ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী : ক্রিকেটজীবনের ভিতর-বাহির



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ক্রিকেটারদের বইয়ের প্রচ্ছদ

ক্রিকেটারদের বইয়ের প্রচ্ছদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে শুধু ক্রিকেট নিয়েই যে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কথা বা স্মৃতিচারণ থাকে তা না। মাঠের বাইরের বিভিন্ন বিচিত্র ও আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার-স্যাপার এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন বিষয়-আশয়ও উঠে আসে বইগুলোতে। যা পড়ে পাঠকেরা চমৎকৃত হন। অনেক কিছু জানতে পারেন প্রিয় ক্রিকেটার সম্পর্কে। যেমন, পাকিস্তানী ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদি যে খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ-পাঁচটি বছর কমিয়ে নিয়েছিলেন, অথবা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার মঈন আলীকে যে অস্ট্রেলিয়ার এক খেলোয়াড় স্লেজিং করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন, এরকম কিছু চমকপ্রদ তথ্য হয়তো কেবল ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীতেই পাওয়া যেতে পারে। আবার, ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে পুনরায় যুবরাজ সিংয়ের ক্রিকেটে ফিরে আসার হৃদয়স্পর্শী কাহিনীর কথাই ধরুন না! সেই কাহিনী বিস্তারিত পাওয়া যাবে যুবরাজের আত্মজীবনীতেই।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363767974.jpg
ক্রিকেটারদের বর্ণিল জীবনের শৈল্পিক আখ্যান তাদের জীবনীগ্রন্থগুলো ◢

 

যখন ক্রিকেটার নিজেই নিজের ক্রিকেট ও ব্যক্তিজীবনের কাহিনীটা লেখেন, সেটাকে বলা হয় ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী। সেখানেও ক্রিকেটার কোনো লেখক বা ক্রীড়া সাংবাদিকের সাহায্য নিয়ে যৌথভাবে বইটি লিখতে পারেন। কিন্তু যখন অন্য কোনো লেখক একেবারে আলাদাভাবে একজন বরেণ্য ক্রিকেটারের জীবনকাহিনী পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন, যেখানে সাধারণত সেই নির্দিষ্টি ক্রিকেটারের সরাসরি কোনো সংস্রব বা ভূমিকা থাকে না, সেটাকে বলে ক্রিকেটারদের জীবনী। তবে, সেক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার যদি বেঁচে থাকেন, বইটি লিখতে বা বইয়ের বিষয়বস্তু নির্বাচনে তাঁর অনুমতির দরকার হয়। সরাসরি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর সংখ্যাই বেশি। তবে, বেশ কিছু অসাধারণ জীবনীগ্রন্থ, যেমন সুনীল গাভাস্কারের ‘সানি ডেজ’ (১৯৭৭), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯) বা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে ‘মাশরাফি’র মতো দারুণ কিছু জীবনীগ্রন্থও আমরা পেয়েছি লেখকদের হাতে।

ক্রিকেটারদের আত্মজীবনীর ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইটিকে অগ্রপথিক ধরা হয়। ১৯৫১ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিল। এরপরের কোনো ক্রিকেটারের আত্মজীবনীগ্রন্থের লেখকও জিম লেকারই। ১৯৬০ সালে তিনি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় আত্মজীবনী ‘ওভার টু মি।’ এরপর ৬০’র দশক ও ৭০’র দশকে অল্পবিস্তর প্রকাশিত হতে থাকে বেশ কিছু আত্মজীবনী। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারকে নিয়ে ‘সানি ডেজ’ এবং ১৯৮৩ সালে ইমরান খানের স্বনামে (ইমরান) তাঁর জীবনীগ্রন্থ বের হয়। তবে, নব্বইয়ের দশকে এসে, মানে ১৯৯০ সালের পর থেকে এধরনের আত্মজীবনী ও জীবনীগ্রন্থের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অনেক সাবেক ক্রিকেটার, এমনকি তখনও খেলছিলেন এমন কিছু ক্রিকেটারও এসময় তাঁদের আত্মজীবনী প্রকাশ করেন।

এসময়ই প্রকাশিত হয় ব্রায়ান লারার ‘বিটিং দ্য ফিল্ড’ (১৯৯৫), ওয়াসিম আকরামের ‘ওয়াসিম’ (১৯৯৮), রিচি বেনোর ‘অ্যানিথিং বাট অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ (১৯৯৮), অ্যালান ডোনাল্ডের ‘হোয়াইট লাইটনিং’ (১৯৯৯)। ২০০০ সালের পরের সময়কালে এই সংখ্যাটা বাড়তে থাকে আরো। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের ‘দ্য ডেফিনিটিভ অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), ইয়ান বোথামের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০০), শেন ওয়ার্নের ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০২), ডেনিস লিলির ‘মিনেস : দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০০৩), বাসিল ডি অলিভিয়েরার ‘ক্রিকেট অ্যান্ড কনস্পিরেসি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ (২০০৪), কপিল দেবের ‘স্ট্রেইট ফ্রম দ্য হার্ট’ (২০০৪), স্টিভ ওয়াহর ‘আউট অব মাই কমফোর্ট জোন’ (২০০৬), অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ (২০০৮), ইমরান খানের ‘ইমরান খান’ (২০০৯), শোয়েব আখতারের ‘কন্ট্রোভার্শিয়ালি ইয়োরস’ (২০১১), যুবরাজ সিংয়ের ‘দ্য টেস্ট অব মাই লাইফ : ফ্রম ক্রিকেট টু ক্যান্সার অ্যান্ড ব্যাক’ (২০১২), শচীন টেন্ডুলকারের ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’ (২০১৪), এবি ডি ভিলিয়ার্সের ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ (২০১৬), সৌরভ গাঙ্গুলির ‘এ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ (২০১৮), ভিভিএস লক্ষ্মণের ‘টুএইটি ওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ (২০১৮)-এর মতো অসংখ্য আলোচিত ও পাঠকপ্রিয় জীবনী বা আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় এই সময়কালে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363833752.jpg
মাশরাফির বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’ ◢



বাংলাদেশের বরেণ্য ক্রিকেটারদের নিয়ে জীবনী বা আত্মজীবনী লেখার ইতিহাস যদিও অল্পদিনের, তবে ইতোমধ্যে টুকটাক করে এগোচ্ছে। কিন্তু কোনো ক্রিকেটারের সরাসরি আত্মজীবনী এখনো বের হয়নি। গুণী কিছু ক্রীড়া সাংবাদিক লিখতে শুরু করছেন ক্রিকেটারদের জীবনীগ্রন্থ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘মাশরাফি’ ও মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদের ‘মানুষ মাশরাফি’। তবে, এধরনের বইয়ের সংখ্যা বাংলাদেশে এখনো অপ্রতুল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363940018.jpg
শহীদ আফ্রিদির বিতর্কিত আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ ◢

 

আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো দর্শক ও ভক্তদের সাথে ক্রিকেটারদের বন্ধনকে করে আরো জোরালো। ভক্তদের আরো কাছে নিয়ে আসে ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট জীবন এবং ব্যক্তিজীবন, একটা মানুষের দুটো জীবন যে হতে পারে একেবারে আলাদা, তা জানা যায় এই বইগুলোর মাধ্যমেই। কখনো কখনো আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে বেরিয়ে আসে এমন সব বিস্ফোরক তথ্য যা সৃষ্টি করে তুমুল বিতর্ক। এতে জড়িত হন আরো অনেকেই, পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সমসাময়িক অনেক ক্রিকেটাররাও। তেমন বিতর্কই সৃষ্টি হয়েছিল, সাবেক পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ প্রকাশের পর। বইটিতে ভারতীয় ওপেনার গৌতম গম্ভীরকে ব্যক্তিগত শত্রু হিসেবে তুলে ধরে ব্যক্তিত্বহীন আখ্যায়িত করেন আফ্রিদি। গম্ভীর প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে আফ্রিদি যেন সমালোচনার বন্যা বইয়ে দেন। গম্ভীরকে অসুস্থ মানসিকতার উল্লেখ করে ক্রিকেটের কলঙ্ক বলতেও দ্বিধা করেননি তিনি। জবাবে, গৌতম গম্ভীরও পরে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি টুইট করে বলেন, ‘আফ্রিদি, তুমি এত উচ্ছল মানুষ! সে যাক গে, আমরা চিকিৎসার জন্য এখনো পাকিস্তানিদের ভিসা অনুমোদন দিই। আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে একজন মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাব।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563363989504.jpg
ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’ ◢



এরকমই বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ২০১৮-তে প্রকাশিত ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীর আত্মজীবনী ‘মঈন’। এতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। মঈন জানিয়েছেন ২০১৫ অ্যাশেজ সিরিজ চলাকালীন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার তাঁকে ‘ওসামা’ বলে ডেকেছিলেন। ৩১ বছর বয়সী ইংরেজ অরাউন্ডার জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া ওই অ্যাশেজ সিরিজ তাঁর জন্য খুবই ভালো গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে ওই সিরিজে অত্যন্ত রাগিয়ে দিয়েছিল একটি দুঃখজনক ঘটনা। ক্রিকেট মাঠে তিনি কোনোদিন অতটা রেগে যাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। কার্ডিফে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে আট নম্বরে নেমে ব্যাটে গুরুত্বপূর্ণ ৭৭ রান যোগ করেছিলেন। সেই সঙ্গে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন ৫টি উইকেট। কিন্তু মঈনের দাবি, ওই ম্যাচেই তাঁকে ‘ওসামা বিন লাদেন’-এর সাথে তুলনা করে ‘ওসামা’ নামে ডেকেছিলেন এক অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার। শুনে চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল তার। পরে তিনি দলের কয়েকজনকে বিষয়টা জানিয়েওছিলেন। সেই কথা পৌঁছেছিল ইংল্যান্ডের কোচ ট্রেভর বেলিসের কানেও। বেলিস তা জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয় কোচ ডারেল লেম্যানকে।
লেম্যান ওই অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটারকে ডেকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিলেন। কিন্তু সে নাকি তখন তা অস্বীকার করে জানিয়েছিল, ‘ওসামা’ নয়, মঈনকে মাঠে তিনি ‘পার্টটাইমার’ বলেছিলেন। কিন্তু মঈন বলেন, ‘পার্টটাইমার’ আর ‘ওসামা’ এই কথাদুটি এতটাই আলাদা যে গুলিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব।

ঠিক তেমনি, অনেক রকম বিতর্ক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ইয়ান বোথাম, সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে অল্প ক’ বছর হলো সাবেক হওয়া শোয়েব আখতার ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আত্মজীবনীও। তবে আত্মজীবনী বা জীবনীগ্রন্থগুলো শুধু যে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দেয়, তা নয়। এখানে উঠে আসে অনেক সুন্দর ও চমকপ্রদ তথ্য, যা না ইতোপূর্বে কখনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, আর না ক্রিকেটার নিজের মুখে বলেছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563364046993.jpg
সৌরভ গাঙ্গুলির আত্মজীবনী ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ ◢

 

যেমন, ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইতে সৌরভ তুলে ধরেছিলেন এক মজার তথ্য। তখনও ভারতের অধিনায়কত্ব করছিলেন সৌরভ। সেসময় দুর্গাপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে সর্দার সাজতে হয়েছিল তাকে। মেকআপ আর্টিস্টকে বাড়িতে ডেকে ভদ্রস্থ ও বিশ্বাসযোগ্য লুক তৈরি করা হয়। পরে রাস্তায় বেরিয়ে বাবুঘাটে আসতেই পুলিশ আধিকারিক চিনে ফেলেন সৌরভকে। তবে তাঁর অনুরোধে বিষয়টি গোপনই রাখেন ওই পুলিশ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563364106152.jpg
ভিভিএস লক্ষ্মণের আত্মজীবনী ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ ◢



তেমনি, ‘টুএইটিওয়ান অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইতে ভারতের সাবেক সফল টেস্ট ব্যাটসম্যান ভিভিএস লক্ষণ তুলে ধরেছেন ব্যতিক্রমী এক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। সালটা ছিল ২০০৮। ভারত সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। দিল্লিতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টই ছিল লক্ষ্মণের শততম টেস্ট ম্যাচ। লক্ষ্মণ তাঁর বইতে জানিয়েছেন সেই টেস্ট শেষ হওয়ার পরই স্টেডিয়াম থেকে হোটেল পর্যন্ত ভারতীয় দলের টিমবাস চালিয়েছিলেন ধোনি। লক্ষ্মণ লিখেছেন, ধোনিকে বাস চালাতে দেখেও তাঁর ঘটনাটা সত্যি বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ তখন তিনি ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন। অধিনায়ক টিম-বাস চালাচ্ছেন, এরকম ভাবনাটাই তার আগে কখনো কারো মাথায় আসেনি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মণ। তবে, লক্ষণ মনে করেন, ধোনি এরকমই। কে কী মনে করল, পাত্তা দেয় না। করে যায় নিজের কাজটাই!

ক্রিকেটারদের জীবনী বা আত্মজীবনী শুধু একজন ক্রিকেটারের জীবন নিয়েই নয়, কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে একটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের কোনো একসময়ের দর্পণ। তা পড়ে বোঝা যায়, ওই দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও অবকাঠামোর অবস্থাও। তাই এধরনের একেকটা বই আক্ষরিক অর্থেই ‘ক্রিকেট জ্ঞানের আধার’। আর সৃষ্টিশীলতার দিক থেকে বা সৃষ্টিশীল কাজ হিসেবেই কি ক্রিকেটারদের আত্মজীবনী বা জীবনীমূলক বইগুলো পিছিয়ে আছে? স্রেফ সেই সাত দশক আগে জিম লেকারের ‘স্পিনিং রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ অথবা সাম্প্রতিক অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ‘ট্রু কালারস’ ও সৌরভ গাঙ্গুলির ‘আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ’ বইগুলোর নামগুলোর দিকেই খেয়াল করুন না! বই পড়েন এবং ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা রাখেন, এমন সব মানুষের নজর সহজেই কেড়ে নেয় এই সৃষ্টিশীল নামগুলো। আর ভেতরের লেখার উপাদানও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বা অন্যান্য লেখকদের সাহায্য নিয়ে। তাই তো, শিল্পকর্ম হিসেবে সেগুলো ভালোই আকর্ষণ করে রস-অনুসন্ধানী ক্রিকেটামোদী পাঠকদের।

এই জীবনীগ্রন্থগুলো দারুণ সহায়ক ও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে আগামীদিনের ক্রিকেটারদের জন্য। দুঃসময় ও স্বাস্থ্যগত মহাসংকটকে অতিক্রম করে কিভাবে ক্রিকেটে ফেরা ও টিকে থাকা যায়, তা তারা জানতে পারবে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও যুবরাজ সিংয়ের মতো ক্রিকেটারের জীবনী বা আত্মজীবনী পড়েই।

উল্লেখ করতে হচ্ছে, বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার জীবনীগ্রন্থ ‘মাশরাফি’র কথা। বইয়ে লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সত্যিকার বীর কারা, সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সব সময় বলি, বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছেন। জীবন যাবে জেনেই ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কী করি? খুব বাজেভাবে বলি—টাকা নেই, পারফর্ম করি। অভিনেতা, গায়কের মতো আমরাও পারফর্মিং আর্ট করি। এরচেয়ে এক ইঞ্চি বেশিও কিছু না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এইজন্য দাঁড়ায় নাই যে জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েলরা। রকিবুল ভাই ব্যাটে জয় বাংলা লিখে খেলতে নেমেছিলেন, অনেক বড় কাজ। তার চেয়েও বড় কাজ, বাবার বন্দুক নিয়ে ফ্রন্টে চলে গিয়েছিলেন। শহীদ জুয়েল ক্রিকেট রেখে ক্র্যাক প্লাটুনে যোগ দিয়েছিলেন। এটাই হলো বীরত্ব। ফাস্ট বোলিং সামলানার মধ্যে রোমান্টিসিজম আছে, ডিউটি আছে; বীরত্ব নেই।’

একজন ক্রিকেটার হয়েও মাশরাফির জীবনবোধ যে অসাধারণ, অনন্য যে তার দেশপ্রেম, এই বিষয়টাই তো ফুটে উঠেছে মাশরাফির কথনে! ক্রিকেটারাও যে মানুষ, মানুষ হিসেবে তাদের অনেকেরই যে চমৎকার জীবনদর্শন রয়েছে, রয়েছে সুন্দর কিছু চিন্তা, সেসব এভাবেই অনেক সময় প্রকাশিত হয় তাঁদের জীবনী বা আত্মজীবনীতে। তাই তো, এসব বই ক্রিকেটারদেরকে নিয়ে আসে ভক্তদের আরো কাছে। বইগুলোর মাহাত্ম্য এখানেই!

 

আরো পড়ুন
সর্বোচ্চ বিশ্বকাপ ফাইনালের সাক্ষী লর্ডস

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;