দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এমন ভাবনাতে হয়তো বিরক্তি প্রকাশ করা যায়। নিজেদের সম্পদ বিষয়ে এমন ঔদাস্য অনুচিত বলে বিবেচনা করা যায়, যেখানে দেশ-বিদেশের এত-এত শিক্ষিত মানুষ তাদের এলাকার মত এমন একটা সাদামাঠা জায়গা নিয়ে এতটাই ভাবান্বিত। তবে সুবর্ণদ্বীপের লোকেরা ‘ফ্রিকনমিস্ট’-পত্রিকার প্রতিবেদনের কিছুদিনের মধ্যেই অনুভব করলো, দ্বীপটার মধ্যে কিছু একটা আছে নিশ্চয়ই নইলে এখানে এসে হেলিকপ্টার দাঁড়ায় কেন। কী যে শব্দ সেই হেলিকপ্টারের, আর কী তার অস্তিত্বের ঘোষণা! শোনা যায়, হেলিকপ্টারে করে রাজধানির এবং বিদেশের দামি-দামি লোকেরা আসে। তারপর হেলিকপ্টার চলে গেলে আসে আরেক উত্তেজনা। এতদিন বিদেশি বলতে দ্বীপে ছিল কেবল ডাক্তার লুইগি। এখন এলো আরেকজন, সামনে আরো আসবার সম্ভাবনা প্রবল। যিনি এসেছেন তাঁর নাম ভেলাম ভ্যান সান্দেল- পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ বাঁধ-বিশেষজ্ঞ। নিরাময়ের কাছাকাছি একটা দোতলা ভবন ভেলামের দপ্তর। আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, তেল-গ্যাসের সঙ্গে বাঁধের আবার কী সম্পর্ক! অনেকেরই সেটা মনে হয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সরকারকে তারা এই মর্মে বোঝাতে সক্ষম হলো, দ্বীপই যদি না থাকে, সেটির অস্তিত্ব যদি হারিয়ে যায় তাহলে তেল-গ্যাসের মজুদ থেকেই বা কী হবে! যে-দ্বীপ সমুদ্রতল থেকে মাথা তোলে সে-দ্বীপ আবার যদি মাথা ডুবিয়ে নেয় তাহলে তেল-গ্যাস সম্পর্কিত সমস্ত উদ্যোগ-উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত প্রহসনে রূপ নেবে। কাজেই আন্তর্জাতিক মহলের একটা গুরুত্বপূর্ণ মনোযোগের বিষয় সুবর্ণদ্বীপ-সুরক্ষা। ভেলাম ভ্যান সান্দেল এবং তার দেশীয় সহযোগীরা প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে গবেষণা চালিয়ে দেখবেন দ্বীপকে ঘিরে কীভাবে বাঁধ নির্মাণ করলে তা দ্বীপকে সমস্ত রকমের প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা থেকে রক্ষা করবে। সেই সুরক্ষার কাজটি করা হলে পরে যত খুশি উত্তোলন করতে থাকো তেল আর গ্যাস।

এখানে লক্ষ্য করবার মত আরেকটি পরিবর্তন ঘটে যেটি দ্বীপবাসীদের স্বভাব ও মানসিকতা প্রসঙ্গে সাম্প্রতিকতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হলো অনেকের নিকটে। অবশ্য এর সঙ্গে সরকারি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির কথাও কেউ-কেউ বলে থাকে। এমনিতে দ্বীপের চারদিকই খোলা। যে-কোন দিক থেকেই ভাসতে-ভাসতে এসে দ্বীপে ঢুকে পড়া যেতো। ধরো নলছিটি, ঝালকাঠি, স্বরূপকাঠি, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালি, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মনপুরা, রামগতি, চর আলেকজান্ডার এসব জায়গা থেকেই এসে সুবর্ণদ্বীপে বসতি গাড়ে লোকেরা। তারাই এখানকার আদি বাসিন্দা। লোকেরা আসতো থাকতো দ্বীপের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করবার চেষ্টা করতো। তাদের অনেকেই আবার কিছুদিন থেকে চলেও যেতো। কিন্তু তেল-গ্যাসের সংবাদটার ফলাও-প্রচারণার পর-পর দ্বীপাভিমুখি আগমন অকস্মাৎ বাড়তে থাকে। এটা হতে পারে সমাপতন বা আকস্মিকতা। দ্বীপে প্রবেশের পরিচিত প্রায় সবগুলো ঘাটে বিশেষ চৌকি বসানো হয়। এর বাইরেও থাকে নানান চোরাগোপ্তা প্রবেশ-পথ। কোন-কোন পথ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আগে সেসব পথে তত ব্যস্ততা দেখা যায় নি কিন্তু সম্প্রতি সেখানে লক্ষণীয় হয়ে ওঠে তৎপরতা। রাতের অন্ধকারে হয়তো দ্রুতগতি স্পিডবোট নানা চরিত্রের ঢেউ ডিঙ্গিয়ে যাত্রী এনে উগরে দিয়ে গেল দ্বীপে। গায়ে জল মেখে কাদা মেখে কি আধাআধি স্নাত হয়েও লোকেরা দ্বীপে পা ফেলে। এরকমই একটি অদ্ভুত পাকড়াওয়ের ঘটনা প্রশাসনকে বিশেষভাবে চিন্তায় ফেলে দেয়।

আরও পড়ুন দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান (পর্ব-১)

মধ্যরাতের পর-পর নতুন-বাজারের কাছাকাছি একটি প্রবেশ-পথে এসে থামে একটা সাম্পান। নিয়মমত এগিয়ে যায় চৌকির লোক। সচরাচর মহিলা-যাত্রী হলে চৌকিদাররা তত ঘাটায় না। এক-আধটু প্রশ্ন করে ছেড়ে দেয়। যেমন, কোন্ জায়গা থেকে আসা হলো, কী জন্যে আসা, এসে কী লাভ বরং রাজধানিতে যেতে পারো না- এমন সব প্রশ্ন। আরও একটি গুরুতর ঝুঁকির দিক বিবেচনায় রেখেই এমন চৌকিদারি ব্যবস্থা। অনেক সময় বিভিন্ন জেলা থেকে চোর-ডাকাত-খুনি-আসামিরা গা-ঢাকা দেবার জন্যে এসে ঢোকে সুবর্ণদ্বীপে। আপনি হয়তো পশ্চিমপাড়ার একটি ছাপড়া-মত চায়ের দোকানে চা খেতে বসলেন আর আপনার সামনে মার্ক্স গুঁড়ো-দুধে চা বানিয়ে নিয়ে এলো একটা লোক যে চারদিন আগেই একটা শিশুকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। কেবল তা-ই নয়, ধর্ষণের পরে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে শিশুটিকে হত্যাও করেছে। সে আপনার সামনে চায়ের কাপটা রাখলে আপনি তাকে দেখে ভাবলেন আহা বেচারা চিরদুখি লোকটা! কিন্তু আপনার তো জানার কথা নয়, লোকটা একটা ভয়ংকর খুনি যে খুন করেছে এবং যে সুযোগ পেলে আবারও করতে পারে খুন। এত ভয়ানক কা- করেও সে কী সফলভাবেই না নিজেকে আপনার সামনে গোবেচারা প্রমাণ করতে সক্ষম হলো। আসতে পারে সুবর্ণদ্বীপে জেলপালানো কয়েদি। কিস্সু না, এসেই সে সারা গালে এমন দাড়ি গজিয়ে তুলবে, দেখে আপনার রীতিমত শ্রদ্ধা জেগে উঠবে অন্তরে। আবার, শ্মশ্রƒময় একটা লোক এসে সারা গালের দাড়ি ফেলে দিয়ে এমন মসৃণ গাল করে তুলবে দেখে আপনার মনে জেগে উঠবে মমত্বের বোধ। এইসব ঝুঁকির কারণে সুবর্ণদ্বীপের ওপর প্রশাসনকে রাখতে হয় বাড়তি নজর।

মধ্যরাতের পরে একটি সাম্পান এসে ভিড়লে জনাবিশেক বোরখাবৃতা যাত্রী নেমে আসে সাম্পান থেকে। একে রাত তার ওপর মহিলা যাত্রী এই দুই ঝুঁকি চৌকিদারদের বেশ বিপাকে ঠেলে দেয়। নৌকা থেকে নেমেই তাদের স্ব-স্ব শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণ রেখে লাফ দিতে হয় তীরে। তারা কাদাতেই পড়ে, ফের উঠে দাঁড়ায়, কেউ আবার পড়ে এবং আবারও উঠে দাঁড়ায়। পড়ে প্রায় সকলেই, বস্তুত পড়াটাই তাদের পরবর্তী না-পড়ার উপক্রমণিকা। চৌকিদাররা যথাসম্ভব সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে মধ্যরাত্রির অনারামকে সহনীয় করে তুলতে চায় দ্বীপে নবাগত যাত্রীদের জন্যে। লাফের চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে অকস্মাৎ এক অবগুণ্ঠিতা, সেটাই তার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ছিল, কাদায় চিৎ হয়ে পড়লে খুবই বেকায়দায় তার বোরখা এবং ভেতরের চেক-নকশাঅলা কাপড় দু’টোই চরাৎ শব্দে ফেঁড়ে গেলে চৌকিদার, যাত্রীসকল সবাই প্রমাদ গুণতে থাকে। বোরখার সম্মুখভাগে দুই পায়ের মাঝখানে বেশ খানিকটা অংশ ছিঁড়ে যায় এবং সেই বরাবর তার অন্তর্বস্ত্রও ছিন্ন হয়ে গেলে আশেপাশের সকলেই বোরখাবৃত যাত্রীর লুঙ্গির কাপড়টি দেখতে পায়। মুহূর্তের জন্যে তারা একটু অপ্রস্তুতই হয়ে যায় এবং ভাবে, তাহলে মেয়েমানুষেরাও ছেলেদের মত লুঙ্গির কাপড়ের শাড়ি পরে। কিন্তু ঘটনা এমন দ্রুত নাটকীয়তার কবলে পড়ে পুরো ব্যাপারটাকে ঘোরালো আর জটিল করে তুলবে তা সেই মধ্যরাতের কোন দ্বীপবাসীরই ভাবনায় ছিল না। বোরখাবৃত যাত্রীর সহায়তায় আগুয়ান একজন চৌকিদার তার হাতের লাঠিটি যথাসম্ভব সামলে নিয়ে পতিত লোকটিকে মাটি থেকে তুলে ধরবার বাসনায় যেইমাত্র তার নিকটে পৌঁছায়, অমনি বাইরের বোরখা এবং ভেতরের অন্তর্বস্ত্র সবটা ছিঁড়ে যে-উদ্ঘাটনের বা উন্মোচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেই অবকাশ-পথেই বোরখা এবং বস্ত্রের সম্মিলিত আড়াল ভেদ করে বেরিয়ে পড়ে একটি শিশ্ন, আর এ তো বলাই অতিকথন, শিশ্ন বোরখাবৃতাদের হওয়ার কথা নয়। কী ভয়ংকর কাণ্ড চৌকিদারেরা ভাবে, বোরখার আড়াল থেকে শিশ্ন মেলে কী করে! তাহলে নৌকাগত যাত্রীরা সকলেই নারীর আড়ালে পুরুষ! মনে হওয়ামাত্রই চৌকিদারেরা চোর-চোর ডাকাত-ডাকাত চিৎকারে চরাচর কাঁপিয়ে দিতে শুরু করলে মার-মার-ধর এমন শোরগোল ধেয়ে আসতে থাকে চতুর্দিক থেকে। বোরখাবৃতারা হতচকিত হয়ে পড়ে। দ্বীপে তারা নবাগত বিধায় তাদের পক্ষে শীঘ্র অন্ধকারভেদী অভিমুখের সন্ধান কষ্টকর হয়। ফলে তারা যতটা সম্ভব মহিলা-প্রতিভায় দাঁড়িয়েই থাকে। কিন্তু চৌকিদারেরা ততক্ষণে জনাবিশেক যাত্রীর প্রায় সবাইকে ঘেরাও করেছে। নিকটের কয়েকজন পুলিশও ছুটে এসে তাদের হাতকে শক্তিশালী করে। উপস্থিত তদন্তের ফলে দেখা গেল, বিশটি বোরখার আড়ালে বিশজন পুরুষ। তারা নারীর ছদ্মবেশে দ্বীপে অনুপ্রবেশ করেছে। শেষ পর্যন্ত তাদের গন্তব্য হয় জেলখানা। দ্বীপটি ছোট হলেও সেটির জেলখানা খুব ছোট নয়।

আরও পড়ুন➥ দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-২)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান (পর্ব-৩)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-৪)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-৫)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-৬)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-৭)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-৮)

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;