‘সরকার বেশিদিন থাকলে দেশ স্থিতিশীল থাকে কথাটি টোটালি রঙ’

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-11-11 14:56:45

একটি সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশ স্থিতিশীল থাকে কথাটি টোটালি রঙ। এতে আরও অস্থিতিশীলতার বীজ বপন হয়, যা আমরা বীজ বপন করছি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি।

শনিবার (১১ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন আয়োজিত যোগদান অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ ও শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩০ জন আইনজীবী জাপায় যোগদান করেন।

জিএম কাদের আরও বলেন, মানুষ নানান কারণে ক্ষোভে ফুঁসছে। যে কোন সময়ে বড় কিছু ঘটতে পারে। যদি বড় কিছু ঘটে তাহলে কি হবে। তাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এটা কি স্থিতিশীলতার লক্ষণ।

তিনি বলেন, আমরা সিলেকশন চাই না, আমরা ইলেকশন চাই, এখন সিলেকশন হচ্ছে এই নির্বাচনকে ইলেকশন বলতে পারি না। নির্বাচন কমিশন চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। আগের বাংলাদেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় ছিল। জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে নামিয়ে স্বৈরশাসিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বলা হচ্ছে, যে অবকাঠামো উন্নয়ন, মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। সমাজে অসমতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, বৈষম্যকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ১০ ভাগ লোককে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, অন্যদের নর্দমায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ একটি দেশের সভ্যতার প্রতীক, একে দিয়ে সভ্যতার মাপকাঠি বিচার করা হয়। আমরা কতটা সভ্য হয়েছি তা বিচার বিভাগ দিয়ে মূল্যায়ন করা যায়। রাজা আইনের ঊর্ধ্বে থাকেন, রাজতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র আইনের শাসন দিতে পারে না। একমাত্র গণতন্ত্র আইনের শাসন নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের দেশের যে অবস্থা তা দিয়ে বিচার করতে হবে, আমরা এখন গণতন্ত্রে আছি না কোথায় আছি! নিম্ন আদালত সরকারের নিন্ত্রয়ণে, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন রায় দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার প্রধানের হাতে নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ এবং উচ্চ আদালতে ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত। আইনের কাঠামোর মধ্যমেই তাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই কাঠামোর মধ্যে থেকে আইনের শাসন আশা করা যায় না।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি পরিবার চলতে পারে না। এটি দাসপ্রথার চেয়েও খারাপ অবস্থা, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখবেন না! বলা হয় বেতন বাড়ালে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না বাংলাদেশ। তাহলে তাদের রেশন দিন, না হলে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দিন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, কবীর সুমনের কথা বলতে হয়, কেউ কথা রাখেনি। ৯০ সালে তিন জোটের অঙ্গীকার ছিল আমার ভোট আমি দেবো। কিন্তু তারা কোন কথা রাখেনি। তারা আবার দুই জোট হয়েছে, আবার এক দফা। এই জোটের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দেশের মানুষ ত্রাহি অবস্থা। মানুষ দল দুটির ওপর ত্যাক্ত বিরক্ত। দেশে আইনের শাসন নেই, আইনের শাসন না থাকলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে যদি যোগ্য বিচারপতি না থাকে, সে সমাজে ন্যায় বিচার আশা করা ঠিক না।

তিনি বলেন, আমার সঙ্গে এক বিদেশির কথা হয়েছিল, তাকে আওয়ামী লীগ বলেছে নির্বাচনে নৌকার সঙ্গে জাপা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ৫টির বেশি আসন পাবে না। আমি তাকে বলেছি, তারা তো বেশি বলেছে, এই অবস্থায় জাপা একটি আসনও পাবে না, আর যদি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে প্রধানমন্ত্রী করে কেবিনেট থাকে, তখন আমরা একক সরকার গঠন করবো। চ্যালেঞ্জ দিলাম যদি না পারি তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দিবো।

তিনি বলেন, নির্বাচন যদি ফেয়ার না হয়, আমরা ভোট পাবো না, আমাদের ভোটাররা নিরীহ। আওয়ামী লীগের লোকজন নিরীহ না, তারা পুলিশ নিয়ে এসে ভোট নিবো। যারা আমাদের খাটো করে দেখবে তাদের সঙ্গে প্রেম নেই। আগামী নির্বাচন যদি মিনিমাম ফেয়ার হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে
নিজের বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। মারমুর খেতে হলে খাবো।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, অসম নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আমার হাত-পা বেধে সাঁতরাতে বলেন আমিতো ডুবে মরবো। আর আপনি সাঁতরিয়ে পার হয়ে যাবেন। শেষ বয়সে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত হতে চাই না, কারো নির্বাচন বৈধতা দিতে পারি না। সিগন্যাল ডাইনে দিয়ে বায়ে যাবো না। অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। মানুষ জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে শান্তি কমিটি করবো, যাকে একাত্তরে গুলি করে হত্যা করেছি। এবার সেই শান্তি কমিটিতে নাম লেখাবো। পৃথিবীর কোনো প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা নেই, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো।

জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সেখ মো. সিরাজুল ইসলাম সভাপতির বক্তব্যে বলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়। আর জিএম কাদের অদম্য ভূমিকা পালন করে গণতন্ত্রের বরপুত্র হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। আপনারা একমত হলে তাকে এই উপাধিতে ভূষিত করতে চাই। অন্যরা হাত উচিয়ে সমর্থন জানান। আজ থেকে জিএম কাদের এই উপাধিতে ভূষিত হবেন। বাংলাদেশে এখন যারা রাজনীতি করেন তাদের মধ্যে বেস্ট হচ্ছেন জিএম কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, খেলা হবে। খেলতে গেলে দুটি দল লাগে। আপনি রেফারি, আপনি বিচারক আর বলবেন খেলা হবে। তা হয় না। আপনি যদি খেলতে চান, নিরপেক্ষ মাঠ তৈরি করুন।

যোগদানকারী সুলতান আহমেদ খান বলেন, কেন আমরা জাতীয় পার্টিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাইনি, অনেক জায়গায় ধর্না দিয়েছি কাউকে পাইনি। অনেক যোগ বিয়োগ করে ক্যালকুলেশন করে আবিষ্কার করেছি জাতীয় পার্টিকে, জিএম কাদেরকে।

যোগদানকারী শহীদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, একদল ক্ষমতায় থাকার জন্য আরেকদল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য হানাহনিতে লিপ্ত। শুধুমাত্র জাতীয় পার্টি মানুষের কথা বলছে। অনুষ্ঠানে শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর