বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র: চল্লিশ বছরের পথচলা



শুভ কিবরিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শরীর তখন বেশ খারাপ। তবু পারস্যরাজের অনুরোধে তিনি সেদেশ ভ্রমণে রাজি হলেন। সত্তর বছর বয়সে সেই ভ্রমণই ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ বিদেশ ভ্রমণ। ১৯৩২ সালের এই ইরান-ইরাক ভ্রমণ নিয়ে তিনি লিখেছেন ‘পারস্যে’ শিরোনামে।

সেই সফরের অভিজ্ঞতার এক জায়গায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘মনে পড়ছে ইরাকে একজন সম্মানযোগ্য সম্ভ্রান্ত লোক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ইংরেজ জাত সম্পর্কে আপনার কী বিচার?’ আমি বললেম, ‘তাঁদের মধ্যে যাঁরা নবং: তাঁরা মানবজাতির মধ্যে নবং:।’

তিনি একটু হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আর যারা হবীঃ নবং:? চুপ করে রইলুম। উত্তর দিতে হলে অসংযত ভাষার আশঙ্কা ছিল। এশিয়ার অধিকাংশ কারবার এই হবীঃ নবং:- এর সঙ্গেই। তাদের সংখ্যা বেশি, তাদের স্মৃতি বহু ব্যাপক লোকের মনের মধ্যে চিরমুদ্রিত হয়ে থাকে।’

রবীন্দ্রনাথের ভাবনাজাত এই নেক্স-বেস্ট লোকরাই আমাদের জীবন দখল করে আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতি-সমাজ এদের হাতেই ন্যস্ত। তাই কাঙ্ক্ষিত মানের দেশ এখনো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।

আমাদের রাজনীতিতে যে হতাশা, আমাদের রাষ্ট্রাচারে যে দুর্গতি, আমাদের সমাজজুড়ে যে দুঃখ নিত্যদিন আমাদের বেদনাকে বাড়িয়েই চলেছে, তা হচ্ছে সর্বত্র আমাদের মূল্যবোধ সম্পন্ন, বেদনাজাগ্রত মানুষের অভাব।

জাতির বিদ্যায়তন, শিক্ষায়তন সেই মানসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে সক্ষম হয় নাই। আমাদের শিক্ষাধারায় অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয়েছে কিন্তু বড় জাতি তৈরি করতে হলে যে বড় মানুষ দরকার, সেই আকাঙ্ক্ষিত মানুষ তৈরির কোনো পথ এখনো বের করা সম্ভব হয় নি।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষাজাত বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে তো সেই বৈভবসম্পন্ন, চিত্তের আলোকায়নঋদ্ধ মানুষ চাই-ই চাই।

সম্ভবত এই বেদনা বাংলাদেশের একজন শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে খুব তাড়া করেছিল। তিনি তাই ‘আলোকিত মানুষ চাই’-এই শ্লোগানমগ্ন এক প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

 খুব ছোট আকারে শুরু করা এই প্রতিষ্ঠান আজ বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। দেশে-বিদেশে তার ব্যাপকতর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজারো শিক্ষার্থি এই প্রতিষ্ঠানের নানারকম মননশীল কর্মসূচির অংশীজন হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা দেখতে দেখতে এই প্রতিষ্ঠান তার প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরও পার করে ফেলেছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ঘটা করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চল্লিশ বৎসর পূর্তি উৎসব পালিত হবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/11/1547205850944.gif

দুই.

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এই দেশে তার চল্লিশ বছর পার করে ফেলেছে এইটা বড় কম কথা নয়। শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনেছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবুসায়ীদ এক অপার বেদনায়। অনেকটা ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়েই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই শিক্ষকতার চাকরিতে ইস্তফা দিয়েই এই প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন।

আমাদের আমজনতার ব্যক্তিজীবনে বা পেশাজীবনে কোনো ক্ষোভ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এক ধরণের ক্ষুব্ধতা আর অসহায়ত্ব নিয়েই আমাদের দিন কাটে। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটলো সেই বেদনার কারণ চিহ্নিত করে তা উপশমের চেষ্টা আমরা করি না। সেটা আমজনতার কাজও নয়।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ জাত শিক্ষক। তাঁর  শিক্ষাজীবনের বেদনা তাঁকে এই ক্ষত নিরাময়ের কারণ অনুসন্ধান ও সেই দুঃখ জয়ের কাজে ঠেলেছে অন্ধ আবেগ দিয়েই। শিক্ষক জীবনে দেশের সেরা বিদ্যায়তন ঢাকা কলেজেই তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েছেন নৈরাজ্যকর ছাত্র রাজনীতির, দেখেছেন বিদ্যায়তন ছেড়ে শিক্ষার্থিরা কিভাবে ছুটে গেছে প্রাইভেট টিউটরের বাসায়।

শিক্ষা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার অধোগতি তার ভেতরটাকে কুরে কুরে খেয়েছে। তিনি তাঁর শিক্ষক জীবনের আত্মস্মৃতি ‘নিস্ফলা মাঠের কৃষক’ বইয়ে লিখেছেন, ‘সবাই যখন নিজের স্বার্থের ছোট্ট একান্ত কুঠুরির খোঁজে হন্যে হয়ে ফিরছে তখন আমি কেন একা কষ্টে ছিন্নভিন্ন হচ্ছি। সারা জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একা এই নিস্ফলাপ্রান্তরে আমি কতটুকু কী করতে পারব?’

‘সত্যি যদি তাদের জন্য অর্থপূর্ণ কিছু করতেই হয় তবে তা এই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে আর সম্ভব নয়। এই বৈষয়িক প্রাপ্তি-প্রত্যাশা, রুটিরুজির স্বার্থসংশ্লিষ্ট আবিল জগতের মধ্যে তার ভবিষ্যত সম্ভব নয়।  তা যদি করতে হয় তবে তার জন্যে যেতে হবে ‘অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে।’ শিক্ষাঙ্গনের দেয়াল-ঘেরা এই অবসিত প্রান্তরে এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে না।’

তিন.

সেই উত্তর খুঁজতে পথে নেমেছেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। মানুষের ভেতরের যে উজ্জ্বলতর দিক, যা তার বৈষয়িক স্বার্থান্ধ দিকের চাইতেও শক্তিমান সেই আলোকিতদিকটিকেই ভরসা ভেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কাজে নিরন্তর ছুটে চলেছেন সায়ীদ স্যার।

তিনি হয়তো রবীন্দ্রনাথের কথাতেই আস্থাশীল। রবীন্দ্রনাথ মানুষের কাজ, মানুষের ধর্মকে যেভাবে দেখেছেন সেই আলোকময় দিকটিই হয়তো অধ্যাপক সায়ীদের এই অসম্ভবকে সম্ভব করার কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘মানুষেরএকটা দিক আছে যেখানে বিষয়বুদ্ধি নিয়ে সে আপন সিদ্ধি খোঁজে। সেইখানে আপন ব্যাক্তিগত জীবনযাত্রানির্বাহে তার জ্ঞান, তার কর্ম, তার রচনাশক্তি একান্ত ব্যাপৃত। সেখানেসে জীবরুপে বাঁচতে চায়। কিন্তু মানুষের আর-একটা দিক আছে যা এই ব্যাক্তিগত বৈষয়িকতার বাইরে।

সেখানে জীবনযাত্রার আদর্শে যাকে বলি ক্ষতি তাই লাভ, যাকে বলি মৃত্যু সেই অমরতা। সেখানে বর্তমান কালের জন্যে বস্তু-সংগ্রহ করার চেয়ে অনিশ্চিত কালের উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগ করার মূল্য বেশি। সেখানে জ্ঞান উপস্থিত-প্রয়োজনের সীমা পেরিয়ে যায়, কর্ম স্বার্থের প্রবর্তনাকে অস্বীকার করে। সেখানে আপন স্বতন্ত্র জীবনের চেয়ে যে বড়োজীবন সেই জীবনে মানুষ বাঁচতে চায়।

স্বার্থ আমাদের যেসব প্রয়াসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তার মূল প্রেরণা দেখি জীবপ্রকৃতিতে; যা আমাদের ত্যাগের দিকে, তপস্যার দিকে ঠেলে নিয়ে যায় তাকেই বলি মনুষ্যত্ব, মানুষের ধর্ম।’

চার.

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তাই হয়তো ভাবে, বড় মানুষ, সম্পন্ন মানুষেরাই শুধু পারে একটি বড় দেশ আর বড় জাতিকে গড়ে তুলতে। আমাদের সম্মুখে আগামী দিনের যে-মহান বাংলাদেশ অপেক্ষমাণ তার সুযোগ্য নির্মাণের জন্য আজ আমাদের প্রয়োজন অনেক সমৃদ্ধ মানুষের। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মনে করে আগামী দিনের সম্পন্ন বাংলাদেশকে গড়ে-তোলার পূর্বশর্ত হিসেবে আজ ঐসব মানুষের গড়ে তোলা আমাদের জন্য অপরিহার্য; সেই সব মানুষ, যাঁরা উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন, আলোকিত, শক্তিমান, কার্যকর এবং সংশপ্তক।

পাঁচ.

আমরাও সায়ীদ স্যারের এই আশাবাদের সাথে একমত। জাতির নিজের প্রয়োজনেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে চালিত করা আমাদেরই কাজ।এই প্রতিষ্ঠান শতায়ু হোক। তার যাত্রাপথের সকল বাধা দূর হোক। চল্লিশ বছরপূর্তি উৎসব সাফল্যের সাথে শেষ হোক। সকল দল-মত-পথের মানুষের চিত্তের আলোকায়নের উৎসভূমি হিসেবে এই প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাক-এই শুভ কামনা নিয়েই লেখাটি শেষ করছি।

শুভ কিবরিয়া: নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক।

   

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা নয়



প্রফেসর ড. মো. ফখরুল ইসলাম
তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা নয়

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প বাস্তবায়নে দোদুল্যমানতা নয়

  • Font increase
  • Font Decrease

তিস্তা সমস্যা নিয়ে বহুযুগ ধরে বার বার শুধু কথা চলে আসছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বাংলাদেশের তিস্তা তীরবর্তী কয়েক কোটি মানুষের জীবনধারণের সাথে সম্পর্কিত বহুবিধ আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। প্রতি বছর খরা যায়, বর্ষা আসে। তাপে পুড়ে যায়, অকাল বন্যায় ভেসে যায় জমির ফসল। থমকে যায় সেসব সমস্যা প্রতিকারের সব প্রচেষ্টা।

গত ১৯৯৩ সাল থেকে তিস্তা নদী সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এর সমস্যাগুলোর বড় অংশ অভিন্ন, আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক হওয়ায় বাংলাদেশের একার পক্ষে সমাধান করা দুরূহ ব্যাপার। তাই প্রতিবেশী ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমাধানের জন্য বার বার বৈঠক করে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত তিন দশকের অধিক সময় ধরে শতাধিক বৈঠকে নানাবিধ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অনেকগুলো চুক্তি সই করা হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে ও অজুহাতে সেগুলো ফলপ্রসূ হয়নি।

উজান দেশের অসহযোগিতা ও একঘেয়েমি মনোভাবের কারণে তিস্তা সমস্যা দীর্ঘদিন ফাইলে আটকে রাখা হলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সমস্যার জট খুলতে শুরু করে এবং কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে মতের অমিল থাকায় সেসব প্রচেষ্টা বার বার হোঁচট খেয়ে ভেস্তে যায়।

বিশেষ করে খরার সময় তিস্তা নদীর পানি সংকট সমস্যা কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপ ও মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি মধ্যে চরম বৈপরীত্য পরিস্ফুট হয়ে উঠে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর গুনে হতাশ হয়ে পড়ে সরকার ও তিস্তা পাড়ের ভুক্তভোগীরাসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষ। অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতের নিকট থেকে আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে বাংলাদেশ বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে তৃতীয় কোনো পক্ষকে তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হলে এগিয়ে আসে চীন। তারা চীনের দু:খ বা হোয়াংহো নদীর পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিস্তা সমস্যা সমাধানে হাত বাড়ায়।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চীনের ‘পাওয়ার কন্সট্রাকশন কর্পোরেশন অব চায়না’- কোম্পানির সাথে বাংলাদেশের এক সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়ে। সেটিও দীর্ঘদিন যাবত দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল। পাঁচ বছর পূর্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তাগাদা দিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আশাবাদ শুরু হয়। চীন ইতোমধ্যে বাংলাদেশের তিস্তা ক্যাচমেন্ট এলাকায় ১১৫ কি.মি. অংশে জরিপ সম্পন্ন করে প্রকল্পের খসড়া তৈরি করে। চীন ভারতের তিস্তা অংশে সিকিম তিস্তা খাড়ি ও শিলিগুড়ির অদূরে ‘চিকেন নেক’এলাকায় সুগভীর জরিপ চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করলে সেটা নিয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার অভাবের কারণে অনাগ্রহ লক্ষণীয় হয়ে উঠে।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ ও চৈনিক ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞদের ভারতের মাটিতে অবস্থান ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে ভারত নিজেদের নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে মনে করে। তবুও গত ৭ জানুয়ারি ২০২৪ জাতীয় নির্বাচনের পর পরই চীন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পর পাঁচ মাস গত হলেও প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু করা হয়নি।

এরই মাঝে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রংপুরে এক নির্বাচনী জনসভায় তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য শুরুর দিনক্ষণ শোনার জন্য এবছর মে মাসের নিদারুণ খরার দিনগুলি পর্যন্ত অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তিস্তা পাড়ের ভুক্তভোগী অধিবাসীরা।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই পরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তা নদীর দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর, নদী খনন ও শাসন, ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি সেচ ব্যবস্থা, মাছ চাষ প্রকল্প ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চীনা কোম্পানিটি ইতোমধ্যে তিস্তা পাড়ে নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে। তিস্তা নদী পাড়ের জেলাগুলো নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধায় চীনের তিনটি প্রতিনিধি দল কাজ করে চলছে। এরমধ্যে গত ১০ মে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার বুকে ড্রেজিং এবং ব্যারাজ নির্মাণের প্রস্তাবিত বহুমুখী প্রকল্পটিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ঢাকায় এক বৈঠকে এই প্রস্তাব করেছেন।

এ প্রেক্ষিতে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য হলো, ‘আমরা তিস্তায় একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে, সেটি আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়।’ আমাদের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এটা একটি বড় উদ্যোগ হতে পারে। তবে বহু দশক গড়িমসি করে হঠাৎ তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে ভারতের মনোযোগ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে আমাদের নীতি নির্ধারকদেরকে। এর পিছনে ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন ছাড়াও আরো কোনো রহস্য লুক্কায়িত আছে কি-না তা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে।

কলকাতার বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার বলেছে, ‘চিন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকাকে। জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার নতুন সরকার শপথ নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন নতুন বিদেশমন্ত্রী মাহমুদের সঙ্গে দেখা করে তিস্তা নিয়ে তাদের প্রকল্পে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ নিয়ে তৃতীয় একটি দেশের ইঞ্জিনিয়ার ও কারিগরদের কাজ করা নিয়ে বাংলাদেশের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছিল দিল্লি।

‘মূলতঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তার বুকে ড্রেজিং এবং ব্যারাজ নির্মাণের প্রস্তাবিত বহুমুখী প্রকল্পটিতে অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে তারা। অন্তত ১২ বছর ধরেই বাংলাদেশ এই প্রকল্প নিয়ে বেজিংয়ের কাছে দরবার করছিল। হাসিনার চিঠির পরে চিন বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তিস্তার ১১৫ কিলোমিটার গতিপথে সমীক্ষা চালিয়ে একটি প্রকল্পের খসড়া তৈরি করে জমা দেয়। সেই প্রকল্পে তিস্তার বুকে ড্রেজিং করে ১০ মিটার গভীরতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুপাশের জমি উদ্ধার করে সেখানে চার লেনের রাস্তা তৈরি এবং কয়েকটি ব্যারাজ ও সেচ-খালের মাধ্যমে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তার পরে প্রকল্পটি ছাড়পত্র পায়নি। এখন ভারত সেই প্রকল্পটি রূপায়ণের প্রস্তাব দিল।’

তবে চীনের সাথে আগে চুক্তি হওয়া এবং তার উপর ভারতের জাতীয় নির্বাচন চলাকালীন হঠাৎ ভারতের এই প্রস্তাব কিছুটা রহস্যজনক। বাংলাদেশের সকল নীতিনির্ধারক এবং জনগণ এতদিন পরে হঠাৎ ভারতের এই বিনিয়োগের আগ্রহকে কীভাবে গ্রহণ করবে তা চিন্তার বিষয়। বাংলাদেশ কতটুকু বিশ্বস্ততার সাথে ভারতের এই অর্থায়ন আগ্রহ বিবেচনা করবে তা সময় হলে বুঝা যাবে।

তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে চীনের কাজ শুরু করার সময় ঘনিয়ে আসার পর শুধু তাদের পররাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাবে তিস্তা পানিবণ্টন নিয়ে এতদিনের ঘুমন্ত ভারতকে আস্থায় রাখা সহজ হবে না। একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার অভ্যাস যে ভারতের তৈরি হয়েছে এবং তার ফলে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার প্রবাহের আইনগত ও ন্যায্য হিস্যা প্রদানের ব্যাপারে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা খুব বেদনাদায়ক। সেখানে তৃতীয় কোনো দেশের সাথে তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প চুক্তি সই হওয়ার পর ভারতের অর্থায়নের আগ্রহ দেখানোর বিষয়টি চীনের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য ভারতের নতুন দোদুল্যমানতা তৈরি হতে পারে বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।

এছাড়া তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের ‘নিড’বা প্রত্যাশাগুলো কি তা এখনও ভারতকে জানানো হয়নি। ভারত ও চীনের মধ্যে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে তা আরো বেশি উসকে দেবে যদি বাংলাদেশ চীনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি ভঙ্গ করে ভারতের দিকে হাত বাড়ায়। এছাড়া চীন বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারিয়ে আমাদের চলমান অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা হ্রাস বা বন্ধ করে দিতে পারে।

তাই ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের অর্থায়নের আগ্রহের প্রস্তাব চীনের তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পকে আরো দীর্ঘায়িত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের সাথে চীনের সুসম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। ভারতের অর্থায়ন প্রস্তাবের পর ইতোমধ্যে চীন বাড়তি ত্রিশ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের চাহিদা শুনিয়েছে। কাজ শুরু না হতেই এমন বাগড়ায় বাংলাদেশের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’-র মতো দোটানা অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

কিন্তু কোনোরূপ জনমত যাচাই না করে হঠাৎ আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন ভাবনার উদয় হলো কেন?

তিস্তা পানি সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত বার বার প্রতিশ্রুতি দেবার পরও কাজ হয়নি। এজন্য বিকল্প উপায় খুঁজে বের করেছি আমরা। সেটাতে নিবিষ্ট থাকতে সমস্যা কোথায়? এই দোদুল্যমানতা পরিহারে গভীরভাবে চিন্তা করতেই হবে। আর এজন্য আরো গভীরভাবে ভেবে ভারতের অর্থায়নের প্রস্তাবে সাড়া দেয়া উচিত। আগাম বড় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলা আরেকটি হঠকারিতা হতে পারে। তাই বিষয়টি অতি দ্রুত আরো গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত বলে বিশ্লেষকগণ মনে করছেন।

লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন।

;

রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল-মানবিক করিডোর স্থাপন দরকার



ব্রিঃ জেঃ হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ামারের আভ্যন্তরীণ সংঘাত ও রাখাইনে আরাকান আর্মির (এ এ) সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের তীব্রতা চলমান রয়েছে। সীমান্তের ওপারে রাখাইনের কয়েকটি টাউনশিপে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ এ ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষের তীব্রতায় টিকতে না পেরে রোহিঙ্গারা প্রাণভয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে পালিয়ে আসছে। অনেকে মনে করছে যে, এ এ সেসব এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে তাদেরকে ঘরবাড়ি ছাড়া করে দেশত্যাগে বাধ্য করছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন যাবত চলমান যুদ্ধে একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং অন্যদিকে এ এ রোহিঙ্গাদেরকে মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা নিধন চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। চলমান সংঘর্ষে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে এ এ’র কাছে অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এ এ’র সঙ্গে সংঘর্ষের সময় রোহিঙ্গাদেরকে জোরপূর্বক ধরে তাদেরকে এ এ’র সঙ্গে লড়াই করার নির্দেশ দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা রোহিঙ্গাদেরকে তাদের এলাকায় এ এ’র আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষার নামে এ এ’র সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে বাধ্য করে আন্তসাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব অনুসারে, ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় এক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও এ এ দুই পক্ষই তাদের হয়ে লড়াই করতে চাপ দিচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রাখাইনে রাজ্যে এখনো প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বিদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সক্রিয় সংগঠন অভিযোগ করেছে যে, এ এ রাখাইনের বুথিডং শহরে রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করছে। তাদের বাড়িঘর লুটপাট ও আগুন লাগানো হয়েছে এবং সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। অনেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। বুথিডং ও মংডুতে এ এ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষে ১০ হাজার নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিবাদমান সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ এ জানিয়েছে যে তারা রোহিঙ্গাদেরকে নিরাপদ এলাকায় সরে যেতে সহায়তা করেছে তবে সেখানে মিয়ানমার জান্তাবাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগ ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে চলমান পরিস্থিতিতে বেসামরিক জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া ও সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দিতে মিয়ানমারের জান্তা ও এ এ’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার তুর্ক রাখাইন রাজ্যের বুথিডং শহর থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সেখানে অবিলম্বে সংঘাত বন্ধের জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও এ এ’কে অনুরোধ জানায়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে বুথিডং শহরে নতুন করে সহিংসতা ও সহায় সম্পত্তি ধ্বংসের ফলে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা, অবিলম্বে নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিধান নিঃশর্তভাবে মেনে চলার জন্য জাতিসংঘ মিয়ানমার সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে। ফলকার তুর্ক বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশকে নিপীড়নের স্বীকার রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ রাইটস অফিসের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডেহেভার চলমান পরিস্থিতিকে ভয়ানক বলে বর্ণনা করেছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে যে, রোহিঙ্গা ও রাখাইন একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে আন্তসাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা জাতিসংঘের। মানবাধিকার পর্যবেক্ষকেরাও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন অন্তত আটটি গ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে একটি গ্রামে স্থানান্তরের কথা নিশ্চিত করেছে।

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার থমাস অ্যান্ডুস, রাখাইনের চলমান সংকটের প্রেক্ষিতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ‘বন্ধ সীমান্ত’ নীতি থেকে সরে আসতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ, দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কাজ করে যাওয়া স্বত্বেও বাংলাদেশের উদারতা রোহিঙ্গাদের একমাত্র ভরসা বলে তার মত প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার বাংলাদেশের ভেতরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিস্থিতি উন্নয়নে জরুরি তহবিল নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের সব রাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে। থমাস অ্যান্ডুস রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এ এ’র ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ ঘটনার অবসানের আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের রাইটস অফিসের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল জানিয়েছে যে, সংঘাত-বিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে আরাকানের বুথিডাং ও মংডু শহরের কয়েক হাজার বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। রাখাইন রাজ্য থেকে সম্প্রতি প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদীর তীরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অপেক্ষা করছে। এলিজাবেথ থ্রোসেল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য মিয়ানমার সরকার ও এ এ’কে আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ও সমর্থন ছাড়া এই সঙ্কট মোকাবেলা সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। ত্রান সহায়তা হ্রাসের ফলে রেশন কর্তন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সহিংসতা এবং রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।

বাংলাদেশ সীমন্ত জুড়ে থাকা মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিগুলো বর্তমানে এ এ’র দখলে। এ এ পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাষ্ট্র কাঠামোর অধীনে ভবিষ্যতে আরাকান রাজ্য গড়ে তুলতে চায়। এ এ’র মূল শক্তি হলো রাখাইনবাসীদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অঙ্গীকার। সংকটময় এই পরিস্থিতিতে এ এ’র দূরদর্শিতা তাদেরকে সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ভুমিকা রাখবে।

সীমান্তের এপারে কক্সবাজার এলাকায় জাতিসংঘ ও অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো গত সাত বছর ধরে তাদের পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে। তারা রাখাইন পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত রয়েছে। চলমান প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ, ইউ এন এইচ সি আর, আই ও এম এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এ এ’র সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে রাখাইনে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল ও একটা মানবিক করিডোর স্থাপন করে নির্যাতনের শিকার পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিতে পারে। কক্সবাজারের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে অতি সহজে এই কার্যক্রম তারা পরিচালনা করতে পারবে। এ এও এই কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করবে কারণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রয়োজন।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সঙ্গে মিলে এ এ এই সহায়তা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে শুধুমাত্র রাখাইনের জাতিগত সশস্ত্রগুষ্টি হিসেবে তাদের পরিচয়ের বাহিরে নিজেদেরকে রাখাইনের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্রমান করতে পারবে। এর পাশাপাশি এ এ’র কাছে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রকাশ পেলে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক সহায়তা পেতে কাজে লাগবে।

বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রদানে দাতাসংস্থাগুলো চাপে রয়েছে, তাই নতুন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নাই। বাংলাদেশ সরকার সীমান্তে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নিয়েছে। সীমান্ত দিয়ে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় বান্দরবান সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত চৌকি ও স্থাপনাগুলোতে বিজিবির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসানো সিসি ক্যামেরায় সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে এবং বিজিবির পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান মানবিক বিপর্যয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুততার সঙ্গে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০১৭ সালের নৃশংস ঘটনা তাদেরকে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আগে সতর্ক হতে শিখিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ নানা সীমাবদ্ধতার থাকার পর ও মানবিক দিক বিবেচনায় কতটুকু উদার ছিল তা বুঝতে পেরেছে। তারা বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের উদারতার অনুপস্থিতি অনুভব করছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুতদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল ও একটা মানবিক করিডোর স্থাপন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। রাখাইনের চলমান মানবিক সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দ্রুত সিধান্ত গ্রহনের মধ্যে দিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করতে পারবে। রাখাইনের অভ্যন্তরে কাজের এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও জোরালো ভুমিকা রাখতে সহায়ক হবে। রাখাইন রাজ্যের এ এ’র নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।

ব্রিঃ জেঃ হাসান মোঃ শামসুদ্দীন, এন ডি সি, এ এফ ডব্লিউ সি, পি এস সি, এম ফিল (অবঃ)
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

;

বেনজীরের পেছনে আরও কত বেনজীর?



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদের জব্দ করা নিয়ে বেশ শোরগোল চলছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের আদেশে গেল বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সাবেক এই দুর্দণ্ড-প্রতাপ পুলিশ কর্মকর্তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেওয়ার পর রোববার (২৬ মে) ‘খোঁজ পাওয়া’ আরও সম্পদ জব্দের আদেশ আসে। বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাবেক মহাপরিদর্শকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ এ ভাবে ক্রোকের এ ঘটনাকে বিরল বললেও অত্যুক্তি হবে না। বেনজীরের বিপুল সম্পদের ‘খোঁজ’ পাওয়া এবং আদালতের দুটি পৃথক আদেশে সম্পত্তি ক্রোকের খবর নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিম-লে ইতিমধ্যেই বিস্তর আগ্রহ এবং আলোচনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য কিংবা স্যোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা-বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন কিছু প্রশ্নও সমান্তরালে বেশ দাঁনা বাধছে।

দেশের ২৮তম পুলিশ প্রধান ছিলেন বেনজীর আহমেদ। আইজিপি, র‌্যাব প্রধান কিংবা ডিএমপি কমমিশনারের মতো পদে থাকাকালীন সময়ে বেনজীর আহমেদের যে তৎপরতা-বক্তব্য গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমরা শুনে এসেছি, তাতে কেউ কখনো ভাবতেই পারেনি এই পুলিশ কর্মকতার সম্পদ নিয়ে এমন টানাহেচড়া হতে পারে। আইজিপি হিসাবে মেয়াদ শেষের দিকে এসে বেনজির আহমেদের একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে ওই পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

সেই অনুষ্ঠানে আইজিপি’র গ্রন্থের পাঠ উন্মোচনে সরকারের দুই মন্ত্রীসহ ‘বিশিষ্ট’ অতিথি আলোচকগণ প্রশংসায় ভাসান বেনজীর আহমেদকে। যেখানে তাঁর মেধা-সততা ও পেশদারিত্ব নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তারা যেসব কথা বলেন, তাতে বেনজীর বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে যোগ্য ও সক্ষম পুলিশ প্রধান। লেখকের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বেনজীর আহমেদ তার দীর্ঘ বক্তৃতায় নিজেকে সৎ ও দেশপ্রেমিক এবং সরকারের কতটা অনুগত তা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এই সময়ে এসে আয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ ও তা জব্দ করা নিয়ে কেবল এই জিজ্ঞাসাটিই প্রবল হচ্ছে যে, আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো কত দুর্বল! একজন ব্যক্তির উত্থানের এই দীর্ঘ পটভূমিতে এত দিন রাষ্ট্র কি তবে ঘুমিয়ে ছিল?

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা যখন পেশাদারিত্বের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাষ্ট্রপতি পদক, প্রধানমন্ত্রী পদক, পুলিশ পদক-শুদ্ধাচার পদকসহ অসংখ্য সম্মান ও স্বীকৃতিতে ভূষিত হন; তখন সেই কর্মকতার বিরুদ্ধে অবসরের পর এত গুরুতর অভিযোগ আমাদের কাঠামোগত দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলে। এখন পর্যন্ত বেনজীর আহমেদের জব্দকৃত যে পরিমাণ সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে তাকে যদি গড় হিসেবে দেখা হয়, তবে প্রতিদিন যে আয় তিনি করেছেন বলে ধরে নেওয়া যায়, তা আলাদীনের চেরাগের চেয়েও কম আশ্চর্যের নয়।

সাম্প্রতিক বেনজীর ইস্যুতে ক্ষমতাসীন, বিরোধী দল কিংবা আইনজীবীদের তুলনামুলক যে বক্তব্য এসেছে তাতে পরস্পরবিরোধী চরিত্রটিই দৃশ্যমান হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পুলিশের যেসব কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ লক্ষ্য করা গেছে, বেনজীর আহমেদ তাদের মধ্যে অন্যতম। পুলিশ প্রধান হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক উসকে দিতে দেখা যেত বেনজীরকে। যখন তিনি অবসরে গেলেন-শোনা যাচ্ছিল, অচিরেই কোন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পাবেন। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটলো না। আমরা দেখেছি, এই কর্মকর্তার অবসরের পর তাঁর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়।

আমরা অনেক সাবেক আইজিপিদের অবসরের পর গুরুত্বপূর্ণ পদে ফের পদায়নের দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। অনেককে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু বেনজীর আহমেদের মতো এতটা দুর্দ- প্রতাপ ও রাজনৈতিক অভিলাষী কর্মকর্তা কেন সেই সুযোগ পেলেন না-তা নিয়েও নানা মত রয়েছে। বলা হচ্ছে, পুলিশ বাহিনীতেই তার সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক ছিল এমন কর্মকর্তারা চান না তিনি ফের প্রভাবশালী হয়ে উঠুন। বেনজীরে দ্বারা কোন কারণে নিগৃহীত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কর্মরত কর্মকর্তাদের যোগাযোগও এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে-এমন তথ্য কেউ কেউ সামনে আনছেন।

কিন্তু যদি রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করা হয় যে, আমাদের দেশে ‘বেনজির’ এই বেনজীর আহমেদ কি একজনই? অনেকেই দাবি করেছেন-দেশে এমন বেনজীরের সংখ্যা অনেক। কেবল খবরে এলেই তাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু দেশে আর্থ-সমাজিক অসমতার নিরিখে যদি চিন্তা করা হয়; বাংলাদেশের স্বল্প সংখ্যক মানুষের হাতে সিংহভাগ সম্পদ পূঞ্জীভূত হয়ে আছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় নামক যে শব্দের সঙ্গে এক শুভঙ্করের ফাঁকি জড়িয়ে আছে, এটি বলা অসঙ্গত হবে না যে এমন ‘বেনজির’ আলাদীনের চেরাগ কা- এ পেছনে দায়ী। সমাজে মধ্যবিত্ত-নি¤œমধ্যবিত্ত কিংবা ছিন্নমূল মানুষের জীবনে দারিদ্র ও অসহায়ত্বের যে ছাপ পরিলক্ষিত হয় তার কার্যকারণ হিসাবেও এসব দৈত্যদের উত্থানকে দায়ী করেন সমাজবিজ্ঞানী ও বিশ্লেষকরা।

আমরা স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের সময়েই এমন আলাদীনের চেরাগের দৌলতে ফুলে ফেঁপে উঠা সরকারি কর্মচারীদের দেখে থাকব। কিন্তু যেসব তথাকথিত ক্ষমতাধরদের ছত্রছায়ায় কিংবা আষ্কারায় এই বেনজীরদের উত্থান ঘটে, তারা কি তবে আড়ালেই থেকে যাবেন। জনগণের করের টাকায় প্রতিপালিত সরকারের কর্মচারীরা যখন জনগণকে শুষে নিয়ে সামন্তবাদী জমিদারদের মতো চরিত্রধারণ করে বিপুল ভূ-স্বামী বনে যান তখন ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’ কথাটি আর ধোঁপে টিকে না।

লোকপ্রবাদ আছে, ‘গাঁজাখোরের বিচার হবে/করবে বিচার আফিম যে খায়’। বেনজীর ইস্যুতে দৃশ্যমান সত্যটি সেই লোকপ্রবাদেরই প্রতিধ্বনি। জনগণতান্ত্রিক শাসন কাঠামোতে প্রশাসন কিংবা নীতিনির্ধারকদের জাবাবদিহিতার জায়গাটি যে গুরুত্ব বহন করে, সংশ্লিষ্টটদের সেই বিষয়ে ততোটাই অনীহা। বহু বার ডাকঢোল পিটিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের ‘সম্পদের হিসাব’ দেওয়া নিয়ে হইচই শুনলেও ক’দিন যেতেই তা নিশ্চুপ হয়ে যায়। দুর্নীতি ও সুশাসনের প্রশ্নে সব কিছুই যেন একটা চোর-পুলিশ খেলা চলে। দীর্ঘ সময়ে ধরে এ রীতি চলমান থাকায় এই প্রবণতা এখন গাঁ সওয়া হয়ে গেছে। এবং এভাবেই এটি একধরণের সামাজিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে জনগণের মনন ও মূল্যবোধকেও দুর্নীতি মনষ্কতায় ভরিয়ে তুলেছে। সে কারণেই হয়ত আলদীনের চেরাগে ভর করে সম্পদের কুমির বনে যাওয়া ব্যক্তিরা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে, হঠাৎ ঘুমে ভেঙে উদয় হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তৎপরতা লক্ষণীয়। যদিও দুদক দীর্ঘ সময়ে ওই ব্যক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, একটি বাক্যও বলেনি। তা সত্ত্বেও আদালতের আদেশে বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ জব্দের বিষয়টি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে রাষ্ট্রের সম্পদে পরিণতে হলে এমন অজস্র ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করার পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু ‘বৈপ্লবিক’ এই প্রবণতা কতদূর পর্যন্ত টিকে থাকবে বা টিকিয়ে রাখা যাবে তা দেখার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ।

;

এমপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের জোর



কবির য়াহমদ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ, নীল ও লাল; বাংলাদেশে এই তিন রঙের পাসপোর্ট রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবী ও সর্বসাধারণের জন্যে সবুজ পাসপোর্ট, সরকারি কাজে কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে গেলে নীল পাসপোর্টের ব্যবহার হয় এবং অন্য পাসপোর্টটির রঙ লাল।

এই লাল রঙের পাসপোর্ট ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাদের স্পাউস (স্বামী-স্ত্রী) এই পাসপোর্ট পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।

লাল রঙের পাসপোর্ট পেয়ে থাকেন উচ্চতর আদালতের বিচারপতি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রধান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের কর্মকর্তারা। লাল রঙের এই পাসপোর্টধারীরা দেশে-দেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পান। এর অন্য বিশেষত্ব হচ্ছে, ডিপ্লোম্যাটিক বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট সব দেশেই লাল রঙয়ের হয়ে থাকে।

পাসপোর্টের রঙয়ের প্রসঙ্গের অবতারণা মূলত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ভ্রমণে গিয়ে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ড। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসা ও বন্ধুর মেয়ের বিয়ের জন্যে ভারতে গিয়ে খুন হয়েছেন। গত ১২ মে তিনি সড়কপথে ভারতে যান। গিয়ে ওঠেন তার পরিচিত এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে। আগেও যখনই কলকাতা গেছেন তখনও ওই বাড়িতে উঠতেন তিনি বলে জানা গেছে।

১৩ মে চিকিৎসার কথা বলে ওই বাড়ি ত্যাগ করেন বলে পশ্চিমবঙ্গের থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) উল্লেখ করেন স্বর্ণ-কারবারি গোপাল বিশ্বাস আর ১৬ মে তারিখ আনোয়ারুল আজীম আনারের ব্যক্তিগত সহকারীর মোবাইল ফোনে সবশেষ কল আসে বলে জানা গেছে।

ভারতে যাওয়ার এক সপ্তাহ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার তিনদিন পর আনোয়ারুল আজীম আনারের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে গিয়ে তিনি ‘নিখোঁজ’। হয়ত তাৎক্ষণিক বিভিন্ন মাধ্যম ও দপ্তরে এই সংবাদ গেছে, তবে সংবাদমাধ্যমে এই খবর এসেছে ১৯ মে।

ওইদিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ‘আনোয়ারুল আজীম আনারকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই’ মন্তব্য করে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের এনএসআই কাজ করছে। ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নাই’।

মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তিনি (আনোয়ারুল আজীম) পুরানা মানুষ, একজন সংসদ সদস্য বুঝেশুনেই তো চলেন। পাশের দেশ ভারতে গেছেন। এমন তো না মিয়ানমার গেছেন, যে মারামারি লেগেছে। আমার মনে হয় এসে পড়বেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে আশ্বস্ত করার বার্তা ছিল। ছিল প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল বিশ্বাস। ‘এমন তো না মিয়ানমার গেছেন’ এই মন্তব্যে ভারত সম্পর্কে যে প্রবল আস্থার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি, দেখা গেল তার উল্টো ফল! নিখোঁজের পর এখন জানা গেছে, ভারতে গিয়েই খুন হয়ে গেছেন আনোয়ারুল আজীম আনার এবং খুনের ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতে এমপি আনারকে খুন করেছে বাংলাদেশিরাই। এই ঘটনায় কোনো ভারতীয় সম্পৃক্ত নাই বলে তার দাবি।

ভারতের কেউ হয়ত এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়, তবে ঘটনাস্থল যখন ওখানে তখন কি সত্যিই দায় এড়ানো যায়!

প্রথমে খবর এসেছিল সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একটি ভবন থেকে। পরে জানা গেছে, তার মরদেহ পাওয়া যায়নি। মরদেহের সন্ধান চলছে। এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে অন্তত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতীয়দের কেউ নয়, বাংলাদেশিদের দ্বারা খুন হয়েছেন আনোয়ারুল আজীম আনার। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভাষায় বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তদন্ত শেষ! অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই আবার নিখোঁজের সংবাদ প্রকাশের পর পরই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘তিনি পুরানা মানুষ, একজন সংসদ সদস্য বুঝে শুনেই তো চলেন। আমার মনে হয় এসে পড়বেন।’ বাস্তবতা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত তার ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। মন্ত্রীও বলছেন, খুন হয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের অতীত বের হয়ে আসছে ক্রমশ। জানা যাচ্ছে, তিনি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত ছিলেন। হুণ্ডি কারবার, চোরাচালান ও পাচারের অভিযোগে ইন্টারপোল তার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করেছিল। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে, এমপি হয়ে তিনি সেই নোটিস প্রত্যাহার করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে তিনি ওই এলাকায় শুরু করেছিলেন, বিকশিত হয়েছিলেন বিএনপির আমলে আর জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আমলে। পেয়েছিলেন সব জায়গা থেকে ‘দায়মুক্তি’। এখন তাই অতীতকে ভুলে আমরা ব্যস্ত শোকপ্রকাশে। মানবিক শোকের প্রকাশ যদিও দোষের নয়, তবু সত্য অপরাধ তামাদি হয় না কখনো।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের এমন মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত। বিদেশে বিশেষ করে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্রে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক। যদিও এটা তার সরকারি সফর নয়। তিনি একাই গিয়েছিলেন ভারতে। চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, যে কারণেই হোক এই সফরটা ব্যক্তিগত হলেও তার পরিচিতি এখানে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। তিনি দেশের লাল রঙের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন। পৃথিবীর প্রতি দেশের ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের রঙ লাল। এই হিসেবে তার এই বিদেশ সফরও দুই দেশের কারো অজানা থাকার কথা নয়।

ভারতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক মন্ত্রী বিষয়টির মধ্যে প্রতিবেশী দেশকে আমলে নিতে চাইছেন না। বিএনপি মহাসচিব খোঁচা দিয়েছেন, ‘বন্ধুরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব’ নিয়ে। এখানে ভারতকে আড়াল করার চেষ্টা, সামনে আনার চেষ্টার মধ্যে রাজনীতি এবং ভারতপ্রেম ও বিদ্বেষ আছে তাদের তবে এখানে তাদের দায় নেই কোনো এটা বলার সময় কিন্তু আসেনি এখনো। আগবাড়িয়ে তাদেরকে দায় দেওয়া ও দায়মুক্ত করার এই প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। এটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের যোগাযোগ, সম্পর্ক ও তদন্তের বিষয়।

ভারতের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক। বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অগ্রগতি সবখানে দেশটির সহায়তা ও অংশগ্রহণ আছে। এই সত্যিকে স্বীকার করেও প্রশ্ন রাখা যায়, সীমান্তে নাগরিক মরে গুলিতে, আর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের এমপি কেন মরবেন আততাতীয় হাতে! এখানে কি ওই দেশের কোনো দায় নেই! সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি যখন ভারত প্রবেশ করলেন তখন তার পাসপোর্ট সূত্রেই ভারত জানতে পেরেছে দেশটিতে একজন সংসদ সদস্য প্রবেশ করেছেন। এগুলো অতি-স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে যখন কোনো বিদেশি ভিআইপি প্রবেশ করেন, তখন কি নানা সংস্থা, কর্তৃপক্ষ অপ্রকাশ্য হলেও সক্রিয় হয় না! নজরদারি, নিরাপত্তাসহ বিবিধ দিক দেখার বিষয় এখানে প্রাসঙ্গিক। ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের জোর তো এখানে!

প্রাথমিক তথ্যের সূত্র ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বাংলাদেশিদের দ্বারা কলকাতায় হত্যাকাণ্ডের শিকার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এই মন্তব্য কি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর আগে তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে দেওয়ার মতো মন্তব্য হয় না! চূড়ান্ত তদন্তেও যদি এটা প্রমাণ হয়, তবু প্রশ্ন রাখাই যায়, বাংলাদেশিরা ভিন দেশে গিয়ে এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার সময়ে কি টের পাবে না দেশটির নানা বাহিনী, সংস্থা! এখানে কি সত্যি দায় থাকছে না তাদের!

ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। অথচ প্রথমে জানা গিয়েছিল মরদেহ উদ্ধারের কথা। দেশটির একটা অভিজাত এলাকায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একদল আততায়ী খুন করেছে, মরদেহ সরিয়ে নিয়েছে, খুনের ঘটনা নিশ্চিতের আগে সন্দেহভাজনরা গ্রেফতার হয়ে গেছে, প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের ‘দায় আছে দায় নেই’ আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে—এত সব ঘটনা ঘটেছে, দ্রুততম সময়ে। এগুলো রহস্যজনক!

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে ঘটে যাওয়া এত সব ঘটনার রহস্য উন্মোচনও জরুরি।

কবির য়াহমদ: অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর,বার্তা২৪.কম

;