করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা অবশেষে স্বীকার করলো ব্রিটিশ-সুইস ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই স্বীকারোক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা গুনতে হতে পারে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তৈরি কোভিড-১৯ এর টিকার কারণে বহু গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঘটনার কথা উল্লেখ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০২৩ সালে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেছিলেন দুই সন্তানের জনক জেমি স্কট। ২০২১ সালের এপ্রিলে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ও তা জমাট বেঁধে যায়। এর ফলে তার মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয়। স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও কমে গেছে জেমি স্কটের।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে স্বীকার করেছে যে, তাদের তৈরি কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে ‘খুব বিরল টিটিএস’ এর ঘটনা ঘটতে পারে। টিটিএসের পূর্ণ রূপ হলো থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম। এর ফলে মানুষের রক্তে প্লেটলেট কমে যায় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
এর আগে, ২০২৩ সালের মে মাসে স্কটের আইনজীবীর কাছে পাঠানো এক মেইলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছিল, ‘জেনেরিক লেভেলে এই টিকার কারণে টিটিএস-এর ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা স্বীকার করি না।’
কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে জমা দেওয়া নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলে, ‘আমরা এটি স্বীকার করছি যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার কারণে খুব বিরল ক্ষেত্রে টিটিএস-এর মতো ঘটনা ঘটাতে পারে।’
অ্যাস্ট্রাজেনেকা নথিতে আরও উল্লেখ করে, ‘এ ছাড়া, অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা (বা যেকোনো টিকা) না দিলেও থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমের ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এমনটা ঘটার কারণ জানার বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের বিবেচনার দাবি রাখে।’
সব মিলিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ হাইকোর্টে ৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনেরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। আইনজীবীরা বলছেন, সংখ্যা ছোট হলেও এই টিকা ভুক্তভোগীদের পরিবারের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে।