আল আমীন মিশন: পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে শিক্ষা প্রসারের নবদূত



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের একটি ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের একটি ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সত্যিকারের শিক্ষক তারাই, যারা জাতিকে ভাবতে সাহায্য করেন। কাজের মাধ্যমে নিজের মমত্ববোধকে সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেন।’ এমনই একজন আলোকিত মানুষ এম নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত শিক্ষা সংগঠন ‘আল আমীন মিশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ভাবতে শিখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। তার দেখানো পথে জীবনে সাফল্য পেয়েছে হাজার হাজার মুসলিম শিক্ষার্থী। তিনি তাদের মাঝে স্বপ্নে বীজ বপন না করলে, ভারতের মতো দেশে কঠোর প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যেত তারা। যথাযথ পরিবেশের অভাবে তাদের শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হতো না।

‘একমাত্র শিক্ষাই পাড়ে মানুষকে আলোর দিশা দেখাতে’ মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী এম নুরুল ইসলামের শিক্ষা বিপ্লবে কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে এক নবজাগরণ তৈরি হয়েছে। তবে এখনও অনেক পথ বাকি।

সত্তরের দশকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা যখন শিক্ষা থেকে যোজন যোজন কোষ দূরে, তখন আশির দশকের প্রায় শেষ দিকে মুসলিম সমাজকে শিক্ষার আলো দেখানোর জন্য এগিয়ে আসেন এম নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের সর্বস্তরের বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আল আমীন মিশন।

পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের খলতপুর ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৯ সালের ১৭ অক্টোবর হাওড়া জেলার খলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এম নুরুল ইসলাম ১৯৮৪ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় খলতপুর গ্রামে তিনি ‘ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। অবাক করা তথ্য হলো, সমাজের মানুষের ‘মুষ্টির চাল’কে আয়ের মাধ্যম ধরে স্থানীয় একটি কওমি মাদরাসার সহায়তায় ওই মাদরাসার ভবনে আবাসিক ছাত্রাবাস শুরু করেন। পরে ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘আল আমীন মিশন।’ বর্তমানে তিনি আল আমিন মিশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, ‘আমি মনে করি, আল্লাহতায়ালা হলেন সব থেকে বড় পরিকল্পনাকারী। এই যে আল আমীন মিশন, এসব তারই পরিকল্পনার ফসল।’

গোটা ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র যখন ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে, সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সেদিকে, আল আমীন মিশন তখন দেখিয়ে দিয়েছে বাংলা মাধ্যমে পড়েও বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়। দেশে-বিদেশে কর্মে এবং গবেষণায় যুক্ত আল আমীনের ছেলে-মেয়েরাই তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

আল আমিন মিশন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী বেরিয়েছেন এবং তাদের বেশিরভাগই ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবসেবায় নিযুক্ত। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ৪ হাজার, স্বাস্থ্যকর্মী ৪ হাজার, ইঞ্জিনিয়ার ৩ হাজারের বেশি। কেউবা আবার মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক, আবার কেউ গবেষক। অনেকেই উচ্চপদে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া ডব্লিউবিসিএস, নার্সিং, হোমিওপ্যাথি, আর্য়ুবেদ এবং ভেটেনারিতেও মিশনের প্রভূত সাফল্য রয়েছে। এখনও প্রতি বছর চারশ’র বেশি ছেলে-মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছে। সাফল্যের হারের দিক থেকে এই ফলাফল ভারতের সংখ্যালঘু পরিচালিত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা। বর্তমানে আল আমীন মিশনের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। ৩ হাজার শিক্ষক আর শিক্ষাকর্মী এসব ছাত্র-ছাত্রীদের সন্তানসম স্নেহে পড়াশোনা করিয়ে থাকেন।

আল আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা এম নুরুল ইসলাম, ছবি: সংগৃহীত

মাত্র সাত জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি অনুন্নত এলাকায় পথ চলা শুরু আল আমীন মিশনের। ওই ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট অর্থের দরকার ছিল, সেই অর্থ সংগ্রহ করতে এম নুরুল ইসলাম ‘ভিক্ষার ঝুলি’ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। জাকাতের টাকা ও কিছু সমাজসেবী মানুষের সাহায্যে চলতে শুরু করে আল আমীন মিশন। একটা সময় জাকাত ও সমাজসেবীদের সাহায্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় এম নুরুল ইসলাম স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে অর্থাভাব মিটিয়েছেন।

প্রথম থেকেই এম নুরুল ইসলামের ইচ্ছা ছিলো, শুধু শিক্ষিত নয়; মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে হবে। আর পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিপ্লব ঘটাতে হলে, শুধু একটি আবাসিক মিশন যথেষ্ট নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় শুরু হয় আল আমীন মিশনের বিভিন্ন শাখা তৈরি কাজ।

বর্তমানে রাজ্যের ১৭টি জেলায় ৭০টি শাখা ছড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের মতো অন্যান্য রাজ্যে এখন আল আমীন মিশন বিস্তৃত। তার নিরলস পরিশ্রম, স্বপ্নকে ছোঁয়ার অদম্য জেদ ও প্রখর দূরদৃষ্টির জন্য মাত্র ৩৭ বছরে আল আমীন মিশন একটি আলোচিত শিক্ষাবিপ্লবের নামে পরিণত হয়েছে। আল আমীন মিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সমাজে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য আল আমীনের মতো আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার। এখন অবশ্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে শুরু করেছে।

আল আমীন মিশনকে বলা হয়, ‘দরিদ্র মেধাবী ছাত্রের সাফল্যের সোপান।’ আল আমীন আছে বলেই মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। প্রতি বছরের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট, ডাব্লুবিসিএসের ফলাফল প্রমাণ করে আল আমীন মিশন মুসলিম সমাজকে কতটা এগিয়ে নিয়েছে। আল আমীন না থাকলে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের অস্তিত্ব থাকতো না, আল আমীন মিশন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলেই তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। বাংলার মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রতি আসক্তি তৈরি করছে আল আমীন মিশন।

আল আমীন মিশনের অধীনে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পপতি পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার আলহাজ মোস্তাক হোসেনের সেবামূলক সংস্থা জি ডি চ্যারিটেবল সোসাইটির জি.ডি স্কলারশীপ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষার কাজকে আরও বেগবান করতে ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মাওলানা আজাদ এডুকেশন ফাউন্ডেশন ৪৫ লাখ, ২০০৩ সালে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন মঞ্জুরীকৃত এমপি ল্যাডস ফান্ড ৮৮ লাখ টাকা দেয়। এভাবেই মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় মিশনের কাজ এগিয়ে চলছে।

দিনের পর দিন একই পোশাকে থেকে কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন এমন নুরুল ইসলাম। মিশনের উত্তরণের জন্য জীবনে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল না। তবুও ফান্ডের কথা ভেবে ১৯৯১ সালে মিশনের কাছেই আসন্ডা আদর্শ শিক্ষা সদনে চাকরি নেন। কিন্তু বেতনের টাকাটা জমা হতে থাকে মিশনের ফান্ডে।

আল আমীন মিশনের বর্ধমান ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে নানির দেওয়া জায়গায় স্থায়ীভাবে মিশনের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে মিশনের কাজ সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের মাইনুদ্দিন আহমেদ, সাজাহান বিশ্বাস, বীরভূমের হজরত দাতা মাহবুব শাহ ওয়ালী (রহ.) ওয়াকফ স্টেট, পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ড, বেঙ্গালুরুর সাদাতুল্লাহ খান, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ.কে. জালালউদ্দিন, মৃণালকান্তি দুয়ারী, কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্রি কোচিং স্কিম ফান্ড, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, সোলেমান মোল্লা, আব্দুর রহমান, এস এম আনোয়ার, খলিলুর রহমান, শওকত আলী, হারুন রসিদ, মুকতার আলম, তাবারক হোসেন মিস্ত্রি, আজিজুর রহমান মোল্লা ও মারুফ-ই-ইলাহীসহ অনেক সমাজ ও শিক্ষাদরদী মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছে মিশন। এভাবে সমাজের অসংখ্য সহৃদয় শিক্ষানুরাগী, শুভানুধ্যায়ীরা আল আমীনের সঙ্গে আছেন। যারা বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে বিকশিত করার জন্য সবসময় চিন্তা করেন ও অকৃপণভাবে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।

২০১৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যজুড়ে বিশেষ অবদানের জন্য আল আমীন মিশনকে ‘বঙ্গভূষণ সম্মাননা’য় সন্মানিত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একই মঞ্চে বঙ্গবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। সরকারি দু’টি কমিটিতে আল আমীন মিশন প্রতিনিধিত্বও করছে। এর আগে আল আমীন মিশন টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স পায় ২০০২ সালে, ২০০৯ সালে পায় বেগম রোকেয়া পুরস্কার।

২০২০ সালেও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষায় আল আমীন মিশনের শিক্ষার্থীরা নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। এমন কোনো বছর আর পরীক্ষা নেই- যেখানে রাজ্য মেধা তালিকায় আল আমীনের শিক্ষার্থী থাকে না। প্রতিবছর মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের নিট পরীক্ষার ফলাফল মানুষের নজর কাড়ে। ২০২০ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নিটে ৫৬৫ নম্বরের ওপর পেয়েছে ৩২০ জন ছাত্র-ছাত্রী। আল আমীন মিশন থেকে এ বছর সর্বভারতীয় স্তরে সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্ক হয়েছে ৯১৬। গোটা ভারতে ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এ বছর নিট পরীক্ষা দিয়েছিল, তন্মধ্যে ৯১৬ র‍্যাঙ্ক করে মিশনের মুখ উজ্জ্বল করেছে জিসান হোসেন।

আল আমীন মিশনের একটি প্রতিষ্ঠান, ছবি: সংগৃহীত

যেখানে সত্তরের দশকে মুসলিম সমাজের ছাত্ররা ডাক্তার তো দূরের কথা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়তে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল, সেখান এখন প্রতি বছর আল আমীন থেকে ৩০০-৪০০ জন ডাক্তার তৈরি হচ্ছে। এর থেকে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে? বিগত ৩-৪ বছর থেকে ডাক্তারের মোট আসনের ১৫-২০ শতাংশ আল আমীন মিশনের ছেলে-মেয়েরা লাভ করছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের এমন কোনো হাসপাতাল পাবেন না, যেখানে মিশনের ছাত্র-ছাত্রী নেই।

আল আমীন মিশন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজকে আলোর দিশা দেখিয়েছে। এখন বাংলায় প্রতিটি মা-বাবা চায়, তাদের সন্তান যেন আল আমীনে পড়তে পারে। এম নুরুল ইসলামসহ আল আমীন মিশনের একান্ত চাওয়া, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজ শিক্ষিত হয়ে নিজের মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াক। এ জন্য তার মতো আরও অনেক মানুষ দরকার সমাজে।

নাম পরিবর্তনের পর ৩৪ বছর বহু গৌরবজনক অধ্যায় পেরিয়ে এসেও আল আমীন মিশনের কোনো লোগো ছিল না। ২০২০ সালের শেষদিকে মিশনের লোগো বানানো হয়েছে। হয়েছে মিশনের নিজস্ব অ্যাপ। করোনার সময়েও মিশন পঠন-পাঠন চালু রেখেছে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে। মিশনের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেতন পাচ্ছেন গত এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত। এভাবে আল আমীন মিশনকে এগিয়ে নিচ্ছেন এম নুরুল ইসলাম ও তার সঙ্গিরা।

   

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে হজ ভিসা সম্পন্ন

আবারও কেলেঙ্কারিতে লুৎফুর রহমান ফারুকীর নাম



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী, ছবি: সংগৃহীত

মন্ত্রণালয়ের চিঠি ও মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সরকারি ও বেসরকারি হজযাত্রীদের ভিসা কার্যক্রম শেষের পথে। চূড়ান্ত নিবন্ধনের পরও অনেকেই হজপালনে যাবেন না, কিংবা অসুস্থ এমন কিছু যাত্রীর ভিসা বাদে অন্যদের ভিসা হয়েছে। তবে সৌদি আরবের দেওয়া নির্ধারিত সময়েও পরও ভিসা প্রক্রিয়া চলমান রাখতে ধর্ম মন্ত্রণলায় ও হাব কর্তৃপক্ষকে প্রচুর দৌঁড়-ঝাপ করতে হয়। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তিনি সৌদি রাষ্ট্রদূতকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

ঠিক এমন সময় কয়েকটি হজ এজেন্সির নানাবিধ গাফিলতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা প্রকাশ পায়। প্রায় তিন হাজার হজযাত্রীর হজগমন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার চিঠি দিয়ে এবং হাব কর্তৃপক্ষ হজ এজেন্সির মালিকদের নিয়ে বসে সমস্যা সমাধানে ব্যাপক তৎপরতা চালান।

তখনই সামনে আসে আকবর হজগ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকীর অনিয়ম। দুইটি হজ লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে আল রিসান ট্রাভেলস এজেন্সির (০৬৭২) অধীনে ৪৪৮ জন এবং নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের (১০৮৬) অধীনে ২৬০ জন হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তাদের ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করেননি। এতে করে ৭ শতাধিক হজযাত্রী, তাদের আত্মীয়-স্বজন, ধর্মমন্ত্রণায় এবং হাব নেতৃবৃন্দকে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। পরে হাব সভাপতির তৎপরতায় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্নের পর তাদের ভিসা পাওয়া যায়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রতি বার হজ গমনের শেষসময়ে এমন ঘটনা কেন ঘটে? আর ঘুরেফিরে একজনের নামই কেন সামনে আসে? তিনি হচ্ছেন মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী। বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে একেক বছর একেক লাইসেন্স নিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা একাধিক লাইসেন্স ব্যবহার করেন না।

তার কারণে ২০১৮ সালে শত শত প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী অনিশ্চতার মুখে পড়েছিলেন। পরে পুলিশের তৎপরতার সমস্যা সমাধান করা হয়। তখন পুরানা পল্টনস্থ আল-রাজী কমপ্লেক্সে আকবর হজগ্রুপের অফিসে তল্লাশিও চালিয়েছিল পুলিশ। ওই সময়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে সৌদি আরব পালিয়েছিলেন। তবে বিদেশ পালিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রী তামান্না রহমানকে (আবাবিল ওভারসিজের মালিক) চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে দুই হাজার হজযাত্রীর প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। তখন পুলিশ বলেছিলেন, আবাবিল ওভারসিজ, নিয়ার অ্যান্ড ফার, সুমাইয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আকবর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আফতাব ট্রাভেলস, সিরাজাম মুনিরা এয়ার ট্রাভেলস, সানরাইজ এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সুন্দর এয়ার এক্সপ্রেস ও সুহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে নানা অনিয়ম করছেন লুৎফুর রহমান। হজ নিয়ে নানা অনিয়মের কারণে লুৎফুর রহমান ফারুকী একাধিকবার গ্রেফতার হন, তারপরও থামেনি তার অপতৎপরতা।

হাবের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আকবর হজগ্রুপের চেয়ারম্যান ও গাজীপুর এয়ার ট্রাভেলস(৭৮২)-এর স্বত্বাধিকারী। আকবর হজগ্রুপ বাংলাদেশ(৬১৫) নামে বেনামে প্রায় ১০টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বারবার হজ কেলেঙ্কারিতে তার নাম আসার পরও তিনি কিভাবে হাজি পান, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাবের ওই নেতা বলেন, ‘সরকার ঘোষিত সর্বনিন্ম হজ প্যাকেজের চেয়ে কম টাকায় হজ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হজযাত্রী সংগ্রহ করেন তিনি। আর এ কাজে ব্যবহার করেন বিভিন্ন অঞ্চলের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের। তিনি কখনও হাজিদের মুখোমুখি হন না, সবকিছু করেন মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে।

হজ ট্রেড সেক্টরে কম টাকায় হজ করানোর আলোচিত ব্যক্তি মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী। সারাদেশে গ্রুপ লিডারদের মাধ্যমে আল ক্বিবলা হজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস(০৬৭০), মৌসুমী এয়ার ট্রাভেলস(১০৫), আবাবিল ওভারসীজ (১৬), আফতাব ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল(৫৮৪), মনিরামপুর এয়ার ট্রাভেলস (১৩৭৫)-এর মাধ্যমে কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহ করে থাকেন।

চলতি হজ মৌসুমে ‘নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’-এর মোনাজ্জেম হিসেবে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। তার পরও হজ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ভবিষ্যতে তাকে হজ কার্যক্রমের আওতার বাইরে রাখার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ একটি চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, হজ ২০২৪ এ বাংলাদেশের ২৫৯টি এজেন্সি সৌদি আরবে হজপালনের জন্য হজ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে। প্রত্যেক এজেন্সির একজন নির্ধারিত ব্যক্তি মোনাজ্জেমের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। যিনি ওই এজেন্সির সব হজযাত্রীর হজের যাবতীয় দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ। মোনাজ্জেমের সব তথ্য সৌদি ই-হজ সিস্টেমে (নির্দিষ্ট নম্বর সম্বলিত) রয়েছে। কাজেই একজন মোনাজ্জেম হজের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজগুলো যথাযথভাবে না করতে পারলে হজযাত্রীর হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

‘নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস’ নামে প্রতিষ্ঠানটির মোনাজ্জেম হিসেবে লুৎফর রহমান ফারুকী দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এই এজেন্সির মাধ্যমে হজ-২০২৪ মৌসুমে গাইডসহ ২৬০ জন নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছে। গত ৯ মে ২০২৪ হতে হজযাত্রীর সৌদি আরবে গমন শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে অন্যান্য এজেন্সির হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন হলেও তার এজেন্সির কারও ভিসা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটির মোনাজ্জেমের নির্ধারিত মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং গত ১৫ মে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলামের দফতরে উপস্থিত হয়ে হজযাত্রীর টিকিটের পে-অর্ডার না করার যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদানে তিনি কোনো দায়িত্ব পালন করেনি বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ১৬ মে আইবিএএন-এর হিসাব নম্বরের তথ্য তিনি গোপন রেখেছেন। এতে করে হজযাত্রীদের সময়মত বাড়িভাড়া ও ভিসা প্রসেসিংসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে মোনাজ্জেম হিসেবে ব্যর্থ হয়েছেন। তার এই দায়িত্ব অবহেলায় হজ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে যার ফলে নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের ২৬০ জন হজযাত্রীর হজ গমনে অনিশ্চয়তার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।

এমতাবস্থায় পবিত্র হজের সময়াবদ্ধ দায়িত্ব পালনে মোনাজ্জেম হিসেবে তার দায়িত্ব অবহেলার যথাযথ ব্যাখ্যা এবং ভবিষ্যতে হজ কার্যক্রম আওতার বাইরে কেন রাখা হবে না, তা আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে এ মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগে জানানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নর্থ বাংলা হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের (১০৮৬) মালিক মো. হাবিবুল ইসলাম (অপু)। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি ২০১৯ সালে রংপুরের আবদুল্লাহ আল কাদিরের কাছে লাইসেন্সটি বিক্রি করে দিয়েছি। এর মধ্যস্থতা করেছেন রংপুরের গ্রুপ লিডার মাওলানা বদরুল আলম। যদিও হাব সূত্রে জানা গেছে, যথাযথভাবে লাইসেন্স হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

হজযাত্রী হয়রানিসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কথা বলতে সৌদি আরবে অবস্থান করা মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকীর মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

চলতি হজ মৌসুমে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেসরকারি ২৫৯টি এজেন্সি হজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জন হজযাত্রীর সৌদি আরব গমনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯ মে শুরু হওয়া হজফ্লাইটে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ২৭ হাজার ৬৩ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৪ সনের হজ অনুষ্ঠিত হবে ৬ জুন। এক্ষেত্রে হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি হবে ফ্লাইট ২০ জুন এবং শেষ ফিরতি ফ্লাইট হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় কোরআন হেফজের জন্য ১ হাজার সেশন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে নববিতে পবিত্র কোরআন পড়ছেন শিশু শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে পবিত্র কোরআন পড়ছেন শিশু শিক্ষার্থীরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ মৌসুমে পবিত্র কোরআন হেফজের (মুখস্থের) জন্য বিশেষভাবে ১ হাজারটি সেশন চালুর অনুমোদনসহ আসন্ন হজের কার্য পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার (১৯ মে) মসজিদে হারাম ও নববির পরিচালনা বিষয়ক প্রধান শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস নতুন পরিকল্পনায় ঘোষণাকালে বলেন, সমন্বিত ব্যবস্থায় সর্বোচ্চমানের সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ভিশন ২০৩০-এর সঙ্গে মিল রেখে অতীতের সাফল্য ও অভিজ্ঞতার আলোকে সৌদি সরকারের ২০২৪ সালের কৌশলগত লক্ষ্য বাস্তবায়নে এবারের কার্য পরিকল্পনাটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সির খবরে বলা হয়, মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেনারেল প্রেসিডেন্সির আওতায় বিভিন্ন ভাষায় হজযাত্রীদের অনুবাদ সেবা দেওয়া হবে। তা ছাড়া মসজিদে থাকবে পবিত্র কোরআন পাঠ, মুখস্থ ও শিক্ষা বিষয়ক নানা প্রোগ্রাম।

এসব প্রোগ্রামের মধ্যে কোরআন পাঠ ও হেফজের বিষয়টি অন্যতম। আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরব ১ হাজারটি কোরআন হেফজের সেশন পরিচালনা করবে। যোগ্য-অভিজ্ঞ শিক্ষকরা হজযাত্রীদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে এই প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেবেন। কোরআন মুখস্থের অভিজ্ঞতা হজযাত্রীদের নানাভাবে উপকৃত করবে, এটা তাদের আত্মনিবেদনে বিশাল ভূমিকা রাখবে। উদ্যোগটি বিশ্বব্যাপী কোরআনের নৈতিকতা এবং এর মধ্যপন্থী বার্তা প্রচারের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।

শায়খ আস-সুদাইস বলেন, এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো- কোরআন মাজিদের শিক্ষার পরিধি বিস্তৃত করা। পরিকল্পনা মতে, মসজিদে হারাম ও নববিতে যে কেউ যেকোনো সময় যেকোনো পরিমাণ কোরআন মুখস্থ করে সেখানে অবস্থানরত শিক্ষককে শুনাতে পারবেন।

পরিকল্পনা ঘোষণাকালে মসজিদে হারামের প্রধান ইমাম আরও বলেন, ১৬ হাজার কর্মীর পাশাপাশি এবার জেনারেল প্রেসিডেন্সির আওতায় হজের মৌসুমে ১০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে। তারা পবিত্র দুই মসজিদের ১০টি ক্ষেত্রে দুই লাখের বেশি কর্মঘণ্টা সেবায় নিয়োজিত থাকবে।

এ ছাড়া মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদে তিন লাখের বেশি কোরআনের কপি, দুই মসজিদের ৩০ হাজার পয়েন্টে হজের সময় প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ বোতলে ৪০ মিলিয়ন লিটার জমজম পানি বিতরণ করা হবে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও সেবা দিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অ্যাপ ও রোবট ব্যবহৃত হবে।

;

সৌদি পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৮১০ হজযাত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি বছর হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮১০ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

সোমবার (২০ মে) হজ পোর্টালের সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

সৌদিতে যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার হাজার ৭৪৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার গেছেন ২৭ হাজার ৬৩ জন।

বাংলাদেশ থেকে ৭৭টি ফ্লাইটে এসব হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ৩২টি, সৌদি এয়ারলাইনসের ২৫টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এদিকে, সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত দুইজন বাংলাদেশি মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে, গত ৯ মে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রথম ডেডিকেটেড ফ্লাইট ৪১৫ জন হজযাত্রী নিয়ে সৌদির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এর মাধ্যমেই চলতি বছরের হজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। শেষ হবে ১০ জুন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ জুন এবং শেষ হবে ২২ জুলাই।

;

হজের সময় সৌদিতে তাপদাহের আশঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

হজের আনুষ্ঠাকিতায় হাজিরা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া হজের সময় সৌদি আরবের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন সৌদি ন্যাশনাল সেন্টার অব মেটিওরোলজির প্রধান আয়মান গোলাম।

আসন্ন হজে উচ্চ তাপমাত্রার জন্য সতর্ক করে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। আয়মান গোলাম বলেছেন যে, এ বছর হজের মৌসুম চলবে জুনের মাঝামাঝিতে। হজের মৌসুম সৌদি আরবে বছরের সবচেয়ে গরম সময়ের সঙ্গে মিলে গেছে।

বছরের এই সময়ে সাধারণত সৌদি আরবে তাপমাত্রা এবং বাতাসের আর্দ্রতা দুটোই অনেক বেশি থাকে। ফলে হজে অংশগ্রহণকারীদের সতর্ক থাকতে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, হজ করতে আসা মুসল্লিদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব কমাতে তাদের বাসস্থানকে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা রাখা হবে হজ আয়োজনকারীদের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিশেষ করে মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে অবস্থান এবং হজের পাঁচতিন চলাচলে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রোগীদের হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদির নির্দেশনা
যারা দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছেন তাদের হজে যাওয়ার সময় চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সৌদি আরব। রোগীরা হজে গিয়েও যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান তা নিশ্চিত করতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এমন কোনো রোগে যদি আপনি ভুগে থাকেন এবং বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চিকিৎসার নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে আসতে ভুলবেন না। যেন সৌদিতে আসার ও যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান।

এ ছাড়া বিদেশি হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আসার আগেই ‘নেইসেরিয়া মেনিনজিটিডিস’ ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং নিজ দেশের দ্বারা ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টির প্রমাণপত্র নিতে হবে।

বিদেশি হজযাত্রীদের পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। এতে করে সব হজযাত্রীর স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া সৌদিতে বসবাসরত যারা হজ করতে চান তাদের হজ সংক্রান্ত ভ্যাকসিনগুলো গ্রহণ করতে হবে।

এই ভ্যাকসিন প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীদের পবিত্র মক্কা নগরীতে হজের জন্য যেতে মন্ত্রণালয়ের সেহাতি অ্যাপে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে।

;