দ্বীপ অথবা একটি আন্তমহাদেশীয় উপাখ্যান



মহীবুল আজিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লোকটাকে সবাই ঘিরে ধরেছিল আর কেউ-কেউ বলছিল, বিদেশি-বিদেশি! কিন্তু কোন বিদেশের সেটা তার চেহারা দেখে আঁচ করা মুশকিল। হতে পারে ইউরোপীয় কিংবা মার্কিন, এমনকি ইরানি বা কাশ্মিরি ব্রাক্ষণও হওয়া সম্ভব। তখন কিছুকাল আগেকার কথা সুবর্ণদ্বীপের লোকেদের মনে পড়ে। দূর থেকে একটা লোককে দেখে তারা চিৎকার করেছিল বিদেশি-বিদেশি বলে। আবার অনেকেই চেঁচাতে থাকে ‘খিরিস্টান খিরিস্টান’ বলে। তারপর যখন দুপুর সকলের মাথার ওপরে হেলে পড়তে থাকে, লোকটা পকেট থেকে একটা গোলাকার টুপি বের করে মাথায় লাগিয়ে পশ্চিমমুখী নামাজ পড়তে শুরু করলে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে। শেষে জানা গেল লোকটা এসেছিল চেচনিয়া নামের একটা দেশ থেকে। চেচনিয়া বললেই আগে লোকে চিনতো না। কিন্তু দ্বীপের অনেকেই শিক্ষিত আর বিশ্ব এখন যখন সকলের হাতের মুঠোয় তারা জানে চেচনিয় নামের লোকেরা এককালের বিশাল এক সাম্রজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছে ভয়ংকরভাবে। তাই তারা অপেক্ষা করে। তবে এই লোকটা ঠিক চেচনিয়টার মত নয়। সে বাংলা ভাষা জানে। অন্তত কাজ চালাবার মত কিছু শব্দ ও বাক্য তার জানা থাকায় সে তাকে ঘিরে ধরা লোকেদের স্মিত বলে, স্লামালেকুম, আপনাদের সকলের ওপর শান্তি বরষিত হউক। শ্মশ্রুমণ্ডিত মাঝবয়েসি বিদেশি লোকের মুখে নিজেদের ভাষা শুনে সুবর্ণদ্বীপের লোকেদের মনে হতে থাকে, লোকটা তাদের আত্মীয় না হলেও নিকটজন। যদি তা না-ই হবে সে দূরত্বকে ভাষা দিয়ে এতটা নিকটে আসবার কষ্টটুকু স্বীকার করতো না।

সুবর্ণদ্বীপে নদী বলতে ঐ একটাই কিন্তু তার নামোল্লেখ করা সহজ নয়। নদীর নাম বলাই যায়। ধরা যাক ধলেশ্বরী, ডাকাতিয়া, মেঘনা, পদ্মা, কর্ণফুলি, সোমেশ্বরী, কুশিয়ারা, গোমতী, গড়াই, খোয়াই, মুহুরি এরকম নদীর নাম। সেক্ষেত্রে নামোল্লেখের সঙ্গে-সঙ্গেই একটা জায়গা ভেসে উঠবে- একটা আয়তন তার মধ্যকার লোকজন তার প্রাচীন ও বর্তমান এইসব সঙ্গ-অনুষঙ্গ। ফলে, আমরা যে-শুরু করতে চাই সেই শুরুটা আর নিরেট শুরুতে স্থিত থাকবে না। নদী তো নদীই, চলমান। তা-ও সেই চলতে থাকা প্রবাহ তার দুই তীরে ভাঙনের ইতিহাস সত্ত্বেও পলি বা মাটির মত স্তূপ করে রেখে যায় কথা যে-কথা আবার হয়ে যায় কাহিনি। তাই নদীর নাম হোক রেণুকা। হ্যাঁ, এই নামের আড়ালে হয়তো পরিচিত নদীকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। হয়তো বাস্তবে তা-ই ঘটে। কিন্তু তাতে করে এটা অন্তত নিশ্চিত হওয়া গেল যে এই নদীর সূত্রে কোন বিশেষ অঞ্চল বা জায়গা ও তার মধ্যে নিহিত মানুষজন সম্পর্কে কারও পক্ষে কোন পূর্বধারণার আঁচ সম্ভব নয়। কিন্তু আড়াল কী আসলে করা যায়। হয়তো সংকীর্ণতাকেই আড়াল করা গেল নদীর নাম পাল্টে দিয়ে। এরই ফলে বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতটাই বরং প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। কেননা, দ্বীপ এবং নদী বলতেই অরণ্য ও পাহাড় পটভূমি থেকে দূরে সরে গেল। লোকেরা ঠিকই দ্বীপ শব্দটিকে ধরে-ধরে একসময় বলবে, আপনি নদীর নাম বানিয়ে দিলেই কী আমাদের চোখে ধূলো দিতে পারেন, রেণুকা নদীর প্রকৃত নাম হলো এই!

এক অর্থে সব নদীর নামই তো দেওয়া নাম। নদী যদি তার নিজের নামকরণ নিজে করতে পারতো তবে কর্ণফুলি হয়তো কর্ণফুলি না হয়ে হতো নটরাজ কিংবা বুড়িগঙ্গা হতো রূপগঙ্গা। যে-নদীর নাম আমরা রেণুকা দিয়েছি, হতে পারে তার তীরের দীর্ঘ রেখাপথ ধরে গাছে-গাছে ফুটে থাকা ফুলের রেণু উড়তে থাকা হাওয়ায় ভাসমান সুবাস আর এই নদীর জলীয় গন্ধ মিলেমিশে এক আশ্চর্য উদ্ভাসন ঘটায়। সুবর্ণদ্বীপের লোকেরা যখন লোকটাকে ঘিরে ধরে তখন তার চেহারার ফর্সা রংটা কেমন পোড়া-পোড়া আর লালচে দেখায়। সেই লাল ঠিক সুস্থ লাল নয়, মনে হয় যেন অনির্ধারিত রক্ত এসে লোকটাকে লাল করে দিযেছে। অনবরত হাঁচি আর কাশি দিতে-দিতে লোকটার প্রাণান্তকর অবস্থা। দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। মানুষ হাঁচি দেয়, কাশি দেয়, সুবর্ণদ্বীপের লোকেরাও দেয় হাঁচি-কাশি। কিন্তু এমন অনিঃশেষ হাঁচি-কাশির দৃশ্যের সঙ্গে তারা পরিচিত নয়। বিদেশি লোকটা তখন তার লালচে চেহারার লালচে চোখে নিকটের নদীর দিকে তাকায়। নদীর তীর ধরে একটানা গাছগুলিতে ফুটে রয়েছে ফুল। সেই ফুলেরাই আসলে তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতে পেরে ভেতরে ভেতরে সে আরও অসহায় বোধ করতে থাকে। এত-এত ফুল গাছেদের হত্যা করা মানে উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। দেরিতে বুঝলেও হে-ফিভারের কবলে পড়া লোকটা তার সঙ্গে থাকা চামড়ার ব্যাগ থেকে একটা প্লাস্টিকের বাক্সে রাখা ট্যাবলেট গিলে খেয়ে নেয় ফ্লাক্স থেকে পানি ঢেলে নিয়ে। অল্পক্ষণের মধ্যে তার চেহারার অতিরিক্ত রক্তাক্ত ভাবটা কেটে গিয়ে মূল শ্বেত বর্ণ প্রকাশ্যে ফিরে এলে তাকে ঘিরে থাকা লোকেদের মধ্যেও একটা স্বস্তির ভাব ফিরে আসে। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা লোকের আকস্মিক হাঁচি-কাশি তাদেরকে লোকটার প্রতি কেন সহানুভূতিশীল করে তোলে সে-প্রশ্ন করে না কেউ। এদেরই কেউ হয়তো একটু আগে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করতে-করতে মেয়েমানুষটির মৃত্যু কামনা করে এসেছে। কিন্তু এখন তার মনে কত সহজেই জেগে উঠেছে সহমর্মিতার বোধ।

লোকটা বলে, তার নাম লুইগি, লুইগি পালোমার। যারা নামের চরিত্র সম্পর্কে খানিকটা ওয়াকিবহাল তারা হয়তো বলতো, লোকটা ইতালিয়, কিন্তু সে এসেছে মার্কিন দেশ থেকে যদিও ফ্রান্সের একটি ঔষধ কোম্পানিতে সে কাটিয়েছিল প্রায় এক দশককাল। সে যে ঠিক কোন্ দেশের নাগরিক সেটা তার পাসপোর্ট না দেখলে বা সে নিজে থেকে না বললে বোঝা দুরূহ। সেটা দেখেছে দেশের ইমিগ্রেশন অফিসার। সে এবং তাদের কেউ-কেউ জানে, লুইগি পালোমার আসলে কোন্ দেশের নাগরিক। লোকেরা তাকে ঘিরে ধরলেও তার গন্তব্য সম্পর্কে তারা সকলেই মোটামুটি নিশ্চিত হওয়াতে তাদের উৎসাহ-ঔৎসুক্য সীমা ছাড়িয়ে যায় না। সবাই লুইগিকে সাদরে প্রহণ করে। প্রথম দিকে যখন এরকম বিদেশিরা আসতো তখন তাদের ঘিরে-ধরা লোকেরা আচমকা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলতো, এট্টা ডলার দ্যান্ না বাবা! আগতর পকেটে আসলেই ডলার আছে কিনা, নাকি সব ডলারকে সে টাকায় পরিণত করে ফেলেছে সে-বিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই তারা হামলে পড়ে ডলার কামনা করতো। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। আগে ওদের একটুখানি স্থিত হতে দাও। আসুক ওরা, এসে ধাতস্থ হয়ে বসুক। থাকবার জন্যেই ওদের আসা। থাকলে তখন বলা যাবে, টাকা দাও কি ডলার দাও বা এটা দাও ওটা দাও। লুইগি আসলে একা আসে না। তার সঙ্গে থাকে সুবর্ণদ্বীপেরই এক লোক। লুইগি যখন চমৎকার নদীর তীরটা দেখবার জন্যে আগ বাড়ায় ততক্ষণে গোলাম কবির নামের সেই লোক বিস্কিট মুড়ি চানাচুর এরকম বেশকিছু শুকনো খাবার কিনে এনেছে প্যাকেটে ঝুলিয়ে। ততক্ষণে লুইগির হাঁচি-কাশির ভাবটাও আর নেই। দৌড়ে আসতে আসতে কবির বলে, কোন সমস্যা? সে তা বলে লুইগিকে কিন্তু বলবার সময় তাকায় লোকেদের দিকে। ফলে, লুইগি পালোমার এবং আগুয়ান লোকেরা প্রায় সমস্বরে উত্তর দেয়, না, না, কোন সমস্যা নাই।

যে-সুবর্ণদ্বীপে এত লোক এমনকি বিদেশিরও আনাগোনা সেটা কিছুকাল আগেও ছিল জনশূন্য। এর সব জমিই ছিল আবাদী এবং অনাবাদীও। আবাদ করবার মত লোকই তখন ছিল না কোথাও। সাগরের বুক থেকে একটু-একটু করে মুখ তুলে প্রথমটায় সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখলো অনেক দিন। আইসবার্গের ইশারার মত দেখতে অংশটুকু কালক্রমে পরিষ্কার মাটির রূপ নিতে থাকলে তার কর্দমাক্ত অবয়ব রোদে পুড়ে মোটামুটি শক্তসমর্থ অবস্থানে এলে লোকেরা অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। আশেপাশের গ্রাম আর জেলাগুলি থেকে একা বা দলবেঁধে স্বয়ং বা সপরিবারে লোকেরা এসে ডেরা বাঁধলো এবং তাদের যৌথ তৎপরতায় ছেটানো ধান এমন সোনার রূপ নিলো যে দ্বীপটির জন্যে সুবর্ণ বিশেষণটাই হয়ে পড়লো অনিবার্যভাবে আবশ্যিক। তবে লোকেরা যে খুব নিশ্চিতভাবে বা আস্থাসহকারে কাল কাটাতো তা নয়। রোজ তারা ঘূমাতে যেতো একটা আশঙ্কা আর ক্ষেত্রবিশেষে আতঙ্কের ভাব মাথায় নিয়ে। দ্বীপটি যেমন করে জেগে উঠেছিল ঠিক তেমন করে যদি আচমকা ডুবে যায়! ভয়ে অনেকেরই ঘুম হয় না। আবার অনেকেই কাগজে ধর্মীয় মন্ত্র লিখে সেটা মাদুলিতে ভরে তাদের ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে দিয়ে নির্ভাবনায় ঘুমায়।

চলবে...

২য় পূর্ব পড়ুন আগামী শুক্রবার

   

রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ কবি-সাহিত্যিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব পুরস্কার’ ২০২২ ও ২০২৩ ঘোষণা করা হয়েছে। পাঁচ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন কবি ও সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের জ্যৈষ্ঠ সদস্য কবি আসাদ মান্নান।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কবিতায় পুরস্কার পেয়েছেন- শাহ মোহাম্মদ সানাউল হক ও রিশাদ হুদা। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে মালিক মো. রাজ্জাক। এছাড়া প্রবন্ধে বিলু কবীর, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, অনুবাদে ইউসুফ রেজা এবং কথাসাহিত্য জুলফিয়া ইসলাম।

আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কবি খুরশীদ আনোয়ারকে।

কবি আসাদ মান্নান জানান, ২০২৩ সালে কবিতায় মিনার মনসুর ও মারুফুল ইসলাম পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রবন্ধে আসাদুল্লাহ, কথাসাহিত্যে জয়শ্রী দাশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে নাজমা বেগম নাজু, শিশুসাহিত্য আমীরুল ইসলাম এবং অনুবাদে মেক্সিকো প্রবাসী আনিসুজ্জামান।

আগামী ১৯ মে পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। পুরস্কার ঘোষণা কমিটির প্রধান ছিলেন কবি শ্যামসুন্দর শিকদার। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা।

;

ঢাকার মিলনায়তনেই আটকে ফেলা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে! 



আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে তাদের জন্মজয়ন্তীর জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রথা কি তবে লুপ্ত হতে চলেছে? দীর্ঘসময় ধরে মহাসমারোহে কয়েকদিন ধরে এসব জন্মজয়ন্তী আয়োজনের রেওয়াজ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণ দেখিয়ে সেই মাত্রায় আর হচ্ছে না রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর মহাআয়োজন। ঢাকার বাইরে উন্মূক্ত স্থানের বদলে রাজধানীতেই সীমিত পরিসরে মিলনায়তনে আটকে ফেলা হচ্ছে এসব আয়োজনের পরিধিকে। 

বাঙালির সাহিত্য ও সংস্কৃতির এই দুই পুরোধা পুরুষের জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে বিশাল আয়োজনে তাদের পরিধিবহুল সৃষ্টিকর্ম ও যাপিত জীবনের আখ্যান তুলে ধরা হতো। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে কবিদের স্মৃতিধন্য স্থানসমূহে এই আয়োজনকে ঘিরে দীর্ঘসময় ধরে চলতো সাজ সাজ রব। যোগ দিতেন সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু নানা অজুহাতে পর্যায়ক্রমে রাজধানী ঢাকাতেই যেমন আটকে যাচ্ছে রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় আয়োজন, তেমনি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণও কমে এসেছে। 

জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে এবারও কোন ভিন্নতা থাকছে না জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের আয়োজনগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পালিত হয়। আর মৃত্যুবার্ষিকীগুলো নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। যেমন কবি নজরুল ইনস্টিটিউট যেহেতু কবির নামে প্রতিষ্ঠিত, তাই নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটি ইনস্টিটিউটই আয়োজন করে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছর যেভাবে উদযাপিত হয় এবারও সেভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে। এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ২৫ মে (২০২৪) বেলা ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে শুরু হবে। রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানগুলো কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে অনুষ্ঠিত হত। এই বারও হবে, তবে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে হবে না।’

‘ঢাকার বাইরে যেসব জেলাগুলো নজরুলের স্মৃতিসংশ্লিষ্ট; যেমন-ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা-এসব জেলাগুলোতে নজরুল গিয়েছেন, থেকেছেন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্বের সূত্রে। এবার জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানও ঢাকায় হয়েছে, নজরুলের জন্মজয়ন্তীও ঢাকায় হবে। ঢাকার বাইরে এবার নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে সরকারের কাছে যে যুক্তি তা হচ্ছে-এই সময়ে দেশের উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষত জেলা প্রশাসন এইগুলো আয়োজনে মন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। জেলা প্রশাসনগুলো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকবে। নজরুল জয়ন্তী আয়োজনে মনযোগ হয়ত কম দেবে। যে উদ্দেশ্যে জনমানুষের কাছে পৌছানোর জন্য এই অনুষ্ঠান, তা পরিপূর্ণ সফল হবে না বিধায় এবার এই আয়োজনগুলো ঢাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে’-বলেন সরকারের এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মজয়ন্তী উদযাপনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে। এতে দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। গত ২ এপ্রিল (২০২৪) কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়, রবীন্দ্র জয়ন্তী হবে শিল্পকলা একাডেমিতে এবং নজরুল জয়ন্তী হবে বাংলা একাডেমিতে।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমিতে কিছু রেনুভশন ওয়ার্ক চলমান থাকায় বিদ্যুতের সমস্যা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় মুক্তমঞ্চেও এই আয়োজন না করে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান মিলনায়তনে নজরুল জয়ন্তীর তিন দিনব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২৫ মে বেলা ৪টায় উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামীলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। স্মারক বক্তা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান, এমপি। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা।

২৬মে আয়োজনের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাজ্জাদুল হাসান, এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। ২৭ মে তৃতীয় দিনের আয়োজনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিল্পী সাদিয়া আফরিন মল্লিক। শেষ দিনের স্মারক বক্তা কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী উদযাপনে জাতীয় কমিটির একজন সদস্যের কাছে জয়ন্তী আয়োজনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঐতিহ্যিক ধারা বজায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রবীন্দ্র ও নজরুল অনুরাগীরা বলেছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের সাহিত্য-জীবনদর্শন আমাদের পাথেয়। তাদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে মহাসমারোহে ঢাকার বাইরে কবিদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহে আয়োজনের যে ধারাবাহিকতা ছিল তা দেশজুড়ে সাংস্কৃতিক চর্চাকে বেগবান করতো। কিন্তু এই আয়োজনকে সীমিত করে রাজধানীর মিলনায়তনে আটকে ফেলা নিশ্চিতভাবেই আমাদের সংস্কৃতির বিকাশকে রূদ্ধ করারই অংশ। এর পেছনে সুক্ষ্ণভাবে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা।

;

হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা



অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পিপাসার্ত ঘোরে

প্রান্তরের মাঝে আছে নিঃস্বতার ডাক
আত্ম অনুসন্ধানের
ফিরতি ঢেউ
আছড়ে পড়ে
আশ্লেষের বালুকাবেলায়
মুমূর্ষু যেমন তীব্র পিপাসায়
জীবনের আলিঙ্গন চায়-
আর্ত রাত্রি হিমেল কামের ঘোর
নীরবে দংশায়
ঘর পোড়ে, আকাক্ষার
বাতি নিভে যায়
কোথায় প্রান্তর, শূন্যতা কোথায়
আছে সে নিকটে জানি
সুদূরের এলানো চিন্তায়
যেখানে গোধূলিদগ্ধ
সন্ধ্যা কী মায়ায়
গুটায় স্বপ্নের ডানা
দেবদারু বনে বীথিকায়
তার দিকে সতৃষ্ণ সমুদ্রঘোর
ছটফট করছি পিপাসায়।

না, পারে না

লখিন্দর জেগে উঠবে একদিন
বেহুলার স্বপ্ন ও সাধনা
বৃথা যেতে পারে না, পারে না।

কলার মান্দাস, নদীস্রোত
সূর্যকিরণের মতো সত্য ও উত্থিত
সুপ্ত লখিন্দর শুয়ে, রোমকূপে তার
জাগৃতির বাসনা অপার
এই প্রেম ব্যর্থ হতে পারে না পারে না

মনসার হিংসা একদিন
পুড়ে টুড়ে ছাই হবে
এমন প্রতীতি নিয়ে স্বপ্নকুঁড়ি নিয়ে
প্রতীক্ষা-পিদিম জ্বেলে টিকে থাকা
এমন গভীর সৌম্য অপেক্ষা কখনো
ম্লান হয়ে নিভে যেতে পারে না পারে না

রেণু রেণু সংবেদবর্ণালি-৮

ক.
আমার না পাওয়াগুলি অবরুদ্ধ দীর্ঘশ্বাসগুলি
মুক্তি চায়, বেরোতে পারে না
কার্বনের নিঃসরণ
নতুন মাত্রিক আর বিপজ্জনক
সেও তো দূষণ বটে
বলতে পারো প্রণয়দূষণ!

খ.
আদিপ্রাণ বৃক্ষতলে
ছায়াশান্তি মাঙনের সুপ্তি বর্তমান
এসো লই বৃক্ষের শরণ
পরিবেশ প্রশান্তির সেও এক
স্বস্তিমন্ত্র, অনিন্দ্য ধরন।

গ.
নদীকে বইতে দাও নিজস্ব নিয়মে
গলা টিপে ধোরো না ধোরো না,
নদী হচ্ছে মাতৃরূপ বাৎসল্যদায়িনী
দখলে দূষণে তাকে লাঞ্ছিত পীড়িত
হে মানুষ এই ভুল কোরো না কোরো না

ঘ.
উচ্চকিত শব্দ নয় বধিরতা নয়
মৃদু শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে কথা কও
শব্দ যদি কুঠারের ঘাতকপ্রতিম
তবে হে মানুষ তোমরা অমৃতের পুত্রকন্যা নও

ঙ.
মৃত্তিকার কাছ থেকে সহনশীলতা শিখি
মৃত্তিকাই আদি অন্ত
জীবনের অন্তিম ঠিকানা
মৃত্তিকাই দেয় শান্তি সুনিবিড়
ক্ষমা সে পরমা
শরীর মূলত মাটি
গন্তব্য যে সরল বিছানা।

ছিন্ন কথন

আমি ভুখা পিপীলিকা
চেয়েছি আলোর দেখা।
পুড়ে যদি মরি তাও
ওগো অগ্নি শান্তি দাও।
অঙ্গার হওয়ার সাধ
এসো মৃত্যু পরমাদ।
চলো ডুবি মনোযমুনায়
এসো এসো বেলা নিভে যায়!

ধ্রুব সত্য

না-পাওয়াই সত্য হয়ে ফুটে থাকে।
পুষ্পিত সে প্রতারণা, চেনা মুশকিল।
বৃতি কুঁড়ি পাপড়িতে মায়াভ্রম লেপটানো
দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছা হয়। ছুঁলেই বিপদ।
সেই ফুলে সম্মোহন জড়িয়েমড়িয়ে আছে
কোমলতা লাবণ্যও পুঁজি তার, এমত বিভ্রমে
লোভী ভ্রমরের মতো প্রেমিকারা ছোটে তার কাছে
গিয়ে মোক্ষ পাওয়া দূর, অনুতাপে আহত পাথর
মাথা কুটে মরলেও স্রোতধারা জন্ম নেয় না
যা কিছু হয়েছে পাওয়া, তাও এক দম্ভ সবিশেষ
মর্মে অভ্যন্তরে পশে গতস্য শোচনা নাস্তি
এই বিষ গলাধঃকরণ করে কী যে পাওয়া হলো
হিসাবে নিকাশে মন থিতু নয় সম্মতও নয়
না-পাওয়াই ধ্রুব সত্য চিরন্তন মানুষ-জীবনে!

;

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আজ পঁচিশে বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৮৬১ সালের (বঙ্গাব্দ ১২৬৮) এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের এই দিকপাল। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মা সারদা সুন্দরী দেবী। তার পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন।

তিনি একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি বিশ্বকবি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রাহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে ও উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন তিনি। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রবী ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দেওয়া বাণীতে বলেন, ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয় ছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য অঙ্গনের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার ও প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। শুধু সাহিত্য সাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দেওয়া বাণীতে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি একাধারে কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ও সমাজ সংস্কারক। তার হাতেই বাংলা কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতি নাট্য, নৃত্য নাট্য পূর্ণতা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্য স্থান করে নিয়েছে বিশ্বসভায়। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি, যিনি এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সবসময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন। রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বিজ্ঞানভিত্তিক, যা আধুনিক শিক্ষায় অগ্রগামী হতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার (রবীন্দ্রনাথের) রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। বাঙালির সুখে-দুঃখে তার গান যেমন দিশা দিয়েছে, বাঙালির জাতীয় সংকটেও তার গান হয়ে উঠেছে একান্ত সহায়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।

 

 

;