ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠিত বিষয়



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ৭

অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের প্রতি ইসলামের সমানাধিকার, সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ, যা ধর্মীয় নৈতিকতা ও আদর্শিক বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে আইনের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় সকল সময়ই প্রতিপালিত হয়েছে, তা আজকেও প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্র আর মুসলমান সম্মিলিতভাবে বিশ্বাস করেন এবং স্বীকৃতি প্রদান করেন। ১৯৯০ সালের ৩১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট মিসরের রাজধানী কায়রোয় অনুষ্ঠিত ৬ দিনব্যাপী ঊনিশতম ইসলামিক কনফারেন্সে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে ২৫টি ধারা এবং ৩৭টি ঊপধারাবিশিষ্ট ‘ইসলামে মানবাধিকার সম্পর্কিত ঘোষণা’র কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হলে ইসলামের সাম্যভিত্তিক সমঅধিকারের প্রসঙ্গটি সুস্পষ্ট হবে বলে বিশ্বাস করি, যেখানে মুসলমান-অমুসলমানের ওপর বিধানসমূহ সমভাবে প্রযোজ্য-

১. সমগ্র মানব জাতি এক পরিবার।
২. জাতি, গোত্র, বর্ণ, ভাষা, নারী, পুরুষ, ধর্মবিশ্বাস, রাজনৈতিক মতবাদ, সামাজিক অবস্থান বা অন্য কোনো বিবেচনায় মৌলিক মানবিক মর্যাদা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের দিক থেকে সকল মানুষ সমান।
৩. প্রতিটি মানুষই আল্লাহর সৃষ্ট জীব।
৪. সে ব্যক্তিকে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, যে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কল্যাণে নিয়োজিত।
৫. শুধুমাত্র তাকওয়া এবং সৎকর্মের ভিত্তিতে একজন মানুষ অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে।
৬. জীবন হলো আল্লাহপ্রদত্ত এক নিয়ামত।
৭. প্রত্যেক ব্যক্তিরই জীবন-ধারণের নিশ্চয়তা বিধানের অধিকার ইসলামে স্বীকৃত।
৮. প্রত্যেক ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো- মানুষের জীবন-ধারনের অধিকারকে যে কোনো প্রকার অবমাননা থেকে রক্ষা করা।
৯. আইন-নির্দেশিত কোনো কারণ ও বিধান ছাড়া কাউকে হত্যা করা হারাম।
১০. এমন কোনো কাজ বা উপায় অবলম্বন করা নিষিদ্ধ, যা মানব জাতির ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

১১. স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কারও জীবন রক্ষা করা ইসলামী আইন নির্দেশিত একটি কর্তব্য। শারীরিক ক্ষতি বা নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার জন্যই সুরক্ষিত; এ নিশ্চয়তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং আইন-নিদের্শিত কোনো কারণ ছাড়া এ অধিকার লঙ্ঘন করা নিষিদ্ধ।

১২. সামরিক অভিযান বা সশস্ত্র কোনো সংঘর্ষের সময় নির্দোষ ব্যক্তি, যেমন-বৃদ্ধ, নারী এবং শিশু হত্যা নিষিদ্ধ। আহত ও পীড়িত ব্যক্তির চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যুদ্ধবন্দীদের অধিকার রয়েছে অন্ন-বস্ত্র-আশ্রয় পাওয়ার। মৃতদেহ বিকৃত করা অবৈধ। যুদ্ধবন্দী বিনিময় এবং যুদ্ধের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বা পুর্নমিলনের ব্যবস্থা করে দেওয়া মানবিক কর্তব্য।

১৩. গাছপালা বিনাশ, শস্য ও প্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধন, প্রাণহানিকর শেল নিক্ষেপ, বোমা বিস্ফোরণ বা অন্য কোনো প্রকারে শত্রুপক্ষীয় বেসামরিক সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি ও সহায়-সম্পত্তির ক্ষতি সাধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

১৪. প্রত্যেক ব্যক্তি, জীবিত বা মৃত সকল অবস্থায়, পবিত্রতা রক্ষার অধিকারী এবং আপনাপন সুনাম ও মর্যাদা রক্ষার অধিকারী। রাষ্ট্র বা সমাজ পরিত্যাক্ত ধন-সম্পত্তি ও সমাধি রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।

১৫. সমাজের বুনিয়াদ হলো পরিবার এবং পরিবার গঠনের ভিত্তি হলো বৈবাহিক প্রথা। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া অধিকার আছে। গোত্র, বর্ণ বা জাতীয়তার কারণে উদ্ভূত কোনো প্রতিবন্ধকতার জন্য তাদেরকে এ অধিকার ভোগ করা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

১৬. সমাজ এবং রাষ্ট্র বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করার দায়িত্ব নেবে এবং বৈবাহিক প্রক্রিয়াকে সহজতর করে তুলবে। পরিবারের নিরাপত্তা বিধান এবং কল্যাণ সুনিশ্চিত করবে সমাজ ও রাষ্ট্র।

১৭. মর্যাদা এবং তা ভোগ করার অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের দিক থেকেও সকলের অধিকার সমান।
১৮. সন্তানের ভ্রুণ এবং সন্তানের মা, উভয়কে অবশ্যই নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে এবং তাদের যথাযথ পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৯. মা-বাবা অথবা উপযুক্ত দায়িত্বপূর্ণ অভিভাবকের অধিকার রয়েছে তাদের শিশুদের জন্য যে কোনো প্রকার শিক্ষাদানের পদ্ধতি বেছে নেওয়ার।

২০. প্রতিটি মানুষ বাধ্যবাধকতা ও অঙ্গকারের ভিত্তিতে তার বৈধ ক্ষমতা উপভোগের অধিকার রাখে।
২১. কোনো রকম বল প্রয়োগ বা জোরজবরদস্তি অথবা কারো দারিদ্র্য বা অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে কাউকে ধর্মান্তরিত করা যাবে না।
২২. প্রতিটি মানুষ স্বাধীনসত্তা হিসাবে জন্মগ্রহণ করে। কাউকে দাসত্বে আনা, অবমাননা করা, শোষণ করা বা তাকে হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অধিকার কারো নেই।

২৩. আইনের সীমারেখার মধ্যে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, স্বদেশের সীমার ভেতরে বা বাইরে নিজ বাসস্থান নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। অধিকার রয়েছে নির্যাতনের শিকার হলে অন্য রাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় প্রার্থনার।

২৪. প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষের জন্য কাজ পাওয়ার ও করার সমানাধিকার রাষ্ট্র-সমাজ কর্তৃক নিশ্চিত করতে হবে।
২৫. বৈধ উপায়ে প্রাপ্ত সম্পদ ভোগের অধিকার সমকলের জন্য সমানভাবে রয়েছে।
২৬. প্রত্যেকের স্ব স্ব বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সাহিত্যকর্ম, শিল্পকর্ম বা প্রযুক্তিগত সৃজনশীলতার ফলাফল ভোগের অধিকার সবার রয়েছে এবং এ সব কর্ম থেকে উদ্ভূত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থসমূহ রক্ষার অধিকারও তাদের রয়েছে।

২৭. প্রত্যেকের পরিচ্ছন্ন পরিম-লে আত্মোন্নয়নের অনুকূল পরিবেশে বসবাসের অধিকার রয়েছে।
২৮. প্রত্যেকের সুচিকিৎসা ও সামাজিক সুবিধাদি ভোগ করার অধিকার রয়েছে।
২৯. রাষ্ট্র প্রতিটি ব্যক্তির শালীন, স্বচ্ছল জীবন-যাপনের অধিকারকে সুনিশ্চিত করবে, যা তার এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান. শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদাসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম।
৩০. প্রত্যেকেরই নিরাপদে বসবাসের অধিকার রয়েছে। এই নিরাপত্তা যেমন তার নিজের, তেমনি তার সম্মান-সম্পত্তি, তার ওপর নির্ভরশীলদের এবং তার ধর্মের ব্যাপারেও প্রযোজ্য।

৩১. প্রত্যেকেরই জীবন-যাপন ও কাজ-কর্মে, নিজ বাড়িতে, নিজ পরিবারে, নিজ সম্পত্তির ব্যাপারে এবং আত্মীয়তা বা অন্য কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রেখে নিরুপদ্রবে থাকার অধিকার রয়েছে। কোনো ব্যক্তির ওপর গুপ্তচরবৃত্তি, তাকে কড়া নজরে বা পাহাড়ায় রাখা অথবা তার সুনাম ক্ষুণœ হতে পারে, এমন কোনো কাজ করা যাবে না। রাষ্ট্র তাকে অযৌক্তিক এবং স্বেচ্ছাচারমূলক যে কোনো রকম অবৈধ হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করবে।

৩২. প্রত্যেকের বসতবাটির নিরাপত্তা বিধান ও তাতে অবৈধ হস্তক্ষেপ না হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাসিন্দাদের অনুমতি ছাড়া বা বেআইনীভাবে কারো বাসগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং এর বাসিন্দাদেরকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা, তাদের বাসস্থান বলপূর্বক দখল করে নেওয়া বা বাড়ি-ঘর নির্মূল করা যাবে না।
৩৩. শাসক ও শাসিত নির্বিশেষে প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের চোখে সমান।
৩৪. ন্যায়বিচার প্রত্যেক ব্যক্তির প্রাপ্য।
৩৫. প্রত্যেকের দায় একান্তভাবে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত।

৩৬. আইন-সঙ্গত কোনো কারণ ছাড়া কাউকে যেন শাস্তি দেওয়া না হয়, তার ব্যবস্থা করা।
৩৭. নিরপেক্ষ বিচারে বা শুনানীর মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই নির্দোষ। এ নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ায় বা মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রয়েছে।

৩৮. বৈধ কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা, তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা বা কেড়ে নেওয়া, তাকে নির্বাসিত করা বা কয়েদ করা অথবা তাকে শাস্তি দেওয়া অসঙ্গত। কাউকে কোনো প্রকার দৈহিক বা মানসিক নির্যাতন করা বা তার মানহানি করা ও তার প্রতি কোনো প্রকার নিষ্ঠুরতা বা তাকে কোনো রকম অমর্যাদা করা যাবে না। অথবা কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া বা তার স্বাস্থ্য বা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো ডাক্তারি বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা পরীক্ষায় তাকে ব্যবহার করা যাবে না।

৩৯. যে কোনো প্রকারে অথবা যে কোনো উদ্দেশ্যে কাউকে জিম্মি করা সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
৪০. প্রত্যেকেরই স্বাধীনভাবে নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকেরই সঠিক বিষয়ের পক্ষে কথা বলার বা সুপারিশ করার এবং যা কিছু ভালো, তা প্রচার ও প্রসারের অধিকার রয়েছে।
৪১. এমন কোনো মতবাদ, যা পরস্পরের মধ্যে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ায় বা বর্ণগত ও গোত্রীয় বিভেদ সৃষ্টি করে, তা অনুমোদিত নয়।
৪২. ক্ষমতা একটি আমানতস্বরূপ; এটাকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণ বা কাউকে বঞ্চিত করা, অপপ্রয়োগ করা, বিদ্বেষ দ্বারা পরিচালিত হয়ে কাউকে হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
৪৩. নিজ রাষ্ট্রের প্রশাসনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে।

আরও পড়ুন: পর্ব-৬: প্রকৃত ইসলামী সমাজ সব ধর্মাবলম্বীর সমানাধিকারের রক্ষাকবচ

   

লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়রের রেকর্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাদিক খান হচ্ছেন লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন থেকেই পদটি ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই রাজনীতিক।

সাদিক খানের জন্ম লন্ডনে, ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর। এর দুই বছর আগে ১৯৬৮ সালে তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান। বাবা আমানউল্লাহ ছিলেন বাসচালক। মা শেহরুন করতেন দরজির কাজ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিক পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদি ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সাদিক খানের পড়ালেখা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে। বিষয় ছিল আইন। পড়াশোনা শেষে মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কম বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ বারার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাদিক খান। ২০১০ সালে লেবার পার্টি বিরোধী দলে গেলে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় বিচার বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী, লর্ড চ্যান্সেলর (ছায়া অর্থমন্ত্রী) ও লন্ডন-বিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন সাদিক খান। সে বছরের ৯ মে কনজারভেটিভ পার্টির জেক গোল্ডস্মিথকে হারিয়ে প্রথমবার লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির সোন বেইলিকে পরাজিত করে মেয়র পদ ধরে রাখেন সাদিক।

এবার তৃতীয় দফায় সাদিক খানের জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সাদিক খানের দুই সন্তান রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। সাদিক খানের পছন্দের খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বক্সিং। ২০১৪ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নেন সাদিক খান।

;

রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর অপেক্ষায় সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৯ মে বাংলাদেশ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীদের নিয়ে ওইদিন প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে। এর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই মক্কায় ভিড় জমানো শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এই সময়ে কোনো উমরাযাত্রী গ্রহণ করবে না দেশটি।

এ বছর মক্কায় রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর সমাগম হতে পারে, এমন ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব।

সুন্দর ও আরামদায়কভাবে যেন হাজিরা হজ সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

হজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ধারণা করছে, এবারের রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি মানুষ উমরা পালন করার পর- হজেও মুসল্লিদের ঢল নামবে।

সদ্য বিদায় নেওয়া রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। রমজানে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ লাখ মানুষ মদিনায় আসেন। হজের আগে ও পরে অনেক মানুষ মদিনায় যান।

গত বছর হজপালন করেছিলেন ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। করোনা মহামারির কারণে এর আগের তিন বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার হজে ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা এবার গতবারের তুলনায় আরও বেশি মানুষ হজ করতে আসবেন। তাই হজের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালন করতে যাবেন ৮৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৪ হাজার ৩০৭ জন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।

;

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;