ইরানের চাবাহার বন্দর আগামী ১০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ভারত। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সোমবার (১৩ মে) স্বাক্ষর করেছে নয়াদিল্লি ও তেহরান। যা ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় ওয়াশিংটন ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল। তাই দেশটির সঙ্গে যারা বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়, তাদের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
মঙ্গলবার (১৪ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে তেহরান-নয়াদিল্লির চুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। যারা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে চায়, তাদের ‘সংশ্লিষ্ট ঝুঁকির বিষয়টি’ বিবেচনা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত ও ইরানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, সেই বিষয়ে আমরা অবগত। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে ইরানের সঙ্গে চাবাহার বন্দর নিয়ে তাদের সেই চুক্তি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আওতায় পড়ে। ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি আছে এবং তা জারি থাকবে।
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, কেউ যদি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা ভাবেন, তাহলে তাদের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, চাবাহার বন্দর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ায় ভারত আফগানিস্তান, ইরান হয়ে রাশিয়া পর্যন্ত জলপথ পরিবহণে আধিপত্য কায়েম করতে পারবে। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে বিকল্প রাস্তা হিসেবে কাজে লাগাতে পারবে সেটিকে। বৃহত্তর ইউরেশিয়ান (ইউরোপ-এশিয়া) অঞ্চলেও বন্দরটি দেশের প্রধান সংযোগস্থল হতে চলেছে।
সূত্র বলছে, পাকিস্তানের গদর বন্দর ও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের সঙ্গে টক্কর নিতে এটি তুরুপের তাস হতে পারে নয়াদিল্লির।
ভারতের কৌশলগত অবস্থান মজবুত করার অস্ত্র চাবাহার নিকটতম বন্দর গুজরাটের কান্দালা। দূরত্ব ৫৫০ নটিক্যাল মাইল। মুম্বইয়ের দূরত্ব ৭৮৬ নটিক্যাল মাইল। ভারতের জাহাজ ও বন্দরমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানান, ৭২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত আন্তর্জাতিক নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের সঙ্গে চাবাহারকে যুক্ত করার পরিকল্পনা। ভারত, পশ্চিম এশিয়া, ইউরেশিয়ার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং পরিবহণ খরচ ও সময় কমানোর নিরিখে প্রাণকেন্দ্র হতে পারে এটি।
পাকিস্তান পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোকে করাচি বন্দর ব্যবহার করে বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছিল। কিন্তু ভারত চাবাহারকে লাভজনক বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে। কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তানের মতো দেশ এর মাধ্যমেই ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ব্যবসা বাড়াতে চায়। এ দেশের ব্যবসায়ীরাও সহজে ও সুলভে পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছতে পারবেন। আইএনএসটিসির মাধ্যমে চাবাহার বন্দরে যুক্ত হতে চাইছে আমেরিকাও।