জাতীয় পার্টিকে বেশি দুর্বল করেছে আওয়ামী লীগ: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 12:12:55

আওয়ামী লীগ সব সময় জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি সৃষ্টি করে রেখেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি।

রোববার (২৩ জুলাই) জাপার বনানী কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে সব চেয়ে বেশি দুর্বল করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সমর্থন দিয়েছিলো জাতীয় পার্টি। তারপর থেকেই জাতীয় পার্টির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে, জাতীয় পার্টি অনেকটা দুর্বল হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাই।

জিএম কাদের বলেন, সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুঝি না, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিতে চাই।

নির্বাচনে সরকার কোন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। আমরা ফর্মুলা দিতে পারি, সকল দল থেকে ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে ইলেকশন নয় সিলেকশন হতে পারে। বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তছনছ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছে। বর্তমান সরকার একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে চাচ্ছে। পেশাদার ও ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোতে এখন আর নির্বাচন হয় না, সিলেকশন করে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা ধংস করে কর্তৃত্ববাদী এক নায়কতন্ত্র চালু করেছে। আগামী নির্বাচনেও যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আর রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল থাকবে না। দেশ এক নেতার অধিনে চলে যাবে, এদলীয় শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করা হবে। দেশের মানুষ তাদের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষের অধিকার বলতে কিছুই থাকবে না।

তিনি বলেন, সরকার বলেছে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সরকার বলছে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু সরকার ছাড়া সকল রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ মানুষ বলছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বিশ্ববাসী দেখেছে দলীয় সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না। সরকার বলছে ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে, সাধারণ মানুষের ধারণা শতকারা ৫ ভাগ ভোটও সাধারণ মানুষ দেয়নি। ভোট যা পড়েছে তার প্রায় সবই তারা নিজেরাই দিয়েছে। জনগণ এই ভোটের ্ওপর আস্থা রাখেনি তাই তারা ভোটেও অংশ নেয়নি। নির্লজ্জভাবে এক প্রার্থীকে মেরে, এজেন্টদের বের করে দিয়ে নির্বাচনকে কলুষিত করেছে।

সারাবিশ্বের কাছে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কেমন হবে। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলার মুখ সরকারের নেই। আন্দোলনে রাস্তায় নামলে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার বিরোধীদের দমন করতে সব কিছুই করছে। মানুষকে মানুষ মনে করে না, বিরোধীদের ওপর পাখির মত গুলি করা হয়। বর্তমান সরকারের দমন নীতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক শক্তির টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই অর্থ ও জনবল না থাকলে মাঠে টিকে থাকা দূরুহ হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, মানুষ যদি সরকারের ভয়ে কথা বলতে না পারে, সেই সরকার জনগণের সরকার নয়। আমরা জনগণের ভোটে জনগণের সরকার চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা চাই আমরা। জনগণের পাশে আমাদের থাকতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকবো।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের সামনে অমানিশার অন্ধকার। কী হবে তা কেউ জানে না। সবার জিজ্ঞেসা কী হচ্ছে? কী হবে? আমেরিকাসহ প্রায় সকল বিদেশী বন্ধুরা জানতে চায় দেশে কী হতে যাচ্ছে?

টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুস সালাম চাকলাদারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক, যোগদানকারীদের মধ্যে সৈয়দ শামসুদ্দোহা জুবায়ের, আব্দুল আজিজ।

উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, গোলাম রাব্বানী, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আহমেদ, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সম্পাদকমন্ডলীর হেলাল উদ্দিন, এমএ রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ আজহার, আব্দুল কাদের কদর, রাশেদ নিজাম, আবু মুসা সরকার, শফিকুল ইসলাম তপন, সোহেল রহমান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর