দক্ষ ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছি: ড. কেবিএম সাইফুল



সিফাতুল্লাহ আমিন, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) চারটি অনুষদের মধ্যে অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এএসভিএম) অনুষদ অন্যতম। এই অনুষদ ও ভেটেরিনারি মেডিসিন পড়াশোনার নানা বিষয়ে কথা বলেছেন এএসভিএম অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম। দেশে পোষা প্রাণী চিকিৎসা ও গবেষণায় তার সুখ্যাতি রয়েছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বার্তা২৪.কম এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি সিফাতুল্লাহ আমিন।

বার্তা২৪.কম: ডিন হিসেবে আপনি কতদিন আছেন? অনুষদের উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: আট মাস যাবৎ ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অনুষদকে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছি। শিক্ষকদের জন্য পেডাগোজি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটাল এবং নবনির্মিত পোল্ট্রি শেড চালু হয়েছে। নারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য অটোমেটেড স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন সমন্বিত ফিমেইল কর্নার চালু, ইন্টার্ন শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক সেমিনার এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে ট্রেনিং করানোসহ ইন্টার্নশিপে চারটি দেশে প্লেসমেন্ট নিশ্চিত করেছি। ক্লাস পরীক্ষাসহ একাডেমিক বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। অনুষদীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন, সকল লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুষদে ট্যুর ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়েছে। দক্ষ ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েট তৈরি করার জন্য কাজ করছি।

বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশে ভেটেরিনারিয়ানদের চাহিদা কেমন?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: দেশের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিত এবং চাহিদা মেটাতে ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েটরা নিরলস কাজ করছেন। একটি মেধাবী জাতির জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ সরবরাহে ভেটেরিনারিয়ানদের ভূমিকা অপরিসীম। দেশে প্রতিনিয়ত পোষা প্রাণির সংখ্যা বাড়ছে। এদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিচ্ছেন ভেটেরিনারিয়ানরা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দরকার স্মার্ট লাইভস্টক। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশে ভেটেরিনারিয়ানদের প্রয়োজনীয়তা এবং কর্মক্ষেত্র ব্যাপক।

বার্তা২৪.কম: শিক্ষার্থীরা কেন ভেটেরিনারি বিষয়ে পড়বে?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: ভেটেরিনারি শিক্ষা একটা প্রফেশনাল শিক্ষা যা ভেটেরিনারি কাউন্সিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যাদের মেডিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্স পছন্দ তারা নি:সন্দেহে এই বিষয়ে পড়তে পারে। এখানে হিউম্যান মেডিকেলের মতো এনাটমি, হিস্টোলজি, নিউট্রিশন, জেনেটিক, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, সার্জারী, গাইনেকোলজি, মেডিসিন, পাবলিক হেলথসহ নানা বিষয় পড়ানো হয়। ভেটেরিনারি বিষয়ে ডিগ্রি নিতে একজন শিক্ষার্থীর অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানে দক্ষ হতে হয়। প্রাণী চিকিৎসা এবং দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অংশ নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে পড়তে পারে। বিদেশে এই বিষয়ের চাহিদা অনেক বেশি। একজন ভেটেরিনারিয়ান মানুষের চিকিৎসা না করেও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখেন।

বার্তা২৪.কম: এই বিষয়ে পড়াশোনা করে চাকুরির সুবিধা কেমন?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: বিসিএসে টেকনিক্যাল ক্যাডার রয়েছে পাশাপাশি অনান্য ক্যাডারেও প্রতিযোগিতা করতে পারবে। প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেনাবাহিনীতে ভেটেরিনারি পেশার জন্য রয়েছে আরভিএফসি নামে আলাদা কোর। আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ঔষধ ও ফিড কোম্পানীগুলোতে চাকুরিসহ বিভিন্ন এনজিও এবং প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কেউ চাইলে প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারে।


বার্তা২৪.কম: শিক্ষার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: একাডেমিক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব সহকারে পড়তে হবে, বুঝতে হবে। না বুঝলে শিক্ষকদের সহযোগিতা নিয়ে শিখতে হবে। পাশাপাশি ব্যবহারিক ক্লাস গুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। ডিজিজ ডায়াগনোসিস এবং ট্রিটমেন্ট ভালোভাবে শিখতে হবে। আমাদের ক্লিনিকে ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে আরও দক্ষতা লাভ করতে পারবে।

বার্তা২৪.কম: অনুষদের সেশনজট নিরসনে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: আমি দায়িত্বে আসার পর সব ক্লাস পরীক্ষা একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী হয়েছে। সেশনজট হয়েছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পেছানো, পরীক্ষা বর্জনের মতো কারণে। আমাদের অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে নতুন ২৭ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন।
আশাকরি অনুষদে আগের চেয়ে আরও গতি আসবে। আমার দায়িত্বে সেশনজট পড়ার সুযোগ নেই। সবকিছু নিয়মানুযায়ী সময়মত শেষ হবে।

বার্তা২৪.কম: অনুষদ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: আমার দ্বি বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, জব ফেয়ার করা, ইন্টার্নশিপে আরও নতুন দেশে প্লেসমেন্ট সংযুক্ত করা, ভেটেরিনারি ক্লিনিক স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্লিনিক্যাল ল্যাব স্থাপন করা।

বার্তা২৪.কম: শেকৃবির ভেটেরিনারি টিচিং হসপিটালে সাধারণ মানুষজন কি কি সেবা পাবে?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: আমাদের হাসপাতালটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। জনবল ও চিকিৎসার সরঞ্জামাদির ঘাটতি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হলে একই ছাদের নিচে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, প্রতিকার, প্রতিরোধ, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা, টিকা প্রদান, সার্জারিসহ সহ প্রাণির স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।

বার্তা২৪.কম: গবেষক হিসেবে দেশ-বিদেশে আপনার সুনাম রয়েছে। অনুষদীয় গবেষণা কার্যক্রমের কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?

অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম: এখানে প্রাণির বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, জাত উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে। অনুষদে প্রথমবারের মতো ইন্টারনাল সাইন্টিফিক রিসার্চ কনফারেন্স আয়োজন এবং অনুষদীয় জার্নাল নিয়মিত প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভালো গবেষণা এবং প্রকাশনাকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি।

 

   

জাবিতে চারুকলা ভবন নির্মাণে শিক্ষার্থীদের বাধা



জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের আগেই চারুকলা ভবন নির্মাণে ফের বাধা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গাছ কেটে ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর লক্ষ্যে নির্ধারিত জায়গার চারপাশে টিন দিয়ে বেষ্টনী দেয় চারুকলা বিভাগ। এর কিছুক্ষণ পর প্রতিবাদ জানিয়ে বেষ্টনীর টিন খুলে বাধা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

শনিবার (১৮ মে) দুপুরের দিকে ভবন নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে বেষ্টনী দেওয়ার জন্য লাগানো টিনগুলো খুলে ফেলে কাজ বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা অভিযোগ করেন, অনেকদিন ধরেই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ যখন উদ্যোগ নিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে তা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

কতটুকু জায়গা জুড়ে ভবন নির্মাণ করা হবে, তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক। প্রথমদিকে বাস্কেটবল কোর্টের একটু অংশ ভবনের মধ্যে পড়বে বললেও লেকের ধার পর্যন্ত ভবন নির্মাণের জন্য ঘিরে ফেলা হচ্ছে। ফলে, নির্ধারিত জায়গার বাইরে থাকা ঘন জঙ্গল ও গাছপালাগুলো কাটা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ব পাশের টিন ও খুঁটি স্থাপনের জন্য যে স্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে, তা একেবারেই লেক ঘেঁষে, ছবি- বার্তা২৪.কম

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, এছাড়া নির্ধারিত স্থানের পাশেই রয়েছে, একটি লেক। প্রতিবছর শীতের সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে অন্যান্য লেকের মতো এখানেও পরিযায়ী পাখিরা আসে। ওইস্থানে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আবাসস্থল।

সরেজমিন দেখা যায়, ভবন নির্মাণ কাজের বেষ্টনী দেওয়ার জন্য বাস্কেটবল গ্রাউন্ডসংলগ্ন স্থানের উত্তর পাশের পুরো খালি জায়গাটিতে লোহার খুঁটি স্থাপন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পূর্ব পাশ থেকে একটি অংশে টিন দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। তবে শনিবার দুপুর নাগাদ শিক্ষার্থীরা টিনের বেষ্টনীগুলো খুলে ফেলেন আর খুলে ফেলা টিনগুলো খুঁটির পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আরো দেখা যায়, পূর্ব পাশের টিন ও খুঁটি স্থাপনের জন্য যে স্থানটি পরিষ্কার করা হয়েছে, তা একেবারেই লেক ঘেঁষে। এছাড়া এই স্থানটির ভেতরে ঘন গাছপালা সমৃদ্ধ একটি জঙ্গলও রয়েছে।

কাজে বাধা দেওয়ার সময় উপস্থিত নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই মাস্টারপ্ল্যানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। প্রকল্পের পরিচালককে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই, আমরাও কাজে বাধা দিয়েছি। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘আল বেরুনী এক্সটেনশনে এর আগেও প্রশাসন হল করার পাঁয়তারা করেছিল। আমরা তা রুখে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিত ভবন নির্মিত হওয়ায় গত তিন দশকে ২৮ শতাংশ জলাশয় এবং স্থলভূমি নাই হয়ে গেছে। এই জায়গাটিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ আছে। পাশের যে লেক আছে, বড় ভবন নির্মাণ করা হলে তা পরিযায়ী পাখির জন্য অনিরাপদ হবে। নতুন কলার এক্সটেনশন হলে এবং লেকচার থিয়েটার হলের কাজ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষ সংকটের সুযোগ নেই। তাই, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আমরা ভবন হতে দেবো না’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ময়েজউদ্দীন বলেন, আমি শুনেছি, শিক্ষার্থীরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো। সেখানে যাচ্ছি। আমাদের কাজ চলমান থাকবে। তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখি।

;

শেকৃবি'তে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ



শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

  • Font increase
  • Font Decrease

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নবম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডের বিভিন্ন পদের জন্য মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হলেও অফিস সহায়ক পদে (২০তম গ্রেড) লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সনাক্তকরণের জন্য প্রার্থীর কোনো ছবি ছিল না। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার হলে প্রার্থীদের উপস্থিতির স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়াও লিখিত পরীক্ষার খাতায় (মূল্যায়নপত্র) হল পরিদর্শকের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি পরীক্ষার খাতায় কোনো ধরনের কোডিং বা ডিকোডিং ছিল না।

লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, পরীক্ষার প্রবেশপত্রে প্রার্থীদের কোনো ছবি ছিল না। হলে অনেকে প্রক্সি দিতে এসেছিল। উত্তরপত্রে কোনো পরিদর্শক স্বাক্ষর করেননি। এছাড়া আমাদের কাছ থেকেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।

লিখিত পরীক্ষায় হল পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা এক শিক্ষক জানান, লিখিত পরীক্ষার উত্তর মূল্যয়নপত্রে কোনো স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। খাতায় প্রার্থী উপস্থিত আছে কিনা নিশ্চিত করার জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বর সম্বলিত পত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত ছিল। পরবর্তীতে উপাচার্য পরীক্ষা কেন্দ্রে আসলে তাকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, প্রায় ১৩শ শিক্ষার্থী আবেদন করায় আমরা লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করি। এক্ষেত্রে কেউ অসদুপায় অবলম্বন করার তথ্য পায়নি। তবে কেউ অসদুপায় অবলম্বন করলেও ভাইভা বোর্ডে সে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।

অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা স্বচ্ছতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, স্বচ্ছতা তো পরের বিষয় উপাচার্য এককভাবে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন যদি নিয়োগ বোর্ডের সবাই মিলে উনাকে দায়িত্ব দেয়। বোর্ডের অনুমতি ছাড়া উনি এটা করতে পারেন না।

রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ এপ্রিল অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অফিস সহায়ক মোট পদপ্রার্থী ছিল ১ হাজার ২৮৪ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৪৯৪ জন এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৫০ জন। গত ২ মে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফল অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষা জন্য ১৫০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

;

প্রাচীন ইতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বিশাল সংগ্রহশালা চবি জাদুঘর



মুহাম্মাদ মুনতাজ আলী, চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজের চাদরে মোড়ানো ঘন বৃক্ষরাজি ও পাহাড় ঘেরা সুবিশাল আয়তনের এক নৈসর্গিক ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। সকাল হতেই শুরু হয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আনাগোনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ক্যাম্পাসে জ্ঞানপিপাসু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র জাদুঘর এটি। যেখানে রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস- ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বিশাল সংগ্রহশালা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে বাংলাদেশের ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব এবং শিল্প ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে ও উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ কর্তৃক জাদুঘরটির আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৪ জুন ১৯৭৩ সালে। যদিও এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিন তথা ২৬ নভেম্বর ১৯৬৬ সালে শুরু হয় জাদুঘর চালুর প্রক্রিয়া।

সর্বমোট পাঁচবার স্থান পরিবর্তন করার পর ১০ আগস্ট ১৯৯২ সালে স্থায়ী প্রদর্শনীর জন্য পাহাড়ের কোলঘেঁষে চবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাশে ছোট্ট টিলার ওপর দ্বিতল একটি ভবনে জাদুঘরের বর্তমান অবস্থান। এর আগে প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে ক্ষুদ্র পরিসরে জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে কিছুদিন উক্ত ভবনের নিচতলার দুইটি কক্ষে পূর্বের চেয়ে বড় পরিসরে কিছু সময় জাদুঘরের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। এরপর চট্টগ্রাম শহরের মৌলানা মোহাম্মদ আলী সড়কে অবস্থিত চট্টগ্রাম কলাভবনে (বর্তমানে জেলা শিল্পকলা একাডেমি) স্বল্প পরিসরে এই জাদুঘর পরিচালিত হয় এবং এরপর পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের চতৃর্থ তলায় জাদুঘরটি স্থানান্তরিত হয়।

ভবনটির নিচতলায় রয়েছে গবেষণা কেন্দ্র, আলোকচিত্র স্টুডিও, কনজারভেশন ল্যাবরেটরি, একটি অস্থায়ী প্রদর্শনী ও সেমিনার কক্ষ, একটি ডকুমেন্টেশন ও গবেষণা কেন্দ্র, জাদুঘরের স্টোর ‍রুম, অফিস কক্ষসমূহ এবং আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ কোষ গ্রন্থাগার। জাদুঘর ভবনটির দ্বিতীয় তলা পাঁচটি গ্যালারিতে বিভক্তি।

প্রাগৈতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ব গ্যালারি

চবি জাদুঘর শুরুর দিক থেকেই প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের বিষয়ে সচেতন ভূমিকা রাখে। চট্টগ্রাম মহানগরীর নাসিরাবাদ পাহাড় হতে প্রাপ্ত টারশিয়ারি যুগের একটি মাছের ফসিল উপহার হিসেবে পায় বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর। আর এটিই সংগ্রহশালার সর্বপ্রাচীন নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ইতিহাস অধ্যয়ন ও গবেষণায় এটির রয়েছে অসামান্য অবদান। এই গ্যালারিতে আরও রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বছরের পুরনো কাঠের ফসিল, কুমিল্লার কোটবাড়ি থেকে পাওয়া সপ্তম শতাব্দীর ল্যাম্পস্ট্যাণ্ড, সোমপুর বিহার ও কোটবাড়ির পোড়া মাটির ফলক, ধাতুচিত্র, অলংকৃত ইট, কাদা মাটির মূর্তি ইত্যাদি।

প্রাচীন ভাস্কর্য গ্যালারি

ভাস্কর্য গ্যালারিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন ভাস্কর্যসমূহ গৌরবময় অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের। ব্রাক্ষ্মণ্য ও বৌদ্ধ প্রতিকৃতিগুলো থেকে সহজেই তৎকালীন সময়ের বিশ্বাস, রীতিনীতি, সংস্কৃতি এবং অলংকার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। এ সংগ্রহশালার সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয় দুষ্প্রাপ্য ৫২টি কষ্ঠিপাথরের মূর্তি। রয়েছে ২৮টি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য এবং ধাতু নির্মিত কিছু ভাস্কর্য যার অধিকাংশই পাল আমলের (৮০০-১২০০খ্রিষ্টাব্দ)। গুপ্ত সাম্রাজ্যের (৩২০-৫৫০খ্রিষ্টাব্দ) একটি সূর্য মূর্তি রয়েছে এ জাদুঘরে। আরও রয়েছে বৈষ্ণব, শিব, সুরিয়া, শাক্ত এবং গাণপত্য পৌরাণিক চরিত্রসমূহের মূর্তি এবং ভাস্কর্য। এছাড়া রয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে প্রাপ্ত নবম শতকের সেণ্ড পাথরের ভাস্কর্যের গরুড় রাধা বিষ্ণুর একটি প্রাচীনতম নিদর্শন।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের বিশাল সংগ্রহশালা চবি জাদুঘর

ইসলামিক শিল্প গ্যালারি

এ গ্যালারিতে সংরক্ষিত সামগ্রীগুলো মুসলিম সভ্যতার তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবস্থার একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলে দর্শনার্থীদের সামনে। এ গ্যালারিতে রয়েছে হাতে লেখা কুরআন শরীফ, শিলালিপি, কারুকাজ মসজিদের দেয়ালের খণ্ডিত অংশ, নকশে সুলেমানি, ১২০৯ সালের আলমগীর নামা, ফার্সি ভাষার গুলিস্তা, ১২২৯-৩৬ সালের হাতে লেখা ফার্সি কাবিননামা, ১০৬১ হিজরীতে লেখা মেপতাহুস সালাত। সম্রাট শাহজাহানের কামান, মুঘল আমলের ঢাল-তলোয়ার, উমাইয়া এবং সুলতানি আমলের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা এ সংগ্রহশালাকে দান করেছে অনন্য উচ্চতা।

লোকশিল্প গ্যালারি

আবহমান বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য সংগ্রহশালার নাম চবি জাদুঘর। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া পালকি, গ্রামোফোন, শীতল পাটি, হাতে তৈরি চরকা, তাঁত ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যাবে এ গ্যালারিতে। তবে বাঘের মাথা, প্রথম যুগের সিরামিক সামগ্রী, রাজকীয় লাঠির মাথা, হাজার বছর আগেকার মানুষের ব্যবহৃত অলংকার দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে বেশি।

সমকালীন শিল্পকলা গ্যালারি

বাংলাদেশের খ্যাতিমান প্রায় সব শিল্পীর চিত্রকর্ম যারা অবলোকন করতে চান তাদের জন্যই এ গ্যালারি আদর্শ একটি মাধ্যম। এ গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, মর্তুজা বশীর, রশীদ চৌধুরী, নিতুন কুণ্ডু ও হাশেম খানের মতো শিল্পীদের নানা চিত্রকর্ম এবং সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের ভাস্কর্য।

তবে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম এই জাদুঘরের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, জাদুঘরে অনেক ম্যাটেরিয়ালস আছে যেগুলো নিয়ে এমফিল, পিএইচডি করা যায়। কিন্তু আব্দুল করিম স্যারের পর আর কেউ এটা নিয়ে কাজ করেনি। যা খুব হতাশার ব্যাপার। জাদুঘর কোন অফিস না কিন্তু এটা বর্তমানে অফিস হয়ে গেছে। আজ পর্যন্ত এই জাদুঘর থেকে একটা গবেষণাপত্র বের করতে পারেনি। একটা মিউজিয়ামের প্রাণ হচ্ছে ক্যাটালগ কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা একটা ক্যাটালগ বের করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন ইতিহাসবিদ রিচার্ড ইটনসহ পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এখান থেকে তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন অথচ এটা এখন অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। গবেষণাপত্র ও জার্নাল বের না করলে শিক্ষার্থীরা এমফিল, পিএইচডি কিভাবে করবে?

;

চবির শীর্ষ ৮ পদে আসছে পরিবর্তন



চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শীর্ষ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এবার গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী ৩য় ও ৪র্থ গ্রেডের আটটি পদে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। পদগুলো হলো- রেজিস্ট্রার, গ্রন্থগারিক, হিসাব নিয়ামক, প্রধান প্রকৌশলী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), চিফ মেডিকেল অফিসার এবং পরিচালক (শারীরিক শিক্ষা বিভাগ)।


বিজ্ঞাপিত পদগুলোতে আবেদনকারীদের সনদপত্রাদিসহ ১০ সেট দরখাস্ত আগামী ১০ জুনের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন- গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদগুলোতে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে পদগুলোতে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা আসবেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে শীর্ষ এই আটটি পদেই রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ২০২২ সালে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), পরিচালকসহ (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চলতি দায়িত্ব প্রদান না করে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার এই নির্দেশনা আমলে না নিয়ে চলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের দায়িত্ব নিয়েই পদগুলোতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছেন।

;