২ জুলাইয়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করার নির্দেশ



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

ফার্মেসিতে সংরক্ষিত মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত প্রস্তুতকারী এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে ফার্মেসি থেকে সংগ্রহ করে সঠিক নিয়মে ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।

রোববার (২৩ জুন) ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার এবং ধ্বংসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মহাপরিচালক জানান, ফার্মেসির মালিকরা তাদের কাছে সংরক্ষিত মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ শিগগিরই ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত নিতে বলতে হবে। সেই প্রেক্ষিতে প্রস্তুতকারী বা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ওষুধগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে।

প্রস্তুতকারী এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে ফার্মেসি থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংগ্রহ করে সঠিক নিয়মে ধ্বংস করার নির্দেশ দেয় অধিদফতর।

সভায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি, ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের সভাপতি ও সচিব উপস্থিত ছিলেন।

   

ডেঙ্গুতে মাকে হারিয়েছি, আর কারও মা যেন না হারায়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ১৯৮০ সালে ডেঙ্গুতে আমি মাকে হারিয়েছি। তাই এটা নিয়ে আমার চিন্তা আছে। ডেঙ্গুতে আর কারও মা ও স্বজন যেন মারা না যায়।

মঙ্গলবার (৭ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪ সালের ডেঙ্গু প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির আগেই তা প্রতিরোধে জনসচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সব রোগের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে রোগটি কারও হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা যায়। মানুষের যেন ডেঙ্গু না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মশা নির্মূলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশন এবং যে ঘরে মানুষ থাকে সেখানকার সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলা করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সম্মেলিতভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। ডেঙ্গু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে গেছে। একটা রোগ হয়ে গেলে আমরা চিকিৎসা দিই। মানুষ যেন না মরে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা অনেক আলোচনা ইতোমধ্যে করেছি। আমি নির্দেশনা দিয়েছি যাতে ডেঙ্গু বৃদ্ধির সময়ে কোনোভাবেই স্যালাইন সংকট দেখা না দেয় এবং স্যালাইনের দামও না বাড়ে। ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়লে হাসপাতালগুলোকে খালি রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি। বর্তমানে মশা মারার পদ্ধতি নিয়েও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম বলেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য দেশের প্রত্যেকটা জায়গার জনপ্রতিনিধি যেমন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা স্তরের সবাইকে সংযুক্ত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান, বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) মালা খান প্রমুখ।

;

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মনে হয় গরু কুকুর মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে!



তোফায়েল আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনবার দেশ সেরার খ্যাতি পাওয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম এক কথায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের ভেতরে গরু ও কুকুরের দলের অবাধ বিচরণ দেখে মনে হবে, হাসপাতালে গরু, কুকুর ও মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে। হাসপাতালের সেবার মানের পাশাপাশি চিকিৎসক, নার্স এবং স্টাফদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোগী এবং তাদের স্বজনেরা।

তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ।

রোববার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গরু ও কুকুরের অবাধ বিচরণের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হয়। ওই ছবিগুলোতে দেখা যায় যায়, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে কুকুর শুয়ে আছে। দেখলে মনে হবে যেন কুকুরের দল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে। আবার আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রোগীর সঙ্গে গরু হেঁটে হেঁটে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকছে।

Abdulla Al Amin নামে একজন ফেসবুকে ছবিগুলো আপলোড করে লিখেছেন-

‘মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ময়মনসিংহ (৪) সদর আসনের সংসদ সদস্য, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এশিয়া মহাদেশের মাঝে নামকরা উল্লেখযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান, আজ এই হাল কেন? যেখানে টেন্ডার নিয়ে মারামারি হয়, পুলিশ পাহারা দিতে হয়। হাসপাতাল নিরাপত্তায় কতজন সরকারি বেসরকারি (আউটসোর্সিং) নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে! অভ্যন্তরে টয়লেটগুলোর কি হাল সরেজমিন পরিদর্শন করুন’।

সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তরফদার নামে একজন আইডি থেকে রোগীর পাশে কুকুর শুয়ে আছে, এমন ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘হায়রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালের দৃশ্য’।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল: দেখে মনে হয় গরু কুকুর মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে এসেছে! ছবি- বার্তা২৪.কম

‘Mymensingh Helpline’ পেজে হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের ছবিগুলো পোস্ট করে Rezwan Bidhuth নামে একজন লিখেছেন-

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে, বিস্তারিত আপনারাই বলেন??’

এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার মানুষ ছাড়াও কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ এবং গাজীপুর থেকে রোগীরা সেবা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে চার থেকে সাড়ে চার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নেন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় আট হাজার রোগীর চাপ সামলিয়ে সেবার মান নিশ্চিত করে বিগত পরিচালনা প্রশাসনের নেতৃত্বে ২০১৮, ১৯ এবং ২০২০ সালে ‘হেলথ মিনিস্টার্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগী, তাদের স্বজন এবং সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি, লক্ষ করা দেখা যায়, নোংরা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে মেঝে এবং বারান্দায় গাদাগাদি করে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছেন রোগীরা। দেড়, দুই বছর আগে নিয়মিত ওষুধ পাওয়া গেলেও এখন সংকট চলছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও বিস্তর ভুলের অভিযোগ। আবার অনেক চিকিৎসক বাইরে তাদের পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের।

হার্টের সমস্যা নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭১ শয্যা কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি হন জেলার হালুয়াঘাটের মোশারফ হোসেন। শয্যা না পেয়ে বারান্দায় সেবা নিচ্ছেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর পরই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেলেও ইকো বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষার সময় বেঁধে দেওয় হয় দুই মাস পর। বাধ্য হয়ে তিনি ইকোসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা বাইরে করান।

মোশারফ হোসেন বলেন, আমি হার্টের রোগী হওয়ায় অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে ডাক্তার বলেছেন ইকো পরীক্ষা করাতে। কিন্তু তারা পরীক্ষার জন্য সিরিয়াল দিয়েছে দুই মাস পর। বাধ্য হয়ে তা বাইরে করিয়েছি। মেশিন নষ্ট থাকার কারণে অনেক পরীক্ষা তাদের এখানে হচ্ছে না। তাই, ডাক্তাররা অন্য ক্লিনিকে করার পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা গরিব বলেই এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসি। কিন্তু এখানে এসে ভোগান্তির পাশাপাশি ফতুরও হচ্ছি আমরা।

একই অবস্থা আট মাস আগে ভর্তি হওয়া অনতি পালের। তাকে ঢাকায় গিয়ে ইকো এবং এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আক্ষেপ করে অনতি পাল বলেন, আমার যদি ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করার মতো অবস্থা থাকতো, তাহলে কি এখানে এতদিন থাকতাম! তাদের পরামর্শে বাইরের ক্লিনিক থেকে অনেক পরীক্ষা করিয়েছি। এখন হাতখালি। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও জোগাড় করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, মরলেই বাঁচি আর আপনাদের কাছেই-বা বলে কী লাভ হবে!

একই ওয়ার্ডে মাকে ভর্তি করিয়েছেন তারাকান্দার তরুণ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে ডাক্তার, নার্স পাওয়া গেলেও ওয়াশরুমের অবস্থা একেবারেই খারাপ। ভালো মানুষ সেখানে গিয়েও অসুস্থ হচ্ছেন। দেশসেরা হাসপাতালের এই অবস্থা ভালো লক্ষণ নয়!

প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কারণে তিনটি ইকো মেশিনের মধ্যে দুটিই অকেজো হওয়ায় পরীক্ষার সময় বেশ লাগছে বলে জানিয়েছেন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল।

তিনি বলেন, বেড ৭১টি কিন্তু রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন আসেন তিন থেকে চারজন করে। তাহলে ওয়ার্ডের পরিবেশটা কেমন হবে আপনারাই বলেন!

তা রোধে এবং সেবার মান নিশ্চিত করতে অ্যাটেন্ডেন্স কার্ড করা হয়েছে। একজন রোগীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুইজনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমরা ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছি।

যন্ত্রপাতি অকোজো থাকার বিষয়ে ডা. গোবিন্দ কান্তি পাল বলেন, অকেজো ইকো মেশিন মেরামত এবং নতুন মেশিনের চাহিদার কথা জানিয়ে ২০২১ সাল থেকে গত তিন বছরে কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সাত দফা হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গাইনি ওয়ার্ডে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পরিচালক নাসির উদ্দিনের সময়ে হাসপাতালে একটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন তার কিছুই নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে রোগীরা সেবা নিচ্ছেন। নার্স এবং চিকিৎসকরাও আন্তরিক নন। তারা রোগী এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন।

সেইসঙ্গে তিনি এটাও বলেন, তিনটির মধ্যে একটি ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। বাকি দুটি বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। বছরের শুরুতে যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে শেষে কী হতে পারে আপনারাই বলুন!

ফরিদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আমার এক রোগীকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। আলট্রা করানোর পর এখানকার চিকিৎসকেরা এক ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন আর বাইরের চিকিৎসকরা অন্য ধরনের রিপোর্ট দিয়েছেন। পরে বাইরের রিপোর্টই সঠিক হয়েছে।

হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা যে হাসপাতালটিকে নিয়ে গর্ববোধ করি, তার যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে যাওয়ার আর জায়গা নেই। কয়েকদিন এখানে ঘোরাঘুরি করে বুঝতে পেরেছি, মেডিসিন রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি খায়রুল ইসলাম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালটিতে রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে মানুষ মেঝে এবং বারান্দাতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু সেখানটাও অপরিচ্ছন্ন।

ভেতরে অনেকগুলো গেট পার করে কুকুর এবং গরু প্রবেশ করছে। তাহলে দারোয়ান রেখে লাভটি কী হলো বলেন তো! চিঠি লিখেই বা এমপিকে বললে কী আর সমাধান হবে! আমরা সবাই নিজে বড় হতে চাই, কারো দিকে না থাকিয়ে।

হাসপাতালের নানা অসঙ্গতির বিষয়ে জানার পাশাপাশি রোগীদের ভোগান্তি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্তর নির্দেশে জরুরি বিভাগের সঙ্গে ‘অনুভূতির বাক্স’ স্থাপন করেছে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। পর পর তিনবার দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করা হাসপাতালের এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে ‘জনউদ্যোগ’ ময়মনসিংহের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, স্থানীয় সংসদের ‘অনুভূতির বাক্স’ স্থাপনকে অন্তত সম্মান দেখিয়ে হলেও রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। আমরা পুরস্কার না পেলেও চাই, রোগীরা যেন তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।

হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রশাসন মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যে, আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি, তা তো বলেন না! সেবার মান যদি খারাপ হতো তাহলে কি একহাজার শয্যার হাসপাতালে চার হাজার রোগী ভর্তি থাকতো!

অবাধে কুকুর এবং গরুর প্রবেশের প্রশ্নটি এড়িয়ে তিনি বলেন, কার্ডিওলজি বিভাগের দুর্ভোগ নিরসনে পরবর্তী অর্থবছরে নতুন ইকো মেশিন কেনা হবে। এছাড়াও সেবার মান নিশ্চিতে অন্যান্য সমস্যা নিরসনে কাজ হচ্ছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো নজরে এসেছে। সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার থেকে যে ওষুধ আসে, সব ওষুধই আমরা রোগীদের দিয়ে দিই।

 

;

একটাই প্রতিজ্ঞা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নড়াইল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, স্বাস্থ্যখাত সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার একটাই প্রতিজ্ঞা যে, আমি জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবো, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায়!

শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে নড়াইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে জেলা হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নড়াইলে যদি একটা ভালো হাসপাতাল, অপারেশন থিয়েটার হয়, তাহলে তো রোগীরা ঢাকা বা যশোরের দিকে যাবেন না। বড় বড় হাসপাতালে রোগীদের চাপে হাঁটা যায় না। আমরা যদি এখানে ভালো চিকিৎসা দিতে পারি, রোগীরা ঢাকামুখী হবেন না। নড়াইলের দুটি সুন্দর হাসপাতাল দেখলাম! হাসপাতাল দুটিকে যদি চালু করা যায়, তাহলে বহু মানুষের উপকার হবে। আমি অবশ্যই অবশ্যই এ ব্যাপারে কাজ করবো!

নড়াইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন ভবন উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন 

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রশংসা করে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মাশরাফি যেভাবে হাসপাতালটাকে নিজের মনে করেন, এভাবে যদি সারাদেশের সংসদ সদস্যরা মনে করতেন, তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অনেক ওপরে চলে যেতো। সংসদ সদস্যরা যদি যার যার এলাকার হাসপাতালে গিয়ে নিজের চেক-আপ করান, তাহলে জনগণের আস্থাটা বাড়বে। তারা যদি কথায় কথায় বিদেশ চলে যান, তাহলে জনগণের আস্থা আসবে না।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম, জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুল গফফারসহ আরো অনেকেই।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিকেল ৩টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামান্ত লাল সেন জেলার লোহাগড়া উপজেলায় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন।

 

;

হিট স্ট্রোক এড়াতে আরএমপি’র স্বাস্থ্য বার্তা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীসহ দেশের সবগুলো জেলাতে তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তৈরি হচ্ছে, অসহনীয় পরিস্থিতি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে তাপমাত্রা আরো বাড়বে।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ ও দাবদাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে, ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর।

দাবদাহে তীব্র মাথাব্যথা, ত্বক লাল হওয়া, অবসন্ন বা অবসন্ন ভাব, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, মাংশপেশীর খিঁচুনি এবং হিট স্ট্রোকের শিকার হচ্ছে অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) নাগরিকদের হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ বার্তা জারি করেছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের শরীরের ভেতরে নানান রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে এমনিতেই সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে। ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় অবস্থান করলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং শরীর নিজ থেকে এই অতিরিক্ত তাপ বের করতে পারে না। শরীরের এই তাপজনিত গুরুতর অসুস্থতাই হলো, হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোক।

তিনি বলেন, তীব্র গরমে রোদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করার কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও তরল বেরিয়ে যাওয়ায় পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে শরীর হয়ে যায় অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত। তাছাড়া কিছু ওষুধ, যেমন; মূত্রবর্ধক, বিটা-ব্লকার্স কিংবা এন্টি-কলিনার্জিক্স, অতিরিক্ত মদ্যপান বা মাদক সেবনও শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

এই ঝুঁকি শিশু, বয়স্ক মানুষ (৬৫ বছরের বেশি বয়স), স্থূল ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী এবং হৃদ্‌রোগ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, হিট স্ট্রোক সাধারণত ‘ক্ল্যাসিক’, ‘এক্সারজেশন-অ্যাসোসিয়েটেড হিট স্ট্রোক’ এবং ‘হিট স্ট্রোক ফ্রম হিট ইলনেস’- এই তিন ধরনের হয়ে থাকে।

ক্লাসিক হিট স্ট্রোকের সবচেয়ে সাধারণ ধরন, যা গরমের পরিবেশে দীর্ঘ সময় অবস্থানের কারণে হয়। গরম পরিবেশে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এক্সারজেশন-অ্যাসোসিয়েটেড হিট স্ট্রোক হতে পারে এবং হিট স্ট্রোক ফ্রম হিট ইলনেস হিট স্ট্রোকের একটি জটিলতা, যা হালকা হিট ইলনেসের পরেও ঘটে। হিট স্ট্রোকের ফলে রোগী বা রোগীর মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনি, যকৃত, পেশি ও ত্বকের নানাবিধ ক্ষতি হয়।

আরএমপির এই চিকিৎসক বলেন, হিট স্ট্রোকের তীব্র তাপমাত্রা মস্তিষ্কের কোষ এবং কিছু কিছুক্ষেত্রে রক্তনালীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং এমনকী মৃত্যুও হতে পারে।

হিট স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। হিট স্ট্রোক কিডনি ও যকৃতের রক্ত নালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এইসব অঙ্গগুলো বিকল করে দিতে পারে।

তাছাড়া হিট স্ট্রোক রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। মনে রাখতে হবে, হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা, যার দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। তা না হলে হিট স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।

হিট স্ট্রোক এড়াতে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যতটা সম্ভব তীব্র তাপদাহ বা অতিরিক্ত গরমের সময় বাইরে কম বের হতে হবে। প্রচুর পরিমাণে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করতে হবে। হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। একটানা পরিশ্রম না করে থেমে থেমে কাজ করতে হবে।
এছাড়া ছাতা, টুপি, কালো চশমা এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

;