কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার শত্রুদের উপস্থিতিতে

[পূর্ব প্রকাশের পর] একঘণ্টা অতিক্রান্ত হলে রিড আবার হাঁটা শুরু করেন। জয়পাহাড় এলাকায় অবস্থিত গুর্‌গানসের বাসায় গিয়ে রিড দেখেন, তিনি এবং পার্শ্ববর্তী বাড়ির আরো ছাব্বিশ জন বিদেশি, ঘটনা এর পর কোনদিকে মোড় নেয় সেটা দেখার অপেক্ষায় বসে আছেন। তারা বাইরে লোফালুফি খেলছেন আর তাদের পত্নীরা ফ্রিজ ও রান্নাঘরের ওপর মুর্হুমুহু হামলা চালাচ্ছেন রসালো খাদ্যবস্তু রন্ধনের বাসনায়।

তাঁরা রিডকে জানান শহরের এই অঞ্চলে কী কী ঘটনা ঘটছিল। তিনি দেখতে পান উঠোনে বুলেট ও গোলার টুকরো ছড়িয়ে আছে। তাদের সাধারণ অনুভূতিটুকু এরকম ছিল যে, খেলা শেষ; পাঞ্জাবিরা দৃশ্যত জয়ী হয়েছে এবং দুচারদিনের মধ্যেই সবকিছু সেনা শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এটাকে একটা যৌক্তিক উপসংহার বলেই মনে হয়েছিল তাঁর কাছে। রিড ঠিক করেন আমরা থাকব এবং তিনি আবার দীর্ঘ প্রত্যাবর্তনের পথ ধরেন। পথে জব্বারের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে তারা কিছু খাদ্যদ্রব্যও কিনে আনেন, যার মধ্যে ছিল একটি পাকা তরমুজ।

কিন্তু এর মধ্যে আমি ও লিন গোছগাছ করে মালুমঘাট, এবং প্রয়োজনে আরো দূরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমরা আমাদের সমস্ত মূল্যবান দ্রব্য একটি ড্রামের মধ্যে ভরে রাখি। আমরা কাগজপত্র ঘেঁটে যেগুলোকে মনে হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে, সেগুলো পুড়িয়ে ফেলি। তারপর আমরা চিন্তা করতে থাকি কোনগুলোকে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে। এর আগে জরুরি নির্গমনের বেলায় সুটকেস গোছানোর সময় আমরা সাধারণত কাপড়, উপহারসামগ্রী, স্লাইড ইত্যাদি যেসব বাড়ি নিয়ে যেতে চাই সেগুলোকেই অগ্রাধিকার দিতাম। আমরা এই সুটকেসগুলো এর আগে ফিল্ড কাউন্সিল মিটিংয়ে নিয়ে গেছি আমাদের সঙ্গে, আবার ফেরতও এনেছি। এবার সুটকেস নেওয়ার মতো জায়গা থাকবে না গাড়িতে। মানুষ ও খাদ্যদ্রব্যের জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখতে হবে। আমরা ঠিক করি আমি ও লিন দুজনে মিলে একটি কাঁধব্যাগমাত্র নেব। আমরা দুজনে দুটো করে কাপড় পরি, সঙ্গে একটা অন্তর্বাস, রবিবারের পোশাক, একটি গয়নার বাক্স, একটি প্রসাধনীর বাক্স আর চুল বাঁধার সেই ছেলেমানুষী ক্লিপগুলো নিই, যা প্রচুর জায়গা মারে ব্যাগের। (আমাদের ব্যাগের এই দ্রব্যসামগ্রীর তালিকা নাকি প্রচুর আলোচনার জন্ম দিয়েছিল বন্ধুদের মাঝে, যারা আমাদের প্রার্থনাপ্রত্রে সে-সম্পর্কে পড়েছিল। অনেকদিনের জন্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় দুটি মেয়ে মিলে একটি মাত্র কাঁধব্যাগ নিয়ে যাওয়ার এই গল্প!)

সেই ছোট্ট ব্যাগের অভ্যন্তরে ব্যক্তিগত জিনিসগুলোর চেয়েও অনেক জরুরি ছিল আমাদের কাছে একখানি চামড়ার ফাইল, যেখানে আমাদের বাইবেল অনুবাদ ও অন্যান্য সাহিত্যিক প্রকল্পের পাণ্ডুলিপিসমূহ লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম অমরা।

বাঁধাছাদার সময় দুটো চিন্তার আবর্ত আমাদের পাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। দিদিমা যখন বুঝতে পারলেন আমরা কী করতে যাচ্ছি, তখন তিনি সরাসরি যেতে অস্বীকার করে বসলেন। তিনি এর আগেও কখনো পালাননি এবং এবারও কোথাও পালিয়ে যাবেন না। আমরা তাহলে কী করতে পারি? আমরা তাঁকে ছেড়েও যেতে পারিনি, তাঁকে নিয়েও যেতে পারিনি কোথাও। হঠাৎ করে অনেকটা ঈশ্বরপ্রদত্ত এক আপতিকতার মতো করে তাঁর ছেলে এসে আমাদের দরজার কড়া নাড়ে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি তাঁর আর একটিমাত্র শাড়ি এবং পোষা বিড়ালটিকে বগলদাবা করে নিয়ে, ‘আমি তোমাদের বলেছিলাম না’ গোছের একটি চাহনি দিয়ে, তাঁর ছেলের বাড়ির পথে রওনা দিলেন, যেখানে তিনি যুদ্ধের বাকি পুরোটা সময় বিপুল বিস্মরণ ও তুলনামূলক নিরাপত্তার মধ্যেই কাটিয়ে দিতে সক্ষম হন।

একই সঙ্গে, নিচতলার ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীরাও আসেন আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে। আমাদের যাওয়ার মতো একটি জায়গা আছে শুনে, ছয় বাচ্চার তরুণী মাতা, সবক’টাই আট বছরের নিচে, ডুকরে কেঁদে ওঠেন। “আমাদেরকেও আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যান, দোহাই, আমাদেরকে নিয়ে যান।”

“গাড়ি ভরে গেছে, সেখানে কোনো জায়গাই নেই” বলতে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছিল, কিন্তু সত্যি সত্যি গাড়িটি ততক্ষণে বিপজ্জনকভাবে অতিভর্তি হয়ে গিয়েছিল।

দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ রিড এসেই বোমা ফাটান এই বলে যে, আমাদের কোথাও যাওয়া উচিত হবে না। আমরা তাকে যাওয়ার পক্ষে আমাদের কারণগুলো জানাই:

• আমরা যদিও সরাসরি গোলার আঘাতে সম্ভাব্য মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিলাম না, তবুও যদি কোথাও যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে এভাবে বোকা হাঁসের মতো বসে থাকার কোনো মানে হয় না।

• মঙ্গলবার রাতে রিড আলতোভাবে উল্লেখ করেছিলেন যে, যেটা তাকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, সেটা হচ্ছে জয়লাভের পরে পাঞ্জাবিরা মেয়েদের সঙ্গে কী আচরণ করে। এটা আমাদেরকেও ভাবাচ্ছিল—কেবল নিজেদের জন্যই নয়, বসু পরিবারের বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর জন্য।
• গত পাঁচরাতে মোটেও ঘুমাতে না পেরে আমরা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
• আমাদের পানি ফুরিয়ে গিয়েছিল আবার এবং অন্যান্য রসদও শেষ হবার পথে।

রিড আমাদের এইসব যুক্তির ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ দেখান না। এরপর আমাদেরই কেউ—এটা আমি নাকি লিন ছিলাম—আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, বলে ওঠে, “আমাদের মনে হয় এবার ঈশ্বরই চান আমরা যেন চলে যাই।”

সেটাই যথেষ্ট ছিল। রিড আমাদের সঙ্গে তর্ক করতে পারেন, কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে কখনোই নয়।

আমার ক্ষেত্রে, এই নিশ্চিত তাড়নাটুকু ছিল একটা অদ্ভুত ব্যাপার। আমার খ্রিস্টীয় অভিজ্ঞতাটুকু ছিল অনেকটা পায়ে পায়ে অনুসরণ করে যাওয়ার মতো। আমার জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে খুঁজে পাওয়ার মতো কোনো নাটকীয় ঘটনা ঘটেনি তখনও। এমনকি বৃহৎ বিষয়েও—যেমন স্কুল-পছন্দ, পেশা-নির্বাচনের ক্ষেত্রে—কোনো আলো, দৈববাণী কিংবা বিশেষ নির্দেশনা ব্যতিরেকেই সবকিছু ঠিকঠাক মিলে গিয়েছিল। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা একেবারে নিশ্চিত নির্দেশনা ছিল, “এটাই পথ। এই পথে হাঁটো তুমি।”

একবার যখন সিদ্ধান্ত হয়ে গেল যে, আমরা যাচ্ছি, তখন আর রিড কোনো সময় নষ্ট করলেন না।

র‌্যাচেলকে আনার জন্য নির্মলকে পাঠিয়ে দিয়ে, রিড ও জব্বার গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। অলৌকিকভাবে এবার এটা প্রথম চেষ্টাতেই চালু হয়। তারপর আসে দ্বন্দ্ব : তিনি কি গলির ভেতর দিয়ে, অজানা বিপদের মাঝ দিয়ে এঁকেবেকে এগুবেন, নাকি একবারে বড় রাস্তা ধরে কামান-বন্দুকের নিচ দিয়ে গাড়ি চালাবেন? রিড দ্বিতীয়টির পক্ষে সায় দেন।

আমি শেষবার বাড়িটা ঘুরে দেখি সবকিছু বন্ধ করা ও তালা লাগানো হয়েছে কিনা। আমি নিচু হয়ে দেখতে চেষ্টা করি রেফ্রিজারেটরের কেরোসিন শিখা জ্বলছে কিনা। গত পাঁচদিন ধরে এর কাঁটা শূন্যের ঘরে ছিল। আমার চোখের সামনেই শিখাটি শেষবার জ্বলে উঠে নিভে গেল।

আমাদের গলির কোনায় গাড়িটা দাঁড়ালে মি. দাশ ও তাঁর মেয়ে র‌্যাচেল গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। আমরা পাঁচজন গাড়ির ভেতরে উঠি আর বাকিরা পেছনের খোপে কাপড়চোপড় ও চাল, আটা, ময়দার ব্যাগের সঙ্গে। সবচেয়ে বড়ো সমস্যা ছিল পেছনের বামদিকের চাকার প্রায় চুপসে যাওয়া টায়ারখানি। আমরা একটা রিকশা পেয়ে যাই যে কিনা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, একটি বাচ্চা ও একটি কুকুরকে যাত্রী হিসাবে নিতে রাজি হয়; আর বাকিদেরকে নিয়ে রিড কোনোমতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আমাদের অফিসে পৌঁছে, চাকায় বাতাস ভরার পাম্পটা আনতে সক্ষম হন।


বার্তা২৪.কম-এর শিল্প-সাহিত্য বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
[email protected]


চাকায় বাতাস ভরে, একটা বাড়তি ধাক্কায় গাড়িখানা চালু করে আমরা শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি। আমরাই একমাত্র শহর ছাড়ছিলাম না। বিভিন্ন মডেল ও মেয়াদের গাড়ি মানুষে ও মালপত্রে ঠাসাঠাসি হয়ে হর্ন দিতে দিতে আমাদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল আর আমরাও তাদের অনুসরণ করে শহরত্যাগের কাফেলায় যোগ দিই।

শহরের উপকণ্ঠে আমরা সেই বেতারকেন্দ্রটা পেরিয়ে যাই যেটা এই সপ্তাহের শুরুতে ছিল বোমা ও গোলাগুলির প্রধান লক্ষ্যবস্তু। শহর থেকে বেরুনোর পরপরই শুরু হলো তল্লাশি চৌকি। প্রতিটাতেই আমাদের থামানো, জিজ্ঞাসাবাদ এবং মাঝেমধ্যে তল্লাশিও করা হচ্ছিল। কিছু চৌকি পাহারা দিচ্ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের দ্বারা প্রশিক্ষিত চৌকশ জোয়ানরা, আবার কয়েকটায় এমন বোকাহাবা লোকেরাও ছিল যারা মনে হচ্ছিল বন্দুকটাও কিভাবে ধরতে হয় জানে না। সবচেয়ে বিশদ তল্লাশি হয় কালুরঘাট ব্রিজের ওপারে। সেখানে তারা এক পর্যায়ে রিডকে একপাশে ডেকে নিয়ে অনুরোধ করে, তিনি যেন এ নিয়ে নিক্সনের সঙ্গে কথা বলেন। আমেরিকানদের ওপর তাদের কতখানি বিশ্বাস ছিল, (এই ক্ষেত্রে যদিও সেটা ছিল অপাত্রে দান করা বিশ্বাস) সেটা দেখে আমাদের বুক ভেঙে যাচ্ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো সরাসরি যোগাযোগ থাকতে পারে এমন সরল বিশ্বাসে তারা চিৎকার করে বলে, “আমেরিকা যদি জানত তারা এখানে কী করছে আমাদের ওপর, তাহলে নিশ্চয়ই সে এসে আমাদের সাহায্য করত।”

এক জায়গায় জনৈক ব্যক্তি আমাদের গাড়ির জানালায় তার মাথা ঠেকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “আপনারা আমাকে চিনতে পারছেন?”

আমি সেই লাল শার্ট-পরা গার্ডকে চিনতে না পারলেও, সে নিজেই পরিচয় দিয়ে বলে, সে পিআইএ অফিসের সেই কেরানি যে-আমাদেরকে বিমানের টিকিট বিক্রি করেছিল।

সব মিলিয়ে সেই পঁয়ষট্টি মাইলের যাত্রাপথে মোট সতেরোটি তল্লাশি চৌকি ছিল। প্রতিটা চৌকিতেই আমরা মুক্তিবাহিনীর জন্য চাঁদা দিয়েছিলাম।

মাঝরাস্তায় আমরা একবার গাড়ি থেকে বেরিয়ে শরীরের আড় ভাঙি, তরমুজ কিনে খাই এবং বোমার ধোঁয়া কিংবা গলিত লাশের গন্ধে অকলুষিত বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিই।

এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে, আমরা একটা ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ানো শহর ছেড়ে পালাচ্ছি। এখানে বসন্তের বিকালের বাতাস প্রশান্ত ও মধুর, বাংলাদেশের পতাকা এখনো প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় উড্ডীন আর গ্রামবাসীরা তখনও প্রত্যেককে ‘জয় বাংলা’ বলে সম্ভাষণ জানাচ্ছিল।

বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আমরা মালুমঘাট হাসপাতালের ভেতর ঢুকি। হাসপাতাল ভবন ও আবাসিক এলাকার মাঝখানের রাস্তায় মিশনারি ল্যারি গলিন তখন পায়চারি করছিলেন।

আমাদেরকে দেখে একগাল হেসে তিনি ছোট্ট একটি বাক্যে তাঁর পুরো অনুভূতিটুকু জানিয়ে দিলেন, “ও, কী যে খুশি হয়েছি তোমাদের দেখে!”

হাসপাতাল ভবনের পেছন থেকে আবাসিক এলাকা হয়ে, মিশনারিদের বাড়িঘর ছাড়িয়ে সামনে এগুতে এগুতে আমাদের মনে হচ্ছিল আমরা বুঝি এক শান্তির মরূদ্যানে এসে উপস্থিত হয়েছি। যুদ্ধকে মনে হচ্ছিল অনেক দূরের বিষয়। প্রাঙ্গণের একেবারে শেষপ্রান্তে অবস্থিত নার্সদের কোয়ার্টারে পৌঁছানোর আগেই আমাদের আসার খবর ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ মিশনারি পরিবার ও আমাদের বাঙালি বন্ধুরা একটি আনন্দাশ্রুময় পুনর্মিলনের জন্য জমায়েত হয়।

সবাই একসঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। আমাদের ফিল্ড কাউন্সিল সভাপতি জে ওয়াল্শ পরামর্শ দেন, “চলো আমরা একটা সভা করি, যাতে করে সবার গল্প সবাই একসঙ্গে শুনতে পারি।”

সেই সভা দিয়েই শুরু হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে মিটিংভারাক্রান্ত তিনটি সপ্তাহ। নতুন কিছু ঘটলে কিংবা কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার হলেই সবাই মিলে আলাপ-আলোচনার গুরুত্বটুকু বোঝা যেত তখন। সেদিনের প্রথম সভায় আমরা চিটাগাংয়ের প্রতিবেদন পেশ করি।

তারপর সারা রাত ধরে নির্বিঘ্ন নিদ্রার আনন্দ। না ঠিক, পুরো নির্বিঘ্ন নয়। হাসপাতালটির নিকটেই ছিল জঙ্গলের মধ্যে একটি কাঠ চেরাইয়ের কল। পাহাড়ের চূড়ায় গাছগুলো কেটে নদীতে অপেক্ষমাণ সাম্পানের উদ্দেশে গড়িয়ে দেওয়া হতো। কাঠের গুঁড়িগুলো যখনই শব্দ করে গড়িয়ে পড়ত নিচে, তখনই ধড়ফড় করে জেগে উঠত লিন, আবারও বুঝি সেই গোলাগুলির দিনগুলোতে ফেরত গেছে সে, এই কথা ভেবে। [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৬)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৫)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৪)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৩)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;