আওয়ামী লীগ দেশকে শ্মশান করে দিয়েছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম | 2023-09-01 04:00:27

 

আওয়ামী লীগ গত ১৪-১৫ বছরে বাংলাদেশকে শ্মশান করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি শেখ মুজিবের ভাষায় বলতে চাই, গত ১৪-১৫ বছরে তারা এই বাংলাদেশকে শ্মশান করে দিয়েছে। আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই, বাংলাদেশ শ্মশান কেন? বাংলাদেশ আজকে শ্মশান কারণ এই ভয়াবহ দানব, এই আওয়ামী লীগের দানব, যারা আজকে আমাদের বুকের উপরে বসে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে বিদেশি পাচার করছে আর আমাদের মানুষকে গরিব করে রেখে যাচ্ছে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, পাঁচ নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের একটা প্রতিষ্ঠান, র‌্যাব- তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। র‌্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিলে তো হবে না। নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে হাসিনা সরকারকে। হাসিনা সরকারের নির্দেশে এসব ঘটনা ঘটেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, কাস্টুডিতে ট্রর্চার করে মেরে ফেলা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেল কিছুদিন আগে এসেছিলেন, তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন যে এখানে গুম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট বেরিয়েছে কয়েকদিন আগে, ৭৪ পৃষ্ঠার রিপোর্ট বের হয়েছে। তারা বলেছে বাংলাদেশে মানবাধিকার নাই। এখানে গুম হয়, বিচারবর্হিত হত্যাকাণ্ড হয়, এমনকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। বেগম খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছে এটি রাজনৈতিক সাজা বলেও রিপোর্টে উল্লেখ্য করেছে। রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জন্য তাকে সাজা দিয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।

পলোগ্রাউন্ড থেকে নতুন আন্দোলনের সূচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আমাদের গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য, এই দেশকে মুক্ত করার জন্য, দেশকে আরেকবার পরাধীনতা দূর করার জন্য এই চট্টগ্রাম থেকে আমরা দ্বিতীয় দফার আন্দোলন শুরু করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন, আমাদের লাখো শহীদকে স্মরণ করার আন্দোলন, লাখো মানুষকে মুক্ত করার যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন আজ চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড থেকে সূচনা হলো।

দুইদিকে তাকিয়ে দেখবেন বড় বড় ব্যানারে আমাদের কয়েকজন ভাইয়ের ছবি আছে। এই ভাইরা কারা? যারা গণতন্ত্র মুক্ত করার জন্য, মানুষের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, জনগণকে অন্যায় অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য শহীদ হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা যখন জ্বালানি তেল আর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করি, ভোলাতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুর রহিম প্রথম শহীদ হন। শহীদ হন ছাত্রদলের নূরে আলম। তারপরে শহীদ হন নারায়ণগঞ্জে আমাদের যুবদলের নেতা শাওন ৷ সর্বশেষ মুন্সিগঞ্জের শাওন। এরা কারা ছিলো? এরা সাধারণ মানুষ। এই ভাইয়েরা, যারা রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তারা একেবারে সাধারণ মানুষ। মুন্সিগঞ্জের যে ভাই প্রাণ দিয়েছে, তার একেবারেই অল্প বয়স। অল্পদিন বিয়ে হয়েছে, একটা আট মাসের ছোট্ট শিশু আছে। নারায়ণগঞ্জের ভাইয়েরও একই অবস্থা। নূরে আলম, আব্দুর রহিম এদেরও একই অবস্থা। একজন চার্জার গাড়ি চালায়, আরেকজন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, আরেকজন খেতে কাজ করে। এরা সাধারণ মানুষ। এরা কেউ অনেক বিত্তের অধিকারী নয়, ধন সম্পদের মালিক নয়। কিন্তু এরা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে। তারা বলেছে, ‘মারো আমাকে, কিন্তু দেশকে আমি মুক্ত করতে চাই।

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য আন্দোলন করছি। শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজিতে চাল দিবে বলেছিল, আজকে চালের দাম ৭০ টাকা। চাল, ডাল, তেল, লবণ, সবজি, ডিম, মাংস- সবকিছুর দাম এখন তিনগুণ, চারগুণ, পাঁচগুণ। আবার শুনতে পাচ্ছি, বিদ্যুতের দামও নাকি বাড়াবে। তিন চারবার বাড়ায় প্রত্যেক বছর, এখন নাকি আবার বাড়াবে। পেট্রোলের দাম বাড়িয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে, পানির দামও বাড়িয়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়াবে। কেন? এত দাম বাড়াতে হয়, কারণ একটাই। তারা লুট করে, চুরি করে, ডাকাতি করে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে।

নির্বাচন কমিশনকে ডিসি-এসপিরা মানে না উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে ডিসিরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছে-আমরা আপনার কথা মানি না। শেখ হাসিনার কথা মানি। এরকম নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনোভাবেই নির্বাচন নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন দিতে হবে। তাই আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশের সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর।

এসময় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর