চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০০ জনের বেশি গবেষকদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে 'আন্তর্জাতিক জীবপ্রযুক্তি সম্মেলন'।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের অডিটোরিয়ামে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে শেষ হয়।
চবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে এবং তা শনাক্তকরণে কীভাবে জীবপ্রযুক্তিকে কাজে লাগানো যায়, বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের কারণ অনুসন্ধানে জিনোম সিকোয়েন্স বা জিন এডিটিং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বন্যা এবং খরাতে কীভাবে শত শত কোটি টাকার ক্ষতি কমানো যেতে পারে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কীভাবে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে কাজ করতে পারে, এরকম অনেক বিষয় উঠে এসেছে এই সম্মেলনে।
চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত জীবপ্রযুক্তিবিষয়ক এই সম্মেলনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকসহ ৫২০ জন দেশি-বিদেশি গবেষক অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের গবেষণার বিষয়কে অন্যদের কাছে তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় একাধিক সেমিনার। পাঁচটি বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে গবেষকেরা আলোচনা করেন। সেগুলো হলো- প্রাণী, মৎস্য ও সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি; বায়োইনফরমেটিকস সিস্টেম এবং কম্পিউটেশনাল বায়োটেকনোলজি; শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং খাদ্য জৈবপ্রযুক্তি; চিকিৎসা, স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোবিয়াল জৈবপ্রযুক্তি; উদ্ভিদ, কৃষি এবং পরিবেশ জৈবপ্রযুক্তি।
শনিবারের এ সম্মেলন উদ্বোধন করেন, ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ড. একে আজাদ চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- চবি উপউপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক অধ্যাপক ড. উৎপল বোরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, আইসিডিডিআর,বি'র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ, আইসিডিডিআর,বি'র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট (ইমিরেটাস) ড. রুভানা রাকিব, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান, অধ্যাপক ড. লুলু ওয়াল মরজান, অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. আদনান মান্নানসহ পৃথিবী খ্যাত ২০০ জন গবেষক।
'আগামী দিনের জন্য জীবপ্রযুক্তি, অসাধারণত্বের পথে' স্লোগানে শনিবার দিনব্যাপী নানা আয়োজনে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ভারতসহ পৃথিবীর আটটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং শিল্প উদ্যোক্তারা তাদের জীবপ্রযুক্তির দক্ষতা এক টেবিলে নিয়ে আসেন।
এতে উল্লেখযোগ্য একটি পর্ব ছিল- বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করা অনূর্ধ্ব ৪০ বছরের তরুণদের নিয়ে, যারা বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশিত তাদের গবেষণাগুলো প্রদর্শন করেন।
এই পর্বের নামকরণ করা হয়- 'ইয়াং ইমাজিন বায়োটেকনোলজিস্ট'। এই পর্বের উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল- অটিজম প্রতিরোধে কীভাবে জিনকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি এবং প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কীভাবে জিন ও জিনোমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়; কীভাবে উদ্ভিদের নির্যাস থেকে শনাক্তকৃত ক্যান্সার প্রতিরোধ ড্রাগ আগামীদিনের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যবহার করা যেতে পারে; কীভাবে হাড়ের ক্ষয় ও বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে 'মাইক্রো আর এন এ' নামে একটি প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের জীবপ্রযুক্তি গবেষণায় বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বিশেষভাবে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানান তিনি।