দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান



মহীবুল আজিজ
গ্রাফিক্স: বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক্স: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লুইগি ডাক্তার বলেই যখন সুবর্ণদ্বীপে চিকিৎসা না পেয়ে একজন রোগি মারা পড়ে, তার হতাশা সীমা ছাড়িয়ে যায়। তা-ও আবার সন্তানসম্ভবা মেয়ে। দ্বীপে এমনিতে কোন ডাক্তার কখনও ছিল না কিন্তু রোগশোকের প্রতিষেধে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। লোকেরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের মত করে কাজ চালাবার মত করে এক ধরনের চিকিৎসাবিদ্যার প্রয়োগ শিখে নিয়েছিল। অথবা কয়েকজন লোক এই পেশার জায়গাটা পুরোপুরি ফাঁকা দেখে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে চিকিৎসার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছিল। কেউ তাদের কাছে জানতে চায় নি, আপনি কোত্থেকে পাশ করেছেন বা আপনার ডিগ্রিটা কোন্ পর্যায়ের? তারা এই কাজ আরম্ভ করবার আগে পান দোকানদার আবদুল গনি হাওলাদারের কাছ থেকে ঔষধ কিনতো। গনির দোকানে বিক্রি হতো পান, সিগ্রেট, কলা, বিস্কিট, চা এবং চার ধরনের প্রয়োজনীয় ঔষধ- প্যারাসিটামল, হিস্টাচিন, এ্যান্টাসিড এবং মেট্রোনিডাজল। গনি নিজে বলে সে অষ্টম শ্রেণি পাশ কিন্তু সেটাও সন্দেহাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এক রোগিকে পেটের গ্যাসের সমস্যায় সে দিয়ে দেয় হিস্টাচিন। ফলে, সে খালি ঘুমায় কিন্তু ঘুমায় পেটের ব্যাথা নিয়ে। শেষে তার প্রায় মরনদশা। বলে, গনি আমারে কী অষুধ দিল চোহে খালি ঘুম আহে। দু’টো ট্যাবলেটের প্রায় একই রকম প্যাকেট হওয়ায় ভুল গনিরই হয়। কিছুকাল পরে দ্বীপে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা ডাক্তারের আবির্ভাব ঘটে। পুরুষ ডাক্তার পেটের ব্যাথায় এক আশ্চর্য নিরাময়-পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাতে শুরু করলে তা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য জেগে ওঠে। ব্যাথার জায়গাটাতে পায়ের গোড়ালি দিয়ে অনেকটা সময় ধরে চেপে ধরে রাখলে ব্যাথা বিদায়। লোকদের অনেকেই বলল, ব্যাথা যাচ্ছে, আবার অনেকেই বলে, ব্যাথা বাড়ছে। এই কমা আর বাড়া নিয়েই তার দিনকাল একরকম কেটে যেতে থাকে। মহিলা ডাক্তার মেয়েদের চিকিৎসায় কী পদ্ধতির আশ্রয় নেয় সেটা জানা দুঃসাধ্য যেহেতু অন্তঃপুরে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণাধীন। তবু যে-জনশ্রুতি অন্তঃপুর থেকে কালক্রমে এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে জানা যায়, একধরনের মন্ত্রপূত পানিই মহিলা চিকিৎসকের সর্বরোগহর অবলম্বন। সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রয়োজ্য- রোগ ভাল হয় এবং হয় না। এই হওয়া না-হওয়া নিয়ে তারও দিন একরকমভাবে কেটে যায়। 

কিন্তু কারও পক্ষেই আবুল খায়েরের স্ত্রী ফুলবানুকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। গোলাম কবিরের কাছে লক্ষণ জেনে লুইগির ধারণা হয়, ফুলবানু সম্ভবত এ্যাকলেমসিয়া বা প্রি-এ্যাকলেমসিয়ায় মারা গেছে। লুইগির হতাশা এ-কারণেই, ডাক দিলে শোনা যেত এমন দূরত্বে থেকেও সে বাঁচাতে পারে নি একজন মানুষকে। অথচ এটি কোন দুরূহ বা দুশ্চিকিৎস্য রোগ মোটেও ছিল না। সে বাঁচাতে পারে নি মানে তার পক্ষে প্রচেষ্টা নেওয়াই সম্ভব হয় না। মরে গেলেও তারা কখনও একজন পুরুষ ডাক্তারের কাছে মেয়েদের নিয়ে যাবে না। তার সংকট দেখে তার এক প্রতিবেশী খবর দেয় গোলাম কবিরকে। কবির বলল, নিরাময়ে চলো, বিদেশি ডাক্তার দেইখা দিবো নে। একে পুরুষ, তার ওপর বিদেশি, প্রাণ গেলেও তারা আসবে না নিরাময়-কেন্দ্রে। প্রাণই গেল ফুলবানুর। দ্বীপে একজন মহিলা ডাক্তারের অভাব প্রবলভাবে অনুভব করে লুইগি। বিস্তারিত জানিয়ে সে তার সদর দফতরে বার্তা পাঠায়। প্রত্যুত্তরে তারা জানায়, এত-এত মানুষ একটা দেশে, হয়তো পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ একটা দেশ অথচ একজন মহিলা ডাক্তার পাওয়া কেন যায় না! একজন স্বদেশি মহিলা ডাক্তারকে সেখানে নিয়োগ দেওয়াটাই সবচেয়ে শ্রেয়। লুইগি তখন চেষ্টা-তদবির চালাতে থাকে একজন মহিলা ডাক্তারের খোঁজে। পরিচিত যারা শহরাঞ্চলে থাকে তাদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়েও একজন মহিলা ডাক্তার মেলে না। নিমরাজি একজনকে পাওয়া যায় যিনি তাঁর জেলা-সদর ছেড়ে হলেও ছোট্ট থানাটিতে আসতে আগ্রহী কিন্তু তাঁর ব্যাংকার স্বামীর উপযুক্ত চাকরি দ্বীপটিতে না-থাকায় তিনি নিরুপায়। যদি দ্বীপে সেই ব্যাংকের একটি শাখা খোলা যায় এবং সেখানে তাঁর স্বামীকে সেটির ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় তাহলে তিনি দেশসেবার ব্রতে আত্মনিয়োগের চিন্তা করতে সম্মত আছেন। সাহসিকা একজনকে পাওয়া যায়- কিন্তু সেক্ষেত্রেও সমস্যা থাকে। মেয়েটি বছরখানেক আগেই তার ডিগ্রিটি অর্জন করেছে। এখন তার বিবাহের প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তাকে প্রায়ই শহরে ছুটতে হবে, কেননা, সম্ভাব্য পাত্রপক্ষ কখনই এরকম দ্বীপে আসতে চাইবে না। তাছাড়া সে জানে, দ্বীপে অবতরণকালে লোকেদের কাদামেখে বা কাদা-লেপ্টালেপ্টি হয়ে তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। হতাশায় মনটা ছেয়ে গেলেও হতোদ্যম হয় না লুইগি। গোলাম কবিরের মাধ্যমে সে খোঁজ নিয়ে জেনেছে, দ্বীপের দু’টি ছেলে এবং তিনটি মেয়ে প্রতিবেশী জেলা সদরের কলেজে প্রথম ও শেষ বর্ষে পড়ছে। তাদের মধ্যে দু’জন বিজ্ঞানের ছাত্র। ভাল ফল করে তারা যদি ডাক্তার হতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাদের হিতৈষণা দ্বীপটির জন্যে নিয়োগ করবে। আবার, এমনও ভয় তার জাগে, দ্বীপের অনেকের স্বপ্নই নাকি লেখাপড়া শিখে চিরদিনের জন্যে দ্বীপ ত্যাগ করে চলে যাওয়া। তাদের ধারণা, দ্বীপটি আকস্মিকভাবে ডুবে গেলে তাদের লেখাপড়া-জ্ঞানগম্যি কিছুই আর কাজে লাগবে না।

আরও পড়ুন: দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান (পর্ব-১)

লোকেরা যে সবসময় হতোদ্যম এবং অদৃষ্টের হাতে সমর্পিত সেটাও সত্যি নয়। সন্তানসম্ভবা মেয়েটির মৃত্যু হৃদয়বিদারক হলেও সেটি এক ধরনের দৃষ্টি-উন্মোচক দৃষ্টান্তরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়। লোকেরা একটু-একটু করে প্রশ্নশীল হতে থাকে। তারা সর্বরোগহর মন্ত্রপূত পানিকে বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে নারাজ। আরও এক গর্ভবতী মেয়ের ঝুঁকি দেখা দিলে তার পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে রওনা দেয় প্রতিবেশী জেলা-শহরের দিকে। যদিও সেটি মফস্বল শহর তবু সেখানে ক্লিনিক এবং ডাক্তার মেলে। কিন্তু সুবর্ণদ্বীপ থেকে চাইলেই সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। আর সেটি যদি হয় সূর্য ডুবি-ডুবি করে এমন সময়ে। প্রথমে তারা বোরখাবৃত মেয়েটিকে ওঠায় একটা ভ্যানগাড়িতে। সেখান থেকে যায় ঘাটের দিকে যেখানে ছিল একটা স্পিডবোট। তখন শরৎকালের আকাশে ছিল হাল্কা মেঘের আনাগোনা। হয়তো এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল, তারপর আকাশ ফর্সা। নদী-সাগরের সংযোগস্থল যে-জায়গাটাকে তারা বলে চ্যানেল সেটাও প্রশান্ত। ভ্যান থেকে তাকে ওঠানো হলো স্পিডবোটে। একটুখানি দুলুনি দিয়ে চলতে আরম্ভ হলো বোট। ঝড়ো হাওয়া থাকলে আধাঘণ্টার পথের জন্যে লেগে যায় প্রায় এক ঘণ্টা। হঠাৎই কোত্থেকে এক উটকো মেঘ এসে অশনির মত দাঁড়ায় তাদের মাথার ওপরে। খানিকটা দমকা হাওয়ার মত উঠে যাত্রীসহ গোটা স্পিডবোটকে দেয় কাঁপিয়ে। ভয়ে গর্ভবতী মেয়েটির সমগ্র সত্তা কেঁপে ওঠে। কম্পমান মেয়েটি তার অভ্যন্তরে কেমন যেন এক অব্যক্ত বেদনা বোধ করতে থাকে। সেটি যে প্রসববেদনাই সেটা সঙ্গে-সঙ্গে তার বোধিতে আসে না যেহেতু সেটাই ছিল তার প্রথম সন্তানের অভিজ্ঞতা। বোটের মধ্যেই তার সন্তানের জন্ম হয়ে যায়। সঙ্গে থাকা মাঝবয়েসি এক নারীর কল্যাণে মা এবং সন্তান দু’জনেরই প্রাণরক্ষা হয়। মেয়েটির নাম রাখা হয় বাতাসি। মেয়েটির কথা উঠলেই লোকেদের ঝড়ো হাওয়ার কথা মনে পড়ে আবার ঝড়ো হাওয়া উঠলে তাদের মনে পড়ে বাতাসির কথা।

এইটুকু সচেতনতাও বড় কম নয়- বাতাসির জন্মবৃত্তান্ত শুনে আশান্বিত হয় লুইগি পালোমার। ভাল কোন বিদ্যায়তন নেই যেখানে তারা লেখাপড়া করে সচেতনতা অর্জন করবে। একটি বিদ্যায়তন যদি খোলা যায় দ্বীপে তাহলে লোকেরা নিশ্চয়ই নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে  দিন-দিন আরও জেগে উঠবে। তারা সর্বরোগহর ঔষধের ওপর আস্থা হারিয়ে দ্বীপ ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন ঢেউয়ের তোড়েও দিকভ্রষ্ট হয় না তখন তাদের ভবিতব্য বিষয়ে নিশ্চয়ই আশাবাদী হওয়া যায়। কিন্তু চাইলেই বিদ্যায়তন বা স্কুল খোলা যায় না। দ্বীপের অধিকাংশ লোক দরিদ্র। তাদের অধিকাংশের ধারণা, ক্ষেতেখামারে কাজ না করে বই নিয়ে বসে থাকাটা অকর্মণ্যতার লক্ষণ। বই পড়লে জমিতে ফসল হয় না, যদি তার পরিবর্তে বই-পড়ার সময়টাকে খাটাখাটুনিতে প্রয়োগ করা যায় তাহলে অন্তত জমিতে কয়েক সের বেশি হলেও শস্য মেলা সম্ভব। আর, যেটুকু পঠনপাঠন দ্বীপের ছেলেমেয়েরা সকালবেলা তাদের ধর্মীয় শিক্ষকদের নিকট থেকে লাভ করে তার বাস্তব কোন প্রয়োগ লুইগি দ্বীপের কোথাও দেখতে পায় না। তাই সে তার সহকারী গোলাম কবিরকে একদিন জিজ্ঞ্যেস করে, এখানকার লোকদের বাপ-দাদারা কী লেখাপড়া করে নি কখনও? যদি সেটা তারা করে থাকে তাহলে নিজেদের সন্তানকে তারা লেখাপড়া কেন করাচ্ছে না? কবির তখন লুইগিকে বোঝায়, সুবর্ণদ্বীপের আদি বসতি-স্থাপনকারীরা সবাই এসেছিল কাস্তে-কোদাল-খুরপি-টুকরি নিয়ে। তাদের তল্পি-তল্পা অবলম্বন-সম্বল কোথাও কোন কিছুর মধ্যেই ছিল না একটা বইয়ের পাতাও। কাজেই তাদের কাছ থেকে উত্তরপ্রজন্মমুখি শিক্ষা-সচেতনতা আশা করা অনুচিত। তবু, একবার ডেনমার্কের একটি সাহায্য-সংস্থা সচিত্র বর্ণমালার বই সাহায্য হিসেবে দিয়ে যায় দ্বীপের ছেলেমেয়েদের জন্যে। আরেকবার কানাডার একটি সাহায্য-সংস্থা স্বাস্থ্যবিষয়ক ক্ষুদ্র পুস্তিকা বিতরণ করে যায় দ্বীপে। বর্ণপরিচয় না থাকলেও, লেখাপড়া না জানলেও ছবি দেখে অনেকেই তখন স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে। যেমন, একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি শিশু টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজে। আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি শিশু সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরের ছবিতে খেতে বসেছে বাবা-মা’র সঙ্গে। অশিক্ষিতদের মধ্যেও যেসব পিতামাতা খানিকটা সচেতন তারা ডেনমার্কের সাহায্য-সংস্থার দেওয়া বইগুলিকে বর্ণমালা শেখার কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে কানাডার সাহায্য-সংস্থার সচিত্র পুস্তকটিকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে দু’টোর সমন্বয় দিয়ে একটা ঘরোয়া শিক্ষাব্যবস্থা নিজেদের অজান্তেই চালু করে দেয়। তাতে খানিকটা বিপরীতে হিত গোছের প্রতিক্রিয়াও হয়। বর্ণমালা এবং সচিত্র বইয়ের যৌথ অবদানে সমৃদ্ধ ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা প্রবল তৃষ্ণার ভাব জেগে ওঠে। সেই তৃষ্ণার ফলে তারা বলতে থাকে, আমরা আরও বই চাই, আমরা আরও বই চাই। যতই তাদের পিতামাতা তাদের ধমকায় ‘চুপ র্ক’ ‘চুপ র্ক’ বলে ততই তারা চেঁচায়, ‘বই চাই বই চাই’ বলে। এইসব জেনেশুনে লুইগি ভাবে, সুবর্ণদ্বীপে একদিন লোকেরা ঘরে-ঘরে পাঠ করতে থাকবে- বই।

আরও পড়ুন: দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান(পর্ব-২)

দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান

চলবে...

৫ম পূর্ব পড়ুন আগামী শুক্রবার

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;