বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার উপায়



মুফতি মো. রফিকুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
অর্থ : যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট

অর্থ : যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট

  • Font increase
  • Font Decrease

কোনো রোগের কারণ ও উৎসমূল চিহ্নিত করার মাধ্যমে যেমন ওই রোগ থেকে প্রতিকারের উপায় তালাশ করা সহজ হয়, তেমনিভাবে বালা-মুসিবতের কারণ অনুধাবনের মাঝেই নিহিত রয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায়। নিম্নে সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতে নির্ভেজাল বিশ্বাস
মানুষের যাবতীয় পঙ্কিলতা ও বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে শিরক। অন্তর থেকে শিরক বিদূরিত হলে পাপের আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি জীবন থেকে পাপরাশি মৃতপাতার মতো ঝরে পড়ে। পাশাপাশি রেসালতের প্রতি নিখাদ বিশ্বাস ও বিশ্বনবীর মহিমাসমুজ্জ্বল পূতঃপবিত্র জীবনাদর্শ একনিষ্ঠ অনুসরণের মাধ্যমেই মানুষ গড়তে পারে পবিত্র মধুর জীবনধারা। আর আখেরাতের ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাস এবং মহান প্রভুর সমীপে উপস্থিত হয়ে পার্থিব জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জার্রা জার্রা হিসাব প্রদানের ভয় মানুষকে রাখে সকল প্রকার অসৎ প্রবৃত্তি থেকে দূরে। ফলে মানুষের জীবন থেকে পাপপ্রবৃত্তি সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায় এবং পাপের প্রগাঢ় তিমিরাচ্ছন্নতা যেসব বালা-মুসিবত ডেকে নিয়ে আসে, সেসব থেকেও সে পরিত্রাণ লাভ করে সুনিশ্চিতভাবে। তবে এসব বিশ্বাসমালা হতে হবে নির্ভেজাল, নিখুঁত ও সংশয়মুক্ত- যেন বিশ্বাসীর যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেগে রচিত হয় তার বাস্তব ও কর্মময় সাক্ষ্য।

এ তিনটি মৌলিক শিক্ষা আত্মস্থ করেই আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অসভ্য মানুষগুলো এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছিলেন। যার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ধরাধামে আর কখনও পরিলক্ষিত হয়নি, আর সততা ইনসাফ ও বীরত্বে, মানবপ্রেম ও সৌহার্দ্য, সাধনায়-কৃচ্ছ্রতায়, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ও অন্যায় প্রতিরোধে, ত্যাগ ও সর্বমানবিক মমতা ও দায়িত্ববোধে উদ্দীপিত এসব সোনার মানুষই ছিলেন সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মানুষ।

পাপের আবিলতা থেকে মুক্ত থাকা
মানুষের স্বঘোষিত প্রকাশ্য শত্রু ইবলিসের প্রতারণার বিভ্রম যেহেতু সর্বক্ষণ তাকে ঘিরে রেখেছে, সেহেতু মানব প্রকৃতিতে পাপের প্রবণতা থাকা খুবই স্বাভাবিক। প্রবৃত্তি, সমাজ, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার তাকে অধিকতর উৎসাহ জোগায় পাপের পঙ্কিল নর্দমায় সাঁতার কাটতে। এভাবে অব্যাহত পাপের কৃষ্ণথাবা মানুষের শ্বেতশুভ্র অন্তর্লোকে সৃষ্টি করে তমসাচ্ছন্ন মতিভ্রম। ফলে আসমানি গজবের নিরন্তর তরঙ্গপ্রবাহ মানবজীবনে বয়ে আনে ধ্বংসের তাণ্ডবনৃত্য। তাই যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে মুক্তিলাভের জন্য আমাদের পাপমুক্ত জীবন গড়ার প্রত্যয়ে কঠোর প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।

মুসিবত উত্তরণে সাধারণ করণীয় বিষয়
অন্যান্য বালা-মুসিবত উত্তরণে জরুরি যে বিষয়গুলো আমাদের গুরুত্বের সাথে স্মরণ রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

অন্তরে সাহস রাখা
বালা-মুসিবতের সময় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য অন্তরে সাহস রাখা এবং মেজাজ স্থির রাখা। বিপদে ধৈর্যহারা হয়ে বিভিন্ন প্রকার শিরক কিংবা কুফরিসুলভ কথাবার্তা বললে, তা কখনোই বিপদ-আপদকে লাঘব করে না, বরং জিল্লতির মাত্রাকে বৃদ্ধি কারে দেয় শতগুণ!

হতাশ না হওয়া
বিপদ এবং মুসিবতে কোনোপ্রকার হতাশায় আক্রান্ত না হয়ে আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী থাকাই প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। কেননা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবিরা গোনাহ আর কোনো মানুষের জন্য শোভন কিংবা সমীচীন নয়, তার প্রতিপালকের করুণা থেকে হতাশায় নিপতিত হওয়া। কোরআন মাজিদে আশাব্যঞ্জক ভঙ্গিতে যেভাবে বিঘোষিত হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ -সুরা যুমার : ৫৩

সুরা আলমনাশরাহে আল্লাহ পাক প্রদান করেছেন প্রশান্তিদায়ক প্রতিশ্রুতির কথা, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আরাম আছে।’ -আয়াত : ৫-৬

মহানবীর হাদিস শরিফেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়াকে সর্বাপেক্ষা বড় গোনাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক

তাই বালা-মুসিবতের সময় আমাদের হতে হবে আশাদীপ্ত হৃদয়ে কর্মমুখর।

আল্লাহর ওপর নিশ্চিন্তে ভরসা রাখা
যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে দুশ্চিন্তা তার জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা প্রাণঘাতী মহামারিও তাকে উদ্বিগ্ন ও পেরেশান করতে সক্ষম হয় না। কেননা আল্লাহর ওপর নিশ্চিন্তে ভরসাস্থাপনকারী ব্যক্তি থাকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর কুদরতি জিম্মায়। ফলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারীর যাবতীয় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়, তার দুঃখ পরিণত হয় আনন্দে আর অনিরাপত্তার স্থান দখল করে নিরাপত্তার অচ্ছেদ্যজাল। সুরা তালাকে সে অভয়বাণী যেভাবে উচ্চারিত হয়েছে, তা এরকম- ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ -আয়াত : ৩

আল্লাহর জিকির
বালা-মুসিবত উত্তরণে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে আল্লাহর জিকির তথা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহকে পরম শ্রদ্ধা ও যত্নে উচ্চারণ ও সেগুলো স্মরণ রেখেই যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করা একান্ত অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে, আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করে দিই। ফলে সে হয়ে যায় তার সাথী।’ -সুরা যুখরুফ : ৩৬

সুরা ত্বহায় বলা হয়েছে, ‘যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, তার জন্য হবে নিশ্চিত এক সংকুচিত জীবন।’ -আয়াত : ১২৪

জিকিরের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি অর্জিত হয়, বিপদ-আপদ বিদূরিত হয়ে যায় আর প্রতিপ্রাপ্য হয় মহান প্রভুর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা।

অর্থ : কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আরাম আছে

 

কোরআন তেলাওয়াত
সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আসমানি কিতাব কোরআন সুনিশ্চিতভাবে মানুষের জন্য শিফা ও রহমত। মানুষের দৈহিক ও আত্মিক আরোগ্য লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহপাক যেমনটি বলেছেন, ‘আমি কোরআনে যা কিছু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত!’ -সুরা বনী ইসরাঈল : ৮২

মুসিবতের রাহুথাবায় জীবনের পথপরিক্রমা সংকীর্ণ হয়ে গেলে কিংকর্তব্যবিমুঢ় পথহারাকে এই কোরআনই বাতলে দেয় সঠিক পথের দিশা। তাই বালা-মুসিবতের সময় অধিকহারে অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত খুবই ফলদায়ক ও তাৎপর্যবাহী।

একাকিত্ব পরিহার এবং সৎসঙ্গ অন্বেষণ
মুসিবতের সময় একাকিত্ব পরিহার করে নেক্কার ও বুদ্ধিদীপ্ত সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানো একান্ত অপরিহার্য। কেননা, নিঃসঙ্গ মানুষকে চিরশত্রু শয়তান সহজে ধোঁকা দিতে পারে। ফলে ইবলিশি কূহকে পড়ে বিপদমুক্তির আশায় অধিকতর বিপদের ধ্বংস-গহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

অধিকহারে দান-সদকা
হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) বলেছেন, ‘গোপনে দান প্রতিপালকের ক্রোধকে নির্বাপিত করে।’ –তাবরানি

তিনি চন্দ্রগ্রহণের সময় নামাজ, দাসমুক্তি, বেশি বেশি জিকির এবং দান-সদকা করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা এসব কাজ বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ লাভের মাধ্যম। হাফেজ ইবনুল কায়্যিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকার বালা-মুসিবত প্রতিরোধে দান-সদকার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, যদিও দানকারী পাপী, অত্যাচারী; এমনকি ছোটখাটো কুফরিকারীও হয়।’

নফল নামাজ
হজরত রাসুলে কারিম (সা.) কোনো বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত বা পেরেশান থাকলে নামাজে নিমগ্ন হতেন বলে আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামও বিপদে নিপতিত হলে নামাজে মনোযোগী হতেন বলে বিশ্বনবীর আরেকটি বর্ণনা থেকে অবগত হওয়া যায়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও বালা-মুসিবত উত্তরণে নামাজ আদায়ের তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করো।’ -সুরা বাকারা : ৪৫

ধৈর্যশীল হওয়া
বালা-মুসিবতে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমের নব্বই স্থানে সবরের কথা আলোচনা করেছেন। সুরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্য অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।’

মহানবী (সা.) এক বর্ণনায় সবরকে ‘জ্যোতি’ হিসেবে এবং আরেক হাদিসে ধৈর্যের বিনিময় ‘জান্নাত’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেননি।’ –সুনানে আবু দাউদ

হজরত আলী (রা.)-এর মতে, ‘ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উপমা হলো- দেহের মধ্যে মাথার ন্যায়, যার ধৈর্য নেই, তার ঈমান নেই।’

আমলে সালেহ করা
বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে মহামহিম স্রষ্টার নিকট বিপদ দূরীকরণের জন্য বিনীত প্রার্থনা উপস্থাপন করাও মুসিবত উত্তরণে সবিশেষ ফলদায়ক বলে হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনেও বিভিন্নভাবে আমলে সালেহর মাধ্যমে বিপদমুক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন সুরা আরাফে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী।’ -আয়াত : ৫৬

নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সৎকর্ম সম্পাদন বালা-মুসিবত, বিপদাপদ ও জিল্লতি থেকে রক্ষার মাধ্যম।’ -আত তারগিব

দোয়া 
বিপদ-আপদে তো অবশ্যই, যেকোনো প্রয়োজনে, প্রতি মুহূর্তে মানুষ তার মহান প্রতিপালকের নিকট কাতর প্রার্থনা জানাবে- এ তো খুবই স্বাভাবিক কথা। আল্লাহতায়ালা এই ধরনের আর্তিকে যে বিশেষ পছন্দ করেন, সেটাও হাদিসের বর্ণনা থেকে আমরা অবগত হতে পারি। কিন্তু সংকট উত্তরণের বিজ্ঞানসম্মত পন্থা কিংবা কার্যকর কর্মপদ্ধতি এড়িয়ে শুধু দোয়া-মোনাজাতের শিক্ষা নবী কারিম (সা.) দেননি। কেননা সংকট উত্তরণে যথাযথ উপায় অন্বেষণে অনিচ্ছুক অকর্মণ্য মানুষের প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে কোনো আবেদন জাগায় না। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা মহানবীর নেতৃত্বে সংঘটিত সর্বাত্মক সশস্ত্র যুদ্ধগুলোর কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে পারি। সেসব যুদ্ধে সৈন্যসংখ্যা কিংবা অস্ত্রশস্ত্র সবদিক দিয়ে কয়েকগুণ পিছিয়ে থেকেও মুসলিম সৈন্যদলের সিপাহশালার বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার সৈন্যদলকে অমিতবিক্রমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন, তারপরই আল্লাহর দরবারে হতেন ফরিয়াদমুখর। সুতরাং বিপদাপদে আমাদেরও বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের পরই মহান প্রভুর দরবারে আকুল আকুতি জানাতে হবে।

পাশাপাশি এ কথাও গভীর প্রতীতী রাখতে হবে যে, সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টাও বিফল, ব্যর্থ হতে বাধ্য যদি তাতে মহান প্রভুর ইশারা না থাকে। সুতরাং আমাদের গৃহীত শত পদক্ষেপও ফলশূন্য হতে পারে, যদি আমরা বিপদ-আপদে রাব্বে কারিমের দরবারে আকুতিমুখর ধরনা না দিই।

   

উমরা ভিসায় হজ নয়, না মানলে কঠোর শাস্তি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
উমরা ভিসায় হজ নয়, না মানলে কঠোর শাস্তি, ছবি: সংগৃহীত

উমরা ভিসায় হজ নয়, না মানলে কঠোর শাস্তি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উমরার পারমিট বা ভিসা দিয়ে হজপালন করা যাবে না বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আগামী ২৪ মে (১৬ জিলকদ) থেকে ২৬ জুন (২০ জিলহজ) পর্যন্ত হজের স্থানগুলোতে দেশটি কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এ সময়ে শুধুমাত্র হজের অনুমোদন নিয়েই কেবল হজ করা যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ১৯ মে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজ পারমিট ছাড়া মক্কায় প্রবেশে স্থানীয় নাগরিক, দর্শনার্থী ও প্রবাসীদের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। পবিত্র মক্কা শহর, সেন্ট্রাল হারাম এলাকা, মিনার, আরাফাত, মুজদালিফা, রুসাইফার হারামাইন ট্রেন স্টেশন, নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং হজযাত্রীদের গ্রুপে হজের অনুমতি ছাড়া ধরা পড়লে জরিমানা করা হবে। আর নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মক্কায় প্রবেশ করলে ১০ হাজার রিয়াল জরিমানা করা হবে।

আগামী ২ জুন (২৫ জিলকদ) থেকে ২০ জুন (১৪ জিলহজ) পর্যন্ত এ নির্দেশনা থাকবে। এ সময়ে নিয়ম লঙ্ঘনকারী বাসিন্দাদের তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এবং সৌদি আরবে পুনরায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। তা ছাড়া এ নির্দেশনা বারবার লঙ্ঘন করলে পুনরায় ১০ হাজার সৌদি রিয়াল (২ লাখ ৯২ হাজার ৭৯৪ টাকা) জরিমানা করা হবে।

সৌদি বার্তা সংস্থা আরও জানায়, আর বিনা অনুমতিতে হজ করে হজবিষয়ক নির্দেশনা লঙ্ঘনকারীদের পরিবহন করে ধরা পড়লে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল (১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৭২ টাকা) জরিমানা করা হবে এবং ব্যবহৃত গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

তা ছাড়া পরিবহন করা মানুষের সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার পরিমাণ আরো বাড়বে। আর নির্দেশনা লঙ্ঘনকারী প্রবাসী হলে সাজাভোগের পর তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর ২০ লাখের বেশি মানুষ হজপালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

;

হাজিদের সচেতনতায় বিশেষ প্রচারণা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হাজিদের সচেতনতায় বিশেষ প্রচারণা, ছবি: সংগৃহীত

হাজিদের সচেতনতায় বিশেষ প্রচারণা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় হজসংক্রান্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলা এবং বৈধ অনুমতি বা ভিসাব্যতীত হজপালন করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত ১৫টি ভাষায় একটি আন্তর্জাতিক সচেতনতা ও শিক্ষামূলক প্রচারণা শুরু করেছে।

এ বছর হজপালনে আগ্রহী সবার কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিভিন্ন ইসলামি কেন্দ্র ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করে ডিজিটাল ও প্রচলিত মিডিয়ার মাধ্যমে হজসংক্রান্ত নির্দেশনাবলী ও বিধিবিধানের প্রচার-প্রসারই এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য।

হজযাত্রীরা পবিত্র ভূমিতে যাত্রাপথে বিমানে বসেই নিজ নিজ ভাষায় হজসংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলোতে হজ ও উমরা চ্যানেল চালু করেছে।

সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে হজ ও উমরার চ্যানেলে রয়েছে, ২৩টি শিক্ষামূলক ক্লিপ, ১৪টি ভাষায় ১৩টি সচেতনতামূলক নির্দেশিকা, ৯ ভাষায় ১টি ডকুমেন্টারি, ৭ ভাষায় ৬টি ফিল্ম, ৭ ভাষায় ইহরাম পরার ১টি ভিডিও। ভাষাগুলো হলো- সিংহলি, মালয়েশিয়ান, আরবি, ইংরেজি, বাংলা, ফ্রেঞ্চ, হাউসাবিয়া, ফারসি, ইন্দোনেশিয়ান, তুর্কি, স্প্যানিশ, উর্দু, আমহারিক ও রুশ।

এছাড়া দেশটির হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজে ধারাবাহিক পোস্টে বলেছে, হজে যাওয়ার পথে, বিধিবদ্ধ সচেতনতা নির্দেশিকা পড়ুন, আপনার ঈমানি সফরে আপনার অধিকার ও বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে জানুন। হজ-উমরা চ্যানেলের বিষয়বস্তু অনুসরণ করে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে আপনার যাত্রা শুরু করুন।

হজ বিষয়ক সচেতনতার বিষয়গুলো বিস্তারিত জানার জন্য মন্ত্রণালয় নিম্নের লিঙ্কে https://www.haj.gov.sa/Guides আল্লাহর মেহমানদের প্রবেশ করার সুযোগ প্রদান করেছে। যাতে হজযাত্রী অতি সহজে হজপালন, বিভিন্ন পদক্ষেপ, সময়সূচি ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় তার প্ল্যাটফর্মের ওয়েব প্যানেলের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যামূলক নির্দেশিকা প্রদান করেছে, যার মধ্যে রয়েছে- মসজিদে হারাম গাইড, মসজিদে নববি গাইড এবং মসজিদে নববি পরিষেবা গাইড।

;

সৌদি পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি পৌঁছেছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজফ্লাইট শুরুর পর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। হজযাত্রীরা মক্কা এবং মদিনায় অবস্থান করছেন। এসব হজযাত্রীর মধ্যে ৩২ হাজারের বেশি বাংলাদেশি হজযাত্রী রয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মে) সৌদি প্রেস এজেন্সির সূত্রে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পাসপোর্ট অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, এ পর্যন্ত বিমান, স্থল এবং সমুদ্রপথে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৭ জন হজযাত্রী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, হজযাত্রীদের প্রবেশের পর প্রাপ্ত তথ্য থেকে এ সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে।

খবরে আরও বলা হয়, হজযাত্রীদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রবেশ পথগুলোতে সম্পূর্ণ প্রশিক্ষিত ও বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ কর্মীরা তাদের স্বাগত জানাচ্ছেন।

জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা ১৪ জুন শুরু হয়ে ১৯ জুন শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হজযাত্রীদের বহনকারী ফ্লাইট ৯ মে থেকে সৌদি আরব আসা শুরু করে। তখন থেকে ২১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত ৩২ হাজার ৭১৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন বলে হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত হজে গিয়ে দুইজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ৮২টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমে চলতি বছর হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতা, ছবি: সংগৃহীত

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজযাত্রীদের জন্য বিশেষ ছাতার ব্যবস্থা করেছে সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২১ মে) ইসলামিক ইনফরমেশনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষভাবে ডিজাইন করা ছাতাগুলো হজযাত্রীদের সূর্যের আলো থেকে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করবে। যেহেতু ২০২৪ সালে হজের সময় প্রচণ্ড গরম থাকবে, তাই বিশেষ এই ছাতার প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে হজযাত্রীদের জন্য হজের আমলগুলো করা সহজ হয়ে যাবে।

বিশেষ এই ছাতাগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো, এটি পরে দীর্ঘসময় সূর্যের নিচে থাকলেও আলো থেকে তা সুরক্ষা প্রদান করবে। এ ছাড়া প্রতিটি ছাতার মধ্যে একটি পকেট রয়েছে। এতে হজযাত্রীরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে রাখতে পারবেন। বিশেষ করে পানির বোতল ও জায়নামাজ বহন করতে পারবেন- যা হজযাত্রীদের ইবাদত-বন্দেগির জন্য সহায়ক হবে।

ছাতাগুলোর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেন তা মাথায় থাকা অবস্থায়ও মুসল্লি সেজদা করতে পারে। সহজের চলাচল করতে পারবে। বাতাসে তা উড়ে যাবে না।

হজযাত্রীরা ছাতাগুলো মক্কা, মিনা ও আরাফাতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

;