পৃথক কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে জিএম কাদের-রওশন

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 12:48:42

কেন্দ্রীয় কাউন্সিল নিয়ে নতুন করে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার জাতীয় পার্টিতে। পৃথকভাবে কাউন্সিল আয়োজনের তোড়জোড় চলছে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের অনুসারীদের।

দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে না পারায় ইসির কাছে দু’মাস সময় চেয়ে নিয়েছিল জাপা। সেই সময়ও গত হয়েছে কয়েক মাস আগেই, কিন্তু কাউন্সিল করতে পারেনি জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলের চেয়ারে থাকা দলটি।

জাতীয় পার্টির দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগস্টে পার্টির কাউন্সিল আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। মেয়াদ শেষ হওয়া জেলা কমিটিগুলো কাউন্সিল করা হচ্ছে। চলতি মাসে, টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটির কাউন্সিল করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ জেলায় হালনাগাদ কমিটি রয়েছে। অন্যান্য জেলায় কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে।

অন্যদিকে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই মাসে তারা কাউন্সিল আয়োজনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ঈদের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যাংকক যাবেন রওশন এরশাদ। দেশে ফিরেই সিনিয়রদের সঙ্গে বসে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করার আভাস দিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক পদে রয়েছেন রওশন এরশাদ। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদেও আসীন। এরশাদের মৃত্যূর পর রওশন ও জিএম কাদেরের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে রশি টানাটানি হয়। এতে দেবরকে হারিয়ে বিজয়ী হন রওশন এরশাদ। জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

দেবর-ভাবির টানা পোড়েনের মধ্যেই রওশন এরশাদ একতরফাভাবে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল আহ্বান করেন। সেই কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয় ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর। কাউন্সিলের জন্য সিনিয়র নেতা সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্কে সদস্য সচিব করে একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও ঘোষণা দেন রওশন। তখন জিএম কাদের ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়।

গোলাম মসিহ্ কমিটি বেশ তোড়জোড় নিয়েই কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গুলশানে আলাদা অফিস নিয়ে পার্টির কর্মকাণ্ড শুরু করেন। শুরু হয় জেলায় জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ। একই সময়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের হলে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। কয়েক মাস দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিষ্ক্রিয় থাকেন জিএম কাদের।

একতরফা কাউন্সিল আহ্বানের ৪ দিনের মাথায় বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরিয়ে দিতে স্পিকার বরাবরে চিঠি দেন জিএম কাদের। রওশন পন্থী বলে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পার্টির মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রাঙ্গাকে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপের পদ থেকে সরাতেও প্রচেষ্টা নেন। পাল্টা চিঠি দিয়ে রাঙ্গাকে বহাল রাখার আবেদন করেন রওশন এরশাদ। অবশেষে রওশনের চিঠিতে বহাল তবিয়তে রাঙ্গা।

প্রতিক্রিয়ায় সংসদ বর্জনের আল্টিমেটাম দেন জিএম কাদের। হঠাৎ করেই দুই পক্ষই রণে ভঙ্গ দেন। জিএম কাদের সংসদ বর্জনের হুমকি থেকে সরে আসেন। ২ মাস পর ৩০ অক্টোবর হঠাৎ করেই কাউন্সিল সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ।

দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে রওশন এরশাদ দেশে ফিরলে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে হাজির হন দেবর-ভাবি। সেই বৈঠকের পরে বরফ গলতে শুরু করে। ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হন রওশন এরশাদ। এরপর কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে রওশন পন্থীরা। কিন্তু সম্প্রতি আবার সরব হয়ে উঠেছেন, জেলায় জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন অব্যাহত রয়েছে। চলছে কাউন্সিল আয়োজনের প্রস্তুতি।

রওশন ঘোষিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসিহ্ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কাউন্সিলের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয় নি, তবে আমরা যতো দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল করতে চাই। ইতোমধ্যে ৪৫টি জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই অন্যান্য জেলাতেও গঠন করা হবে।

রওশন এরশাদের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। রওশন পন্থীদের ওই প্রস্তুতিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না তারা। রওশনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারা কেউই জাপার লোক নয়।

রওশন এরশাদের কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার প্রশ্নে গোলাম মসিহ্ বলেন, অনেকে অনেক কিছু বলে। সময় হলেই দেখতে পাবেন সবকিছু। আমরা সবাইকে নিয়েই কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সামরিক শাসনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত। এরশাদের জীবদ্দশায় জাপা, জেপি, বিজেপি ও জাপা (জাফর) নামে চার টুকরো হয়ে যায়। এরমধ্যে জেপি রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে। বিজেপি এবং জাপা (জাফর) রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে। রওশনের প্রক্রিয়ায় জাপার আরেকটি গ্রুপের আত্মপ্রকাশ সময়ের বিষয় বলে মনে করছেন অনেকেই। যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় জেলায় কমিটি গঠনের কাজও চলমান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর