত।

খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, কোনো জমিতে ৪ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা ফসল উৎপাদনের জন্য স্বাভাবিক ধরা হয়। কিন্তু এসব এলাকার জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ গড়ে প্রতি মাসে ১১ ডিএস/মিটার। কোথাও কোথাও লবণাক্ততা ১৭ ডিএস/মিটার পাওয়া যায়। অন্যদিকে এসব এলাকায় নদীতে লবণাক্ততার গড় ১৬ ডিএস/মিটারেরও বেশি। এ প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জিএম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লবণাক্ততার তীব্রতার জন্য উপকূলীয় এলাকায় আবাদি জমি অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে।

কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের এ গ্রামে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস করে। এখানে ভাল খাবার পানি তেমন পাওয়া যায় না। এসব এলাকার বেশির ভাগ পানি লোনা। সরকারি ও বিভিন্ন এনজিও মাধ্যমে কিছু পরিবারে পানির ট্যাংকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সময় মত বৃষ্টি না হলে সেগুলোও খালি হয়ে যায়। সরকারি কোনো পুকুর বা জলাধার না থাকায় আমাদের এখানে প্রতিবছর দু-তিন মাস বিশুদ্ধ খাবার পানির কষ্টে থাকতে হয়। এই তীব্র গরমে এলাকায় খাবার পানি ও দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারযোগ্য পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

উপজেলার ৫নং কয়রা গ্রামের মোঃ আবির হোসেন জানান, এখন তাপদাহ চলছে। এমন আবহাওয়ায় বার বার তৃষ্ণায় কাতর হচ্ছে উপকূলের মানুষ। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের নাগালে এক ফোঁটা সুপেয় পানি নেই। এখানে তীব্র তাপপ্রবাহে শুধু সুপেয় পানিই নয় দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির সংকটও চরমে। এক ফোঁটা পানির জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয় তাদের। নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুদেরও পানি জন্য মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়।

কয়রা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইস্তিয়াক আহমেদ জানান, এ অঞ্চলের মানুষের খাবার পানি সংরক্ষণের জন্য ৪ হাজার ৫০০ প্লাষ্টিকের ট্যাংক বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, অতিরিক্ত লবণাক্ততার জন্য নলকূপ স্থাপন করা যাচ্ছে না। আর যেসব নলকূপ রয়েছে, সেগুলো নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত পানি ওঠে না। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করছে।

;