প্রকৃত ইসলামী সমাজ সব ধর্মাবলম্বীর সমানাধিকারের রক্ষাকবচ



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষাগত সংখ্যালঘুর মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার বিশ্ব সম্প্রদায় আইনগত ও সামরিক-বেসামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানবতার আহাজারি থামাতে পারছে না। বরং ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার সংরক্ষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত থাকার পরেও মুসলিমরাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘুর অধিকার’ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা: পর্ব- ৬

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোনো বিষয়ে চিন্তার শৈথিল্য ও বিভ্রান্তি আসে ইতিহাসহীনতা, অজ্ঞানতা ও কুপমণ্ডুকতা থেকে। অথচ ইসলামে, যে কোনো বিষয়ের মতোই অমুসলমান ও সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আচরণ ও নীতিমালার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র অজ্ঞানতা ও কুপমণ্ডুকতার কোনো স্থান নেই। প্রকৃত প্রস্তাবে ইসলাম ধর্মে মানুষের ওপর কোনোরূপ জবরদস্তি নেই। ধর্ম প্রচারে কেবল যুক্তি প্রয়োগ করতে হবে; সদুপদেশ ও সদাচরণ অবলম্বণ করতে হবে। প্রতিমা-পূজকের প্রতিমাকে পর্যন্ত মন্দ বলা নিষিদ্ধ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা আন আমের ১০৮তম আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য দেব-দেবীর উপাসনা যারা করে তাদের উপাস্যদের তোমরা গালি দিয়ো না।’

ইসলামের বিধান মতে, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে মজলুমকে সাহায্য করতে হবে। আল্লাহতায়ালা এমন কারও প্রতি দয়া করবেন না, যে আল্লাহর সৃষ্ট জীবের প্রতি দয়াশীল নয়। অমুসলমানকে যে মুসলমান পীড়া দেয়, নিগৃহীত করে বা অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে সে প্রকৃত বিচারে মুসলমান নয়। এসবই পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের কথা-কাজ তথা হাদিসের শিক্ষা। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দাবি প্রতিষ্ঠা করে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফরমান জারি করেছিলেন তা থেকেই ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলমানের স্থান, মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি বলেছেন, ‘অমুসলিমের জীবন আমাদের জীবনের এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতোই।’

আদি ইসলামী রাষ্ট্র মদিনার সনদে অমুসলমানদেরকে মদিনায় বসবাসের অধিকারসহ সকল সামাজিক-রাজনৈতিক-নাগরিক-আইনগত অধিকার দিয়েছিল। এমনকি তাদের একটি অংশ বিশ্বাসঘাতকতা করা সত্ত্বেও অন্য অংশের প্রতি কোনোরূপ অন্যায় আচরণ করা হয়নি। আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত এক হাদীসে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সর্তক থাকো সে ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি অমুসলমানের ওপর জুলুম বা নির্যাতন করে অথবা তাদের হক বা অধিকার নষ্ট করে অথবা তাদের সামর্থ্যরে চাইতে বেশি কাজের বোঝা চাপাতে চেষ্টা করে অথবা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের থেকে কিছু জোরপূর্বক নেয়; আমি কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়বো।’

মুমিন-মুসলমানদের আমির বা নেতা হজরত উমর (রা.) শুধু রাজ্য শাসনকালেই নয়, মৃত্যুকালেও অমুসলমানের অধিকার সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে ইসলামের মূল ভাবনা সম্পর্কে গভীর অনুধাবনের প্রয়োজন রয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে, যে ধর্ম কেবলমাত্র ধর্ম নয়, দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থাও বটে, জাতিগঠন করলে কোনোভাবেই আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি বা প্রতিক্রিয়াশীলতা আসতে পারে না। আক্রমণ ও প্রতিক্রিয়ার মনোভাব তাদের ক্ষেত্রেই আসতে পারে এবং ইতিহাসের বিচারে এসেছেও, যারা ধর্মের ছদ্মাবরণে ছ্যুৎমার্গের কিংবা বৈষম্যের বা অসাম্যের ধ্বজ্বা ধারণ করে। যারা সমাজ-সংসারে চাণক্য বা মেকিয়াভেলির সুবিধাবাদ ও নীতিজ্ঞানহীনতা প্রচার ও গ্রহণ করেছে, যাদের ধর্ম পুরোহিত সমাজভিত্তিক ব্যক্তিগত পূণ্য লাভের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং যারা ধর্ম ও বাস্তব জীবনে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কে রূপরেখা সম্পর্কে অজ্ঞ ও দিক-নিদের্শনা শূণ্য, তাদের সমস্যা আর ইসলামের সমস্যা তাই কোনোভাবে এক নয়। যেহেতু ইসলাম ব্যক্তিগত ও মানসিক নিয়ন্ত্রণেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সেহেতু প্রকৃত মুসলমানের একটি বাস্তব ও পালনযোগ্য জীবন-দর্শন এবং জীবন-মিশন রয়েছে।

অন্য ধর্মীয়দের এটা নেই বলেই, তাদের বৈষয়িক ও ধর্মীয় বিষয় আলাদা করতে হয়। এদের ধর্ম অন্য ধর্মের লোককে ঘৃণা করতে শিক্ষা দিতে পারে এবং ধর্মকে তত্ত্বগতভাবে একটি নিরাপদ স্থানে রেখে বৈষয়িক ও জাগতিক বিষয়ে নীতিজ্ঞানহীনতার অবলম্বন করতেও অবাধ সুযোগ দিয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ হিসাবে সকল মানুষের সম্মান, মর্যাদা, অধিকার ও দাবি প্রতিষ্ঠা করতে হবে- কারণ সকল মানব সম্প্রদায়ই ইসলামের দৃঢ়তর বিশ্বাস মতে, আল্লাহর সৃষ্টিকূলের সদস্য। কাজেই ইসলামী সমাজে ও বিশ্বাসে সম্প্রদায়গত লাভের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কেবল সম্প্রদায়গত উন্নতি করলেই মুসলমানের কর্তব্য শেষ হয় না; যুক্তি ও আইন দ্বারা সমাজে সকলের জন্য কল্যাণ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাই মুসলমানের কাজ।

বিভিন্ন ধর্মে কোনো ধর্মীয় অনুশাসন পালন না করেও সেই ধর্ম-সম্প্রদায়ের সদস্য থাকা যায়; কিন্তু ইসলামে কেবলমাত্র সম্প্রদায়গত মুসলমানের কোন মূল্য থাকবে না, যে পর্যন্ত সে বাস্তব জীবনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় গণ্ডিতে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা না করবে। অতএব ইসলামী সমাজ মানে কেবলমাত্র মুসলমানের সমাজ নয়; ইসলামী শাসন মানে কেবলমাত্র মুসলমানদের সম্প্রদায়গত-শ্রেণীগত শাসন নয়। ইসলামী সমাজ ও ইসলামী শাসন মানে, এমন একটি সমাজ কাঠামো ও শাসন ব্যবস্থা, যেখানে ইসলামের মূলভাবের ওপর ভিত্তি করে শাসন-প্রশাসন-বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে; মানুষ হিসাবে মানুষ যেখানে ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-অঞ্চল-লিঙ্গ নির্বিশেষে পরিপূর্ণ মানবিক সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার পেয়েছে; অর্থনীতি থেকে সমাজতত্ত্ব, বিজ্ঞান থেকে শিল্পকলা-সাহিত্য তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলাম যে মানববান্ধব, কল্যাণধর্মী ও প্রগতিশীল পথ নিদের্শ করে, আপামর মানুষের জন্য সেই পথ অবারিত করাই ইসলামী সমাজের লক্ষ্য; সেই পথের কল্যাণ সকলকে সমানভাবে পৌঁছে দেওয়াই ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।

সেজন্য প্রকৃত ইসলামী সমাজই হবে মুসলমান ও অমুসলমান নির্বিশেষে সকল মানুষের সমানাধিকারের সনদ এবং মানবিক সম্মান, মর্যাদা, কল্যাণ ও অধিকারের রক্ষাকবচ। এই কথাটির ব্যাপক অর্থ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা নিয়োজিত শুধু তারাই নন, সকল মুসলমানকেই বুঝতে হবে ও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রতিপালন করতে হবে এবং কোনরূপ অপবাদ ও পূর্ব-ধারণার বাইরে এসে নিজেদের বাস্তবসম্মত কল্যাণ, মর্যাদা, সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে অমুসলমান ভাই-বোনদেরকেও অনুধাবন করতে হবে।

আরও পড়ুন: পর্ব- ৫: ‘মদিনা সনদ’ নাগরিক সমানাধিকারের এক অনন্য উদাহরণ

   

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;

গরমে কোরবানির পশু নিয়েও ভাবতে হবে



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

পশুর খামার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানিতে পশু লাগতে পারে এক কোটি ত্রিশ লাখের মতো। অন্যদিকে এবার চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ত্রিশ লাখ। কাজেই কোরবানিতে পশুর কোনো অভাব হবে না। অতএব কোরবানির পশু নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারিদের গরু-ছাগলের প্রাণহানি কিংবা ওজন কমে যাওয়ার বিষয়টিকে নিছক গোষ্ঠীবিশেষের বিড়ম্বনারূপে দেখার সুযোগে নেই। যখন খামারিরা আসন্ন কোরবানির জন্য তাদের পশু প্রস্তুত করছেন, তখন এরূপ ক্ষয়ক্ষতির জেরে ভোক্তাসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি আক্রান্ত হতে বাধ্য।

সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গরুকে বারবার গোসল করিয়ে, টিনের চালে পাটের ভিজা বস্তা বিছিয়ে, স্যালাইন ও গ্লুকোজ খাইয়ে এবং বৈদ্যুতিক পাখা চালিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ খামারিরা। এ রকম দুর্দিনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর শুধু পরামর্শ দিয়ে দায় সারতে পারে না।

রিপোর্টে প্রকাশ, গরমে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আসলে সারাদেশের চিত্র এমনই হতাশাজনক। তাপপ্রবাহে পশুর নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দুধের উৎপাদন ব্যাহত হবার মাধ্যমেও খামারিদের সংকটের অবস্থা স্পষ্ট। বিশেষত ঈদুল আজহায় নিজস্ব পশু দিয়ে কোরবানি করার যে সক্ষমতা দেশ অর্জন করেছে, সেখানে তাপপ্রবাহের চোখ রাঙানি লক্ষণীয়। যেহেতু খামারিদের হাতে সময় কম, সেহেতু তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে তাপপ্রবাহসৃষ্ট ক্ষতিরোধ করা সম্ভব।

খবরে আরও বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কোরবানির গরু-ছাগল অজ্ঞাত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও কাঁপুনির লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ার পর পশুগুলো ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাও যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু-ছাগল আক্রান্ত হওয়ায় লোকসানে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন বিপদে খামারিদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো প্রয়োজন। এ সময় যেখানে আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো খামারিরা অভিযোগ করেছেন, আগে গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসক মোটরসাইকেলে খামারে আসতেন। তাকে তখন যত অর্থ দিতে হতো, এখন ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের বড় গাড়ি আসার কারণে কয়েক গুণ ফি পরিশোধ করতে হয়। এ চিত্র কেবল হতাশাজনক নয়; বরং নিকৃষ্ট উদাহরণ।

পরিস্থিতির আলোকে আধুনিক খামারিরা পূর্বপ্রস্তুতি নিতে সক্ষম হলেও প্রান্তিক খামারি অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। তাই খামারিদের ক্ষতি পোষানো, আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা প্রদানসহ দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকেই সবার আগে তৎপর হতে হবে। গবাদি পশু রক্ষা করতে পরিস্থিতির আলোকে পদক্ষেপ নিতে সচেতনতা বৃদ্ধির বার্তা খামারিদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

চলমান তাপপ্রবাহে আক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সংকটকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনাযোগ্য। খামারিদের সহায়তায় বেসরকারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয়রাও পাশে দাঁড়ালে সংকট দূর হবে এবং কোরবানির সক্ষমতায় কোনো ছেদ পড়বে না। বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব যেসব পদক্ষেপ নিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শুধুমাত্র হজ ভিসায়ই পবিত্র হজপালন করা যাবে, এছাড়া হজযাত্রীদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সেই সঙ্গে নিবন্ধন ও যথাযথ অনুমতি ছাড়া কেউ মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। সুষ্ঠুভাবে হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে নতুন ব্যবস্থাপনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। নতুন এসব বিধান-প্রবিধানের মাধ্যমে পবিত্র স্থানগুলোতে হজযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও তাদের নিরাপত্তা সুসংহত করাই কর্তৃপক্ষের মূল উদ্দেশ্য।

শনিবার (৪ মে) সৌদি আরবের জেনারেল ডিরেক্টরেট অফ পাবলিক সিকিউরিটির এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজিস্ট্রিবিহীন হজপালন কমাতে মক্কায় প্রবেশ করতে ইচ্ছুক সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইনটি শনিবার (৪ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে।

বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে, মক্কার প্রবেশপথে থাকা চেকপয়েন্টগুলোতে সৌদি নিরাপত্তা কর্মীরা যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না। শুধুমাত্র হজ ও উমরার ভিসাধারী, আবাসিক বাসিন্দা এবং ওয়ার্ক পারমিটধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারেবেন।

উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না
উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না মর্মে আইন পাস করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় বলেছে, উমরা ভিসায় হজ করা যাবে না। বরং হজের জন্য আলাদা ভিসা করতে হবে। এ ছাড়া টুরিস্ট ভিসা, ট্রানজিট ভিসায়ও হজপালন করা যাবে না- মর্মে জানানো হয়েছে।

ইসলামিক ইনফরমেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাদের উমরার ভিসা রয়েছে, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। উমরার ভিসায় হজযাত্রীরা হজ করতে পারবেন না। তাদের অবশ্যই আলাদাভাবে হজের ভিসা গ্রহণ হবে।

সৌদি আরবে যারা আছেন তাদেরও হজপালনের অনুমতি নিতে হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি
সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয় হজ ২০২৪-এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে। সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজযাত্রীদের অবশ্যই হজ পারমিট নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তারা নুসুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বৈধ হজযাত্রার জন্য তা অপরিহার্য। একইসঙ্গে হজযাত্রীদের সেহাত অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। সৌদি বাসিন্দাদের গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন দিতে হবে।

বিধিতে আরও বলা হয়, স্থানীয় হজযাত্রী ছাড়া অন্যদের নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য মক্কা পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে ওই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা উচিত।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ দেশ থেকে একটি স্বাস্থ্য শংসাপত্র আনতে হবে। এর মাধ্যমে হজযাত্রী সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত কিনা, তা যাচাই করা হবে।

সিনিয়র স্কলার কাউন্সিল জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাপনা হজের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য পরিষেবা উন্নত করবে। সবার জন্য একটি নিরাপদ ও অর্থবহ হজ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, আগামী ৯ (১১ জিলকদ) থেকে হজযাত্রীদের সৌদি আরব গমন শুরু হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ জুন পবিত্র হজের কার্যক্রম শুরু হবে।

;

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় পিছিয়ে জার্মানি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘৃণা ও বৈষম্যের ক্রমবর্ধমান ঘটনার মধ্যে বর্ণবাদ থেকে মুসলমানদের ও মুসলমান বলে মনে করা লোকদের রক্ষা করতে জার্মান সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জার্মানি মুসলিমবিরোধী অপরাধের কার্যকর নীতিমালা নেই। সরকারের নেই কোনো নজরদারি ও তথ্য। এর ফলে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপে বর্ণবাদের ওপর গবেষক আলমাজ টেফেরা বলেছেন, মুসলিমদের ঘৃণা ও বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে জার্মান সরকারের ব্যর্থতার কারণ মুসলিমদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা।

মুসলমানরা কী কারণে বর্ণবাদ অনুভব করছে যা শুধু কেবল বিশ্বাসভিত্তিক শত্রুতা নয়। জার্মানিতে মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, বৈষম্য, বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনা এবং মুসলিমদের ডাটা সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপোড়া ছাড়া জার্মান কর্তৃপক্ষের যেকোনো প্রচেষ্টা অকার্যকর হবে।

২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৯ মাসে মুসলিম ঘৃণামূলক অপরাধের পরিসংখ্যানে ৬৮৬টি ‘ইসলামবিরোধী’ অপরাধ গণনা করা হয়েছে। ২০২২ সালে ১২ মাসে তা ছিল ৬১০টি।

২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকে মুসলিম বিরোধী ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছে জার্মান নাগরিক সমাজের দলগুলো।

জার্মানিতে বাস করা প্রায় ৫৫ লাখ মুসলমানের অনেকেই বলছেন, তারা প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষের মুখোমুখি হন৷ যদিও জার্মানির সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷

জার্মানির সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ মুসলিমের মহাসচিব আব্দুস সামাদ আল ইয়াজিদি বলছেন, ইসলামবিদ্বেষ বিষয়টি জার্মান সমাজের মূলধারায় ঢুকে গেছে৷ অর্থাৎ এটি অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছে, যা প্রকাশ্যে প্রকাশ করা যায় বলে মনে করেন তিনি৷

তিনি জার্মানিতে মুসলমানদের বিষয় দেখাশোনা করার জন্য একজন কমিশনার নিয়োগ দিতে জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷

;