বিয়ে-সুন্নতে খৎনায় ব্যবহার হচ্ছে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ‘বড়কুঠি’!



স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী
বড়কুঠি ভবন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বড়কুঠি ভবন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহী মহানগরীর বড়কুঠি ভবনের সামনেই প্রবেশপথের পাশে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের। এতে লেখা রয়েছে-‘সংরক্ষিত পুরাকীর্তি, কোনো ব্যক্তি এ পুরাকীর্তির কোনো অংশ ধ্বংস বা অনিষ্ট সাধন করলে অথবা এর কোনো বিকৃতি বা অঙ্গচ্ছেদ ঘটালে বা এর কোনো অংশের ওপর কিছু লিখলে বা খোদাই করলে বা কোনো চিহ্ন বা দাগ কাটলে ১৯৬৮ সালের ১৪ নম্বর পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারায় সর্বাধিক এক বছর পর্যন্ত জেল বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

অথচ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকেল থেকে সন্ধ্যা অব্দি ধুমধামে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে গেল রাজশাহীর সর্বপ্রাচীন দালান ‘বড়কুঠি’তে। দিনভর প্রাচীন এ পুরাকীর্তির ভেতর চুলা বসিয়ে রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সবই হলো। ভবনটির নিচতলা ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হলো বিয়ের অনুষ্ঠান। অথচ দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মচারী ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কেউই বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন।

বড়কুঠি এলাকার বাসিন্দা মো. আলমের মেয়ে মিমি খাতুনের বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতাই সেখানে হয়। বর রুবেল হোসেনের বাড়ি নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায়। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। আর মিমির বাবা আলম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের একজন কর্মচারী।

শুক্রবার বিকেলে বড়কুঠির সামনে গিয়ে দেখা যায় বিয়ের জন্য নির্মাণ করা গেট। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই পশ্চিম দিকে চোখে পড়ল চুলা জ্বালিয়ে রান্না করার দৃশ্য। আর পূর্ব দিকে ধুয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে খাবারের থালা। উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে ছিল সেখানে। মূল ভবনের ভেতরে ঢুকতেই যে কক্ষ, সেখানে করা হয়েছিল কনের বসার স্থান। এ কক্ষটি পার হয়ে ভেতরে গেলেই ‘পাঠকক্ষ’ নামের একটি কক্ষ। চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে সেখানে চলছিল খাওয়া-দাওয়া। আর ‘তাসকক্ষ’ নামের আরেকটি কক্ষে রান্নার পর রাখা হয়েছিল খাবার। এছাড়া পাশের আরেকটি কক্ষে করা হয়েছিল বর রুবেল হোসেনের বসার স্থান। পুরো বড়কুঠি ভবনের নিচতলা ছিল লোকে লোকারণ্য। ঠিক কমিউনিটি সেন্টারের মতোই ব্যবহার হলো প্রাচীন এই ভবনটি।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ডাচরা রাজশাহী শহরে রেশম ও অন্যান্য জিনিসের ব্যবসা শুরু করে। ওই শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো এক সময় তারা বড়কুঠি নির্মাণ করে। ব্যবসায়ীদের কাছে ‘ডাচ্ ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিত এ স্থাপনাকে স্থানীয়ভাবে ‘বড়কুঠি’ বলা হয়। আশপাশের সব নীলকুঠির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় বা মর্যদা সম্পন্ন হওয়ায় এর নাম হয়েছিল বড়কুঠি। বড়কুঠি নির্মাণকালে এর চেয়ে বড় কোনো ভবন রাজশাহী শহরে ছিল না।

দেশভাগের পর ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে বড়কুঠি সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয় এবং খাদ্য বিভাগের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে বড়কুঠি বিশ্ববিদ্যালয়কে হস্তান্তর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় তার বর্তমান অবস্থানে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বড়কুঠি উপাচার্যের কার্যালয় ও বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বড়কুঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্লাব রয়েছে। সম্প্রতি এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রক্রিয়াটি এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি।

বড়কুঠির দেখাশোনার জন্য এর নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন প্রহরী গোলাম মোর্তজা চান্দু। দু’টি কক্ষ তিনি ব্যবহার করেন। এর একটি ‘ক্রীড়া কক্ষ’ তার শোবার ঘর। মোর্তজার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ন মো. বাবলুও বড়কুঠির দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। তবে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন বড়কুঠি ভবনের সামনের মহল্লায়। এ দুই কর্মচারী বড়কুঠিতে বিয়ের অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে কনের বাবা মো. আলম বলেন, ‘বড়কুঠিতে এর আগেও বিয়ে ও সুন্নতে খৎনাসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান হয়েছে। এজন্য মাত্র এক হাজার টাকা ভাড়া লাগে। তিনি বাবলু ও মোর্তজার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন।’

জানতে চাইলে বড়কুঠির প্রহরী গোলাম মোর্তজা বলেন, ‘ভবনটিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ক্লাব রয়েছে। বিয়ে, সুন্নত খৎনা, জন্মদিন, মুখে ভাতের যেসব অনুষ্ঠান এখানে করতে দেওয়া হয়, তা থেকে প্রাপ্ত টাকা কর্মচারী ক্লাবের তহবিলে জমা করা হয়। আমরা নেই না।’

তবে প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘এতো প্রাচীন স্থাপনায় ব্যক্তিগত বা সামাজিক অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া অকল্পনীয়। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটি পুরনো মিলনায়তন আছে। প্রাচীন ঐতিহ্য বলে সেখানেই আমরা কোনো অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেই না। আর রাজশাহীর বড়কুঠি তো আরও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। একজন কর্মকর্তা পাঠিয়ে এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

বড়কুঠিতে বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এমএ বারী বলেন, ‘ভবনটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই প্রত্মতত্ত্ব অধিদফতর সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে। এ অবস্থায় ভবনটি দেখাশোনার জন্য জেলা প্রশাসনেরও দায়িত্ব রয়েছে।’

তবে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানান, বড়কুঠি এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকায় এর যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেটি তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। তারপরেও তিনি এ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন। ভবনটির যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে।

   

সাত দিনে পদ্মা সেতুতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা টোল আদায়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতু দিয়ে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ায় গত সাত দিনে মোট ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে। গত ১০ জুন থেকে ১৬ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত এই টোল আদায় হয়েছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১৬ জুন) মধ্য রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর অতিরিক্ত প্রকৌশলী আমিরুল হায়দার চৌধুরী।

ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি টোলা আদায় হয়েছে গত ১৪ জুন। ওই দিন মোট আদায় হয় ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। ১৫ জুন টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা। আজ (১৬ জুন) রাত ১০টা পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ ৫০ টাকা।

এর আগে গত ১০ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ৬০ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১১ জুন ২ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ জুন ৩ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকা। ১৩ জুন টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা।

গত ৭ দিনে পদ্মা সেতু মাওয়া প্রান্তে টোটাল টোল আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। একই সময়ে জাজিরা প্রান্ত দিয়ে টোল আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

সাত দিনে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫শ ৭২টি যানবাহন। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ৮২ হাজার ৮৫টি যানবাহন। দুই প্রান্ত দিয়ে মোট গত ৭ দিনে ২ লাখ ৪ হাজার ৬শ ৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

;

ত্যাগের শিক্ষার সঙ্গে থাকুক বিসর্জন



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা নিয়ে আরেক ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ এসেছে। সৌদি আরবে ঈদুল আজহার মূল আচার পালিত হয়েছে রোববার। দেশটির সঙ্গে মিল রেখে আরও কিছু দেশে উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশে ঈদুল আজহা সোমবার।

ঈদুল আজহার প্রধান আচার, পশু কোরবানি। গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু কোরবানি করে থাকেন সামর্থ্যবানরা। এই কোরবানি কেবল ভোগের জন্যে নয়, ত্যাগের জন্যে মূলত। এটা এসেছে ত্যাগ থেকে। ধর্মীয় মতে, হযরত ইব্রাহিম প্রিয় বস্তুকে কোরবানির নির্দেশনা পেয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা থেকে, সেখান থেকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে ত্যাগের সিদ্ধান্ত, এবং এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐশীশক্তিতে পরিবর্তন। এখানে প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের যে শিক্ষা সেটা থেকেই এই কোরবানি উৎসারিত, এবং হাজার বছর ধরে চলমান।

ধর্মীয় বিধানের সেই ত্যাগ এখনো শাশ্বত। এই ত্যাগ আবার কিছু ক্ষেত্রে আত্মম্ভরিতায়ও পরিণত, প্রদর্শনবাদিতায় রূপান্তরিত অনেক ক্ষেত্রে। কে কত দামের, কত বড় পশু কোরবানি করলেন—এসব প্রকাশে-দেখাতে অনেকের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এতে করে ত্যাগের শাশ্বত যে শিক্ষা সেটা এখানে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। পশু কোরবানি যখন ধর্মীয় বিধান থেকে উদ্ভূত তখন প্রদর্শনবাদিতায় আদতে আড়ালে পড়ে যায় ত্যাগ। ফলে সামাজিকতার বিষয়টি ক্রমে দূরে সরে যায়। এখানে মানুষে-মানুষের চিন্তার যে পার্থক্য, অপরকে অনুভব করার সহজাত যে মানবিকতা তারচেয়ে মুখ্য হয়ে পড়ে অহংবোধ। এটা যদিও সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য নয়, তবে অনেকেই এখানে অভিনিবিষ্ট।

কোরবানি ধর্মীয় বিধানের বাইরে এটা বিশাল এখন এক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞও। পশু ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, দেশে আর্থিক লেনদেন সম্পাদিত হয়। সারা বছর ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক খামারিরা কেবল ঈদকে কেন্দ্র করে পশু লালন পালন করে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন; হাটবাজারের ইজারাদাররা এই সময়ের জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। কেবল গবাদি পশুকেন্দ্রিক এই আর্থিক লেনদেনই এ সময় সম্পাদিত হয় না, ঈদে পোশাক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী-শ্রমিক, চামড়া ব্যবসায়ীসহ ছোটখাটো স্থানীয় ব্যবসা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, লাভবান হন। ঈদ তাই কেবলই ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর রয়েছে আর্থসামাজিক প্রভাবও।

এরবাইরে আছে এর সামাজিক গুরুত্ব। ক্ষয়িঞ্চু হতে যাওয়া সামাজিক বন্ধন এই সময় দৃঢ় হয় অনেকটাই। সারা বছর সামর্থ্যবানেরা অনেকের খোঁজ না নিলেও কোরবানির মাংসের ভাগ স্বজনপরিজনদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে ফের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিছুদিনের জন্যে নবায়ন করে। সামাজিকতার এই শিক্ষা কোরবানির ধর্মীয় বিধানের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে কোরবানির মাংসের তিন ভাগের অন্তত দুই ভাগ আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিবণ্টনের নিয়ম।

আমাদের যে কাঠামোবদ্ধ সমাজ তাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে সামাজিকতা, অন্যকে অনুভব করার তাগিদ। কোরবানির সময়ে পশুর মাংসের ভাগের মাধ্যমে এর নবায়ন হয় অনেকটাই। বাড়তি বাজারমূল্যের এই সময়ে দেশের অধিকাংশেরই নেই কিনে মাংস খাওয়ার সামর্থ্য। কোরবানির সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে অন্তত মাংসের ভাগ পৌঁছে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। অনেককে দেখেছি, বছরের এই একটা সময়েই কেবল নিজেদের ঘরে মাংস খেতে পারে। তাদের জন্যে অপেক্ষার তাই এই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

একটা সময়ে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট ছিল। কিন্তু গত ক'বছরে দেশে কোরবানির পশুর সংকট নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেছেন, ‘এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২২ লাখের বেশি পশু বাড়তি আছে।’ তবু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে-বাজারে কোরবানির পশুর দাম চড়া। এখানে-সেখানে জোরজবরদস্তির খবরও এসেছে। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেখানে-সেখানে পশুর হাট বসানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও এটা কার্যকর হয়নি। ঈদের আগে সারাদেশ পরিণত হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটে। এখানে হুঁশিয়ারিদাতারা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজারাদাররা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা হয়েছে উপেক্ষিত।

কোরবানি পরবর্তী আলোচনার বিষয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভার আওতাধীন এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। ঈদ পরবর্তীতে কে কত দ্রুততার সঙ্গে শহর পরিস্কার করতে পারল, কোথায় কীভাবে বর্জ্য ছড়াল—এ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে আলোচনা। অথচ দেশব্যাপী হয় পশু কোরবানি, বর্জ্য ছড়ায় সারাদেশে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা ছাড়া দেশের কোথায় আর বর্জ্য নিয়ে আলোচনা হয় না, উদ্যোগ থাকে না; জনপরিসরেও তাই রয়েছে সচেতনতার ব্যাপক অভাব। ফলে কোরবানির ঈদের পর পরই দুর্গন্ধ ছড়ায় সব জায়গায়। এখানে তাই সাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদে-মসজিদে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে হবে। কেবল পরিবেশ সুরক্ষাই নয়, নিজেদের সুস্থভাবে বাঁচতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝাতে হবে সবাইকে।

ঈদ অথবা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জননিরাপত্তা প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। প্রতিবারই ঈদের সময়, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেক জনসাধারণকে অভয় দিয়ে বলতে হয়—‘ঈদে নাশকতার তথ্য নাই’। এটা বিভিন্ন বাহিনীর রুটিন দায়িত্ব যদিও, তবু এখানে একজন সাধারণ হিসেবে আমাদের ভাবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কী জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি দেশকে আমরা, যেখানে উৎসব-অনুষ্ঠানের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। বাহিনীগুলো বলছে, কারণ আগে নানা নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পারিবারিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে নিজেদের সন্তানেরা কোন পথে যাচ্ছে। তাদের আমরা কি সঠিক শিক্ষার পথ দেখাচ্ছি, নাকি শেখাচ্ছি সংকীর্ণতা। বলছি না, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এনিয়ে কথা বলবে না; তারা তাদের কাজ করুক, পাশাপাশি আমরাও যেন তেমন সমাজ গড়ার একেক একক হই, যাতে উৎসবে দিনে মানুষ কেবল উৎসব নিয়েই ভাববে, সমাজ নিয়ে ভাববে, সবাইকে নিয়ে ভাবতে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি দেন। ধর্মীয় রীতির এই পশু কোরবানি প্রতীকী। ত্যাগ; প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের শিক্ষা। ত্যাগ, সামাজিকতা ও সাম্যের যে শিক্ষা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ, সে ত্যাগ সফল হোক, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হোক। এ দিনে তাই পশু কোরবানির প্রতীকী ত্যাগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে থাকা আত্মম্ভরিতা ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য পশুপ্রবৃত্তির বিসর্জন হোক।

সবাইকে ঈদ মুবারক!

;

কুষ্টিয়ায় ভাজিতার হাতে চাচাকে হত্যার অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ফ্রিজে খাবার রাখাকে কেন্দ্র করে ভাতিজা মাসুদের হাতে চাচা বাদশা প্রামানিক (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১৬ জুন) বিকেলে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের আমজাদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বাদশা প্রামানিক উপজেলার হরিপুর এলাকার ভাদু পরমানিকের ছেলে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে চাচার সঙ্গে ভাতিজার মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে রোববার বিকেলের দিকে চাচার সঙ্গে পুনরায় বাড়ির কিছু জমি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে একপর্যায়ে ফ্রিজে খাবার রাখতে গেলে ভাতিজা মাসুদ ঘর থেকে ধারালো বটি দিয়ে চাচা বাদশাকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে পথেই মারা যায়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিকে ধরতে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

;

সিলেটে পানি বন্দি মানুষের মাঝে পুলিশের ঈদ উপহার বিতরণ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট জেলা পুলিশের উদ্যোগে পানি বন্দি মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

রোববার (১৬জুন) দুপুর ২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে এই ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পুলিশ সহকারী পুলিশ সুপার ও মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা সম্রাট তালুকদার।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সিলেট জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন'র দিক- নির্দেশনায় গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ১নং রুস্তুমপুর ইউনিয়ন ও ১৩ নং বিছনাকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০০ শত পানিবন্দি অসহায় পরিবারের মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

উপহার হিসেবে চাল, ডাল, পেয়াজ, তেল, আলু এবং বিস্কুটসহ শুকনো খাবার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

;