সিটি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সংশয় রয়েছে: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 00:30:43

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা ভোট দিতে পারবো তো? আমরা ভোট দিলে সেই ভোট গণণা হবে তো? নাকি আওয়ামী লীগ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করবে? এটাই বাস্তবতা।

শনিবার (৬ মে ) জাপার বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থা  বুঝতে এখন খুব জ্ঞানী হতে হয় না। গ্রামের কৃষক থেকে রিক্সাওয়ালা পর্যন্ত এই প্রশ্ন করছে। যারা গণতন্ত্রের নামে বড় বড় কথা বলে, যারা মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিয়ে কথা বলে, তারাই ভোটের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে? রাজনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, সাধারণ মানুষ মনে করে আমরা ভোট দেই বা না দেই, সরকার সমর্থকরাই জিতে যাবে। মানুষের মনে শংকা, ভোট দিতে গেলে মার খেতে হবে কিনা, বাড়িতে হামলা হবে কিনা। শংকা ও হতাশা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। দেশের মানুষকে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করছে। এমন বাস্তবতা থেকে আমরা দেশকে উদ্ধার করতে চাই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা জনগণের পক্ষে থাকবো। জনগণ যা চায় আমরা তাই করবো সংসদ নির্বাচনে।

তিনি বলেন, আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। মানুষের ভাতের অধিকার দরকার হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ খেতে পারছে না। মানুষ আধাপেট খেয়ে জীবন যাপন করছে, সামনে হয়তো আরো খারাপ দিন আসছে। যে সব দেশকে আমার খারাপ দেশ বলি, আমাদের অবস্থা এখন তাদের চেয়েও খারাপ। তাই ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভালো কাজ করলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে আমরা তাদের সাথেই কাজ করবো। দেশ ও জাতির সাথে কাজ করবো এটাই আমাদের রাজনীতি। সামনের দিনগুলো হয়তো শুভদিন নয়। দেশ ও জাতির জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে এখনো অপপ্রচার চলছে। কেউ বলছে আমরা কারো বি-টিম। আমরা সব সময় দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করছি। আমরা কখনোই কারো বি-টিম হতে কাজ করি না। কারো ক্ষমতার সিঁড়ি হতে কাজ করি না। জাতীয় পার্টির রাজনীতি কারো ক্ষমতার সিঁড়ি হতে নয়। অত্যাচার, নিপিড়ন ও জেল-জুলুম করা হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রতি। জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করা হয়েছে বারবার কিন্তু জাতীয় পার্টি এখনো টিকে আছে। দেশের মানুষ এখনো জাতীয় পাটির প্রতি আস্থা আছে। ক্ষমতা দখল করে লুটপাটের রাজনীতি আমরা বিশ^াস করি না। যারা ক্ষমতায় আছে আর যারা ক্ষমতায় যেতে চিৎকার করছে তাদের সবার ইতিহাস একই।

 তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেহারা এক। ১৯৯৬ সালে আমরা মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করেছিলাম, আওয়ামী লীগও তখন ভোট বর্জন করেছিলো তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। বিএনপির মতই আওয়ামী লীগও নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে ছঁক এঁেকছে। নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিতে প্রয়োজন মত সংবিধান সংশোধন করেছে। আবার ক্ষমতার বাইরে থকালেই দল দুটি বলে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার চাই। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেছিলেন, আমরা আজীবন তত্বাবধায়ক সরকার চাই, তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন ভালো হতে পারে না। এখন আওয়ামী লীগ বলছে সংবিধান ছাড়া নির্বাচন হবে না। আসলে, ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জনগণের রায়কে ভয় পায়। আবার ক্ষমতায় গেলে বিএনপিও একই কাজ করবে।

তিনি বলেন , সংবিধানের মূল নীতি কেউ মানছে না কিন্তু ক্ষমতার জন্য শুধু সংবিধানের দোহাই দিচ্ছে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর জাতীয়তাবাদ মানছেনা, শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা বেঁচে আছে সাধারণ মানুষের জন্য। ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর কোন কৃতিত্ব নেই। বরং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করতে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-অবিচার করেছে।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রমাণ করেছে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি জিতলে আওয়ামী লীগ বলে কারচুপি হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ জিতলে বিএনপি বলে ভোটে কারচুপি হয়েছে। আসলে, বর্তমান ব্যবস্থায় দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হলে ভোটের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি’র সভাপতিত্ব করেন। জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও  স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির রাখেন সুমন আশরাফ, আবু সাঈদ স্বপন, আমিনুল হক সাইদুল, এমএ আসাদুজ্জামান মবিন, আবুল হাসনাত আজাদ, নাসির উদ্দিন হাওলাদার (নাসিম), আনিসুর রহমান বাবু, মোঃ রনি।

 উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. আব্দুস সালাম, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হুমায়ুন খান, এমএ রাজ্জাক খান, মাসুদুর রহমান মাসুম, গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক। জাতীয় ছাত্র সমাজ এর সভাপতি আল মামুন, হকার্স পার্টির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু।

এ সম্পর্কিত আরও খবর