ফেনীতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবের ৩০ ঘণ্টা পার হলেও এখনও বিদ্যুৎহীন জেলার অধিকাংশ উপজেলার সাধারণ মানুষ। গাছ উপড়ে বৈদ্যুতিক তারের উপর পড়াসহ, খুঁটি ভেঙে যাওয়া এবং ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যাওয়াতে বিদ্যুৎহীন গ্রামীণ জনপদের মানুষ। ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলায় ১১৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে, ৯৭৬টি গাছ তারের উপর পড়েছে এবং ৫৮টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ এর পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল না হওয়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে চলতি বছরের মধ্যে ফেনীতে সর্বোচ্চ ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফেনী আবহাওয়া অফিস।
সোমবার (৬ মে) দুপুরে ফেনীর আকাশে হঠাৎ বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়। এতে গাছপালা পড়ে বন্ধ থাকে মহাসড়কের যান চলাচল। ভেঙে যায় বহু এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তায় পড়ে যায় বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং অতিবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার ফলে নুইয়ে পড়ে ফসলী জমির ধান।
মঙ্গলবার (৭ মে) জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সোমবার দুপুরে হওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের পর থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা অব্দি বিদ্যুৎ সচল হয়নি। মহাসড়কের গাছ অপসারণ হলেও গ্রামীণ অনেক সড়কে গাছ পড়ে থাকাতে স্বাভাবিক হয়নি গ্রামীণ যানচলাচল। মোবাইল নেটওয়ার্ক কার্যক্রমও স্বাভাবিক নেই। বিদ্যুৎ না থাকাতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফ্রীজে রাখা খাদ্য সামগ্রী। বিদুৎ না থাকাতে প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তবে কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সচল হবে তা জানাতে পারেননি পল্লী বিদুৎ বিভাগ।
ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার উপর পড়ে আছে বিদ্যুৎ এর খুঁটি। খুঁটি অপসারণের কাজ চলমান থাকলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়াতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
আব্দুল করিম নামে এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, কাল থেকে এখন অব্দি বিদ্যুৎ নেই। বৃষ্টি হওয়াতে গরমের পরিমাণ কম হওয়াতে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও ফ্রীজে রাখা পচনশীল দ্রব্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করতে পারছেনা, লাইটে চার্জ শেষ। সবমিলিয়ে বেশ ভোগান্তিতে আছি।
জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুঞ্জরা এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, বিদুৎ এর পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। কাল থেকে বিদুৎ না থাকাতে মোবাইল বন্ধ, লাইটে চার্জ নেই। আজ বিদ্যুৎ সচল না হলে অন্ধকারে রাত কাটাতে হবে।
এদিকে চলছে স্নাতক ও ডিগ্রির বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা। বিদ্যুৎ না থাকাতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, কাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। রাতে পড়তে পারিনি। কিভাবে প্রস্তুতি নেব তার ঠিক নেই।
মুজিবুর রহমান নামে গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দোকান খুলে বসে আছি। ফ্রীজ বন্ধ, লাইট নেই। এভাবে ব্যবসা করা যায় না। বিদ্যুৎ না থাকাতে ব্যবসায় সাময়িক লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। সারাদিন আকাশ মেঘলা ছিল। রাতেও হালকা বৃষ্টি ও আকাশে মেঘ ছিল বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ফেনী পল্লী বিদুৎ এর জিএম ফজলুর রহমান বলেন, জেলার ৬ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ১১৭টি খুঁটি ভেঙে গেছে, ৮৩৯টি স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে, ৯৭৬টি গাছ তারের উপর পড়েছে এবং ৫৮টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি অনেক সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ সচল হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, খুঁটিগুলো সংস্কার করতে হবে, নতুন ট্রান্সফরমার লাগাতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যার ফলে বলা যাচ্ছেনা কখন নাগাদ বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হবে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকরা দ্রুত ঠিক করার জন্য কাজ করছে বলেও জানান তিনি।