গাইবান্ধার কাঁচা রাস্তা

বর্ষায় হাঁটু সমান কাদা, খরায় উড়ছে ধুলো



মাসুম বিল্লাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধায় স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) আওতায় অতি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো আজও কাঁচা রয়ে গেছে। বর্ষায় এসব রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদার সৃষ্টি হয়। আর এখন খরায় রাস্তাগুলোতে উড়ছে ধুলো। ফলে এ সব রাস্তা দিয়ে দুই মৌসুমেই হেঁটে চলাও দায় হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ কমাতে প্রতিবছরই চাঁদা তুলে এসব রাস্তা মেরামত করে চলাচল করেন স্থানীয়রা।

গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং সদর উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের কার্যালয় সূত্র জানায়, গেল অর্থ বছরের জুন পর্যন্ত জেলায় এ দফতরের আওতায় ৪ হাজার ৪৯৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে কাঁচা রাস্তার পরিমাণ ২ হাজার ৬৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে সদরের কাঁচা রাস্তার পরিমাণ ১৬৬ কি. মি.।

সূত্র জানায়, একই বছরের জুলাইয়ে জেলার ১ হাজার ৬৬৪ কি.মি. সড়কের ১ হাজার ১৫৭টি রাস্তা নতুন আইডি অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যার মধ্যে সদর উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ (এ ক্যাটাগরি) ৪২টি, তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ (বি ক্যাটাগরি) ২৬৪টি এবং অন্যান্য ৬৪টিসহ ৩৭৬ কিলোমিটারের ৩০৬টি রাস্তা রয়েছে কাঁচা।

সদর উপজেলার পাকা না হওয়া রাস্তাগুলোর মধ্যে একটি বোয়ালী ইউনিয়নের এসকেএসইন (এসকেএস মোড়) হতে রাধাকৃষ্ণপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তা। এছাড়া ওই রাস্তাটির পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর জামে মসজিদ থেকে পশ্চিম-দক্ষিণের অপর প্রান্তে রয়েছে হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে এই রাস্তাটিতে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির বেহাল দশা। এসকেএসইনের (এসকেএস মোড়) আজিম উদ্দিনের বাড়ির সামনে থেকে সাইদুরের দোকান পর্যন্ত কোয়াটার কিলোমিটার অংশে রাস্তাটিতে অন্তত ছয় ইঞ্চি পরিমাণ ধুলো পড়েছে। ধুলোর উপর দিয়ে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পরনের পোশাক নষ্ট হলেও যানবাহন পার হলে পথচারীদের চোখে-মুখ কাপড়ে ঢেকে ধুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

এছাড়া এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাস্তা মেরামতে ব্যবহার করা ভাঙা ইটগুলো বৃষ্টির কারণে মাটি ধুয়ে গিয়ে উঁচু-নিচু অবস্থায় রয়েছে। যা পথচারীদের জন্য বিশেষ করে হেঁটে চলা পথচারীদের জন্য দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। আবার রাস্তার উপরের একপাশের মাটি কেটে দেওয়া হয়েছে অন্য পাশে। রাস্তা সংলগ্ন পুকুরে রাস্তার অর্ধেক অংশ ভেঙে গেছে, বিশেষ করে অন্তত ২০০ মিটার জুড়ে অর্ধেক রাস্তা সরদারের পুকুরের ভেতরে ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া আব্দুল কাফী শেখের বাড়ির সামনের অংশে প্যারাসাইডিং থাকা সত্ত্বেও সেখানে অর্ধেক রাস্তা ভেঙে গেছে পুকুরে। দীর্ঘদিন শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্যারাসাইডিং। গত অর্থ বছরে পিআইও অফিসের এমপির বিশেষ প্রকল্পে রাস্তায় মাটির কাজ করা হলেও মাটি দেওয়া হয়নি ওই প্যারাসাইডিংয়ে। একই অবস্থা জেলার অন্যান্য কাঁচা রাস্তাগুলোরও।

স্থানীয়রা জানান, এই রাস্তাটি শহরের সাথে সহজে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় দুটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন। কেননা, এই এলাকা হতে জেলা শহর মাত্র ৩ কি.মি.। আর ১কি.মি. পরেই পৌরসভা। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এসব রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ কাদার সৃষ্টি হয়। তা স্থায়ী হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই পথ দিয়ে চলা শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-নারী, কৃষক-শ্রমজীবীসহ সব বয়সের হাজার হাজার মানুষ। কাদায় পিছলে পড়ে কাপড় নষ্ট হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। জুতা হাতে নিয়ে চলতে হয় পথচারীদের। আর এসব খানাখন্দের উপর দিয়ে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা, বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলসহ সকল যানবাহন চলাচলকারীরা পড়েন চরম বিপাকে। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় তাদের। আর খরায় ধুলো-বালিতে চলাচলের অনুপযোগী হয় রাস্তাগুলো।


তাদের অভিযোগ, দুর্ভোগ কমাতে প্রত্যেক বছরে তারা চাঁদা তুলে ভাঙা ইট, বালি, সুরকি, খোয়া ও রাবিশ ফেলে মেরামতের চেষ্টা করে থাকেন। এসব রাস্তা পাকাকরণের জন্য দফায় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় এমপি এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অনুরোধ জানালেও কোনও সুফল মেলেনি। দেশ স্বাধীনের পর দফায় দফায় ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি এই এলাকার মানুষের।

ওই এলাকার প্রবীণ হোমিও চিকিৎসক আব্দুর রউফ আক্ষেপ করে বলেন, আমরা শহরতলীর মানুষ, ১ কি.মি. পরেই পৌরসভা, আর ৩ কি.মি. পরেই জেলা শহর। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হচ্ছে অথচ তারও আগের এই রাস্তাটির আজও পাকা হলো না। এই রাস্তাটি দুটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের সহজে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটির জন্য কয়েক দফায় সাবেক এমপি হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি ও তার প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করা হয়েছে, তারা আশ্বস্ত করলেও শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি।

কলেজ শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার কোনো মানুষকে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি হলেও ভাঙা, মাটির রাস্তার কারণে কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না। বিশেষ করে কোনো প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি হলে চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। শুধু মাটির রাস্তার কারণে এই এলাকায় কোনো যানবাহন আসতে চায় না।

পথচারী ও হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, এই রাস্তায় চলাচলে বর্ষায় তো কোনো যানবাহনই পাওয়া যায় না। খরার সময়েও রাস্তায় খানাখন্দের কারণে চালক যেতে চায় না। যদি কেউ যায়, তবে গুনতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। বাধ্য হয়ে হেঁটে চলতে গিয়ে বর্ষা-শুকনায় দুটোতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের, রাস্তাটি পাকাকরণ অত্যন্ত জরুরি।

পশ্চিম রাধাকৃষ্ণপুর এলাকার কলেজপড়ুয়া জিতু বলেন, আমাদের কলেজে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা এটি। নতুন মাটি ফেলায় এখন রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলা পড়েছে। হেঁটে যাওয়ার সময় আমাদের জুতা, প্যান্ট একেবারেই মেখে যাচ্ছে। আর বর্ষায় সময় তো জুতা হাতে করে নিতে হয়। অনেকেই কাদায় পড়ে গিয়ে সেদিন আর স্কুল কিংবা কলেজে যেতে পারে না।

৮ নং বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাবু বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাস্তাটি বোয়ালী ইউনিয়নের অতি পুরাতন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। রাস্তাটি পাকাকরণ অতি জরুরি। এসময় রাস্তা পাকাকরণে স্থানীয় সাংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম মুঠোফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, এরআগে আইডি অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে ওই রাস্তাটির কাজ করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরেও জেলার এক হাজার ৬৬৪ কি.মি. সড়কের ১১'শ ৫৭টি রাস্তা নতুন আইডি অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু রাস্তার আইডির অন্তর্ভুক্তও হয়েছে। রাস্তাগুলোতে কাজের চূড়ান্ত অনুমোদন হলে পাকাকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

   

সাত দিনে পদ্মা সেতুতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা টোল আদায়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতু দিয়ে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ায় গত সাত দিনে মোট ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে। গত ১০ জুন থেকে ১৬ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত এই টোল আদায় হয়েছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১৬ জুন) মধ্য রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর অতিরিক্ত প্রকৌশলী আমিরুল হায়দার চৌধুরী।

ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি টোলা আদায় হয়েছে গত ১৪ জুন। ওই দিন মোট আদায় হয় ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। ১৫ জুন টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা। আজ (১৬ জুন) রাত ১০টা পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ ৫০ টাকা।

এর আগে গত ১০ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ৬০ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১১ জুন ২ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ জুন ৩ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকা। ১৩ জুন টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা।

গত ৭ দিনে পদ্মা সেতু মাওয়া প্রান্তে টোটাল টোল আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। একই সময়ে জাজিরা প্রান্ত দিয়ে টোল আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

সাত দিনে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫শ ৭২টি যানবাহন। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ৮২ হাজার ৮৫টি যানবাহন। দুই প্রান্ত দিয়ে মোট গত ৭ দিনে ২ লাখ ৪ হাজার ৬শ ৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

;

ত্যাগের শিক্ষার সঙ্গে থাকুক বিসর্জন



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা নিয়ে আরেক ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ এসেছে। সৌদি আরবে ঈদুল আজহার মূল আচার পালিত হয়েছে রোববার। দেশটির সঙ্গে মিল রেখে আরও কিছু দেশে উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশে ঈদুল আজহা সোমবার।

ঈদুল আজহার প্রধান আচার, পশু কোরবানি। গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু কোরবানি করে থাকেন সামর্থ্যবানরা। এই কোরবানি কেবল ভোগের জন্যে নয়, ত্যাগের জন্যে মূলত। এটা এসেছে ত্যাগ থেকে। ধর্মীয় মতে, হযরত ইব্রাহিম প্রিয় বস্তুকে কোরবানির নির্দেশনা পেয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা থেকে, সেখান থেকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে ত্যাগের সিদ্ধান্ত, এবং এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐশীশক্তিতে পরিবর্তন। এখানে প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের যে শিক্ষা সেটা থেকেই এই কোরবানি উৎসারিত, এবং হাজার বছর ধরে চলমান।

ধর্মীয় বিধানের সেই ত্যাগ এখনো শাশ্বত। এই ত্যাগ আবার কিছু ক্ষেত্রে আত্মম্ভরিতায়ও পরিণত, প্রদর্শনবাদিতায় রূপান্তরিত অনেক ক্ষেত্রে। কে কত দামের, কত বড় পশু কোরবানি করলেন—এসব প্রকাশে-দেখাতে অনেকের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এতে করে ত্যাগের শাশ্বত যে শিক্ষা সেটা এখানে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। পশু কোরবানি যখন ধর্মীয় বিধান থেকে উদ্ভূত তখন প্রদর্শনবাদিতায় আদতে আড়ালে পড়ে যায় ত্যাগ। ফলে সামাজিকতার বিষয়টি ক্রমে দূরে সরে যায়। এখানে মানুষে-মানুষের চিন্তার যে পার্থক্য, অপরকে অনুভব করার সহজাত যে মানবিকতা তারচেয়ে মুখ্য হয়ে পড়ে অহংবোধ। এটা যদিও সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য নয়, তবে অনেকেই এখানে অভিনিবিষ্ট।

কোরবানি ধর্মীয় বিধানের বাইরে এটা বিশাল এখন এক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞও। পশু ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, দেশে আর্থিক লেনদেন সম্পাদিত হয়। সারা বছর ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক খামারিরা কেবল ঈদকে কেন্দ্র করে পশু লালন পালন করে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন; হাটবাজারের ইজারাদাররা এই সময়ের জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। কেবল গবাদি পশুকেন্দ্রিক এই আর্থিক লেনদেনই এ সময় সম্পাদিত হয় না, ঈদে পোশাক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী-শ্রমিক, চামড়া ব্যবসায়ীসহ ছোটখাটো স্থানীয় ব্যবসা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, লাভবান হন। ঈদ তাই কেবলই ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর রয়েছে আর্থসামাজিক প্রভাবও।

এরবাইরে আছে এর সামাজিক গুরুত্ব। ক্ষয়িঞ্চু হতে যাওয়া সামাজিক বন্ধন এই সময় দৃঢ় হয় অনেকটাই। সারা বছর সামর্থ্যবানেরা অনেকের খোঁজ না নিলেও কোরবানির মাংসের ভাগ স্বজনপরিজনদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে ফের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিছুদিনের জন্যে নবায়ন করে। সামাজিকতার এই শিক্ষা কোরবানির ধর্মীয় বিধানের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে কোরবানির মাংসের তিন ভাগের অন্তত দুই ভাগ আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিবণ্টনের নিয়ম।

আমাদের যে কাঠামোবদ্ধ সমাজ তাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে সামাজিকতা, অন্যকে অনুভব করার তাগিদ। কোরবানির সময়ে পশুর মাংসের ভাগের মাধ্যমে এর নবায়ন হয় অনেকটাই। বাড়তি বাজারমূল্যের এই সময়ে দেশের অধিকাংশেরই নেই কিনে মাংস খাওয়ার সামর্থ্য। কোরবানির সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে অন্তত মাংসের ভাগ পৌঁছে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। অনেককে দেখেছি, বছরের এই একটা সময়েই কেবল নিজেদের ঘরে মাংস খেতে পারে। তাদের জন্যে অপেক্ষার তাই এই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

একটা সময়ে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট ছিল। কিন্তু গত ক'বছরে দেশে কোরবানির পশুর সংকট নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেছেন, ‘এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২২ লাখের বেশি পশু বাড়তি আছে।’ তবু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে-বাজারে কোরবানির পশুর দাম চড়া। এখানে-সেখানে জোরজবরদস্তির খবরও এসেছে। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেখানে-সেখানে পশুর হাট বসানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও এটা কার্যকর হয়নি। ঈদের আগে সারাদেশ পরিণত হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটে। এখানে হুঁশিয়ারিদাতারা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজারাদাররা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা হয়েছে উপেক্ষিত।

কোরবানি পরবর্তী আলোচনার বিষয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভার আওতাধীন এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। ঈদ পরবর্তীতে কে কত দ্রুততার সঙ্গে শহর পরিস্কার করতে পারল, কোথায় কীভাবে বর্জ্য ছড়াল—এ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে আলোচনা। অথচ দেশব্যাপী হয় পশু কোরবানি, বর্জ্য ছড়ায় সারাদেশে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা ছাড়া দেশের কোথায় আর বর্জ্য নিয়ে আলোচনা হয় না, উদ্যোগ থাকে না; জনপরিসরেও তাই রয়েছে সচেতনতার ব্যাপক অভাব। ফলে কোরবানির ঈদের পর পরই দুর্গন্ধ ছড়ায় সব জায়গায়। এখানে তাই সাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদে-মসজিদে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে হবে। কেবল পরিবেশ সুরক্ষাই নয়, নিজেদের সুস্থভাবে বাঁচতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝাতে হবে সবাইকে।

ঈদ অথবা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জননিরাপত্তা প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। প্রতিবারই ঈদের সময়, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেক জনসাধারণকে অভয় দিয়ে বলতে হয়—‘ঈদে নাশকতার তথ্য নাই’। এটা বিভিন্ন বাহিনীর রুটিন দায়িত্ব যদিও, তবু এখানে একজন সাধারণ হিসেবে আমাদের ভাবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কী জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি দেশকে আমরা, যেখানে উৎসব-অনুষ্ঠানের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। বাহিনীগুলো বলছে, কারণ আগে নানা নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পারিবারিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে নিজেদের সন্তানেরা কোন পথে যাচ্ছে। তাদের আমরা কি সঠিক শিক্ষার পথ দেখাচ্ছি, নাকি শেখাচ্ছি সংকীর্ণতা। বলছি না, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এনিয়ে কথা বলবে না; তারা তাদের কাজ করুক, পাশাপাশি আমরাও যেন তেমন সমাজ গড়ার একেক একক হই, যাতে উৎসবে দিনে মানুষ কেবল উৎসব নিয়েই ভাববে, সমাজ নিয়ে ভাববে, সবাইকে নিয়ে ভাবতে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি দেন। ধর্মীয় রীতির এই পশু কোরবানি প্রতীকী। ত্যাগ; প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের শিক্ষা। ত্যাগ, সামাজিকতা ও সাম্যের যে শিক্ষা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ, সে ত্যাগ সফল হোক, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হোক। এ দিনে তাই পশু কোরবানির প্রতীকী ত্যাগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে থাকা আত্মম্ভরিতা ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য পশুপ্রবৃত্তির বিসর্জন হোক।

সবাইকে ঈদ মুবারক!

;

কুষ্টিয়ায় ভাজিতার হাতে চাচাকে হত্যার অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ফ্রিজে খাবার রাখাকে কেন্দ্র করে ভাতিজা মাসুদের হাতে চাচা বাদশা প্রামানিক (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (১৬ জুন) বিকেলে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের আমজাদ মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বাদশা প্রামানিক উপজেলার হরিপুর এলাকার ভাদু পরমানিকের ছেলে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের জেরে চাচার সঙ্গে ভাতিজার মধ্যে বিরোধ চলছিল। এরই জের ধরে রোববার বিকেলের দিকে চাচার সঙ্গে পুনরায় বাড়ির কিছু জমি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে একপর্যায়ে ফ্রিজে খাবার রাখতে গেলে ভাতিজা মাসুদ ঘর থেকে ধারালো বটি দিয়ে চাচা বাদশাকে এলোপাথাড়িভাবে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে পথেই মারা যায়।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিকে ধরতে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

;

সিলেটে পানি বন্দি মানুষের মাঝে পুলিশের ঈদ উপহার বিতরণ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট জেলা পুলিশের উদ্যোগে পানি বন্দি মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

রোববার (১৬জুন) দুপুর ২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে এই ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা পুলিশ সহকারী পুলিশ সুপার ও মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা সম্রাট তালুকদার।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সিলেট জেলা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন'র দিক- নির্দেশনায় গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ১নং রুস্তুমপুর ইউনিয়ন ও ১৩ নং বিছনাকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ২০০ শত পানিবন্দি অসহায় পরিবারের মানুষের মাঝে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

উপহার হিসেবে চাল, ডাল, পেয়াজ, তেল, আলু এবং বিস্কুটসহ শুকনো খাবার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

;