রোগী ও নারী যাত্রীদের দুর্ভোগের এক বছর



মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুর: মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সরাসরি বাস চলাচল। ফলে দুঃসহ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে যাত্রীরা। বিশেষ করে হাসপাতালগামী রোগী ও নারী যাত্রীদের কষ্টের সীমা নেই। কুষ্টিয়া জেলার অংশে সড়কের বেহাল দশার কারণে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা মেহেরপুর থেকে রাজধানী ও উত্তরবঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র অবলম্বন মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। মেহেরপুর-কুষ্টিয়া লোকাল বাসের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাসও চলাচল করে। সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী বাহন এই বাস। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই সড়কে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে।
আগে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে দুই জেলার বাস মালিক সমিতির বাস চলাচল করত। তখন মেহেরপুর থেকে প্রতি ১০ মিনিট পর পর একটি করে বাস কুষ্টিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যেত এবং একটি করে বাস মেহেরপুর পৌঁছাত। ফলে ৬০ কিলোমিটারের দীর্ঘ এই সড়কে যাত্রীরা সহজেই বাস পেত।

কিন্তু প্রায় এক বছর আগে থেকে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে মেহেরপুর স্ট্যান্ড থেকে বাস ছেড়ে জেলার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার খলিশাকুন্ডি বাজারে গিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়। ওই যাত্রীরা খলিশাকুন্ডি থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসে ওঠে। মূলত দুই জেলার মধ্যবর্তী স্থান খলিশাকুন্ডিতে বাস স্টপেজ গড়ে উঠেছে। দুই জেলার মালিক সমিতির বাস সেখান থেকে নিজ নিজ জেলার মধ্যে আলাদাভাবে চলাচল করছে। এতে যাত্রীদের কপালে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

খলিশাকুন্ডি লোকাল বাসের সময় নিয়ন্ত্রক (স্টাটার) আসাদুজ্জামান বাবু জানান, কুষ্টিয়া থেকে খলিশাকুন্ডি পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক পথ চলাচলের অযোগ্য। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু রাস্তা ঠিক না হওয়ায় সরাসরি বাস চলাচল করছে না। যাত্রী দুর্ভোগ দেখে নেতাদের প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/27/1538033934496.jpg
মেহেরপুর জেলার একটি বাসের চালক শামীম রেজা বলেন,‘লোকাল বাস মালিক সমিতির বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়া পৌঁছাতে হয়। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে আমরা ঠিক সময়ে কুষ্টিয়া পৌঁছাতে পারি না। এতে ফিরে আসার নির্ধারিত ট্রিপ হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলে আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। এ কারণে মালিক সমিতি সরাসরি বাস চালাচ্ছে না।’

কুষ্টিয়ার একটি বাসের চালক সুমন হোসেন বলেন,‘রাস্তার বেহাল দশার মধ্যে চালাতে গিয়ে বাসের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। নিজেদের আয় ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বিবেচনায় রেখে মালিকরা বাস চালাচ্ছে। রাস্তার যে অবস্থা তাতে এ সড়কে বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার কথা।’

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র গাংনীর মিনারুল ইসলাম ও মেহেরপুরের জান্নাতুল আক্তার বিউটি বলেন,‘মধ্যবর্তী স্থানে বাস পরিবর্তন করতে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে আমরা ঠিক সময়ে কলেজে যেতে পারছি না। পরীক্ষার দিনগুলোতে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী আমাদের মতোই মেহেরপুর থেকে যাতায়ত করে।’

এদিকে রোগী পরিবহনে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। গরীব মানুষের একমাত্র বাহন হচ্ছে বাস। ছোট ছোট যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সে খরচ বেশি হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রোগী নিয়ে যায় বাসে। কিন্তু মধ্যবর্তী বাস পরিবর্তনের ফলে রোগীরা যেমন অসহনীয় যন্ত্রণার শিকার হচ্ছে তেমনি বেড়ে যাচ্ছে খরচ।

মেহেরপুর থেকে কুষ্টিয়াগামী নারী যাত্রী মুক্তা বলেন,‘মধ্যবর্তী স্থানে বাস পরিবর্তন করতে গিয়ে অধিকাংশ সময় হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারি না।’

সরাসরি বাস চলাচল শুরুর বিষয়ে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন,‘রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় সরাসরি বাস চলাচল করছে না বলে মালিক সমিতি আমাকে জানিয়েছে। আমি দুই জেলার মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণের স্বার্থে পুনরায় সরাসরি বাস চলাচলের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রাস্তা সংস্কার হচ্ছে। অচিরেই আমরা বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে পারব।’

   

ঈদের নামাজ আদায় করতে বায়তুল মোকাররমে আসতে শুরু করেছে মুসল্লিরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশে আজ উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য আসতে শুরু করেছে মুসল্লিরা।

সোমবার (১৭ জুন) ভোর থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রথম এবং প্রধান জামাতে অংশগ্রহণ করার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। কয়েক স্তরের নিরাপত্তা চেক অতিক্রম করে লম্বা লাইন ধরে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা।

ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাত টায়। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক।

হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপন করা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজরত ইবরাহিমের (আ.) সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের অনুপম আদর্শ অনুসরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই ঈদে পশু কোরবানি করেন। কোরবানিই ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জামাত। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন এই মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।

এরপর সকাল ৯টায় তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। এতে মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।

সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহার চতুর্থ জামাত। এতে ইমামতি করবেন জামেয়া আরাবিয়া মিরপুরের মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররমের খাদেম রুহুল আমিন।

আর সবশেষ বেলা পৌনে ১১টায় পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করবেন ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আক্তার মিয়া।

;

লালমনিরহাটে বাস মোটরসাইকেল সংঘর্ষে স্বামী স্ত্রীর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফকিরের তকেয়া নামক স্থানে ঢাকা-বুড়িমারী মহাসড়কে বাস ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে স্বামী স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (১৬ জুন) রাত ১০টায় সদর উপজেলার ফকিরের তকেয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগরাকুড়া এলাকার আজগার আলীর ছেলে ডিস ব্যবসায়ী বাবু মিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী রোকসানা বেগম (৩৫)। নিহত এই দম্পতির দুইটি শিশু সন্তান রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সততা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি নৈশ কোচ ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। একই সময় লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে কুড়িগ্রামে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিল স্বামী বাবু মিয়া ও স্ত্রী রোকসানা। পথিমধ্যে ওই ফকিরের তকেয়া নামক স্থানে ঢাকাগামী ওই বাসের সাথে সংঘর্ষ হয়। এসময় রাস্তায় ছিটকে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে স্বামী স্ত্রী ঘটনা স্থলেই মারা যায়।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত কর বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনার স্থালে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

;

সাত দিনে পদ্মা সেতুতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা টোল আদায়



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতু দিয়ে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়ায় গত সাত দিনে মোট ২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে। গত ১০ জুন থেকে ১৬ জুন রাত ১০টা পর্যন্ত এই টোল আদায় হয়েছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১৬ জুন) মধ্য রাতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর অতিরিক্ত প্রকৌশলী আমিরুল হায়দার চৌধুরী।

ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি টোলা আদায় হয়েছে গত ১৪ জুন। ওই দিন মোট আদায় হয় ৪ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ টাকা। ১৫ জুন টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা। আজ (১৬ জুন) রাত ১০টা পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ ৫০ টাকা।

এর আগে গত ১০ জুন টোল আদায় হয় ২ কোটি ৬০ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ১১ জুন ২ কোটি ৮২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা। ১২ জুন ৩ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৫০ টাকা। ১৩ জুন টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ২১ হাজার ৭০০ টাকা।

গত ৭ দিনে পদ্মা সেতু মাওয়া প্রান্তে টোটাল টোল আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। একই সময়ে জাজিরা প্রান্ত দিয়ে টোল আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা।

সাত দিনে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫শ ৭২টি যানবাহন। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পদ্মা সেতু অতিক্রম করেছে ৮২ হাজার ৮৫টি যানবাহন। দুই প্রান্ত দিয়ে মোট গত ৭ দিনে ২ লাখ ৪ হাজার ৬শ ৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।

;

ত্যাগের শিক্ষার সঙ্গে থাকুক বিসর্জন



কবির য়াহমদ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ত্যাগ ও সাম্যের শিক্ষা নিয়ে আরেক ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ এসেছে। সৌদি আরবে ঈদুল আজহার মূল আচার পালিত হয়েছে রোববার। দেশটির সঙ্গে মিল রেখে আরও কিছু দেশে উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশে ঈদুল আজহা সোমবার।

ঈদুল আজহার প্রধান আচার, পশু কোরবানি। গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু কোরবানি করে থাকেন সামর্থ্যবানরা। এই কোরবানি কেবল ভোগের জন্যে নয়, ত্যাগের জন্যে মূলত। এটা এসেছে ত্যাগ থেকে। ধর্মীয় মতে, হযরত ইব্রাহিম প্রিয় বস্তুকে কোরবানির নির্দেশনা পেয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা থেকে, সেখান থেকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে ত্যাগের সিদ্ধান্ত, এবং এটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐশীশক্তিতে পরিবর্তন। এখানে প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের যে শিক্ষা সেটা থেকেই এই কোরবানি উৎসারিত, এবং হাজার বছর ধরে চলমান।

ধর্মীয় বিধানের সেই ত্যাগ এখনো শাশ্বত। এই ত্যাগ আবার কিছু ক্ষেত্রে আত্মম্ভরিতায়ও পরিণত, প্রদর্শনবাদিতায় রূপান্তরিত অনেক ক্ষেত্রে। কে কত দামের, কত বড় পশু কোরবানি করলেন—এসব প্রকাশে-দেখাতে অনেকের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এতে করে ত্যাগের শাশ্বত যে শিক্ষা সেটা এখানে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে। পশু কোরবানি যখন ধর্মীয় বিধান থেকে উদ্ভূত তখন প্রদর্শনবাদিতায় আদতে আড়ালে পড়ে যায় ত্যাগ। ফলে সামাজিকতার বিষয়টি ক্রমে দূরে সরে যায়। এখানে মানুষে-মানুষের চিন্তার যে পার্থক্য, অপরকে অনুভব করার সহজাত যে মানবিকতা তারচেয়ে মুখ্য হয়ে পড়ে অহংবোধ। এটা যদিও সবার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য নয়, তবে অনেকেই এখানে অভিনিবিষ্ট।

কোরবানি ধর্মীয় বিধানের বাইরে এটা বিশাল এখন এক অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞও। পশু ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে দেশে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, দেশে আর্থিক লেনদেন সম্পাদিত হয়। সারা বছর ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক খামারিরা কেবল ঈদকে কেন্দ্র করে পশু লালন পালন করে থাকেন, অপেক্ষায় থাকেন; হাটবাজারের ইজারাদাররা এই সময়ের জন্যেই অপেক্ষা করে থাকেন। কেবল গবাদি পশুকেন্দ্রিক এই আর্থিক লেনদেনই এ সময় সম্পাদিত হয় না, ঈদে পোশাক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পরিবহন ব্যবসায়ী-শ্রমিক, চামড়া ব্যবসায়ীসহ ছোটখাটো স্থানীয় ব্যবসা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, লাভবান হন। ঈদ তাই কেবলই ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর রয়েছে আর্থসামাজিক প্রভাবও।

এরবাইরে আছে এর সামাজিক গুরুত্ব। ক্ষয়িঞ্চু হতে যাওয়া সামাজিক বন্ধন এই সময় দৃঢ় হয় অনেকটাই। সারা বছর সামর্থ্যবানেরা অনেকের খোঁজ না নিলেও কোরবানির মাংসের ভাগ স্বজনপরিজনদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে ফের স্মরণ করিয়ে দেয়, কিছুদিনের জন্যে নবায়ন করে। সামাজিকতার এই শিক্ষা কোরবানির ধর্মীয় বিধানের মধ্যেই রয়েছে, যেখানে কোরবানির মাংসের তিন ভাগের অন্তত দুই ভাগ আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিবণ্টনের নিয়ম।

আমাদের যে কাঠামোবদ্ধ সমাজ তাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে সামাজিকতা, অন্যকে অনুভব করার তাগিদ। কোরবানির সময়ে পশুর মাংসের ভাগের মাধ্যমে এর নবায়ন হয় অনেকটাই। বাড়তি বাজারমূল্যের এই সময়ে দেশের অধিকাংশেরই নেই কিনে মাংস খাওয়ার সামর্থ্য। কোরবানির সময় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে অন্তত মাংসের ভাগ পৌঁছে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। অনেককে দেখেছি, বছরের এই একটা সময়েই কেবল নিজেদের ঘরে মাংস খেতে পারে। তাদের জন্যে অপেক্ষার তাই এই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

একটা সময়ে দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট ছিল। কিন্তু গত ক'বছরে দেশে কোরবানির পশুর সংকট নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান বলেছেন, ‘এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২২ লাখের বেশি পশু বাড়তি আছে।’ তবু গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে-বাজারে কোরবানির পশুর দাম চড়া। এখানে-সেখানে জোরজবরদস্তির খবরও এসেছে। যদিও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে যেকোনো ধরনের অন্যায্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যেখানে-সেখানে পশুর হাট বসানোর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও এটা কার্যকর হয়নি। ঈদের আগে সারাদেশ পরিণত হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটে। এখানে হুঁশিয়ারিদাতারা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইজারাদাররা, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা হয়েছে উপেক্ষিত।

কোরবানি পরবর্তী আলোচনার বিষয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দেশের সিটি করপোরেশন, পৌরসভার আওতাধীন এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়। ঈদ পরবর্তীতে কে কত দ্রুততার সঙ্গে শহর পরিস্কার করতে পারল, কোথায় কীভাবে বর্জ্য ছড়াল—এ নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকে আলোচনা। অথচ দেশব্যাপী হয় পশু কোরবানি, বর্জ্য ছড়ায় সারাদেশে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা ছাড়া দেশের কোথায় আর বর্জ্য নিয়ে আলোচনা হয় না, উদ্যোগ থাকে না; জনপরিসরেও তাই রয়েছে সচেতনতার ব্যাপক অভাব। ফলে কোরবানির ঈদের পর পরই দুর্গন্ধ ছড়ায় সব জায়গায়। এখানে তাই সাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদে-মসজিদে সচেতনতার বার্তা পৌঁছাতে হবে। কেবল পরিবেশ সুরক্ষাই নয়, নিজেদের সুস্থভাবে বাঁচতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বুঝাতে হবে সবাইকে।

ঈদ অথবা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবসে জননিরাপত্তা প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। প্রতিবারই ঈদের সময়, জাতীয় বিভিন্ন দিবসে আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পক্ষ থেক জনসাধারণকে অভয় দিয়ে বলতে হয়—‘ঈদে নাশকতার তথ্য নাই’। এটা বিভিন্ন বাহিনীর রুটিন দায়িত্ব যদিও, তবু এখানে একজন সাধারণ হিসেবে আমাদের ভাবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কী জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি দেশকে আমরা, যেখানে উৎসব-অনুষ্ঠানের সময়ে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হচ্ছে আমাদের। বাহিনীগুলো বলছে, কারণ আগে নানা নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পারিবারিক পর্যায়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে নিজেদের সন্তানেরা কোন পথে যাচ্ছে। তাদের আমরা কি সঠিক শিক্ষার পথ দেখাচ্ছি, নাকি শেখাচ্ছি সংকীর্ণতা। বলছি না, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এনিয়ে কথা বলবে না; তারা তাদের কাজ করুক, পাশাপাশি আমরাও যেন তেমন সমাজ গড়ার একেক একক হই, যাতে উৎসবে দিনে মানুষ কেবল উৎসব নিয়েই ভাববে, সমাজ নিয়ে ভাববে, সবাইকে নিয়ে ভাবতে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ঈদুল আজহার দিনে পশু কোরবানি দেন। ধর্মীয় রীতির এই পশু কোরবানি প্রতীকী। ত্যাগ; প্রিয় বস্তুকে ত্যাগের শিক্ষা। ত্যাগ, সামাজিকতা ও সাম্যের যে শিক্ষা নিয়ে এসেছে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ, সে ত্যাগ সফল হোক, সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হোক। এ দিনে তাই পশু কোরবানির প্রতীকী ত্যাগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে থাকা আত্মম্ভরিতা ও প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য পশুপ্রবৃত্তির বিসর্জন হোক।

সবাইকে ঈদ মুবারক!

;