কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১২)



জিনি লকারবি ।। অনুবাদ: আলম খোরশেদ
বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

বার্তার নিজস্ব অলঙ্করণ

  • Font increase
  • Font Decrease

[পূর্ব প্রকাশের পর] “যেদিন আমি কয়েকজন মিশনারিকে জাহাজে নিয়ে গিয়েছিলাম,” রিড বলেন, “সেদিন ইউ এস এইডের একজনকে বন্দরের ডকের ওপর পাই। তিনি আমাকে জানান যে, কাপ্তাইয়ে বিদেশিরা আটকা পড়ে আছে। (সেখানে আমেরিকানরা একটা ড্যাম বানাচ্ছিল ১৯৬০-এর গোড়া থেকে।) তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি যেহেতু বাংলা বলেন না, কোনো বাঙালি তাঁকে সেখান পর্যন্ত সঙ্গ দিতে পারবে কিনা।

“এটা যদি হয় শুধু বাংলা বলার জন্য, তাহলে আমিই যেতে পারি আপনার সঙ্গে,” আমি স্বেচ্ছায় বলি।

“এইড এর ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। এই যাত্রায় বিপদের সম্ভাবনা দেখে আমি তাঁকে বলি দুজনে মিলে প্রার্থনা করতে।”

তাঁর জবাবটা আমার মনে আছে: “আবারও প্রার্থনা করাটা ভালো নিশ্চয়ই।”

প্রথম সমস্যা হচ্ছে গাড়ির জন্য পেট্রোল যোগাড় করা। পেট্রোল খুব কড়াকড়িভাবে রেশন করা হচ্ছিল। একমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যরাই কোনো স্টেশনে গিয়ে বলতে পারত, “এটাতে গ্যাস ভর্তি করে দাও।” একটা পেট্রল স্টেশনের খোঁজে আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াই এবং দেখতে পাই যে, সব জায়গাতেই আগুন জ্বলছে।

কাপ্তাই যাওয়ার পথে রাস্তায় আমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া বেতারকেন্দ্রটা দেখি। আর একশ গজের মধ্যেই আমরা একটা পাকিস্তানি ট্যাংকের দেখা পাই, যা কয়েক মিনিট আগেই আমাদের যাওয়ার পথের দিকে নিশানা করে গুলি ছুড়ছিল। রাস্তা জুড়ে কেবল সদ্য ছোড়া মর্টারের শেল। কুড়ি পঁচিশজন ব্যক্তিকে মাথার ওপর হাত তুলিয়ে রাস্তার নিচে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্যাংকটা অতিক্রম করার পর, আমাদের দিকে তাক করা অস্ত্রের নলের আধিক্য দেখে আমরা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে থাকি এবং সিদ্ধান্ত নিই, আমরা আর এগুব কিনা মিলিটারির কাছে তার অনুমতি চাইব। অফিসার আমাদের বলেন, “আমরা এখনো এই রাস্তা পরিষ্কারের অভিযানে আছি,” এই বলে তিনি আমাদেরকে বেতারকেন্দ্রের দিকে ফেরত পাঠিয়ে সেখানে আধঘণ্টা অপেক্ষা করতে বললেন।

“শেষ পর্যন্ত অনুমতি যখন এলো, তখন আমাদেরকে বলা হলো তাড়াতাড়ি এই জায়গাটা পেরিয়ে যেতে,” “কেননা কখন আবার গুলি শুরু হবে আমরা জানি না। আরেকটা কথা, সন্ধ্যা হয়ে গেলে আর ফিরবেন না। সন্ধ্যার আগে আসতে না পারলে কাল সকালে ফিরবেন।”

“কাপ্তাইয়ে নানা দেশের নাগরিকরা উদ্ধার পাবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা যখন তাঁদেরকে গাড়িতে তুলছিলাম তখন বুঝতে পারি, একটা আমেরিকান পরিবার সেখানেই থেকে যেতে চাইছে। আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে জানায় যে, তারা একটা পশ্চিম পাকিস্তানি পরিবারকে লুকিয়ে রেখেছে বাসায়, এবং জানতে চায়, আমরা তাদেরকে আমাদের বিছানাপত্রের বাক্সপ্যাটরার সঙ্গে লুকিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে পারব কিনা।”

“বাঙালিরা কাপ্তাইয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল, এবং এটা নিশ্চিত যে, বিদেশিরা চলে গেলেই এই পশ্চিম পাকিস্তানি নির্ঘাৎ মারা পড়বে। পশ্চিম পাকিস্তানি সম্প্রদায়েও আমাদের কিছু বন্ধু ছিল। আমি এই আমেরিকানের সঙ্গে সহমর্মিমতা বোধ করি। শত্রু লাইনের দুই দিকেই সবসময় কিছু ভালো লোক থাকে। আমি জানতাম একমাত্র একটি উপায়েই আমি বেঁচে থাকতে পারব; এতকিছুর মধ্যেও যদি আমি আমার সব আচরণ খোলামেলা ও স্বচ্ছ রাখি। কোনো অন্যায়ের অংশীদার হয়ে আমি নিজেদের মিশনারি ও দেশি বন্ধুদের সাহায্য করার সুযোগকে নষ্ট করতে পারি না।”

“আর কোনো উপায় না দেখে এই পরিবারটি তাদের বন্ধুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এটা একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল।”

“বাঙালি সেনারা, যেহেতু জানতেন যে, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ছিল, তাঁরা কিছু কূটকৌশলের আন্দাজ করছিলেন। তাঁরা ঐ গাড়ি দুটোকে খুব কড়া তল্লাশি করেন। আমরা একটা ইঁদুরকেও সেখানে লুকিয়ে রাখতে পারতাম না।”

“পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কাপ্তাইয়ের দখল নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এইডের বন্ধুটি সেখানে ফেরত যান, রয়ে-যাওয়া আমেরিকান পরিারটির সাহায্যার্থে। তাঁরা সেই পাকিস্তানি অতিথি পরিবারটিকে সেনাবাহিনীর হাতে নিরাপদে তুলে দিয়ে পরিষ্কার বিবেকে কাপ্তাই ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কিন্তু ততদিনে টেবিল উল্টে গেছে এবং তখন বাঙালিদেরই সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের একজন উঁচুপদের প্রকৌশলীকে যখন সেনারা জোর করে তুলে নিতে চায় তখন তাঁরা তাঁকে রক্ষা করার এক অসফল প্রচেষ্টায় প্রায় জীবনেরই ঝুঁকি নিয়ে বসেন। বন্দুকের নলের মুখে যখন তাঁদের দুজনকে আদেশ দেওয়া হয়, তখন তাঁরা ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হন। কয়েক সেকেন্ড পরে, তাঁদের বাড়ির মাত্র একশ গজ দূরে, একজন উন্মাদপ্রায় পাকিস্তানি মেজর হুকুম দিলে, সেই প্রকৌশলীকে গুলি করে রক্তধারার মধ্যে ফেলে রাখা হয়। তিনি তৎক্ষণাৎই মারা যান। এই বাঙালি প্রকৌশলী নিজে বেশ কয়েকটি পশ্চিম পাকিস্তানি পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করেন যখন তারা বিপদে পড়েছিল, কিন্তু ঘৃণায় উন্মত্ত এক মেজরের হাত থেকে কেউই তাঁকে রক্ষা করতে পারেনি।”

রিডের দুশ্চিন্তাজাগানো প্রতিবেদন শোনার পর আমরা একটু সিরিয়াস হই এবং ঘরে গিয়ে আবারও ভাবতে বসি: আমরা কি থাকব, না কি দেশ ছাড়ব?

এপ্রিল ১৭, শনিবার

আমরা সকালবেলায় পুরো দলটার সঙ্গে মিলিত হই। গোল হয়ে বসে আমরা কে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা বাকিদের জানাই। এত কঠিন ও আত্মানুসন্ধানী সব সিদ্ধান্ত!

থাকা ও যাওয়ার ভালো মন্দ নিয়ে এক ঘণ্টা ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়।

লিন এবং আমি, এককভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, ঈশ্বর চান আমরা থাকি এবং সময়টাকে সাধন করি: একেকটা বাড়তি দিন মানে ইতোমধ্যে প্রস্তুত বাংলা বাইবেলের পাণ্ডুলিপি ও নির্দেশিকা ব্যবহারের আরো কাছাকাছি চলে আসা। আমি বাড়িতে যেমনটি লিখেছিলাম: “আপনারা নিশ্চিত থাকেন যে, আমরা নায়ক কিংবা শহিদ হতে চাইছি না। আমাদের দেশত্যাগের একটা পরিকল্পনা রয়েছে, ঈশ্বর যে-ই বলবেন যাও, আমরা তক্ষুণি বেরিয়ে যাব। আমরা শুধু এখন পর্যন্ত সেই সবুজ সংকেতটি পাইনি।”

আমাদের দলের কেউ কেউ ভাবছিলেন যে, এই সমস্যাসঙ্কুল দিনগুলোতে ধর্মপ্রচারের কাজ তো ভালোই বিঘ্নিত হবে, তাহলে খামোখা এখানে থেকে গিয়ে, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি রসদের ক্রমে কমে আসা সরবরাহের অপচয় করা কেন?

আমাদের যাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরার বৈধ ভিসা ছিল না, তারা ভাবছিল একবার বেরিয়ে গেলে যদি আর ফিরতে না পারে।

আমরা শুনতে পাই যে, আমেরিকানদের সঙ্গে আওয়ামী নেতাদের এক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয় এর আগের রাতে। স্বদেশী সৈন্যরা খুব ভালোভাবেই কাজ করছিল। তারা জানত, তারা কিসের জন্য লড়াই করছে এবং তার পরিণাম কী হতে পারে। আমেরিকানরা পরিষ্কার করে দেয় যে, আমেরিকা কখনোই তাদের স্বীকৃতি দেবে না কিংবা সাহায্য করবে না। আওয়ামী নেতারাও খুব করুণ অবস্থায় ছিলেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িঘর ও বিষয়সম্পত্তি হারিয়েছেন: অনেকেই তাঁদের পরিবারের কোনো খোঁজও জানতেন না।

এপ্রিল ১৮, রবিবার

ইংরেজি প্রর্থনাসভার পর, কে কে যাবে আর কারা থাকবে সেটা নিয়ে আবারও পর্যালোচনা করা হয়। বিল্সরা সিদ্ধান্ত নেন যে, কেবল মার্জরি ও বাচ্চাদের দেশত্যাগের চাইতে তাঁরা গোটা পরিবারই বার্মার ভেতর দিয়ে গিয়ে পেনাংয়ে তাঁদের ছুটি কাটাবেন।

বিকেলে মটরসাইকেলে করে রিড আসেন। তিনি বলেন শহরের অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে: আইনহীনতার চূড়ান্ত, লুটতরাজ, মাঝেমধ্যেই গোলাগুলি—রীতিমতো খুবই উত্তেজনাকর পরিবেশ। তিনি এও বলেন যে, মালুমঘাটের এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কয়েকদিন থাকার পর তিনি ভাবছিলেন, আদৌ কি কোথাও যাবার দরকার আছে; কিন্তু চিটাগাংয়ে গিয়ে তিনি যা দেখলেন তাতে তাঁর মনে হয়েছে এখনই উপযুক্ত সময় দেশত্যাগ করার।

যারা চলে যাবার ছিল, তাদেরকে সবাই গোছগাছে সাহায্য করে।

লিন ও বেকি বাইবেলের একটা শ্লোককে মন্ত্রগুপ্তি হিসাবে নির্ধারণ করে, যা সবাই মনে রাখবে এবং সবার সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করবে।

অঙ্ক ১৬:৭ আমরা ফিরতে চাইছি কিন্তু পারছি না।

২ কিংস ৭:৭ তিনজন ছাড়া সব মিশনারিই দেশ ছেড়েছেন।

২ কিংস ৭:১০বি সবাই, এমনকি তিনজনও দেশ ছেড়েছেন।

২ কিংস ৪:২ খাবার ও অন্যান্য জিনিসের অভাব, দেশে ফেরাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে না।

ইসাইয়াহ ৩০:১৫ সব ঠিক। ফিরে আসুন।

জেরেমিয়াহ ৪:১এ ফিরে আসুন। আপনাদেরকে প্রয়োজন।

জেনেসিস ২৮:২১ পশ্চিম পাকিস্তানি দল দেশে ফিরে যাচ্ছে।

অঙ্ক ২১:৪ এক্ষুণি ফিরে আসার দরকার নেই।

অঙ্ক ১৬:৩৬ মিলিটারি আমাদেরকে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।

এপ্রিল ১৯, সোমবার

বিমানে করে দেশত্যাগীদের দল, অ্যাডল্‌ফ পরিবার ও তাদের চার বাচ্চা, পাঁচ নারী মিশনারি সকাল আটটায় দুটো ল্যান্ডরোভারে করে রওনা দেয়; গাড়িগুলো চালাচ্ছিলেন ল্যারি গলিন ও মি. জো ডিকক। রিড তাঁর সাইকেলে করে আগে আগে যাচ্ছিলেন।

যাবার পথে তাঁরা একজন ব্রিটিশ নাগরিকের দেখা পান, যার চিকিৎসা নেবার জন্য মালুমঘাট হাসপাতালে আসার কথা ছিল। তিনি আর আসেননি, তাই আমরা ধরে নিয়েছিলাম তিনি হয়তো সেই উদ্ধারকারী জাহাজে করে দেশত্যাগ করেছেন। আসলে তিনি হাসপাতালে আসার পথে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি সাদা মুখগুলো দেখে কী যে খুশি হয়েছিলেন, এবং তিনি উদগ্রীবভাবে একটা গাড়িতে উঠে বসেন দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ইউনিয়ন জ্যাক লাগিয়ে একটি ব্রিটিশ গাড়ি তাঁরই সন্ধানে এদিকে আসছে। তিনি গাড়ি বদল করেন এবং তাঁর নিজদেশের পতাকার সুরক্ষায় সামনে যাত্রা করেন।

ভাঙা সেতুটি আমাদের লোকেরা হেঁটেই পার হন এবং ওপারে গিয়ে অপেক্ষমাণ গাড়িতে ওঠেন। তাঁরা দেখেন, যাদেরকে ইতোমধ্যে মেরে ফেলা হয়েছিল তাদের লাশগুলো সেখানেই পড়ে আছে। বিল্ডিংগুলোর গায়ে প্রচুর ছিদ্র জানান দিচ্ছিল যে, সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছে।

নিরাপদে চট্টগ্রাম পৌঁছে এই দলের সদস্যরা বিমানে করে ঢাকায় গেলেন; সেখান থেকে একদল পশ্চিম পাকিস্তানে এবং আরেক দল আমেরিকায় পাড়ি দিলেন। বিদায়-নেওয়া মিশনারিরা তাঁদের জিনিসপত্র গুছিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। তাই আমরা দিনটা কাটাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালিয়ে। কোনো কোনো পরিবার বাচ্চাদের পোশাকগুলো বাক্সে ভরে আমাকে ও লিনকে পাঠিয়ে দেন, আমরা যেন সেগুলো শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করে দিই। হাসপাতালের গুদামঘরে ড্রামের মধ্যে ভরে রাখা পুরনো কাপড়গুলোকে ঝাড়াই বাছাই করার কাজও ছিল। আমরা সেগুলোকে নার্সদের কোর্য়াটারে পাঠিয়ে দিই এবং দ্রুতই দেখতে পাই, আমাদের বারান্দায় সুন্দর করে সাজানো শার্ট, জুতা, পোশাক ও বাচ্চাদের কাপড়ের বান্ডিলগুলো ফেরত আসে।

এপ্রিল ২০, মঙ্গলবার

জে ওয়াল্শ ও জো ডিকুক বিল্স পরিবারকে টেকনাফ পর্যন্ত গাড়ি করে পৌঁছে দেন, যেখান থেকে তাঁরা বার্মা চলে যাবেন। ফেরার পথে এই দুই লোক নতুন ব্যারিকেডের দেখা পান, সেখানে হাসিবিহীন প্রহরীদের মুখ ও যাবতীয় আলামতই বলে দেয় যে, এই এলাকায় সামনে বিরাট যুদ্ধ হবে।

নতুন ‘আতঙ্ক পরিষদ’ মিলিত হয় সভায়। (পুরনো সদস্যরা সবাই চলে গেছে।) আমরা—ভিক ও জোয়ান ওল্সেন, ইলিয়ানোর ওয়াল্শ, এবং আমি—একটা কর্মসূচি প্রণয়ন করি, যেটাকে আমরা বলি, ‘গ্রামের আশ্রয়।’

সেনারা এলে, হাসপাতাল থেকে গুলির শব্দ শোনা যাওয়ামাত্র (মিশনারিদের বাড়ি থেকে আধা মাইল দূরে) সব নারী ও বাচ্চা একজন নির্দিষ্ট পুরুষ সদস্যের সঙ্গে কাছের গ্রামে, আমাদের বন্ধুদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে। আমরা খাবার, পানি, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, এবং সময় কাটানোর মতো হালকা খেলার জিনিসপত্র নিয়ে যেতে পারব সঙ্গে। আমরা সেখানে বেশিদিন থাকার প্রত্যাশা করিনি।

তবে সেটা ছিল বেকি ডেভি তার ‘প্রথম ডাক্তারি ভুল’টি ঘটানোর আগে! [চলবে]


কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১১)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ১০)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৯)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৮)
কর্মব্যপদেশে, একাত্তরের বাংলাদেশে: জনৈক মার্কিন সেবিকার স্মৃতিকথা (কিস্তি ৭)

দারুণ সৌভাগ্য আমাদের



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...

আমি ক্রমশ সরু হয়ে যাওয়া ইতিহাসের
গলিটার দিকে তাকাই।
ওপার থেকে ছিটকে আসে বিগত কালের আলোক,
ইহুদিদের চর্বি দিয়ে সাবান বানিয়েছিল জার্মানরা।
বাথটাবে সেই সাবানের ফেনার মধ্যে ঠেসে ধরে
ওরা ঠাপাতো ইহুদি মেয়েদের।
পাকিস্তানিরা ঐভাবেই ঠাপাতো আমাদের।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
সিন্ধু থেকে আসতো আমাদের জেলা প্রশাসকেরা,
পেশোয়ার থেকে গভর্নরেরা।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডটিচার
প্রিন্সিপাল ভিসি'রা আসতো লাহোর করাচি মুলতান থেকে।
ফ্যালফেলে তাকিয়ে আমরা ভাবতাম,
আহা কবে জন্ম নেবে আমাদের মেসায়া!
নেপথ্যে ভেসে আসতো অদম্য কুচকাওয়াজের শব্দ।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
আমরা লম্বা লম্বা পাঞ্জাবি পরতাম গোড়ালি পর্যন্ত।
ঘরে ঘরে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের গান বাজতো কাওয়ালির সুরে--
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম ভুলে যেতাম
কিন্তু জিন্না'কে ভুলতাম না।
ধরো তোমার যদি জন্ম না হতো...
ঢাকার মাঠে খেলা হতো পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের।
প্রত্যেকটি খেলায় একজন করে সুযোগ পেতো
বাঙালি টুয়েল্ফথৃ ম্যান যারা মূল খেলোয়াড়দের
বিশ্রাম দেবার জন্য প্রচণ্ড দাবদাহের রোদে
প্রাণপণ ফিল্ডিঙয়ের ওস্তাদি দেখাতো।

আমাদের কাজ হতো শুধু
পাকিস্তানিদের চার-ছয়ে উদ্দাম হাততালি দেওয়া,
হাততালি দিতে দিতে তালু ফাটিয়ে ফেলা।
তীব্র হাততালির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি
আজ মার্চের সতেরো।
দারুণ সৌভাগ্য আমাদের তুমি জন্ম নিয়েছিলে!
১৭-০৩-২০২৩

;

বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্বে শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপন



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

বঙ্গীয়’র কেন্দ্রীয় সভা অনুষ্ঠিত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ও মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন বঙ্গীয়’র কিশোরগঞ্জ কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাল্টিমিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ও কিশোরগঞ্জ নিউজ'র নিয়মিত লেখক।

বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি,শিল্প, সংগীত, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার বহুল কার্যক্রম নিয়ে দেশের প্রাচীনতম ও অগ্রণী প্রতিষ্ঠা নবঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র এক সভা এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শনিবার (১১মার্চ ২০২৩) বিকেল ৪-৩০ টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় নাট্যশালার কনফারেন্স হলের ভিআইপি সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বরেণ্য শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্হিতিতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গীয় সাহিত্য- সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা
কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ। এতে সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সঞ্চালনা করেন।

সভায় বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদের সদস্য বার্তা২৪.কম'র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর লেখক, কমামিস্ট ও গীতিকার শাহ্ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’র কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা গঠনের দায়িত্ব আরোপ করে তার হাতে বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র ইশতেহার তুলে দেন বঙ্গীয় সাহিত্য-সংস্কৃতি সংসদ’র মূখ্য উপদেষ্টা কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান আজিজ এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবর্গ ।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গীয়'র জার্মানির সভাপতি কবি নাজমুন নেসা পিয়ারী, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক আমিনুর রহমান বেদু, রবীন্দ্র একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবিশ, ইউনেস্কোর ব্রান্ড এম্বাসেডর নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাত, বঙ্গীয়'র সভাপতি পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান, বঙ্গীয়'র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলী নিয়ামত, কবি নাঈম আহমেদ, বঙ্গীয়'র কেন্দ্রীয় সদস্য কবি মীনা মাশরাফী, কবি পারভিন আক্তার সহ প্রমুখ।

সভার প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক রবীন্দ্র সম্মিলন উদযাপন বিষয়ক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কবি আজিজুর রহমান আজিজকে আহবায়ক এবং সংগীতশিল্পী শামা রহমানকে সদস্য সচিব করে উদযাপন কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে বঙ্গীয়র সভাপতি পর্ষদের সকল সদস্য, রবীন্দ্র একাডেমির নির্বাহী শাখার সকল সদস্য, বঙ্গীয়র যুগ্ম সম্পাদকবৃন্দসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশিষ্টজনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।

দ্বিতীয় পর্বে অযুত তারুণ্যের বঙ্গবন্ধু সম্মিলন, দ্বিশতজন্মবর্ষে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে লেখক কবির আলোচনা সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ইউনাইটেড নেশন্সের ব্রান্ড এম্বাসেডর জনাব নাজমুল হাসান সেরনিয়াবাতকে সভাপতি পর্ষদের সদস্য, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক , সংস্কৃতি সেবক রোকনউদ্দীন পাঠানকে সাংগঠনিক সম্পাদক, কবি আনোয়ার কামালকে লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সাংবাদিক শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপনকে নির্বাহী সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক, কবি মীনা মাশরাফীকে নীলফামারী জেলার সমন্বয়ক, জনাব এ এইচ এম সালেহ বেলালকে গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা লেখক কবি আবদুল হালিম খান, বীরমুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, কবি মানিক চন্দ্র দে, কবি অর্ণব আশিক, কবি বাবুল আনোয়ার, দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক কামরুজ্জামান জিয়া, কবি শাহানা জেসমিন, কবি গবেষক আবু সাঈদ তুলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. বিশ্ব রায় (কলকাতা), বঙ্গীয় চট্রগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফ্যাশন ডিজাইনার আমিনা রহমান লিপি, শিল্পী শাহরিয়ার পিউ, কবি সোহরাব সুমন, কবি সরকার পল্লব, কবি রহিমা আক্তার মৌ, কবি লিলি হক, কবি আকমল হোসেন খোকন, শাহ ইস্কান্দার আলী স্বপন, হিরা পারভেজ, ড. দিপু সিদ্দিকী, শিক্ষক ও কবি রওশন ই ফেরদৌস, কবি পারভীন আক্তার, কবি শিল্পী মাহমুদা, পূর্বধলার মো. জাকির হোসেন তালুকদার, কবি আনারকলি, কবি অপরাজিতা অর্পিতা, ডা. নূরুল ইসলাম আকন্দ, আবৃত্তিশিল্পী যথাক্রমে রূপশ্রী চক্রবর্তী, রবিউল আলম রবি সরকার, জেবুন্নেছা মুনিয়া, চন্দনা সেনাগুপ্তা, কবি সংগঠক রাজিয়া রহমান, কবি শামীমা আক্তার, শিল্পী সাদিয়া শারমিন, কবি কনক চৌধুরী, কবি তাসলিমা জামালসহ প্রমুখ।

;

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব



মাহমুদ হাফিজ
কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

কলকাতায় রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাহিত্য উৎসব

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় শুরু হয়েছে রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের তিন দিনব্যাপী সাহিত্য উৎসব। শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্দুমতি সভাগৃহে বিকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এবারের উৎসবে বাংলাদেশের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিব্রাজক ও ভ্রমণগদ্য সম্পাদক মাহমুদ হাফিজ, স.ম. শামসুল আলম, নাহার আহমেদ, ড. নাঈমা খানম প্রমুখকে সম্মানিত করা হয়।

বিকালে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক নলিনী বেরা। বিশিষ্ট নাট্যকার চন্দন সেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য ও কবি সব্যসাচী দেব। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য। এতে সমাপণী বক্তৃতা করেন সংগঠনের সভাপতি কবি স্বপন ভট্টাচার্য। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।

আজ ও আগামীকাল ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি হলে বিকাল থেকে কবিতা ও গল্পপাঠ, আলোচনা, শ্রুতিনাটক, সঙ্গীত অনুষ্ঠিত হবে। রাইটার্স ওয়ার্ল্ডের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম, ত্রিপুরার কয়েশ’ কবি লেখক অংশগ্রহণ করছেন।

;

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

কিশোরগঞ্জে মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাকালে বন্ধ থাকার পর আবারো 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে 'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কার্যক্রমে ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ রচিত 'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের একশত কপি শুভেচ্ছামূলক প্রদান করা হবে। 

উল্লেখ্য, আগেও ইংরেজি নববর্ষে এবং ভাষার মাসে শত বিশিষ্টজনকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থ উপহার দিয়েছিল ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরিষ্ঠ চিকিৎসক ডা. এ. এ. মাজহারুল হক ও সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প-সাহিত্য-সমাজ উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, আনসার বাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতার নামে গঠিত 'শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশন'। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল স্থানীয় নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে জানানো হয়েছে যে, বরকতময়, নেয়ামতপূর্ণ মাহে রমজানের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে না। রোজা হলো মাহে রমজানে অবশ্য পালনীয় ফরজ আমল, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা নিজে দেবেন। মানবজীবনে রোজা একজন বান্দার আত্মীক ও শারীরিক কল্যাণের ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পন্থা। তদুপরি, রমজান মাসকে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা তাঁর অপার ক্ষমা, দয়া আর অপরিসীম করুণা দিয়ে বান্দাদেরকে উপহার দিয়েছেন। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত রোজা সঠিকভাবে পালন করলে রোজাদার নবজাতক শিশু মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মানব জীবনে ও সামাজিক ব্যবস্থায় রমজান মাস ও রোজার গুরুত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে ফাউন্ডেশন প্রদত্ত গ্রন্থে। এ গ্রন্থ রমজান মাসের তাৎপর্য এবং রোজার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পাঠকদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে ৩০টি সংক্ষিপ্ত অধ্যায়ের মাধ্যমে।

'কোরআন-হাদিসের আলোকে মানবজীবনে রমজান' বইয়ের লেখক মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ। তাঁর পিতা: ডা. এ.এ, মাজহারুল হক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। মাতা: নূরজাহান বেগম, সমাজসেবী। ড. মাহফুজ পারভেজের জন্ম: ৮ মার্চ ১৯৬৬, কিশোরগঞ্জ শহরে। পড়াশোনা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচ,ডি)। পেশা: অধ্যাপনা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। লেখালেখি, গবেষণা ও সাহিত্য সাধনায় ব্রতী। প্রকাশিত গ্রন্থ কুড়িটি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- গবেষণা-প্রবন্ধ: বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, দারাশিকোহ: মুঘল ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরো। দ্বিশত জন্মবর্ষে বিদ্যাসাগর। উপন্যাস: পার্টিশনস, নীল উড়াল। ভ্রমণ: রক্তাক্ত নৈসর্গিক নেপালে। গল্প: ইতিহাসবিদ, ন্যানো ভালোবাসা ও অন্যান্য গল্প। কবিতা: মানব বংশের অলংকার, আমার সামনে নেই মহুয়ার বন, গন্ধর্বের অভিশাপ। অধ্যাপনা ও গবেষণা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশের শীর্ষতম মাল্টিমিডিয়া পোর্টাল বার্তা২৪.কম'র অ্যাসোসিয়েট এডিটর এবং কিশোরগঞ্জকে জানার সুবর্ণ জানালা কিশোরগঞ্জ নিউজ'র উপদেষ্টা সম্পাদক রূপে সংযুক্ত রয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক উদ্যোগ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের  'বইয়ের সাথে মাহে রমজান বরণ' কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত হবে রমজান মাসের প্রথম সপ্তাহে। এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন কিশোরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক, ইতিহাসবিদ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু আ লতিফ। সমন্বয় কমিটিতে আরো রয়েছেন কিশোরগঞ্জ নিউজ'র প্রধান সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, শাহ মাহতাব আলী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইসকান্দার আলী স্বপন, সাংস্কৃতিজন লুৎফুন্নেছা চিনু ও চিকিৎসক নেতা ডা. গোলাম হোসেন।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের পক্ষে আরো জানানো হয় যে, ইতিপূর্বে ঘোষিত ৬ষ্ঠ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর সম্মাননা বক্তৃতা ২০২০ এবং ২০২১ করোনাকালের বিরূপ পরিস্থিতিতে স্থগিত থাকায় তা যৌথভাবে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. এএ মাজহারুল হক এবং সমাজসেবী নূরজাহান বেগম প্রতিষ্ঠিত কিশোরগঞ্জের শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংস্থা 'মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' কর্তৃক কিশোরগঞ্জের জীবিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জীবনব্যাপী বিশিষ্ট অবদানের স্বীকৃতি জানাতে ও ঐতিহাসিক মূল্যায়ন করতে ২০১৫ সাল থেকে এ সম্মাননা বক্তৃতা আয়োজন করা হচ্ছে, যা বক্তৃতা ও লিখিত আকারে প্রদান করেন মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. মাহফুজ পারভেজ।

মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন' গতানুগতিক সম্মাননার বদলে ব্যক্তির কর্ম ও কীর্তির বিশ্লেষণমূলক-মূল্যায়নভিত্তিক সম্মাননা বক্তৃতার মাধ্যমে তাঁর প্রকৃত স্বরূপ চিহ্নিত করে এবং এরই ভিত্তিতে জ্ঞাপন করা হয় যথাযথ সম্মান। সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি লিখিত আকারে বক্তৃতা-পুস্তিকায় চিত্রিত হন সম্মাননা প্রাপ্তগণ। মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন এই বুদ্ধিবৃত্তিক-একাডেমিক আবহে ধারাবাহিকভাবে সম্মাননা বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে, যা কিশোরগঞ্জে তো বটেই, বাংলাদেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী। শুরু থেকে সম্মাননা বক্তৃতা প্রদান করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবী ড. মাহফুজ পারভেজ, যিনি কিশোরগঞ্জে পাবলিক লেকচার সিরিজের মাধ্যমে গণবুদ্ধিবৃত্তিক পরিসর তৈরির পথিকৃৎ।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রথম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান শিক্ষাবিদ প্রাণেশ কুমার চৌধুরী, ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান দীপ্তিমান শিক্ষকদম্পতি: অধ্যক্ষ মুহ. নূরুল ইসলাম ও বেগম খালেদা ইসলাম, ২০১৭ সালে তৃতীয় মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘প্রজ্ঞার দ্যুতি ও আভিজাত্যের প্রতীক: প্রফেসর রফিকুর রহমান চৌধুরী’ এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা পান ‘ঋদ্ধ মননের প্রাগ্রসর ভূমিপুত্র: শাহ্ মাহতাব আলী’। ২০১৯ সালে পঞ্চম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেয়া হয় 'স্বাস্থ্যসেবা-শিক্ষায় পথিকৃৎ চিকিৎসক-দম্পতি' প্রফেসর ডা. আ ন ম নৌশাদ খান ও প্রফেসর ডা. সুফিয়া খাতুনকে। ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২০ প্রদান করা হয় নাসিরউদ্দিন ফারুকী, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন ও শাহ আজিজুল হককে। এ উপলক্ষে ‘কিশোরগঞ্জে আইন পেশার নান্দনিক বিন্যাস’ শীর্ষক সম্মাননা বক্তৃতা বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা-২০২১ প্রদান করা হয়েছে ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক, পাঠ ও পাঠাগার আন্দোলনের অগ্রণীজন মু.আ. লতিফ,  মুক্তিযোদ্ধা-শিক্ষাবিদ ঊষা দেবী এবং শতবর্ষ অতিক্রমকারী ১২০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আলীমুদ্দীন লাইব্রেরীকে, যারা কিশোরগঞ্জের সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসে স্বকীয় কৃতিত্বের প্রভায় উজ্জ্বল। জীবনব্যাপী কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের জন্য শৈল্পিক দ্যোতনায় নান্দনিক বর্ণালী সৃজন করেছেন এই তিন গুণান্বিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ জানান, ৬ষ্ঠ মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২০ এবং ৭ম মাজহারুন-নূর ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০২১ একসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা মার্চ মাসের শেষ দিকে আয়োজিত হবে।

;