জনসংখ্যার অনুপাতে শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী



সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাখাতে বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা টাকার পরিমাণে কম না; কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে সেটি খুব কম। এসব বিষয় চিন্তা করে শিক্ষাখাতে আরো বাজেট বাড়াতে হবে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের উদ্যোগে ‘আগামী বাজেট ও শিক্ষাখাত: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সংখ্যাগত উন্নয়নের সাথে শিক্ষার মান বাড়ানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। বলনে, প্রাথমিকে শিশু ঝড়ে পড়ার হার আমরা কমিয়েছি। চেষ্টা করছি শিক্ষার মান উন্নয়ন করার। শিক্ষার মান যদি উন্নত করতে হয় এবং ঝরে পড়ার হার যদি আরও কমাতে পারি তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দের হার আরও বাড়াতে হবে।

দীপু মনি বলেন, শিক্ষা বাজেটের আকার বাড়লেও, মূল বাজেটের দুই শতাংশেরও কম। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রাখতে হবে। যেহেতু পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প সরকার নিজ টাকায় করছে। তবে, সরকার শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বাজেটে শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আমরা পাব। কারণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার জনবান্ধব ও শিক্ষাবান্ধব সরকার। এই সরকারের যতগুলো জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে, সেখানে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ কাজ করবে। আমরা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে শিক্ষার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা হবে, বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে পরিমাণ আর্থিক বরাদ্দ ও বিনিয়োগ প্রদান করতে হবে, সেখানেও বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার সমানভাবে মনোযোগী।

তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু পরিবর্তন হয়। গত ১০টা বছর কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হয়েছে সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার। আমরা সব শিশুদের স্কুলে আনতে চাই। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহার ছিল সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমাদের জিডিপির অন্তত চার ভাগ শিক্ষারক্ষেত্রে থাকবে। বিশ্বের অনেক দেশ এটি চার এর ওপরে আছে। আমাদের সমপরিমাণও আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির এনএইচএনের ডিরেক্টর অ্যান্ড কনসালটেন্ড ডা. সিএম দিলোয়ার রানা, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন এমডব্লিউইআরের আহবায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন এএসএম সুজাউদ্দীন।

সেমিনারে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, নতুনরা শিক্ষা বাজেট নিয়ে ভাবছে এটিই বড় পাওয়া। আমরা কাজটা শুরু করেছিলাম দীর্ঘদিন বিষয়টি বন্ধ ছিল। নতুনদের কাজে কিছু দুর্বলতা থাকবেই।

স্কুলগুলোকে মিড ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, পেটে ক্ষুধা রেখে বিদ্যা হয় না। তাই মিড ডে মিলে বিস্কুট দিলে চলবে না। তাদের পেট ভরে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষায় অবশ্যই বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। সুশিক্ষিত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। আজ সুশিক্ষিত মানুষের অভাবের কারণে নুসরাতের মতো মেয়েদের নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়তে হচ্ছে।

ডা. দিলওয়ার রানা বলেন, শিক্ষার সাথে সাথে স্বাস্থ্যখাতেও বাজেট বাড়াতে হবে। সাথে সাথে সেই বাজেট কিভাবে ব্যয় হচ্ছে সেটিও তদারকি করতে হবে।

আসন্ন অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বাজেটের আওতায় আনতে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজনের প্রস্তাব তুলে ধরেন ফারুক আহমাদ আরিফ। তিনি বলেন, ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় এবং মাধ্যমিকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এতে উন্নয়ন খাতে ২৫ হাজার কোটি ও অনুন্নয়ন খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। আর উচ্চ মাধ্যমিক, মাদরাসা ও উচ্চ শিক্ষায় ৮০ হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৮ হাজার কোটি ও অনুন্নয়ন খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা। মাদরাসায় ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৩ হাজার ও অনুন্নয়ন খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে এসব অর্থ জঙ্গি অর্থায়নে যাতে ব্যবহার করা না হয় সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে উন্নয়ন খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা ও অনুন্নয়ন খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং শুধু গবেষণা খাতে আলাদাভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। অর্থাৎ জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ের ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে হবে বরাদ্দ নয়।

বাজেটে আয়ের খাতসমূহ: আয়ের খাতের মধ্যে সরকারি উৎস হতে ৮০ হাজার কোটি টাকা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দিবে ৪০ হাজার কোটি টাকা ও ২০ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক অনুদান।

উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করে সেখানে- ১. একাডেমিক ব্যয়, ২. অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় বাদ দিয়ে যে অর্থ রয়ে যাবে তা সরকারকে দিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। সরকার সেই অর্থ দিয়ে সরকারি-বেসরকারি ১. প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যে জমি প্রদান, ২. শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, পেনশন, উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ৩. কর্মকর্তা-কর্মচার্রীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন, ৪. সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও বিতরণ করবে ৫. শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ দিবে, ৬. শতভাগ আবাসন (শিক্ষার্থী-শিক্ষক), ৭. যাতায়াত, ৮. গবেষণা, ৯. চিকিৎসা, ১০. পুষ্টিকর খাবার, ১১. বিদেশি বৃত্তিসহ শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

এছাড়াও তিনি বিশেষভাবে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। যথা-

১. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনার্স ও ডিগ্রির প্রথম বর্ষে ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি তথ্য সম্বলিত সংক্ষিপ্ত বই রচনা করে অনার্স ও ডিগ্রির দ্বিতীয় বর্ষে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২. শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ দিতে হবে, যা কর্মজীবনে গিয়ে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবে।

৩. শিল্প-কারখানা, প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা তাদের লাভের শতকরা ৩ শতাংশ অর্থ সরকারকে দিবে, সরকার সেসব অর্থ দিয়ে এডুকেশন ব্যাংক নামে শুধু শিক্ষাসংক্রান্ত ব্যাংক হিসেবে চালু করবে।

৪. ২০৪১ সালে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বিনামূল্যে প্রদান করতে হবে।

৫. এসব কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য একটি কমিটি করতে হবে যেখানে সদস্য থাকবে ক. শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, খ. প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি এবং গ. সরকারে প্রতিনিধি থাকবে।

   

৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল ছাড়বে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ- খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম অব্যাহত রেখেছে। ঘূর্ণিঝড়টি পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

রোববার (২৬ মে) রাত ১২টায় আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আব্দুল কালাম মল্লিকের দেওয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি-১৫ -এ এসব তথ্য জানানো হয়।

তিনি বলেন, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০কিলোমিটার. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা/ঝড়ো হাওয়া সহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি / ২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি / ২৪ ঘণ্টা) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

;

স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় রিমাল, চলছে তাণ্ডব



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের চোখ স্থলভাগে ঢুকে পড়েছে। রোববার (২৬ মে) রাত সাড়ে ১০টা থেকে বাগেরহাটের মোংলার খেপুপাড়া উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা, কুয়াকাটাসহ উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি ৪-৫ ফুট উপরে উঠে যাচ্ছে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকছে নিম্নাঞ্চলে। সুন্দরবনসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকা এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটে গেছেন।

৪০০ কিলোমিটার আকৃতির ঘূর্ণিঝড় রিমালের কেন্দ্র সন্ধ্যা ৬টার পরপরই উপকূল অঞ্চল ছুঁয়েছে। ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার গতিতে রিমাল স্থলভাগে উঠছে। আগামী দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পুরোপুরি উপকূলে প্রবেশ করবে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্কে সাইক্লোন সেন্টারে নদীর তীরবর্তী ও বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিচ্ছেন।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় রিমাল খুলনাসহ উপকূল অতিক্রম করছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য খুলনার ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুপুরে প্রবল জোয়ারে কয়েক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রায় এক লাখ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন।

অবহাওয়া অধিদফতর, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।

আবহাওয়া অফিসের আশঙ্কা, প্রবল এ ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

;

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ভেঙেছে বাঁধ

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল রবিবার (২৬ মে) রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছে। রাত আটটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।

ঝড়ে প্রাথমিকভাবে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঝড়ের প্রভাবে হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক রাত ১২টার দিকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি এখনও উপকূল অতিক্রম করছে। অতিক্রমের এই সময়ে উপকূলজুড়ে ঝোড়ো হাওয়া ও অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতির কারণে সোমবার উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোনো কোনো জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

এর আগে রাত সোয়া আটটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এর অগ্রভাগ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে খুলনা উপকূলের কাছে সুন্দরবনের দিকে প্রবেশ করে। এর প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে পড়ে গিয়ে শওকাত মোড়ল (৬৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যান। উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের প্রয়াত নরীম মোড়লের ছেলে।

অন্যদিকে রিমালের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে শরীফুল ইসলাম (২৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বরগুনার প্রধান তিন নদীতে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পশরবুনিয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রায় ৬০০ মিটার ভেঙে পায়রা নদীতে বিলীন হয়েছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে পানির চাপে আমতলীর পরশুরবুনিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়া যেসব বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। জেলার এক হাজার মিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।’

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামসংলগ্ন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর থেকে পানি গড়িয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে সেখানকার চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর নুনিয়াছটাসহ অন্তত ২১টি গ্রাম। এসব গ্রামের হাজারো মানুষকে গৃহপালিত প্রাণী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, কাপড়চোপড় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে শহরের দিকে ছুটতে দেখা যায়।

উপকূলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য শহরের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাবলিক হল ও কিছু হোটেল খুলে দেওয়া হয়। কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের মহাল রয়েছে প্রায় ৭০০টি। জোয়ারের পানিতে ৩০০টির বেশি মহাল পানিতে ডুবে গেছে।

বরিশাল নগরের নিম্নাঞ্চলসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বরিশাল নগরের রূপতলীর জিয়ানগর, খ্রিষ্টানপাড়া, পলাশপুর, বেলতলা, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, দক্ষিণ রূপাতলী, ভাটিখানা, কাউনিয়া, প্যারারা রোড, সদর রোড, কেডিসি, ত্রিশ গোডাউন, দপদপিয়া ও কালিজিরা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা ঘরবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক চলে গেছে পানির নিচে।

বাগেরহাটে ঝোড়ো হাওয়ায় সঞ্চালন লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রবিবার সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে।

নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন বলেন, ‘বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপের সব কটি গ্রাম সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কের ওপরে ২ ফুট উচ্চতায় পানি প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অনেকের মাছের খামার ও পুকুরের মাছ। অনেক জায়গায় মানুষের বসবাস করা ঘরেও পানি ঢুকে গেছে।’

;

ঘূর্ণিঝড় রিমাল’র প্রভাবে সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

  ঘূর্ণিঝড় রিমাল



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘূর্ণিঝড় রিমাল’র প্রভাবে সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার (২৭ মে) বিকেল থেকে সিলেটে নগরী এবং এর আশেপাশের উপজেলা সমূহে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়।

জানা যায়, গত ২ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। শুক্রবার ও শনিবার দিবাগত রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও কমেনি তাপমাত্রা। এছাড়াও মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সিলেটে চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪ বার রেকর্ড করা হয়েছে। গত ১৬ মে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পরে ২৩ মে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ৩৭ দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।

শুক্রবার (২৪ মে) বিকাল ৩টায় ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি ও চলতি বছরের পূর্বের সকল রেকর্ড ভেঙে শনিবার (২৬ মে) বিকাল ৩টায় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে রোববার বিকেলে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিন বিকেল থেকে সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস থাকার ফলে জনমনে অনেকটা স্বস্তি দেখা যায়। এই রিপোর্ট রাত সাড়ে ১২টায় লেখার সময়েও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বিপ্লব দাস বলেন, ‌বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রিমামে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সিলেট কিছু উপজেলায় ও নগরীতে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, রাত নয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সিলেটে ১৫ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব সিলেটে খুব একটা পড়বে না।

এদিকে সন্ধ্যায় আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো.মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিমি) থেকে অতিভারী (৮৯ মিমির বেশি) বর্ষণ হতে পারে। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে বলেও ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

;