চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট কারা!



ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
কোরবানির পশুর চামড়া

কোরবানির পশুর চামড়া

  • Font increase
  • Font Decrease

চামড়া শিল্পই দেশের অর্থনীতির জন্য দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে সম্ভাবনাময় এ খাতের প্রধান কাঁচামাল চামড়ার দাম বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। কিন্তু কেন চামড়ার বাজার এমন অস্থিতিশীল, তার সমীকরণ কিছুটা জটিল। একে অপরকে দোষারোপ, সিন্ডিকেটসহ রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। আর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়তে হয় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। তাদের অভিযোগ, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের তৈরি সিন্ডিকেটের কারসাজিতে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন প্রশ্ন উঠেছে চামড়ার বাজারের সিন্ডিকেট কারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া দর অনুযায়ী লবণ মিশ্রিত চামড়া ২০ বর্গফুটের একটি চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছয়শ থেকে সাতশ টাকা। সেখানে লাভের আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাসা-বাড়ি থেকে চামড়া কিনেছেন তিনশ থেকে চারশ টাকা দরে। কিন্তু মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তারা। আড়তদাররা চামড়া কেনার টাকার অভাব আর সংরক্ষণের কথা বলে জটিল সমীকরণে ফেলে দেন মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। ফলে আড়তদাররা সরাসরি চামড়া না কেনায় মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় চামড়া নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করে। পরে চামড়া নষ্ট হওয়ার আতঙ্কে নামমাত্র মূল্যে লোকসানে বিক্রি করছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। আর কম দামে কিনে মধ্যসত্ত্বভোগীরা মুনাফা রেখেই সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। যা পরে আড়তদাররা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে ট্যানারি মালিকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে কিংবা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করেন। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা মধ্যসত্ত্বভোগী তৈরি করে মাঝখান থেকে বেশি লাভবান হয় বলে জানা যায়।  

আরও পড়ুন: সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লবণের দাম, বিক্রি হয়নি অর্ধেকও

সূত্র বলছে, অধিকাংশ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়ার ব্যবসা সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলে তারা অল্পতেই হতাশ হয়ে লোকসানে পড়েন। কারণ প্রথম দিনেই তারা চামড়া বিক্রি করতে না পারলে অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়েন, এবং পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়ে যান। কিন্তু এই চামড়া তারা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে ১৫ দিন রাখতে পারলেই লাভবান হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাজারের পুঁজি নেই এমন অজুহাতে মধ্যসত্ত্বভোগীরা তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা এসব চামড়া কম দামে কিনে বাড়তি মুনাফা অর্জন করছে। আর সার্বিকভাবে যারা পশু কোরাবানি করেন, তারা দাম কম পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা থাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কারণ তারাই তৃণমূল পর্যায় থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন। তারা যখন আড়তদারদের কাছ থেকে দাম পান না, তখন তার প্রভাব পড়ে গোটা দেশের চামড়ার বাজারে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565693215249.jpg

জানা গেছে, ঢাকায় ২০১৩ সালে যেখানে গরুর চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, সেখানে এ বছর এই চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সময় খাসির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। দুই ভাগ কমে এ বছরে এর দাম নেমে এসেছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। অনেক ক্ষেত্রে খাসির চামড়া বিনামূল্যেও দেওয়া হয়। এ বছর এক কোটি পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। গত বছর এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল সোয়া এক কোটি পিস। অর্থাৎ, আগের বছরের তুলনায় অন্তত ১৫ লাখ পিস চামড়া কম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন তারা ব্যবসায়ীরা।

লালবাগের পোস্তায় চামড়ার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দেয়ার কাজ চলছে আড়তগুলোতে। সব মিলিয়ে এবার ৭ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে পোস্তায়। আড়তে চামড়া লবণজাত অবস্থায় থাকবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এরপর এখান থেকে চামড়া নেবেন ট্যানারি মালিকরা।

তবে সাইন্সল্যাব এলাকায় গড়ে ওঠা বাজারের অর্ধেক চামড়া আজ রাতের মধ্যে সাভারের হেমায়েতপুরে চলে গেছে। সেখানে গিয়ে লবণ লাগানো হবে। বাকি ৩০ শতাংশ চামড়া যাবে হাজারীবাগে। আর সাধারণত ২০ শতাংশ চামড়া যায় পোস্তায়। পরে হাজারীবাগ ও পোস্তা থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে নিয়ে যাওয়া হবে।

আরও পড়ুন:  চিরচেনা রূপ হারিয়েছে পোস্তা!

চামড়ার বাজারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দাউদকান্দি থেকে আসা মেম্বার রহম আলি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, '১২ বছর যাবত এই ব্যবসা করি, কিন্তু এমন লস কোনদিন হয় নাই। কেউ চামড়া নিতে চায়না, দামও কয় না। আড়তদাররা কয় হেগো কাছে টাকা নাই। এহন আমি সব চামড়া ফেরত নিয়া যামু, লবণ দিয়া রাইখা দিমু। পরে ভালো দাম পাইলে বেচুঁম, নইলে সব লস হইবো।'

আর আড়তদাররা জানান, পুঁজি না থাকায় তারা চামড়া কিনতে পারছেন না। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করলে সমস্যা থাকবে না। বাজারও আগের মতোই চাঙা হয়ে যাবে। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা বাজারে এই সংকট তৈরি করছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565693243497.jpg

তবে ট্যানারি মালিকরা মনে করেন চামড়ার আড়তদার ও ফড়িয়াদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে। ফলে সংকটে পড়ছে চামড়ার বাজার। কিন্তু চামড়ার বাজারে কোনও সিন্ডিকেট আছে বলে মনে করেন না আড়তদার ও ফড়িয়ারা। তাদের দাবি শুধুমাত্র ট্যানারি মালিকরা পাওনা অর্থ পরিশোধ করলেই সমস্যার সামাধান সম্ভব।

কারা চামড়ার বাজারের সিন্ডিকেট জানতে চাইলে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চামড়ার বাজার অস্থিতিশীল করছে পোস্তার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন আমাদের কাছে ২৫০ কোটি টাকা পাওনা আছেন, এটি একদমই সত্য নয়। তারা আমাদের কাছে ১৫০ কোটি টাকার মতো পাওনা আছেন। অধিকাংশ ট্যানারি মালিকই ইতোমধ্যর তাদের অর্থ পরিশোধ করেছেন। সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারিগুলোও প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছে। আমাদের ব্যবসা ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার, সেখানে এমন সমস্যা কিছুটা হবেই। তবে কাঁচা চামড়ার বাজারটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে আমাদের কোন হাত নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যখন পোস্তায় চামড়া বিক্রি করতে যান, তখন তারা সেটি তিনশ' কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি টাকা দিয়ে চামড়া কেনেন। কিন্তু আমাদের কাছে বিক্রির সময় তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পোস্তার ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়টি সঠিক নয়। এখানে সিন্ডিকেটও কাজ করে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিভাবে লাভবান হতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসয়ীরা অনেক সময় না বুঝে কম দামে চামড়া বিক্রি করে দেন। কিন্তু তারা যদি ট্যানারিগুলো যখন চামড়া কিনে, তখন বিক্রি করে তাহলে কিন্তু তাদের কোন লোকসান হবে না। এই সময় পর্যন্ত তারা চামড়া লবণ দিয়ে রাখলেই সমস্যা হয় না। কিন্তু সাধারণত চামড়া অনেক হাত বদল হওয়ার কারণে সংকট হয় বেশি। কারণ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফড়িয়ারা চামড়া কিনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন, তারা আবার আমাদের কাছে অনেক বেশি দামে চামড়া বিক্রি করেন। ফলে অনেক হাত ঘুরে চামড়ার দামও বাড়তে থাকে। কিন্তু বঞ্চিত হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন:  চামড়ায় নিঃস্ব ফড়িয়ারা, লাভবান আড়তদাররা

আর চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেট আছে, তা মানতে নারাজ বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, চামড়ার বাজারে কোনও সিন্ডিকেট হয় না। প্রতিবছর ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেটের কথা বলেন, কিন্তু এটি সঠিক নয়। সমস্যা হয় তাদের কাছে পাওনা টাকা যখন আমরা পাই না তখনই। তারা প্রচুর টাকা বকেয়া রেখেছেন। তাদের কাছে ৩৫০ কোটি টাকার মতো আমরা পাওনা রয়েছেন আমাদের আড়ৎদাররা। কিন্তু আমরা একেবারেই চামড়া কিনছি না বিষয়টি তেমন নয়, কিন্তু আমরা যে পরিমাণ কিনতে চাচ্ছি তা পুঁজির অভাবে কিন্তু পারছি না। সবার কাছে টাকা থাকলে বাজারে প্রতিযোগিতা থাকত, ফলে চামড়ার দামও বাড়ত।

তিনি বলেন, বাজারে কম দাম হলেও চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে। আর জেলা পর্যায়ের যারা এখনও চামড়া আনতে পারেননি, তারা কিন্তু লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। ফলে চামড়া পচে যাচ্ছে বিষয়টি তাও নয়। ৮০ ভাগ ফড়িয়ারাও কিন্তু এখন লোকসানে আছেন। ফলে ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

প্রসঙ্গত, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম অনুযায়ী ঢাকায় কোরবানির গরুর প্রতিটি ২০ থেকে ৩৫ বর্গফুটের চামড়া লবণ দেওয়ার পরে ৯০০ থেকে এক হাজার ৭৫০ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আর রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে চামড়া বেচা-কেনা হচ্ছে আরও কম দামে।

আরও পড়ুন:  রংপুরে চামড়ার সরবরাহ কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা

চামড়া পাচার রোধে বেনাপোল সীমান্তে সতর্কতা

   

চট্টগ্রামে ১২ মেট্রিক টন বিটুমিনসহ গ্রেফতার ২



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ মেট্রিক টন চোরাই বিটুমিনসহ চক্রের ২ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) র‌্যব-৭ পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানাধীন দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় একটি গোডাউনে অবৈধ উপায়ে ক্রয়-বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে চোরাই বিটুমিন মজুদ করছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার র‌্যাব সাতের একটি বিশেষ আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র‌্যাব আসামি সুমন চন্দ্র দে (৩৮) ও মোঃ আব্দুল্লাহ আজিজকে (৪০) আটক করতে সক্ষম হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা স্বীকার করে যে, পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিটুমিন সংরক্ষণ করে এবং পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করে আসছে তারা। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিটুমিন পরিবহনে ব্যবহৃত ১টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়।

জব্দকৃত চোরাই বিটুমিনের আনুমানিক মূল্য ১২ লাখ টাকা বলে জানায় র‌্যাব।

;

বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহতের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: তাপস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মুগদায় করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় নিহত স্কুল শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদের পরিবারের পাশে থাকার এবং এ দুর্ঘটনায় দোষী সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মাহিন আহমেদের পরিবারকে সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাতে নিহতের বাড়িতে যান। পরে তিনি গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক নয়টার সময় মুগদার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র হতে বর্জ্য স্থানান্তরকালে করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িতে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে ছোট্ট বালক মাহিন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত। আমরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেছি। ছোট্ট শিশু হারানোর ঘটনায় বাবা-মাকে কোন ভাষাতেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। আমরা নিহতের পরিবারের পাশে থাকব।

এ দুর্ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হবে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, এ দুর্ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা নেওয়া হয়েছে। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি চাইছি। এই দুর্ঘটনায় যেন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু বিচার হয় সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আমাদের নির্ধারিত গাড়িচালক গাড়ি না চালিয়ে অন্যকে দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে গাড়িটি চালানো হচ্ছিল। আমরা এ ধরনের অনিয়ম কোনভাবে বরদাশত করবো না। এ ঘটনায় কঠোরতর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ রকম কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের সকলের বিরুদ্ধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ ধরনের ঘটনায় আগেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। জড়িতদের চাকুরিচ্যুত করেছি, ছাটাই করেছি। আবার অনেক নতুন নিয়মিত গাড়িচালক নিয়োগ দিয়েছি। ফলে বিগত ২ বছর করপোরেশনের গাড়ি দ্বারা কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটেনি। গতকালের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা আমাদেরকে অত্যন্ত শোকাহত করে তুলেছে। এবারও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো। যাতে করে এ ধরনের দুর্ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ, অঞ্চল-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মাকসুদা শমশের প্রমুখসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

;

৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

৯ মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ ঘোষণা

  • Font increase
  • Font Decrease

সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে আগামী ৯ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও একাডেকিম কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হওয়া জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরুরি সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা আগামী ৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এবং ১২ মে থেকে যথারীতি চালু হবে।

এতে আরও বলা হয়, গতকাল (বৃহস্পতিবার) শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করার শর্তে হলে অবস্থান করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন চুয়েটের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ৯ মে পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকব। ১২ মে থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে। দুইজন মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যদিও বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রোর (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা চিঠিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম (পরীক্ষাসহ) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে এদিন রাতে প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে।

এর আগে, গত সোমবার মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। ওইদিন আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে মাঠে নামেন। আন্দোলন চলার সময় শিক্ষার্থীরা বাসেও আগুন দেন।

;

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা গ্রেফতার



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আলোচিত সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডখ্যাত দেলোয়ার হোসেন ওরফে বগাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দিবাগত রাতে উপজেলার পশ্চিম আমিলাইশ এলাকা থেকে এই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়।

বগার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার কাঞ্চনা গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে শিশু হত্যা, অপহরণ, ইয়াবা, ছিনতাই, ডাকাতি ও সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের সময় সাতকানিয়ার সাবেক এমপির স্ত্রী-শ্যালকের ওপর হামলাসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে।

বগাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার। তিনি বলেন, ইয়াবা মামলায় বগাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাতকানিয়া ও বাকলিয়া থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

৩ মাসে বগার নেতৃত্বে ২২ হামলা:

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালিয়েছে সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড বগা। গত তিনমাসে সাতকানিয়ার চরতি-আমিলাইশ এলাকায় অন্তত ২২টি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে এই সাইফুল বাহিনী। এরমধ্যে কমপক্ষে ১০টি ঘটনায় থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে। বাকিরা ভয়ে মুখ খোলেননি।

নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেতেই নির্বাচনের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সাইফুল বাহিনীর অত্যাচার। দক্ষিণ চরতিতে নৌকার সমর্থকদের বাড়ি-ঘর ও দোকানে হামলা ও লুটপাট চালায় সাইফুল বাহিনী। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুকের বাড়ি ও ডেকোরেশনের দোকানে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়।

নির্বাচনের পরের দিন সোমবার খতিরহাট এলাকায় নৌকা সমর্থক জিল্লুর রহমানকেও মারধর করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের আগের দিন শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল আমিন কে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী সাইফুলের বড় ভাই জসিম উদ্দিন।

এছাড়া নির্বাচনের পর ৫ ফেব্রুয়ারি চরতি ইউনিয়ন পরিষদ কার্য়ালয়ে ঢুকে বর্তমান চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। পরে দক্ষিণ চরতি এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে পরিবারসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সাইফুল বাহিনী। নির্বাচনের পর থেকে এখনো ঘর ছাড়া নুর মোহাম্মদের পরিবার। চরতি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাইনুদ্দিনকে অপহরণ করে মারধর দক্ষিণ চরতির আরাফাত সিকদারকে মারধর করে এই সাইফুল বাহিনী।

নির্বাচনের আগে ২১ ডিসেম্বর দক্ষিণ চরতি কাটাখালী ব্রিজের পাশে নৌকার পথ সভায় অস্ত্র ও লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায় সাইফুল ও তার বাহিনী। এই সময় নৌকা সমর্থক চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী, সাতকানিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, মিছদাকুল বেসারত চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক, রবিউল ইসলাম ও মোহাম্মদ ফয়সালসহ কমপক্ষে ৮-১০ জন আহত হন।

এর দুইদিন আগে ১৯ ডিসেম্বরও নৌকার পথসভা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ শাহীনকে মারধর করে সাইফুল বাহিনী। ওইদিনও ইলিয়াছ শাহীনের ফার্মাসি ও কৃষক লীগ নেতা ফারুককে বাড়ি-দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নুর হোসেন কেও মারধর করে সাইফুল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এমন কোনো দিন নেই যে- সন্ত্রাসী সাইফুল ও তার বাহিনী দ্বারা এলাকার মানুষের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী সাইফুল কোনো পদ পদবিতে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্য়াক্রম চালিয়ে আসছেন। এতদিন পর্যন্ত সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় তার পরিচিতি ছিল। গত বছর প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তখন থেকে এম এ মোতালেবের দিকে ভিড়েন সাইফুল মেম্বার। মোতালেব দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে তারপর থেকে আরো হিংস্র হয়ে উঠেন তিনি।

এর আগে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী সাইফুল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে যায় দক্ষিণ চরতির ১০ পরিবার। নারী ও শিশুসহ এসব পরিবারের প্রায় অর্ধ শতাধিক লোকজন দীর্ঘ এক বছর নিজেদের ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর উদ্ভাস্তুর মতো দিনযাপন করে। বাড়ি-ভিটে ফিরে পেতে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন উদ্ভাস্তু পরিবারসহ এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন।

সাইফুল বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে এসব মারধর ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ইয়াবা ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন (বগা)। ইতোমধ্যে দুই-তিন বার জেলেও গিয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসায়ী। সাতকানিয়ার পশ্চিম অঞ্চল (চরতি, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, এওচিয়া ও নলুয়া) সহ চন্দনাইশের বৈলতলী, আনোয়ারার হাইলধর ও বাঁশখালীর পুকুরিয়া অঞ্চলের অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে সাইফুল ও তার বাহিনী। এছাড়া রয়েছে খাল ও সাঙ্গু নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবসা।

সাইফুল বাহিনীর অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার।

 

;