উপাচার্যের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না চবি শিক্ষক সমিতি

, ক্যাম্পাস

চবি করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2024-01-25 23:04:20

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার শিক্ষক সমিতিকে মৌখিকভাবে ও চিঠি দিয়ে আলোচনার আমন্ত্রণ জানালেও লাগাতার আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির একাংশের নেতারা এতে সাড়া দেননি। এতে করে আইন অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করার দাবি আদায়ে শিক্ষক সমিতির আগ্রহ প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে.এম. নুর আহমদ স্বাক্ষরিত একটি আমন্ত্রণ পত্র শিক্ষক সমিতির কার্য-নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকীকে মুঠোফোনে কয়েকদফা কল করে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানান বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছাত্র উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও চ্যান্সেলর মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আবুল মনসুর কয়েক দফা শিক্ষক সমিতির সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানান।

২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নুরুল আজিম সিকদারের মাধ্যমে শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি চলাকালীন সমিতির নেতৃবৃন্দকে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে বারবার কল করেই যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও বুধবার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর আগে দুই জন সিনিয়র প্রফেসর গেছেন ওনাদের কাছে। ওনারা আসছেন না। ওনাদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ আমি স্থগিত রেখেছি৷ আইন অনুষদের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির আলোচনা করে আমি সমাধান করতে চাচ্ছি দীর্ঘদিন ধরে। ওনাদের আলোচনায় বসা উচিত। আন্দোলন করার কিছুই নেই। ২৬ দফা দাবির ২০ দফা আমি অনেক পরিশ্রম করে বাস্তবায়ন করেছি। মাঝেমধ্যে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়। ট্রেন আটকে দেয়। ভাঙচুর করে বসে। এসবতো দীর্ঘদিনের সমস্যা। চাইলেই একদিনে সমাধান সম্ভব নয়। শিক্ষক সমিতি বলে, এসব আমাদের সমাধান করতে হবে। আমার কথা হলো, এসব দাবি সম্মিলিত প্রয়াসে সমাধান করতে হবে। ব্যাপারগুলো রাজনৈতিক।

উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষক সমিতির দাবি ছিল নতুন বাস দিতে হবে। আমি কয়েকদিন আগেই কয়েকটি বাস ও মাইক্রোবাস যুক্ত করেছি। শিক্ষকদের পারিতোষিক ৮০ শতাংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিয়েছি। ঢাকার গেস্ট হাউজে নতুন ফ্ল্যাট কিনেছি। মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে সিনিয়র শিক্ষকদের টেলিফোন বিল প্রদান করেছি। চট্টগ্রামে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ক্লাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য ফ্ল্যাট অথবা ভবন ক্রয়ে কমিটি করে দিয়েছি। শিক্ষক সমিতি বাংলা ও আইন বিভাগের নিয়োগ স্থগিত চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। আমি যখন এগুলোও সমাধান করতে গেলাম, তারা পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন শুরু করলো। তাদের উদ্দেশ্য যদি দাবি আদায় হয়, তাহলে তাদেরতো আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে। আমার দরজা খোলা। আমি যেকোনো সময় আলোচনায় বসে সকল দাবি পূরণের মানসিকতা রাখি। এটা অতীতেও আমি করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে চলমান এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে ১০-১৫ জন শিক্ষক। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উপাচার্য প্রার্থীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অতীতে বিভিন্ন উপাচার্যের দায়িত্বপালনকালীন সময়ে আন্দোলনরত এই শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।


এ ব্যাপারে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উনার সাথে আলোচনায় বসতে চাই না বিষয়টা সঠিক নয়। এর আগে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম কিন্তু উনি আমাদের অপমান করে বিদায় করেছিলেন। আলোচনায় আসতে বলে উনি আমাদের সাথে ভিন্ন রকম আচরণ করেন। এছাড়াও উনি আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আলোচনায় বসার ব্যাপারটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নয়। এ আন্দোলনের সাথে অনেক শিক্ষক যুক্ত আছেন। আমরা যদি উপাচার্যের চায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দেই তাহলে অন্যান্য শিক্ষকরা আমাদেরকে ভুল ভাববেন। আমরা এ ব্যাপারে একটা মিটিং করব এবং সেখানে যদি উনার সাথে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয় তাহলে সকলকে নিয়ে সাক্ষাৎ করব।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলা ও আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হয় শিক্ষক সমিতির আন্দোলন। এরপর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি,প্রতিকী অনশন এবং সর্বশেষ সংবাদ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিক্ষক সমিতি যা এখনো চলমান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর