মাইকেল চাকমার সন্ধান চেয়ে সংহতি সমাবেশ
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাইকেল চাকমাকে দ্রুত তার পরিবার ও সংগঠনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র ফোরাম, ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কাস ফ্রন্ট (শ্রমজীবী ফ্রন্ট) এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের উচিৎ আর দেরি না করে মাইকেল চাকমার সন্ধান দেওয়া। না হলে আমরা বলব, রাষ্ট্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ রাষ্ট্র আড়াই মাসেও তাকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।
‘মাইকেল চাকমার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাকে আদালতে পাঠান। এর বাইরে রাষ্ট্র কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে কোনো নাগরিককে অপহরণ করতে পারে না। দেশের সব মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সবার সোহেল তাজের মত মামা নাই। যাদের মামা নাই, তাদেরও বিচার পাবার অধিকার আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাহড়ের মানুষের জানমাল হুমকির মুখে। এক দেশে দুই আইন চলে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা শান্তি চাই, জানমালের হেফাজত চাই। শান্তি চাই।’
বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রিফাতের হত্যার বিচার পেতে কেন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লাগবে! সব জায়গায় কেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে চেয়ে থাকতে হবে! রাষ্ট্র আজ দানবীয় রূপ নিয়েছে। যে রাষ্ট্র মানবিক হবার কথা ছিল, সে রাষ্ট্রে দিনে দুপুরে অমানবিকভাবে মানুষ খুন হয়।
গণমুক্তি গানের দলের সাধারণ সম্পাদক ফারহানা হক শামা বলেন, শুধু মাইকেল চাকমা নয়, এমন অনেক আদিবাসী ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে, বিচার হয়নি। সময় এসেছে এসব অন্যায়, খুন, গুম রুখে দেওয়ার। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সংহতি জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহবায়ক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে গেছে! স্বাধীন রাষ্ট্রে এভাবে প্রকাশ্যে একজন মানুষকে দিনে দুপুরে হত্যা করা হবে কেন? পাহাড়ে এত সেনা ক্যাম্প কেন? সেখানে কি যুদ্ধ লেগেছে? পাহাড়ে এত সেনা কেন? আজ পাহাড়ের অবস্থা ভালো না। নিরাপত্তা নাই পাহাড়ে। বৃটিশদের মত পাহাড়ি জনগণকে ভাগ করে শাসন করা চলবে না। পাহাড়ের সম্পদ লুণ্ঠন করার জন্য শাসকরা কাজ করে। গুম, খুন ও হত্যার রাজনীতি দেশের জন্য শুভ না। ব্যক্তিগত সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহবায়ক মাসুদ রানা বলেন, এর আগে পুরান ঢাকার দর্জি শ্রমিক বিশ্বজিৎকে খুন করা হয়েছে। এভাবে প্রকাশ্যে খুন হলো রিফাত। দেশে এভাবে বিচারহীন খুন, অপহরণ বেড়ে চলছে। ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে খুন, গুপ্তহত্যা, অপহরণ চলছে। এসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে একটা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে একটা মেসেজ দেওয়া হচ্ছে। শাসকরা এদেশে গণতান্ত্রিক আচরণকে জায়গা দিতে চায় না। তাই গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলোকে চেপে ধরা হয়েছে।
শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রমদ জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, জাতীয় লেখক শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল, ল্যাম্পপোস্টের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সুলতানা লিসা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, গত ৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা আসার পথে পার্বত্য অঞ্চলের দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হন। ১৫ এপ্রিল গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে দলটির সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ) অভিযোগ করে, তাকে অপহরণ করা হয়েছে।