পাকিস্তান: সংঘাতে বিপন্ন জনপদ

ললাটে জঙ্গিবাদের অমোচনীয় তকমা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি লড়াই চলছে তিন দশক ধরে, ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি লড়াই চলছে তিন দশক ধরে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

 

পাকিস্তানে শিয়া ও সুন্নি লড়াই থেমে থেমে চলছে তিন দশক ধরে। নানা সময়ে সংঘাতের কম-বৃদ্ধি হলেও সমস্যাটি প্রশমিত হয়নি। শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব-সংঘাত-লড়াই পাকিস্তানের ক্রনিক সমস্যা এবং দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ক্ষতিকর সঙ্কট রূপে চিহ্নিত।

সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, সংঘাতে এ পর্যন্ত শিয়াদের পাঁচ হাজার সদস্য মারা গেছেন এবং ১০ হাজার জন আহত হয়েছেন। সুন্নিদের ক্ষেত্রেও হতাহতের সংখ্যা কমবেশি একই।

১৯৮৯ সাল থেকে রক্ষিত পরিসংখ্যানে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ হাজার শিয়া ও সুন্নি সদস্যের জানমালে ক্ষতির বিবরণ পাওয়া যায়। গ্রাম ও শহরে হতাহতের সংখ্যা প্রায় সমান।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো প্রতিটি আক্রমণেরই তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিআক্রমণ হয়েছে। বিষয়টি চলছে আদিম যুগের ‘খুনের বদলা খুন’ নামক বর্বর ও নৃশংস নীতিতে।

আরও পড়ুন: জন্ম থেকে সংঘাতের চারণভূমি

কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, পাকিস্তানে বছরে কমপক্ষে একহাজার মানুষ শিয়া-সুন্নি লড়াইয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। আহত হচ্ছে কয়েক সহস্র। আরেকটি মারাত্মক মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের ফলে। তা হলো গুম। উভয় পক্ষে কতজনকে যে গুম করা হয়েছে বা অপহরণ করা হয়েছে, তার ইয়াত্তা নেই।

প্রতিটি গুম ও অপহরণের শেষ ফলাফল হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হয়। সাধারণ ধারণা হলো, পাকিস্তানে গুম ও অপহরণ মানেই গোপন হত্যাকাণ্ড, যে হত্যার কোনও রেকর্ড ও প্রমাণ থাকে না। এমনকি, লাশটিও খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না।

এতো পুরনো, রক্তাক্ত ও ক্ষতিকর সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যাটির প্রবল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাগত গুরুত্ব থাকলেও তা প্রশমনে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা নেই। বরং উভয় গ্রুপেরই ধর্মীয়-রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ও প্রচার-প্রচারণার কারণে প্রতিশোধমূলক মনোবৃত্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

প্রতিটি সংঘাতের ঘটনার পর নতুন করে হিংসা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করা হচ্ছে। প্রতিটি আঘাতেরই তীব্র প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা প্রত্যাঘাত করা হচ্ছে। একজনের বদলে এক তো বটেই, কখনো কখনো প্রতিশোধমূলক হামলার মাধ্যমে ১০ জনকেও মেরে ফেলা হচ্ছে। বিশেষত শিয়াদের মহররম মাসের তাজিয়া অনুষ্ঠানে ও ইমামবাড়ার সমাবেশে বোমা-অস্ত্রসহ নৃশংস হামলা চালানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে সুন্নিদের শুক্রবারের জুমার নামাজেও বড় আকারের সশস্ত্র হামলা করা হচ্ছে। উভয় ক্ষেত্রেই উভয় সম্প্রদায়ের নিরীহ মানুষগুলো অকাতরে মারা যাচ্ছেন।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি হামলায় অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বোমা ব্যবহারের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন উভয় পক্ষের সুইসাইড স্কোয়াডের আত্মঘাতী সদস্যরা। উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় নেতাদেরও নিহতের তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে। মসজিদ ও ধর্মস্থানে সাধারণ গণহত্যার সঙ্গে সঙ্গে বাসা-বাড়িতেও পরিকল্পিত টার্গেট ভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন বিশিষ্ট শিয়া ও সুন্নি নেতারা।

pakis
সংঘাতে বিপর্যস্ত পাকিস্তান, ছবি: সংগৃহীত

 

পাকিস্তানের অনেক শহরেই শিয়া ও সুন্নি মতের অনুসারী ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলেন। তারপরেও কোনও পূর্ব-ঘোষণা ছাড়াই যখন তখন উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ লেগে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রায়শই। বিশেষত হিংসার আগুনে দগ্ধ প্রাচীন ও ঐতিহাসিক শহর করাচির অবস্থা অতি শোচনীয়। প্রায়শই করাচিকে তুলনা করা হচ্ছে সংঘাতের নগর বৈরুতের সঙ্গে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যে ও গবেষণায় পাকিস্তানকে সেক্টেরিয়ান সংঘাত বা গোষ্ঠী/সম্প্রদায়গত সংঘাতের চারণভূমি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। মূলত ধর্মীয় সম্প্রদায়গত বিভাজন থেকে সংঘাতের সূচনা ও প্রসার হলেও এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক রয়েছে। রাজনৈতিক কারণে সামরিক ও বেসামরিক নেতারা সংঘাত জিইয়ে রেখে ফায়দা নিচ্ছেন।

সংঘাতের অর্থনৈতিক লাভের মধ্যে অস্ত্র বিক্রি ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে পাকিস্তানে। যে টাকার বখরা প্রশাসন, নেতারা পেয়ে থাকেন। অবস্থা এমন হয়েছে যে পাকিস্তানে সাধারণ হাট-বাজারে অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে এবং যে কেউ চাইলে সর্বাধুনিক-স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র কিনতে পারছেন।

পাকিস্তানের সাধারণ জনজীবন, পর্যটন ও ভ্রমণ বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের কারণে। চরম ভীতি ও আতঙ্কে মানুষ জীবন-যাপন করছেন সেখানে। কখন, কোথায় লড়াই লেগে কার জীবন নিঃশেষ হয়ে যাবে, তা কারো জানা নেই।

আরও পড়ুন: চলছে ‘খুনের বদলা খুন’!

সমাজে শিয়া ও সুন্নিরা বসবাস করছেন পারস্পরিক হিংসা ও ঘৃণা নিয়ে এবং একে অপরকে আক্রমণের প্রতিহিংসামূলক মনোভাব লালন করেন। গবেষকরা ‘এক নিঃশব্দ গৃহযুদ্ধ’ নামে অভিহিত করছেন পাকিস্তানের শিয়া-সুন্নিদের মধ্যকার সংঘাতময় পরিস্থিতিকে, যাকে দেশটির সবচেয়ে বড় নিরাপত্তার হুমকি বলেও মনে করা হচ্ছে।

পরিতাপের বিষয় হলো হিংসা ও উগ্রতা ছড়িয়ে পাকিস্তানের নেতারা বছরের পর বছর ধরে একে অপরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করছেন। সাধারণ জনজীবনের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাহত করছেন। ফল স্বরূপ পাকিস্তান পরিণত হয়েছে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের এক বিপন্ন জনপদে, সংঘাতের রক্তাক্ত দুষ্টচক্র থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছেন না এবং বেরও হতে পারছেন না।

আরও পরিতাপের বিষয় এটাই যে একই ধর্মের মধ্যকার দুই বিবদমান সম্প্রদায়কে থামানোর মতো কোনও সর্বজনমান্য ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতার দেখা পাকিস্তানে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই কোনও না কোনও গ্রুপ বা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে থেকে অপরাপর গ্রুপের সঙ্গে মতাদর্শিক বা সশস্ত্র লড়াই চালিয়েই যাচ্ছেন। পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন নিজ নিজ গ্রুপ বা মতের বিভিন্ন উগ্র ও জঙ্গি সংগঠনকে।

যার ফলে দেশটিতে ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, হানাহানি, রক্তপাত ও হতাহত বাড়ছেই। আর এভাবেই পাকিস্তান নামক দেশটির ললাটে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের অমোচনীয় তকমা লেগে গেছে। গবেষকদের মতে, ‘পাকিস্তান হয়ে উঠেছে উগ্রবাদ, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়, প্রশ্রয় ও প্রজনন ক্ষেত্র’ এবং 'সংঘাতের ধর্মীয়-রাজনৈতিক রণক্ষেত্র', যা দেশটির 'অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে ভঙ্গুর', 'অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত' এবং 'সামাজিক নাগরিক স্থিতিশীলতাকে নাজুক' করে ফেলেছে।
(তৃতীয় কিস্তি)

   

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

বৃষ্টি নাকি ধান, কী প্রার্থনায় দেশ?

  • Font increase
  • Font Decrease

‘পথের কেনারে পাতা দোলাইয়া করে সদা সঙ্কেত/ সবুজে হদুদে সোহাগ ঢুলায়ে আমার ধানের ক্ষেত/ ছড়ায় ছড়ায় জড়াজড়ি করি বাতাসে ঢলিয়া পড়ে/ ঝাঁকে আর ঝাঁকে টিয়ে পাখিগুলে শুয়েছে মাঠের পরে/ কৃষাণ কনের বিয়ে হবে, তার হলদি কোটার শাড়ী/ হলুদে ছোপায় হেমন্ত রোজ কটি রোদ রেখা নাড়ি/ কলমী লতার গহনা তাহার গড়ার প্রতীক্ষায়/ ভিনদেশী বর আসা যাওয়া করে প্রভাত সাঁঝের নায়।’ পল্লীকবি জসীম উদদীনের ‘ধান ক্ষেত’ কবিতার অপূর্ব চিত্রায়ন কৃষকের শ্রম-ঘাম আর প্রকৃতির তরফে। কাব্যে-পঙক্তির বিমূর্ত চিত্র মূর্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ মাঠে। কিষান-কিষানির বুক ভরা আশার সার্থক রূপায়ন হতে চলেছে এ-মৌসুমে।

এখন ভরা বৈশাখ। এ-সময়টা বোরো ধানের। বোরো ধান দেশের খাদ্যচাহিদার অন্তত ৫৫ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। দেশের হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এই বোরোর চাষ বেশি হয়ে থাকে। এই ধান অতিবৃষ্টি, বন্যা ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে দেশের খাদ্যচাহিদায় ঘাটতি পড়ে না। তাই এই ধান চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত অনুকূল আবহাওয়া, বিশেষ করে রোদের উপস্থিতি অতি জরুরি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি চলছে।

সিলেট অঞ্চলের মানুষ বলে এই অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, হতাশা-উচ্চাশার সঙ্গে আমি পরিচিত। তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে টানছি। তাদের সঙ্গে থেকে জেনেছি, বোরো মৌসুমে নির্বিঘ্নে ঘরে ফসল তোলা কতটা জরুরি। গবাদি পশুর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি খড় সংরক্ষণও। তীব্র রোদ এখানে সমস্যার নয়, এটা বরং আনন্দের। কারণ এই রোদ গা পোড়ালেও বুক ভরা আশার সার্থক বাস্তবায়নের পথ দেখায়। দেশের যে খাদ্যচাহিদা, যে খাদ্যনিরাপত্তা সেটা এই বোরো ধানের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই চাষ থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে দরকার হয় প্রকৃতির সহায়তা। এবার এখন পর্যন্ত সে সহায়তা আছে, যদিও এ মাসের শুরুর দিকে একবার ঝড়বৃষ্টিসহ শঙ্কার কালমেঘ হাতছানি দিয়েছিল। সেটা আপাতত দূরে সরেছে।

কিষান-কিষানির দরকার এখন তীব্র রোদ। তারা এটা পাচ্ছে। দেশে তীব্র তাপদাহ। এখানেও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু তারা এই রোদের প্রার্থনায় রয়েছে। বৃষ্টি এখন তাদের কাছে দুর্যোগ-সম। কারণ এই বৃষ্টি এবং অতি-বৃষ্টিসৃষ্ট বন্যা তাদের স্বপ্নসাধ গুঁড়িয়ে ভাসিয়ে নিতে পারে সব। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি এখনও বিস্মৃত হয়নি সুনামগঞ্জের কৃষকেরা। সে বছর সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ১৩৭ হাওরের ফসল বন্যায় এবার ভেসে গিয়েছিল। গতবার কৃষক নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলেছেন। এরআগের বছর অন্তত ২০টি হাওরের ফসলহানি হয়েছিল বন্যায়।

প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল ক্ষেতের ফসল, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা। এখানে প্রচণ্ড তাপদাহ তাই প্রভাব ফেলে সামান্যই। রোদে পুড়ে, প্রয়োজনে ছাতা মাথায় দিয়ে কিষান-কিষানিরা স্বপ্ন তোলেন ঘরে। তারা বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা না করে বরং রোদ আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার প্রার্থনায় বসেন। কৃষকেরা পরিমিত বৃষ্টি চায় চৈত্র মাসে, বৈশাখে চায় খাঁ খাঁ রোদ্দুর, কারণ এই রোদে সোনালী ধান ঘরে ওঠে। লোককথার প্রচলিত, ধান তোলার মৌসুমে ঝড়বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য হাওরবাসীরা তন্ত্রসাধক বা ‘হিরাল’ ও ‘হিরালি’-দের আমন্ত্রণ জানাতেন। তারা এসে মন্ত্রপাঠ করে ঝড়বৃষ্টি থামানোর জন্য চেষ্টা করতেন। লোকায়ত বিশ্বাস থেকে আগেকার মানুষজন এমন আচার পালন করতেন। এসবে সত্যি কাজ হতো কিনা সেটা বিতর্ক এবং ব্যক্তি-বিশ্বাসসাপেক্ষ, তবে এই হিরাল-হিরালিদের আমন্ত্রণ বলে বৈশাখে একদম বৃষ্টি চায় না হাওরের কৃষক।

হাওরপারের মানুষেরা যখন রোদ অব্যাহত থাকার প্রার্থনায়, তখন দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে পুড়তে থাকা মানুষেরা আছেন বৃষ্টিপ্রার্থনায়। দেশের জায়গায়-জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনায় ইস্তিস্কার নামাজ পড়া হচ্ছে, গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ আসছে এর। কোথাও প্রবল বিশ্বাসে কেউ কেউ ‘ব্যাঙের বিয়ে’ দিচ্ছেন, এটাও বৃষ্টি প্রার্থনায়। সামাজিক মাধ্যমে গরমের তীব্রতার আঁচ মিলছে, বৃষ্টি নাকি ধান—কোনটা জরুরি এই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ। কেবল তাই নয়, বাংলাদেশের প্রচণ্ড তাপদাহ নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দেশের মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, এএফপি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া। গণমাধ্যমগুলো বলছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে টানা দ্বিতীয় বছর বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ঘোষণাও এসেছে। বৃষ্টি-প্রার্থনায় নামাজের আয়োজনের কথাও এসেছে বিশ্বমিডিয়ায়।

একদিকে প্রচণ্ড তাপদাহ, অন্যদিকে খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান উপকরণ ধান ঘরে তোলার অনিশ্চয়তা—তবু অনেকের কাছে সাময়িক স্বস্তিই যেন মুখ্য। অথচ আর দিন দশেক বেরো আবাদ-এলাকায় বৃষ্টি না নামলে ধানগুলো ঘরে ওঠত কৃষকের। নিশ্চিত হতো খাদ্যনিরাপত্তার।

প্রকৃতির ওপর আমাদের হাত নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই; তবু মনে করি আমাদের আকাঙ্ক্ষার প্রকাশে কৃষকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাদের চাওয়ায় হয়তো প্রকৃতির রীতি বদলাবে না, তুমুল রোদ্দুরের দেশে হঠাৎ বৃষ্টি নামবে না, তবে ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত রোদ্দুর কামনায় কৃষক স্বস্তি পাবে; ভাবতে পারবে এই দেশ আছে তাদের সঙ্গে।

কৃষকের জয় হোক। অন্তত বোরো-এলাকায় প্রকৃতি কৃষকের সঙ্গে থাকুক।

;

৫০ বছর আগে মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি আজও শ্রেষ্ঠ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সালটা ১৯৬৮। বিশ্বব্যাপী মানুষ মেতে উঠেছিল বড়দিনের আনন্দে। তখনো জানতো না, বড়দিন উপলক্ষে তারা একটি বিশেষ উপহার পেতে চলেছে। পৃথিবী থেকে আমরা হরহামেশাই চাঁদ দেখি। অমাবস্যা-পূর্ণিমা, এমনকি পক্ষের মাঝামাঝি সময়ের বদৌলতে নানা দৃষ্টিকোণে নানা আকারের চাঁদ দেখতে পাই। তবে চাঁদ থেকে পৃথিবী দেখতে কেমন? এরকমটা হয়তো অনেকেই ভাবেন।

নাসার মহাকাশচারীরা অ্যাপোলো ৪ এ করে তখন চাঁদের চারপাশে টহল দিচ্ছে। সেখান থেকে তারা চাঁদের বাসকারীদের দৃষ্টিতে পৃথিবী কেমন হবে তার এক নমুনা জোগাড় করেন। ক্রিসমাসের কিছুদিন আগে ক্রুরা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করার সময় ব্যারেন লুনার হরিজোন থেকে একটি ছবি তোলে। সেখানে সুদূর মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একটি সুন্দর দৃশ্য ধারণ করা হয়। চমৎকার সেই রঙিন ছবিটি সবকিছু পরিবর্তন করতে চলেছিল।

ছবিটি তুলেছিলেন মার্কিন নভোচারী বিল অ্যান্ডার্স এবং জিম লাভেল। ছবিটি ধারণ করার পর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে যান। অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে যাওয়ার পরও এটিকে প্রকৃতির সবচেয়ে আইকনিক ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটিই মহাকাশ থেকে তোলা প্রথম রঙিন এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি।

১৯৭০ সালে পরিবেশ সচেতনতা এবং এই ব্যাপারে সক্রিয়তা বাড়ানোর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে পৃথিবী দিবস প্রচারিত হওয়ার কারণে ছবিটিকে বিশেষ কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাইকেল প্রিচার্ড ছবিটিকে নিখুঁত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ছবিটি পৃথিবীর এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিল, যা আগে কোনো ছবি করতে পারেনি। প্রকাণ্ড মহাবিশ্বে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা ক্ষুদ্র গ্রহ, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ছবিটি।

১৯৬০ সালের পরই পৃথিবী নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করে। ষাটের দশকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মানুষ অনুধাবন করে পৃথিবীকে আজীবন একইভাবে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রহের প্রতি আমাদের আরও অনুরাগী হতে হবে। সেই উদ্দেশে ১৯৬৯, ‘৭০ ও ‘৭১ সালে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি’ এবং ‘গ্রিনপিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ছবিটি প্রকাশের ১৮ মাস পর ২০ মিলিয়ন মার্কিন নাগরিক পৃথিবী রক্ষার আন্দোলনে রাস্তায় নামে।

পৃথিবী রক্ষা করার জন্য মানুষদের উৎসাহিত করার বেলায় ছবিটি অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এখনো অবদি মহাকাশ থেকে পৃথিবীর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে ১৯৬৮ সালে বড়দিনের আগে তোলা সেই ছবিটিকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করা হয়।

;

মাঝরাতে আইসক্রিম, পিৎজা খাওয়া নিষিদ্ধ করল মিলান!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: স্কাই নিউজ

ছবি: স্কাই নিউজ

  • Font increase
  • Font Decrease

আইসক্রিম, পিৎজা অনেকের কাছেই ভীষণ পছন্দের খাবার। তবে ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে মাঝরাতে এসব মুখরোচক খাবার ও পানীয় খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ইতালিতে জেলাটিনের তৈরি আইসক্রিম খুব বিখ্যাত। এজন্য ইতালিতে 'জেলাটো সংস্কৃতি' নামে একটা কালচার গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ইতালির মিলানের বাসিন্দাদের জন্য একটি নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবেদন- স্কাই নিউজ।

মিলানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই মাঝরাতে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে আইসক্রিম, পিৎজা, ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার ও পানীয় পান করে থাকে। এতে করে সেখানকার এলাকাবাসীদের রাতের ঘুম বিঘ্নিত হয়। নতুন প্রস্তাবিত আইনে শহরবাসীর রাতের ঘুম নির্বিঘ্ন করতে মধ্যরাতের পর পিৎজা ও পানীয়সহ সব ধরনের টেকওয়ে খাবার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে মধ্যরাতের পর আইসক্রিম নিষিদ্ধ করার চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে, তৎকালীন মেয়র গিউলিয়ানো পিসাপিয়া অনুরূপ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু 'অকুপাই জেলাটো' আন্দোলনসহ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পরে তিনি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

এরপর আবারও মিলানে এ আইনটি প্রস্তাব করেছেন ডেপুটি মেয়র মার্কো গ্রানেল্লি। দেশটির ১২টি জেলা এই প্রস্তাবের আওতাভুক্ত হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে মিলানের মেয়র গ্রানেল্লি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিকতা ও বিনোদন এবং বাসিন্দাদের শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রস্তাবটি নিম্নলিখিত এলাকাগুলোতে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে মিলান কর্তৃপক্ষ: নোলো, লাজারেটো, মেলজো, ইসোলা, সারপি, ভায়া সিজারিয়ানো, আরকো ডেলা পেস, কোমো-গাইআউলেন্টি, পোর্টা গ্যারিবল্ডি, ব্রেরা, টিসিনিজ এবং দারসেনা-নাভিগলি।

জানা যায়, প্রস্তাবটি মে মাসের মাঝামাঝি থেকে কার্যকর থাকবে এবং নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এটি প্রতিদিন রাত ১২.৩০ টায় এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং সরকারী ছুটির দিনে রাত ১.৩০ টা থেকে প্রয়োগ করা হবে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মে মাসের শুরু পর্যন্ত আপিল করার এবং আইন পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়ার সময় রয়েছে।

 

 

 

;

অস্ট্রেলিয়ায় নিখোঁজ কুকুর ফিরলো যুক্তরাজ্যের মালিকের কাছে



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে এসে নিখোঁজ হয় যুক্তরাজ্যের এক দম্পতির পালিত কুকুর। যুক্তরাজ্যে আসার ১৭ দিন পর মিলো নামের কুকুরটিকে ফিরে পেয়েছেন জেসন হোয়াটনাল নিক রোল্যান্ডস দম্পতি।

হোয়াটনাল এবং তার সঙ্গী নিক সম্প্রতি তাদের কুকুর মিলোকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া পরিদর্শনে যান। তারা যখন সোয়ানসিতে বাড়িতে যাচ্ছিলেন তখন মেলবোর্ন বিমানবন্দরে তার হ্যান্ডলার থেকে কুকুরটি পালিয়ে যায়।

সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী কুকুরটিকে অবশেষে মেলবোর্নের শহরতলিতে ১৭ দিন পর খুঁজে পাওয়া যায়।


হোয়াটনাল স্কাই নিউজকে বলেন, ‘মিলোকে ফিরে পাওয়াটা খুবই আশ্চর্যজনক ছিল আমার জন্য। যখন আমি আমার প্রিয় মিলোর (কুকুর) সাথে পুনরায় মিলিত হয়েছিলাম, তখন আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। আমার কান্না দেখে অন্যরাও কেঁদেছিল। এটি সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্য প্রান্তে থেকে মিলোর কথা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। আমরা জানতাম না মিলো কোথায় আছে। এটি বেশ হতাশাজনক ছিল আমাদের জন্য, কিছুটা আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাকে ফিরে পাবো ভাবিনি।

মিলোকে পাওয়ার জন্য সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলাম, তখন স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে সাহায্য আসে, তারা মিলোর সন্ধান দেয়। মিলোকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।

;